যে সমস্ত আধুনিক উপাদান মানুষকে বিনোদনের পাশাপাশি শিক্ষাদান করে থাকে , তার মধ্যে সবচেয়ে প্রভাব বেশি হল সিনেমা বা চলচিত্রের। আজকের যুগে ছাত্রদের আর সিনেমা দেখার ক্ষেত্রে খুব বেশি বাধা নেই । কারণ , এখন ঘরে ঘরে টিভি , ট্যাব , ল্যাপটপ , ডেস্কটপ আর হাতে হাতে মোবাইল ফোন। তাই ছাত্রদের আর সিনেমা থেকে দূরে না রেখে বাছাই করে দেখে ফেলতে দিন এমন কিছু বিশ্ববিখ্যাত সিনেমা , যেগুলি তাদের জীবনে একদিকে যেমন মোটিভেশন দেবে , তেমনি অন্যদিকে শিক্ষার পাশাপাশি দেবে লড়াই করার মানসিকতাও। তাহলে আসুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই ছাত্রজীবনে সেরা ৫টি মোটিভেশনাল হলিউডি সিনেমা সম্পর্কে ।
দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক (২০১০) হল ডেভিড ফিঞ্চার পরিচালিত মার্কিন মুলুকে তৈরি জীবনীমূলক একটি সিনেমা । বেন মেজরিখের ২০০৯ সালে প্রকাশিত “দি অ্যাক্সিডেন্টাল বিলিয়নিয়ারস” বই অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনা করেন অ্যারন সর্কিন। এতে সামাজিক যোগাযোগের জন্য বিখ্যাত ওয়েবসাইট ‘ফেসবুক’ এর প্রতিষ্ঠা ও এর ফলে জড়িত বিভিন্ন আইনি ঝামেলা বা সমস্যা সমূহ চিত্রিত হয়েছে। ছবিটিতে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ চরিত্রে জেসি আইজেনবার্গ , তার বন্ধু এদুয়ার্দো স্যাভেরিন চরিত্রে এন্ড্রু গারফিল্ড, শন পার্কার চরিত্রে জাস্টিন টিম্বারলেক, ক্যামেরন চরিত্রে আর্মি হ্যামার এবং দিব্য নরেন্দ্র চরিত্রে ম্যাক্স মিনজেলা অভিনয় করেছেন।
শিক্ষণীয় বিষয় :- ছাত্রজীবনে বড় বড় স্বপ্ন দেখা , নতুন কিছু তৈরি করার মত জেদ ও মনোবল এই সিনেমার বড় প্রাপ্তি । নতুন কিছু করতে গিয়ে যত বাধা ও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং কীভাবে ঠান্ডা মাথায় সব কিছু ঠেলে এগিয়ে যেতে হয় , তা ছাত্রদের বড় রকমের শিক্ষা দেবে বলেই বিশ্বাস করা যায়। তাই এখনো দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক (২০১০) সিনেমাটি দেখা না থাকলে দেরি না করে দেখে ফেলুন।
আ বিউটিফুল মাইন্ড (A Beautiful Mind) ইংরেজি ভাষায় নির্মিত একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বিখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র এটি। ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমার পরিচালক হলেন রন হাওয়ার্ড। এর কাহিনীবৃত্ত চয়ন করা হয়েছে ১৯৯৮ সালের পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্ত সিলভিয়া নাসার লেখা বিখ্যাত এবং বেস্ট সেলিং উপন্যাস “A Beautiful Mind” থেকে। কাহিনীটি নির্মিত হয়েছে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী গণিতবিদ জন ন্যাসের জীবনী অবলম্বনে। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে রাসেল ক্রো। গবেষণা বিষয়ক কিছু সংকেতলিপি নিয়ে এক গোপন কাজে গণিতবিদ জন ন্যাশের আত্মনিয়োগ করার পর কীভাবে জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে এই কাহিনি নিয়েই নির্মিত বায়োগ্রাফীধর্মী মুভিটি। এখানে দেখা যায় গণিতবিদ জন কয়েকজন মানুষকে দেখতে পান, তাদের সাথে কথা বলেন কিন্তু তিনি জানেন না এরা বাস্তবে নেই! একসময় কল্পনার রাজ্যকে জয় করেন আর অতঃপর এভাবেই নোবেল পুরস্কার পান। সিনেমাটি ২০০১ সালে চারটি ক্ষেত্রে একাডেমি পুরস্কার জেতে । যাতে – সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা পরিবর্তিত চিত্রনাট্য এবং সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী পুরস্কার লাভ করেছিল।
শিক্ষণীয় বিষয়:- যে কোনো অধ্যয়নকারী শিক্ষার্থীর নিজের কাজে কীরকম আত্মোৎসর্গ করা উচিত তা এখানে বোঝানো সম্ভব হয়েছে। কোনো আবিষ্কার , গবেষণা ও কাজকে ভালোবেসে আত্মত্যাগ করে জীবনকে সফল করা যায় তা এখানে অবশ্যই শিক্ষণীয়।
জন লি হ্যানককের রচনা ও পরিচালনায় “দ্য ব্লাইন্ড সাইড ” হ’ল ২০০৯ সালে নির্মিত আমেরিকান বায়োগ্রাফিক্যাল একটি স্পোর্টস ড্রামা ফিল্ম। ২০০৬ সালে প্রকাশিত Michael Lewis এর লেখা বিখ্যাত উপন্যাস “The Blind Side: Evolution of A Game ” অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি নির্মিত। আমেরিকান ফুটবল জগতে মাইক্যাল ওহের নামক আক্রমণাত্মক লাইনম্যান এর জীবন সংগ্রাম এই সিনেমার মূল বিষয়বস্তু । যার মা ড্রাগ এডিক্টেড হওয়ায় তাকে দত্তক নেওয়া পিতা মাতার কাছে মানুষ হতে হয় এবং অসলোতে বিভিন্ন পরিবারের সাথে পালিত হতে হয়। যতবারই তাকে নতুন নতুন বাড়িতে স্থাপন করা হয়, সে পালিয়ে যায়। এরপর দুঃখ কষ্ট সংগ্রামের মধ্য দিয়ে কীভাবে সফলতা পেলেন , তা জানতে হলে সিনেমাটি দেখা প্রয়োজন ।
শিক্ষণীয় বিষয়:- পিতা মাতা ছাড়া সমাজের উপেক্ষা অবহেলা পেয়েও কঠোর মনোবল, ধৈর্য ও পরিশ্রম দ্বারা জীবনকে কীভাবে সফল করা সম্ভব তা এই সিনেমায় শেখার আছে । শুধু ছাত্র-ছাত্রীই নয় , সকলের জন্য সিনেমাটি যেন এক বার্তা ।
আরও পড়ুন : সকালবেলার পাঁচটি অভ্যাস যা জীবন একশো শতাংশ বদলে দেবে
২০১২ সালের আমেরিকান 3D লাইভ-অ্যাকশন কম্পিউটার অ্যানিমেটেড সাহসিক নাট্য চলচ্চিত্র ‘লাইফ অব পাই’ (Life of Pi) । ২০০১ সালের প্রকাশিত ইয়ান মার্টেলের “লাইফ অফ পাই” উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। অ্যাং লি পরিচালিত এই চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন ডেভিড ম্যাগী, এবং অভিনয়ে ছিলেন, সুরাজ শর্মা, ইরফান খান, রাফে স্পল, জেরার্ড ডিপারডাইউ, টাবু এবং আদিল হুসেইন প্রমুখ।
সিনেমাপ্রেমী বন্ধুরা নিশ্চই এই সিনেমাটি এতদিনে দেখে থাকবেন । পাই নামক বালকটির বড় হওয়া এবং বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ এর কথা আছে এখানে। সমুদ্রে জাহাজডুবির ফলে মা বাবা ভাই সব হারিয়ে কেবল বুদ্ধি ধৈর্য্য , আত্মশক্তি ও ভয়ানক জীবনী শক্তিকে ভর করে কীভাবে বেঁচে ফেরা যায় , তা এখানে দেখানো হয়েছে । মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বাঁচা এখানে মুখ্য হয়ে উঠেছে ।
শিক্ষণীয় বিষয়:- ছাত্রজীবনে জীবনসংগ্রামের শিক্ষা খুব কমই দিতে পারা যায় প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় । ধৈর্য্য, হার না মানা এক লড়াকু মানসিকতা দেখে সকলেই উজ্জীবীত হতে বাধ্য । শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে না দেবার শিক্ষাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এখানে।
এতক্ষণ আমরা বেশ কয়েকটি সিরিয়াস সিনেমার বিষয়ে লিখলাম । এবার একটু কৌতুক নাট্যধর্মী সিনেমার কথায় আসি।”অ্যাডমিশন” ( “Admission”) হল একটি ২০১৩ সালে নির্মিত আমেরিকান রোমান্টিক কৌতুক চলচ্চিত্র। এটি পল ওয়েইজ পরিচালিত এবং টিনা ফে এবং পল রুড দ্বারা অভিনীত জনপ্রিয় সিনেমা। এই সিনেমাটি নির্মিত হয় জিন হ্যানফ কোরিলিটজের ২০০৯ সালে প্রকাশিত “এডমিশন” নামক উপন্যাস অবলম্বনে।
শিক্ষণীয় বিষয় :- কমেডির মোড়কে নির্মিত হলেও এই সিনেমায় কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা , শিক্ষার্থীর আচরণ সম্পর্কে দারুনভাবে নির্মম সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে । হাসির সঙ্গে শিক্ষার্থী নিজেকে মেলাতে পারবে এর বিষয়ও চরিত্রগুলোর সঙ্গে । নাম শুনেই বোঝা যায় যে , এডমিশন নিয়ে নানা প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো , যেসব শিক্ষার্থীদের নানাভাবে পীড়িত করে , সে সব বিষয় এখানে অঙ্গীভূত হয়েছে। তাই দেরি না করে ছাত্র-ছাত্রীদের আজই সাজেস্ট করুন সিনেমাটি দেখে ফেলার।
কথায় বলে এন্টারটেইনমেন্ট নয়, ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনকে সাফল্যের দিকে এগিয়ে দিতে হলে চাই এডুটেইনমেন্ট । সিনেমা সেরকমই শিক্ষামূলক বিনোদন হতে পারে । আশা করি আজকের এই ছাত্রজীবনে মোটিভেশন আনার মতো সেরা ৫টি হলিউডি সিনেমার কথা জেনে কিছুটা হলেও উপকৃত করা গেছে। আর্টিকেল ভালো লাগলে আপনার প্রিয় তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের শেয়ার করে দিতে ভুলবেন না। আমাদের ফেসবুক পেজ -এ ঘুরে আসুন। এরকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আর্টিকেল পেয়ে যাবেন। সাবধানে থাকুন । স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুস্থ থাকুন ।