সম্পর্ক ভালো রাখার ১২ টি উপায় | 12 ways to healthy relationship – Preronajibon
সম্পর্ক ভালো রাখার ১২ টি উপায়
সম্পর্ক শব্দটি এতটাই মধুর যা একে অপরকে অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে । সম্পর্ক সারা পৃথিবীতে বিরাজমান । সমস্ত প্রাণীর মধ্যে এটা লক্ষ্য করা যায় । আমরা এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে একটা সূক্ষ্ম সম্পর্কের মধ্যে চলাফেরা করি । প্রকৃতির সঙ্গে যেমন আমাদের নিবিড় সম্পর্ক আমাদের অজান্তেই তৈরী হয় , তেমনি প্রকৃতি সর্বদা তার কোলে আমাদের স্থান দিয়ে তার স্নেহ আদরে আমাদের প্রাণে স্নিগধতা জোগায় , আর সেটা হয় খুবই নিশ্চুপে । মা তার সন্তান কে গর্ভে ধারণ করে তার রক্ত মাংস দিয়ে গড়ে তোলে এক জ্যান্ত মানুষ কে , যা একটি সুন্দর সম্পর্কের ফলেই গড়ে ওঠে । বাবা আমাদের তার আঙ্গুল ধরেই এক-পা দু-পা করে হাঁটতে শেখায় , প্রথম কথা বলতে শেখায়, যার নিটোল রূপই হল এই সম্পর্ক । প্রাণের কথা খুলে বলার জন্য আর এক প্রাণের খোঁজ চলে এবং যে হাত বাড়ায় তা হল ” বন্ধুত্ব ” নামক একটি অটুট সম্পর্ক । নিজের সবকিছু উজার করে দিয়ে একে অপরের চরণে প্রাণ নিবেদন হল প্রেমের সম্পর্ক , সেই ভালোবাসার মানুষটির নাম নিভৃত যতনে লিখে রাখার নাম-ই হল প্রেম । অকারণ খুনসুটি , চুল টানাটানি , একে অপরকে দোষারোপ করার সেই মিষ্টি সম্পর্ক হল ভাই – বোনের সম্পর্ক । কিন্তু কেন এই সম্পর্ক গুলির মধ্যে ছেদ ঘটে অকারণে ? তার কারনগুলি কি হতে পারে – আসলে মানুষ একে অপরের কাছে তেমন বড় কিছু আশা করে না , ছোট ছোট জিনিসেই খুশির বীজ লুকিয়ে থাকে । আমরা অনেক সময় ছোট ছোট জিনিসগুলি অগ্রাহ্য করে থাকি , ফলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সুমধুর সম্পর্কগুলি ভেঙে যাওয়ার দিকে এগোতে থাকে । আমার মনে হয় কয়েকটি বিশেষ দিকের প্রতি আমরা যদি নজর দেই , তাহলে হয়তো সম্পর্কের ভীত মজবুত হবে ।
১. সততা :
যে কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে সততার ওপর ভর করে । আমরা কখোনই চাই না যে কেউ আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করুক । তাই আমাদেরও উচিত অন্যের বিশ্বাসের মর্যাদা দেওয়া । কোন সম্পর্কের মধ্যে যখন সততা নিয়ে টানাপোড়েন দেখা যায় তখন সম্পর্কের মধ্যে ছেদ পড়তে শুরু হয় । তাই আমাদের সততা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে, তাতেই সম্পর্ক সুন্দর হবে ।
২. অনুভূতি প্রকাশ করা :
আমরা অনেক সময় মনের কথা মনের ভেতরে-ই রেখে দেই । আমরা ভাবি সামনের জন হয়তো এমনিতেই সব বুঝবে । ফলে অনেক সময় দেখা যায় সামনের জন আমাদের থেকে যা আশা করছে শোনার জন্য তা না বলাই থেকে যায় । আমাদের উচিত দৈনন্দিন জীবনে আমাদের ভেতরের অনুভূতিগুলিকে প্রকাশ করা । বাবা – মা কে বলা তাদের জন্য আমাদের হৃদয়ের অনুভূতি কী ? সন্তান , স্বামী – স্ত্রী সকলের সামনে তোমার হৃদয়ে তাদের স্থান কী , তুমি কতটা তাদের জন্য ভাবো , কতটা স্নেহ বা সন্মান কর তাদের , রোজ সেটা বল । কারন আমরা সকলেই অন্যের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চাই । এই প্রবণতা ছোট বড় সকলের মধ্যেই দেখা যায় । তাই তোমার জীবনে তাদের গুরুত্বের কথা স্বীকার কর , রোজ তাদের সাথে শেয়ার কর সেই সুন্দর অনুভূতিগুলো ।
৩. সুন্দর মুহুর্ত কাটানো :
মহান জীবন আর কিছু নয় ,
কতগুলো মুগ্ধ্কর ও মধুর স্মৃতির সমাবেশ মাত্র ।
প্রতিটা সম্পর্কের মধ্যেই একসঙ্গে সুন্দর মুহূর্ত কাটানো খুবই প্রয়োজন । আজকালকার ব্যস্ত ডিজিটাল যুগে সবাই পাশে থেকেও পাশে নেই । প্রযুক্তির দৌলতে আমরা ভার্চুয়াল দুনিয়াতে নিজের জায়গা করে নিতে ব্যস্ত । আমরা দিনের বেশিরভাগ সময়টাই যাদের সঙ্গে কাটাই তাদের ভাল করে জানি-ই না । অথচ আমাদের প্রিয়জনরা যারা সর্বদা আমাদের পাশে রয়েছে , তাদের জন্য সময় বের করার কথা আমরা অনেক সময় ভাবতে ভুলে যাই । ফলে সম্পর্ক গুলি আলগা হতে শুরু করে । রোজ যদি আমরা আমাদের প্রিয়জনদের সাথে কিছুটা সময় কাটাই , একে অপরের সাথে গভীরভাবে ও খোলাখুলিভাবে যুক্ত থাকি , তাহলে আমাদের সম্পর্কগুলি পুনরায় সতেজ হবে , তাতে প্রাণ ফিরে আসবে । কারন এই সুখকর মুহূর্তগুলি আমাদের জীবন এ এতটাই শান্তি দেয় যা জীবনের অন্যতম সফল ক্রিয়া হিসাবে স্মৃতিতে থেকে যায় ।
৪. সহানুভূতিশীল হওয়া :
আমরা প্রত্যেকেই চাই আমাদের মনের অবস্থা আমাদের প্রিয়জনেরা বুঝুক । আমরা কী চাই, কোনটা আমাদের সত্যিকারের প্রয়োজন ? সেটা তারাও অনুভব করুক । যখন দেখি আমাদের ভেতরের অবস্থা তারা বুঝেও বুঝতে চাইছে না বা আমরা বোঝাতে পারছি না , তখন সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্ধ তৈরী হয় । তার থেকে শুরু হয় হতাশা , একাকীত্ত । যদি আমরা সম্পর্কের প্রতি নমনীয়তা পোষণ করি, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়, আন্তরিকভাবে অনুভব করতে পারি সামনের জনের পরিস্থিতি এবং তার দিকে আমাদের হাত বাড়িয়ে দেই তাহলে আমাদের মধ্যে একটা ভরসা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক তৈরী হবে ।
৫. বিশ্বাস বা ভরসা করা :
সম্পর্ক টিকে থাকে বিশ্বাসের বুনন এর ওপর । বিশ্বাস এর সুতো টান লেগে ছিঁড়ে গেলে সম্পর্কের ভাঙন অনিবার্য । তাই সম্পর্ককে বাঁচিয়ে রাখতে একে অপরের বিশ্বাস বা ভরসা রাখা খুবই জরুরী । বিশ্বাসের সত্যিই অসীম ক্ষমতা রয়েছে , বিশ্বাস-ই পারে মধুর সম্পর্ক স্থাপন করতে । তাই বিশ্বাস ও ভরসা রাখ প্রিয়জনের প্রতি ।
৬. গুরুত্ব দেওয়া :
সম্পর্কের উন্নতিকরণের আরেকটি ধাপ হল একে অপরকে গুরুত্ব দেওয়া । প্রত্যেকের স্বপ্ন বা বিশ্বাস কে মর্যাদা দেওয়া । আমরা অনেক সময় দেখে থাকি আমাদের প্রিয়জনদের কিছু স্বপ্ন নিয়ে আমরা ঠাট্টা ও বিদ্রুপ করি । ফলে তার ভেতরের আঘাত আমরা দেখতে পাই না । এভাবেই সম্পর্কগুলি ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকে হৃদয় থেকে । তাই সামনের জনকে মনযোগ সহকারে শুনে তার আত্মবিশ্বাস ও সক্ষমতাকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী । তাহলে সম্পর্কের বাঁধন দৃঢ় হবে ।
৭. স্বাধীনতা দেওয়া :
কখনো কাউকে বন্ধনে বা খাঁচায় বন্দী করে রাখা যায় না , যদি না সে থাকতে চায় । জোড় করলে কোন সম্পর্কই টিকে থাকে না । প্রতিটা সম্পর্কের মধ্যেই একে অপরকে স্পেস বা স্বাধীনতা দেওয়া অত্যন্ত জরুরী । জোড় করে নিজের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার ফলে অনেক সম্পর্কই শাড়শীতে আটকানো মাছির মত ছটফট করে , ফলে প্রাণের স্বরূপ রুদ্ধ হয় । রিচার্ড ব্যাচ (Richard Bach) বলেছেন –
If you love someone,
set them free.
If they come back they’re yours;
if they don’t they never were.
৮. প্রশংসা করা :
আমরা সকলেই নিজের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসি , এটা সত্য । আমাদের প্রিয়জনদের মধ্যে যদি কেউ কোন কাজ শ্রদ্ধার সঙ্গে করার চেষ্টা করছে , হয়তো সে সফলতার চূড়ায় এখনও পৌঁছতে পারে নি , কিন্তু তার প্রতিটা পদক্ষেপে যদি আমরা তার প্রশংসা করি তাহলে তার কর্মক্ষমতা দ্বিগুন বেড়ে যাবে এবং তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের বিশ্বস্ততা আরও বেড়ে যাবে ।
৯. উপহার দেওয়া :
ছোট থেকে বড় কে না ভালোবাসে উপহার পেতে । “উপহার” বলতে বড় বড় সামগ্রী বা বস্তুর কথা বলা হচ্ছে না । ছোট ছোট জিনিস , ছোট ছোট ক্রিয়াকলাপ একে অপরকে দিলে সকলেই খুশি থাকে । তাই প্রিয়জনদের উপহার দাও আর খুশি থাক ।
রাল্ফ ওয়ালডো এমারমন বলেছেন –
জীবনের সুন্দরতম প্রাপ্তি হচ্ছে আন্তরিকভাবে অপরকে সাহায্য করা ।
ফলে প্রকৃতপক্ষে নিজেদেরই সাহায্য করি ।
১০. ক্ষমা করা :
সবচেয়ে বড় ধর্ম হল ক্ষমার ধর্ম । ছোট ছোট বিষয় নিয়ে অনেকেই দীর্ঘদিন যাবৎ সম্পর্কের প্রাচীর কে করাঘাত করে । অতীতের কোন এক ভুল কে সামনে রেখে বর্তমানের সুন্দর মুহূর্তগুলোকে নষ্ট করে তোলে । একটা “ছোট” ক্ষমাই মারে সম্পর্কের যাবতীয় মলিনতা মুছে দিয়ে সেখানে সূর্যের প্রখর রশ্মির বিচ্ছুরণ ঘটাতে । যা সমস্ত অন্ধকার কে কাটিয়ে প্রাণে আলোর সঞ্চার করতে পারে । তাই এসো ক্ষমা করি একে অপরকে এবং আবার নতুন ভাবে জীবনে চলার পথ শুরু করি । কে জানে কাল আমাদের প্রিয়জনদের ক্ষমা করার সময় পাবো কি না । মৃত্যুর কড়াল গ্রাস কখন কাকে গিলে খাবে তা কেউ জানে না ।
১১. যত্ন নেওয়া :
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে সম্পর্ক রক্ষা ও সুন্দর করতে একে অপরকে কেয়ার বা যত্ন করা প্রয়োজন । একটি গাছ সঠিক যত্নের ফলে সুগন্ধ ছড়িয়ে ফলে ফুলে যেমন সুশোভিত করতে পারে , তেমনি সম্পর্কের ভীত মজবুত করতে যত্ন নেওয়া চাই ।
১২. ত্যাগ করা :
Sacrifice কথাটি প্রায়সই ব্যবহার করি সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে । ছোট ছোট Sacrifice বা ত্যাগ আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করে এবং অপরের শ্রদ্ধা ও ভরসা আদায় করে থাকে । সামান্য ত্যাগও সুমধুর সম্পর্কের বৃহত্তর উপহার হয়ে উঠতে পারে । তবে মনে রাখতে হবে সেই ত্যাগ হবে আন্তরিক – কখনোই তা যেন অহংকারের বিষয় না হয়ে ওঠে ।
Ashadharon