সম্মান পাওয়ার ১০ টি সেরা উপায় । সবাই গুরুত্ব দেবে নিয়মগুলি মানলে
সম্মান পাওয়ার উপায়
“আমার মতে মানুষের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হল সম্মানের ক্ষতি। এর থেকে বড় ক্ষতি আর নেই।“
সম্মান বা Respect মানুষের সহজাত নয়। মানুষকে তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে কর্ম দিয়ে সম্মান অর্জন করতে হয়। আবার সচেতন মনে কাউকে সম্মান দেওয়াও সংস্কৃতিগতভাবে শেখাতে হয়।
“ধন নয় মান নয়, এতটুকু বাসা / করেছিনু আশা।”
এই ধন সম্পদের উর্ধে পৃথিবীতে মানুষ মানুষের কাছে যে জিনিসটি প্রত্যাশা করে তা হল সম্মান। কাজেই পৃথিবীর নশ্বর সম্পদের প্রাচুর্যেও, মানুষের শান্তি নেই। গাছের মতো প্রকৃতির নিয়মে মানুষও নিজেকে ছড়িয়ে দিতে চায় বটে। কিন্তু জৈবিক বিস্তারের ঊর্ধে একমাত্র মানুষই মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকে অন্য মানুষের মনে। জীবনানন্দের ভাষায় বলা যায়-
” মানুষের মৃত্যু হলে তবুও মানব থেকে যায়। “
অর্থাৎ মৃত্যুর পরেও থেকে যাওয়া এ মানব সত্তাটিই হল প্রকৃত সম্মান, যা মানুষ ছাড়া বোধ করি আর কোনো প্রাণীর কাম্য নয়।
বাস্তব সত্য হলেও সকলেই সম্মান পেতে চায়। কিন্তু সকলেই সম্মান লাভ করে না । তাহলে কী এমন আছে যার দ্বারা মানুষের কাছে নিজের সম্মান আদায় করা সম্ভব। ধন ও সম্পদের ঊর্ধ্বে রবীন্দ্রনাথের বলা ওই ‘বাসা’টুকুতে তাই আসন লাভ করা যায় কীভাবে ?
বন্ধুরা আজকের আলোচনায় আমরা অল্প কথায় তুলে ধরছি অপরের কাছে নিজের সম্মান পাবার বা সম্মান বাড়ানোর ১০ টি উপায় সম্পর্কে তাহলে কথা না বাড়িয়ে মূল বিষয় প্রবেশ করা যাক।

১. ভালো শ্রোতা হোন :-
‘তুমি মানুষের হাত ধরো/ সে কিছু বলতে চায়’ – কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার এই উক্তিটি থেকে বোঝাই যায় মানুষ আসলে কিছু বলতে চায়। তাদের কথা শোনার কেউ নেই। আপনি কোনো মানুষের কাছে সম্মান পেতে হলে ভালো করে শুনতে হবে মানুষ আসলে কী বলতে চায়। একজন ভালো শ্রোতা সহজেই অন্যের হৃদয়ের কাছাকাছি চলে আসতে পারেন আর সম্মানের আসনটিও সহজেই লাভ করতে পারেন।
২ .অপরকে সম্মান করুন :-
কথায় বলে সম্মান হল আয়নার মতো, অন্যকে যত সম্মান দেবেন,তাদের কাছেও তত সম্মান ফিরে পাবেন। আপনি যেমন অপরের কাছে একটু সম্মান প্রত্যাশা করেন তেমনি অপরজনও আপনার কাছে সম্মান প্রত্যাশা করবেন এটাই স্বাভাবিক।
৩. ভুল স্বীকার করুন, নিজেকে সংশোধন করেন :-
মানুষ মাত্রই ভুল হয়। আপনারও ভুল হতে পারে স্বীকার করে নিয়ে Sorry বলুন। আর ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে আরো উন্নত করে গড়ে তুলুন। ভুল হলে এড়িয়ে না গিয়ে, সরাসরি স্বীকার করার মধ্যে যে সৎ সাহস থাকে এই সৎ সাহসই আপনার সম্মান বাড়িয়ে দেবে। এটা শুধু সম্মানই নয় আপনার নিজের আত্মসম্মানও বাড়িয়ে তুলবে।

৪. যে কথাগুলি বলবেন না :-
মানুষের ব্যবহার বলতে মুখ্যত কথাকেই বোঝায়। সেই কথাকে ঠিকমতো না ব্যবহার করলে একদিকে আপনার ব্যক্তিত্ব যেমন নষ্ট হতে পারে- তেমনি অপরের চোখে আপনার সম্মানও চিরতরে নষ্ট হতে পারে। কাজেই একবার জেনে নিন যে কথাগুলো আপনার Personality ও সম্মানও দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কী কী কথা বলা যাবে না –
ক. এক সেকেন্ড, আসছি। (কথাটি বলতেই এক সেকেন্ড লেগে যায় কাজেই এটা ভিত্তিহীন কথা। দু- মিনিট, পাঁচ মিনিট- সঠিক সময়টুকুই বলবেন।)
খ. আমি অমুক কিনেছি, বা এই করেছি। ( এসব অহংকারী কথা কখনো বলবেন না অন্যের ভেতর থেকে শ্রদ্ধা হারাবেন এসব কথার দ্বারা)
গ. ধুর ভাল্লাগেনা! (বিরক্তিসূচক কথা নেগেটিভ মানসিকতার লক্ষণ এতে লোক আপনাকে এড়িয়ে যেতে থাকবে।)
ঘ. আপনার দ্বারা হবে না বা আপনি পারবেন না। (নেগেটিভ কথা কেউ শুনতে চায় না।)
Read More : কোথায় এবং কেন চুপ থাকা প্রয়োজন ?
৫. অতি বিনয় ত্যাগ করুন :-
বিনয় ভালো। কথায় আছে ‘’বিদ্যা দদাতি বিনয়ং’’ । অর্থাৎ বিদ্যা বিনয় দান করে। কিন্তু অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয় । যেমন বিনয় । দেখা যায় যে অতি বিনয়ী স্বাভাব ব্যক্তিত্বের ক্ষতি করে । আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করে দেয় । আর সবচেয়ে খারাপ যে বিষয়টি তা হল- অতি বিনয়ের ভাব তোষামুদে স্বভাবের পরিচায়ক । তাই অন্যের কাছে সম্মান পেতে হলে অতি বিনয় ত্যাগ করুন।
৬. Show off করার চেয়ে আন্তরিক হোন :–
এটা নিশ্চয় উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর দরকার নেই যে এখনকার দিনে Show off করা একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে । যারা বেশি Show off করে বেড়ায়, মনে রাখবেন তারা দুটো কারণে অন্যের সম্মান হারাতে থাকে –
১। যাই কিছু Show off করা হোক না কেন তা অন্যের ভেতরে ঈর্ষার উদ্রেক করতে পারে।
২। Show off অর্থাৎ বিজ্ঞাপিত করার মানসিকতার মধ্যে একটা অহংকার কাজ করে যা অন্যের চোখে বেশি করে ফুটে ওঠে।
আপনি লোকদেখানো বা Show off থেকে সরে এসে আন্তরিক হয়ে কাজ করুন , মিশুন , এতে দেখবেন আপনার কী আছে বা নেই তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই । আপনার ব্যবহার কেমন সেটাই আপনার পরিচয়। আর সেটাই আপনাকে সম্মানের আসনে রাখবে।
“নিজেকে সম্মান করুন। অন্যরা আপনাকে সম্মান করবে।” -কনফুসিয়াস
৭. কথা দিয়ে কথা রাখুন :-
অন্যের চোখে তিনিই সম্মান পান, যিনি কথা দিয়ে কথা রাখেন । এই দুনিয়ায় এখন মেকি Show off , নিজেকে প্রচার করার প্রবণতা যেখানে বেশি সেখানে কথা দিয়ে কথা রাখার মানুষও খুব কমে যাচ্ছে। কারও মনে শ্রদ্ধা জাগাতে হলে আপনি কথা দিয়ে কথা রাখুন । এর ফলে শুধু সম্মানই বাড়বে না আপনার প্রতি বিশ্বাস ও ভরসাও বেড়ে যাবে ।

৮. সর্বদা ইতিবাচক থাকুন :-
একটা বিষয় অনেকেই জানেন না যে , যারা সর্বদা নিজের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণার কথা , দেশ-দুনিয়ার দুর্দশার কথা অর্থাৎ নেতিবাচক কথাই সর্বদা গর্ব করে বলতে থাকেন ; মানুষ তাদের এড়িয়ে যেতে চান। কারন তাদের মানুষ অপছন্দ করেন। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন , মানুষ ইতিবাচক কথাই শুনতে চায়। যদিও এই বিষয়কেই কাজে লাগায় রাজনৈতিক নেতারা। কিন্তু আপনি যদি অন্যের হৃদয়ে শ্রদ্ধার ও সম্মানের আসন পেতে চান , তাহলে আপনাকে নেগেটিভ কথা বলা বন্ধ করতে হবে । যে কোনো কিছুরই নেগেটিভ ও পজিটিভ দুটো দিকই থাকে । আপনাকে সর্বদা পজিটিভ কথাগুলোই বলতে হবে । এতে সকলের কাছে প্রিয় ও সম্মানের মানুষ হতে সময় লাগবে না আপনার।
Read More : এই ১১ ধরণের মানুষ থেকে সর্বদা দূরে থাকো
৯. কথার পেছনে যুক্তি ও তথ্যের সত্যতা রাখবেন :-
আপনার চারদিকে সর্বদা যারা থাকেন, খেয়াল করে দেখবেন তাদের মধ্যে বিভিন্ন স্বভাবের মানুষ পাবেন। কেউ দেখবেন কিছু না জেনে বুঝেই বিজ্ঞের মতো মন্তব্য করে বসেন । আবার কেউ বুঝুক না বুঝুক দুম করে আবেগের বশে কিছু বলে বসেন । এরা সমাজে সম্মান পান না । খুব কম মানুষই দেখবেন প্রতিটি কথার মধ্যে যুক্তি ও তথ্যের পরিসংখ্যান রাখেন । আর না জানা থাকলে সেই বিষয়ে মন্তব্য করতে যাবেন না । কম কথা বলুন কিন্তু জেনে বুঝে বলুন । দেখবেন সকলের হৃদয়ে সম্মানের আসন আপনার জন্য সাজানো থাকবে।
১০. অপরের সময়ের মূল্য দিন –
আপনি কখনো কি ভেবেছেন , যে আপনার জন্য কারো সময় নষ্ট হচ্ছে ? তাহলে আজই এই বিষয় সম্পর্কে সচেতন হোন – অপরের সময় আপনি কিছুতেই নষ্ট করবেন না। কারণ এই দুনিয়ায় সবচেয়ে মুল্যবান বিষয় হল সময়। কারো যেন এরকম মনে না হয় যে আপনার সঙ্গে কথা বলে শুধু সময়টাই নষ্ট হচ্ছে। আপনি অন্যের সময়ের যেমন মূল্য দেবেন, তেমনি সময়কে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা প্রয়োগ করতে জানতেই হবে। মূল্যবান পরামর্শ দিন । জানা কিছু থাকলে অপরের উপকারের জন্য শেয়ার করুন। মোট কথা অপরজন যেন আপনার সঙ্গে থেকে বুঝতে পারেন যে তার সময়টা খুব কাজে লাগলো। অপরের সময়ের মূল্য দিতে পারলেই দেখবেন আপনার প্রতি সকলেরই সম্মান বেড়ে যাবে ।
বন্ধুরা , আশা করি আজকের সম্মান পাওয়ার উপায় আর্টিকেলটি থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারলাম। লেখাটি যদি কাজে লেগে থাকে তাহলে আপনার প্রিয়জনকে শেয়ার করে আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করুন। এরকম আরো লেখা পেতে হলে ফেসবুক পেজটি ফলো করে আমাদের সঙ্গে থাকুন আর দুর্দান্ত কোনো লেখার জন্য অপেক্ষা করুন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।