হতাশা কী ও হতাশা দূরীকরণের ১০ টি উপায়
হতাশা কী ও হতাশা দূরীকরণের ১০ টি উপায় :
বতর্মানে হতাশা একটি কমন শব্দ । বলা যেতে পারে হতাশা আসলে স্বাভাবিক ক্রিয়া, এটি একটি মানসিক অবস্থা। আজকাল আট থেকে আশি সকলের মুখে শোনা যায় সকলেই নাকি এই হতাশায় ভোগে।
এসো দেখে নেই সাধারণত: কি কি কারনে এই হতাশা আসতে পারে :
I) একাকীত্বের কারণে অনেক সময় হতাশা হতে পারে ।
II) কোনো জিনিসই চাওয়ার পর সেটা না পেলে ।
III) কোনো কাজে ব্যর্থ হলে ।
IV) অনেক সময় তুচ্ছ ঘটনাকে বড়ো করে দেখার ফলে হতাশা আসে ।
V) নেতিবাচক চিন্তাধারার ফলে ।
VI) সমস্যাকে মোকাবেলা করার ক্ষমতা না থাকলে ।
VII) অনুভূতি কমার ফলে ।
এই হতাশা মানুষকে ধীরে ধীরে পতনের দিকে নিয়ে যায় । একজন মানুষকে দেখে কী করে বুঝবো যে , সে হতাশাগ্রস্ত, বা কি করে বুঝবে তুমি হতাশায় ভুগছ, বা এর ফলে কী কী সমস্যা হয় এসো জেনে নিই –
I) ভালোমন্দ সব কথায় , কারনে অকারণে প্রচন্ড রাগ হয় ।
II) ব্যক্তি অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ে ।
III) কোনো কাজ করতে ভালো লাগে না , কাজকর্ম করার গতি কমে যায় ।
IV) কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না ।
V) কোনো কিছুতেই সঠিকভাবে মনোসংযোগ করা যায় না ।
VI) ব্যক্তি একদম মনমরা হয়ে যায় ।
VII) মাথা ঝিমঝিম করে এবং গা গুলায় ।
VIII) চোখের সামনে সবকিছু খাপছাড়া লাগে ।
একজন মানুষ দীর্ঘদিন হতাশায় ভুগতে ভুগতে ধীরে ধীরে পতনের দিকে চলে যায় , তাই এই হতাশা থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি । এসো এবার জেনে নেই কীভাবে হতাশা কাটিয়ে উঠতে হয় ।
হতাশা দূরীকরণের ১০ টি উপায় :-
১) হতাশার কারণ কী সেটা অনুসন্ধান করা :-
হতাশা দূর করতে হলে প্রথমেই যেটা করণীয় সেটা হলো কী কারণে হতাশায় ভুগছো সেটাকে অনুসন্ধান করা এবং তারপরে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া । আমরা যদি হতাশার নির্দিষ্ট কারণ-ই না জানি তাহলে হতাশা-মুক্ত হব কী করে । এমনি এমনি তো কেউ আর হতাশ হয় না , তার পিছনে কোনো না কোনো কারণ তো থাকবেই । তাই সর্বপ্রথম হতাশার কারণ খোঁজো এবং সেই কারণ অনুযায়ী সেটাকে কাটানোর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করো ।
২) মনের কথা বা সমস্যা খুলে বলো :-
অনেক সময় আমরা মনের কথা মনে জমাতে থাকি বা কোনো সমস্যার কথা কাউকে জানাই না বা জানাতে ভয় পাই । এবং তার ফলে একধরনের চাপা হতাশায় ভুগতে থাকি । তোমার মনের কথা যদি কাউকে খুলে না বলো তাহলে কী করে মানুষ তোমার মনের কথা বুঝবে , কী করেই বা তোমার সমস্যার কথা বুঝবে । এমনও তো হতে পারে যে সমস্যায় তুমি ভুগছো তার সমাধান সামনের ব্যক্তির কাছে আছে । তাই মনে যা আছে সবার সাথে শেয়ার করতে থাকো — দেখবে যে তোমার সমস্যা গুলো সমাধান হচ্ছে বা মনটাও অনেকটা হালকা হচ্ছে ও হতাশা দূরীভূত হচ্ছে ধীরে ধীরে ।
৩) নিজেকে ব্যস্ত রাখা :-
হতাশা দূর করার আর একটি অন্যতম উপায় হলো নিজেকে ব্যস্ত রাখা । মানুষের যখন কোনো কাজ থাকে না তখন মানুষ অনেক ধরনের উল্টো পাল্টা চিন্তা করে আর অটোমেটিক ডিপ্রেশনে চলে যায় । তাই সব সময় নিজেকে কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখো , সে যে কোনো কাজ হতে পারে , দেখবে তোমার সময় খুব সুন্দর কাটছে এবং হতাশা তোমাকে গ্রাস করতে পারবে না । তাই ব্যস্ততাকে তুমি যত কাছে টানবে হতাশা ঠিক ততটাই তোমার থেকে দূরে সরতে থাকবে ।
৪) বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো :-
তুমি যে কোনো হতাশায় ভুগছো ঘরে বসে না থেকে বন্ধুদের সাথে দেখা করো এবং তাদের সাথে কিছু সময় কাটাও দেখবে তোমার হতাশা কোথায় উড়ে চলে গেছে । কারন পৃথিবীতে বন্ধু হলো এমন একটা জিনিস যেখানে কোনো রকম বাধা বিপত্তি নেই কথা বলার । অনেক সময় এমন কতগুলো বিষয় থাকে যেগুলো ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করা যায় না কিন্তু বন্ধুদের সাথে তা অনায়াসে বলা যায় ।
৫)পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো :-
অনেক সময় এই পর্যাপ্ত পরিমানে না ঘুমানোর জন্য মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন । একজন সাধারণ মানুষকে সুস্থ স্বাভাবিক থাকার জন্য অন্তত ৬-৭ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয় । দিনের পর দিন ঘুম কম হলে একজন মানুষ ডিপ্রেশনে চলে যায় । তাই পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমাও ।
৬) প্রাণ খুলে হাসো :-
হাসি হলো একটা অমূল্য সম্পদ । মানুষ যদি হাসতে না পারত তাহলে মানুষ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তো । যে মানুষ যত হাসবে সে মানুষ ততটাই সুস্থ বোধ করবে । হাসি মানুষের মধ্যে জমতে থাকা ক্ষোভ ও দুশ্চিন্তাকে কমিয়ে হালকা করে দেয় । তাই যত পারো হাসো , শুধু হাসা নয় প্রাণ খুলে হাসো দেখবে তুমি হতাশা মুক্ত হয়ে গেছো ।
৭) খেলাধূলা করো :-
নিয়মিত খেলাধূলার মাধ্যমে তুমি হতাশা থেকে খুব সহজেই মুক্তি লাভ করতে পারো । ক্রিকেট , ফুটবল , ব্যাডমিন্টনসহ নানা ধরণের খেলাধূলার সুযোগ রয়েছে আমাদের দেশে । এসব আউটডোর খেলায় যোগ দেওয়া সম্ভব না হলে বিভিন্ন ইন্ডোর গেম যেমন ক্যারাম , লুডু , দাবা ইত্যাদি খেলাতেও ব্যস্ত রাখতে পারো নিজেকে । তাতে শরীর ও মাইন্ড ফ্রেশ হয় ।
৮) বাস্তববাদী হও :-
অনেকে চারদিকের নানা মুনির নানা মত শুনে আপাদমস্তক চিন্তা ক’রে হতাশায় ভোগেন । কিন্তু এটা ভুল , মানুষ কী বলছে না বলছে সেদিকে তুমি কান না দিয়ে চোখ কান খুলে বাস্তববাদী হও । ঈশ্বর প্রতিটি মানুষ কে ভিন্নভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছে সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করো । কে কী বলল না বলল সেটার দিকে মন না দিয়ে বাস্তবতা কে কাজে লাগিয়ে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠো ।
৯) বই পড়ো :-
হতাশা থেকে মুক্তি পেতে বই পড়তে পার । কারন বই একটি এমন মূল্যবান জিনিস যা মানুকে উন্নত থেকে আরো উন্নততর করে গড়ে তোলে । যখন মন খারাপ বা হতাশায় ভুগছো তখন যে কোনো বই পড়ো , গল্প উপন্যাস নাটক কারো জীবনী যে কোনো বই হতে পারে । দেখবে তোমার হতাশা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে । বই পড়ার উপকারিতা জানতে হলে এই বই পড়ব কেন ? আর্টিকেলটি দেখতে পারো ।
১০) ব্যায়াম কিংবা মেডিটেশন করো :-
মানসিক চাপ দূর করে মনকে শান্ত করার জন্য মেডিটেশন একটি অত্যন্ত কার্যকরী ব্যায়াম । ২৫ মিনিট করে টানা ৩ দিন মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশ্চিন্তা অনেকখানিই দূর করতে সাহায্য করে। রোজ ব্যায়াম ও যোগা করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় । যারা নিয়মিত যোগা করেন তারা তুলনামূলক কম শারীরিক সমস্যা বা প্রদাহে ভোগেন ও হতাশা মুক্ত জীবনযাপন করেন ।খুব বেশি হতাশাজনিত কারণে মানসিক সমস্যা হলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষত্বের সুপরামর্শ নিতে হবে ।
আশা করি এই লেখাটি বাস্তব জীবনে খুব কাজে লাগবে ।
লেখাটি ভালো লাগলে কিন্তু শেয়ার করতে ভুলো না । আর এরকম আরো লেখাসহ প্রেরণাময় জীবনের সাথী হতে আমাদের ফেসবুক পেজে চলে এসো । খুব ভালো থেকো ।
This Article Is Written By
কবি – সম্পাদক “অন্বেষণ” পত্রিকা
আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র । আমি সুন্দর সুশীল এক সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি । আমি লিখতে ভালোবাসি ও কবিতা- গল্প -প্রবন্ধ পড়তে ভালোবাসি।