সবসময় খুশি থাকতে চাও তাহলে আজই জেনে নাও খুশি থাকার ১০টি উপায় ।
আমি সবসময় খুশি থাকতে চাই।
দুনিয়ায় কেউ এমন নেই যে খুশি থাকতে চায় না। সবাই চায় যে সে খুশি থাকুক কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি নানা জটিলতার মাঝে পড়ে মানুষ অনেক সময় হাসতে ভুলে যায় । মানুষ সুখের জন্য তাদের কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলি পেতে চায়। সারাদিন ছুটতে থাকে সেগুলো পাওয়ার জন্য। কিন্তু দিন শেষে তারা তাদের অন্তরে গ্লানি,শূন্যতা আর হতাশা খুঁজে পায়। কারন তারা খুশি আর সুখ পাওয়ার জন্য ভুল জায়গায় সন্ধান করছে। বাইরের বস্তু সর্বদা ক্ষণস্থায়ী। আজ আছে কাল নেই। সেই বস্তুগুলির সাথে যদি আমরা আমাদের খুশি বা সুখী থাকাকে সংযুক্ত করি তাহলে সেই খুশিও বেশিদিন থাকবে না। তাহলে কী এমন জিনিস আছে যা আমাদের সর্বদা খুশি অনুভব করাতে সাহায্য করতে পারে ? এমন কী অনুশীলন করা যেতে পারে চলো আজ সেটাই জানব –
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নিজেকে ভালোবাসতে শেখা। বলা হয়ে থাকে, ‘যদি নিজেকে ভালোবাসতে না শেখো, তাহলে অন্যকেও ভালোবাসতে পারবে না।’ সুখী বা খুশি থাকতে আমরা প্রায়শই নিজেদেরকে ভালোবাসতে বা সন্মান করতে ভুলে যাই। যারা তোমাকে ভালোবাসতে পারে না, মর্যাদা দিতে পারে না তাদের থেকে দূরে থাক। সেই সঙ্গে নিজের ভুল ও দূর্বলতাগুলি আলিঙ্গন করতে শেখ। প্রত্যেকেরই ভুল থাকে। এই পৃথিবীতে কেউই পারফেক্ট নয়। নিজেকে ছোট বা অপমান করো না। ভুল থেকে শেখো, মনে করো এই পৃথিবীটা একটা বড় ইউনিভার্সিটি আর তোমার জীবন একটা ক্লাসরুম ।যেখান থেকে তুমি রোজ নতুন নতুন কিছু শিখতে পাচ্ছ। ভুল করেছো বলে চিন্তা করো না , নিজেকে ক্ষমা করে দাও বা বাকিদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নাও, নতুন করে আবার শেখো নিজেকে ভালোবাসো । শারীরিকভাবে, মানসিক ভাবে, আধ্যাত্মিকভাবে সর্বদা নিজের যত্ন নাও কারন আজকের তুমি-ই পারো কালকের তোমাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে।
সারাদিন ব্যস্ত? নিজের সাথে সময় ব্যয় করবার সময় নেই ? এক্ষুণি খুঁজে বের করো কিছুটা সময় । দিনের কিছুটা সময় আমাদের নিজের জন্য একান্তই কিছু সময় কাটানো উচিত । দিনের খানিকটা সময় চারপাশের ক্রমাগত নেতিবাচকতা থেকে নিজেকে বের করে আনার জন্য নিজের সাথে ভালো বোঝাপড়া থাকাটা খুব দরকার । আমাদের মনই আমাদের চালিকাশক্তি । একটা পূর্ণ দিন বা একটা পূর্ণ সপ্তাহ হতে হবে না । শুধু কয়েকটা উষ্ণ মিনিট কাটাও , সুন্দর কোনো প্রাকৃতিক জায়গায় গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু ভুলে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাও । দেখবে নিজের ভেতর একটা সুন্দর অনুভূতির ঝর্ণাধারা বাহিত হবে একটা স্নিগ্ধ হাসি তোমার ঠোঁট ছোঁবে।
আমরা নিজেদের মনের ভেতর অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করে মূল্যবান সময়গুলি নষ্ট করি শুধু এটা ভেবে যেটা আমি সবসময় করতে চেয়েছিলাম সেটা করবো কী করবো না? ভেবো না করেই ফেলো। যার যেটা ভালো লাগে, যেটা এতদিন স্বপ্নে পুষে রেখেছো তা আজ করে ফেলো। জীবন খুবই ছোট। এজীবনে কখন কী হবে তা কেউ বলতে পারে না । তাই তোমায় ভেতর থেকে খুশি রাখতে পারে যে কাজগুলো তা আজই করো।
এই দ্রুত বহমান জীবনযাত্রায় আমরা ভুলে যাই বর্তমান মুহূর্তে সুন্দর করে বাঁচতে। আমাদের মন সর্বদা ভয়ভীতি…. চিন্তা , পরিকল্পনা সমাধান ও উদ্বেগ নিয়ে থাকে। যার ফলাফল হলো মানসিক চাপ। অনেক বেশী চিন্তিত হওয়ার দরুণ আমরা সারাদিনের ছোটো ছোটো ক্রিয়াকলাপ গুলি থেকে আনন্দ নিতে ভুলে যাই । কোনো কিছু নিয়ে ভাবা , এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা খারাপ ধারণা নয়, কিন্তু সর্বদা এটা নিয়ে ভাবা , অহেতুক চিন্তা করা আমাদের সুখকে,সুস্থ থাকাকে,আনন্দে বাঁচাকে হত্যা করতে পারে । একবার এই পরিকল্পনা, চিন্তার বেড়াজাল থেকে বাইরে এসো,চারপাশে থাকা জিনিসগুলির স্বাদ গ্রহণ করো।এতদিন যে জিনিসগুলোকে অবজ্ঞা করে এসেছো বা তাকিয়েও তাকাওনি সেইসব বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করো দেখবে সামান্য জিনিসগুলি তোমাকে অপার্থিব আনন্দ দান করবে।
নিজের হৃদয় দিয়ে যখন তুমি অন্য কাউকে সাহায্য করবে তখন অদ্ভুত এক ভালোলাগা ও প্রশান্তি তোমাকে ছুঁয়ে যাবে । আমরা আসলে অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যমে নিজেকেই সাহায্য করি , নিজের ভিতরে সুপ্ত থাকা সুন্দর অনুভূতিগুলিকে বের করে আনি । হতে পারে একজন বয়স্ক লোক রাস্তা পার হতে পারছে না তুমি তার হাতটা ধরে রাস্তা পার করে দিলে। তোমার বাড়িতে যে লোকটা সারাদিন কাজ করে তার জন্য ছোট্ট উপহার কিনে দিলে, তোমার ক্লাসের এক সহপাঠীর কাছে হয়তো অত বই কেনার টাকা নেই, তুমি তোমার বইটি দিয়ে তাকে সাহায্য করলে কিংবা টিউশনের টাকা জোগাড় করতে না পেরে পড়াশুনা ছেড়ে দিতে যাচ্ছে তোমার প্রতিবেশী ছোট্ট ভাইটি তার পাশে দাঁড়ালে। দরকার শুধু একটু সাহায্যের হাত ।একটু আধটু সাহায্য, দুটো ভালোমন্দ কথা, অন্যের মুখে হাসি ফোটালে তোমার ও মুখে হাসি থাকবে সর্বক্ষণ।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে,অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে তা আমাদের স্বাভাবিক হার্টবিট এবং দেহের কার্যকর প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বজায় রাখতে ভীষনভাবে সাহায্য করে। প্রিয় খাবার খেলে কিংবা কোথাও বেড়াতে গেলে আমরা আমাদের ভেতর যেমন আনন্দের স্বাদ পাই ঠিক তেমনই আনন্দের রসদ খুঁজে পাওয়া যায় অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার মাধ্যমে যাদের পাশে কেউ নেই, যারা অসহায়, যারা ঘরছাড়া, যারা মৃত্যুমুখে শয্যাশায়ী কিংবা সব হারিয়ে যে জীবনের প্রতি বিমুখ তাদের সাথে কথা বল। যারা তোমাকে কিছু বলতে চায় তাদের কথা শোন । তাদের সমস্যার সমাধান যদি নাও করতে পার তবুও তাদের মানসিক শান্তি জোগাও।
অন্যের কি কি আছে তা দেখে দুঃখ না পেয়ে তোমার কাছে কী কী আছে তা দেখে খুশি হও। তুমি যখন অন্যের কাছে থাকা জিনিসগুলো গুনবে তখন তোমার কাছে যা আছে সেটা কখনো চোখে পড়বে না। রাস্তার পাশে অনাহারে পড়ে থাকা শিশু বৃদ্ধকে দেখ, যাদের মা বাবা নেই যে ছোট থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দুমুঠো খাবার জোগাড় করে পেট চালায় তাদের দেখ। যাদের হাত পা নেই চলতে পারে না তাদের দেখ। যারা রোজ তোমার বাড়ির দিকে তাকায় আর ভাবে ইশ্ আমারো যদি থাকার মতো এরকম বাড়ি থাকত তাদের দেখ। বুঝবে কী কী তোমার কাছে আছে আর কেন এগুলি তোমার খুশির কারণ হতে পারে।
জীবনের অপ্রয়োজনীয় চাপ কমানোর জন্য Social media-র ক্ষুদ্রীকরণ কর। সারাদিন ফেসবুক, ট্যুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ই-মেইল চেক করতে যতটা সময় ব্যয় হয় ওই সময়টা যদি নিজের ভালো থাকার প্রতি লাগানো যায় তাহলে জীবন আরো সুস্থ ও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। অন্যের স্ট্যাটাস, অন্যের বেড়াতে যাওয়ার ছবি পোষ্ট আমাদের মধ্যে অনেকের মনে নেতিবাচক ভাবনার জন্ম দেয়, কোনো গুজব অহেতুক হিংসার সৃষ্টি করে। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই কিন্তু এর লাগাম ছাড়া ব্যাবহার কেড়ে নিয়েছে সামাজিক মূল্যবোধ সৌন্দর্য ও সৌহার্দ্য । তাই যতটা ব্যবহার না করলেই নয় ততটা ব্যবহার কর। খুশি থাক।
তুমি সবাইকে বাঁচাতে পারবে না, তুমি সবাইকে একসাথে খুশি রাখতে পারবে না, তুমি শুধু তোমার সেরাটা দিতে পারবে। যদি তোমার জীবনে এমন কেউ থাকে যে ধারাবাহিক ভাবে কোনো কারন ছাড়াই তোমার উপর অহেতুক চাপ সৃষ্টি করছে তবে সম্ভবত তাকে এড়িয়ে চলার সময় এখন এসছে। যারা তোমার চলার পথে তোমাকে বাঁধা দেয়, তোমার বিশ্বাসকে অমর্যাদা করে, তোমাকে ছোট করে অন্যের সামনে, তাদের থেকে একটা দূরত্ব বজায় রাখ। তাদের ক্ষতি করো না, তাদের ভালো কামনা করো দূর থেকে ।
আমাদের শরীর ও মন একে অপরের পরিপূরক। তাই মনকে ভালো রাখতে হলে অবশ্যই শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে। তাই আমাদের নিয়মিত শরীরচর্চা, ধ্যান ও সুষম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করা প্রয়োজন। নিয়মিত শরীরচর্চায় আমাদের দেহ থেকে এক ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয় যা আমাদের হাসিখুশি রাখতে সাহায্য করে। আর তার সাথে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার প্রতিও নজর দাও । অগভীর ও দ্রুত শ্বাস না নিয়ে ধীরে এবং গভীর শ্বাস নাও যাতে বেশি অক্সিজেন ফুসফুসে প্রবেশ করে। তাহলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে। এতে তুমি সুস্থ ও তরতাজা অনুভব করবে। জানো তো একটা সুস্থ শরীরেই সুস্থ মন বাস করে। আর সুস্থ মনই হলো সুখ -শান্তি -ভালোবাসার ছোট্ট একটা গৃহ ।
Happiness is not something readymade. It comes from your actions.
Dalai Lama
This Article Is Written By
View Comments
উপদেশ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।