শুরুতে সুন্দর রোমান্টিক সম্পর্ক এবং কিছুদিন পর শুরু হতে থাকে মতবিরোধ , জীবন থেকে হারিয়ে যেতে থাকে ১৪ই ফেব্রুয়ারির ভালোবাসার উপহারের মাধুর্য — এমনটা হামেশাই শোনা যায় । আর বাঙালি জীবনে দাম্পত্য সম্পর্কের ওপর ব্যঙ্গ , কৌতূক , টিটকারির শেষ নেই । এরই মধ্যে সবকিছু উপেক্ষা করে অনেক সুখী দম্পতি সম্পর্কের অর্ধ শতরান সম্পূর্ণ করে জীবনের কাছ থেকে জিতে নেন শ্রেষ্ঠ উপহারটি । ১৯৩৮ সালে শুরু করা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির দীর্ঘতম গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে সুখী থাকার জন্য শুধু টাকা নয় , চাই সুন্দর একটা রিলেশনশিপ।
তাহলে বন্ধুরা , মনে রাখতে হবে , ভালোবাসার সম্পর্ককে চিরন্তন মধুর রাখতে হলে চাই প্রিয়জনের প্রতি যত্নবান হওয়া । শুধু দামি উপহার নয় , প্রতিদিনের ছোট ছোট বিষয়গুলিই পারে সুন্দর রোমান্টিক সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করে এক সুখী জীবনের অংশীদার করে তুলতে । এসো বন্ধু জেনে নিই
এটা সকলের জানা উচিত যে কারো কাছে সে-ই সবচেয়ে কাছের মানুষ হতে পারে , যে ভালো মন্দ যে কোনো বিষয়ে কথা মন দিয়ে শোনে । যে কখনো judgemental হয় না , প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি মন দিয়েই শুনে থাকে । সে ঘটনা মজার বা দুঃখের , লজ্জার বা যন্ত্রণার যাই হোক না কেন । যে কোনো মানুষই নিজের ভেতরের জমে থাকা কথাগুলো প্রিয়জনের কাছে বলেই শান্তিলাভ করে থাকে । তাই ভালোবাসার উপহারের সঙ্গে এমন একটা “তুমি ” উপহার দাও , যে তুমিটা প্রিয়জনের কথা মন দিয়ে শুনবে। দেখবে সেই তুমিই প্রিয়জনের কাছে শ্রেষ্ঠ উপহার হয়ে উঠেছ।
যত মানুষ তত মতধারা । প্রত্যেকের পছন্দের বিষয়গুলিও আলাদা আলাদা হতে বাধ্য। প্রত্যেকেই নিজের নিজের পছন্দের বিষয়েই কথা বলতে বেশি ভালোবাসে । তাই ভালোবাসার সম্পর্ককে সুন্দর করতে হলে ভালোবাসার মানুষটির পছন্দের বিষয়টিও জানতে হবে । টিভি রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়ি নয় , বরং একে অপরের পছন্দকে প্রাধান্য দিলে নিজের পছন্দও প্রাধান্য পেয়ে যাবে । আর কারো মুভি দেখা ভালো লাগে কারো খেলা দেখা , এই ধরণের বিষয়ে ভালোবাসার সম্পর্ককেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে । আর দুজনের আলোচনায় পছন্দের একটা কমন গ্রাউন্ড বা দুজনেরই প্রিয় এমন বিষয়ের সন্ধান করতে হবে , যেখানে বেশিক্ষন দুজনে কাটানো সম্ভব হয় । আর মাঝে মাঝে অপরের পছন্দের রান্না করে খাওয়ানো বা মুভি দেখানো দারুন সারপ্রাইজও হতে পারে।
প্রতিটি ভালোবাসার সম্পর্কে একে অপরের জন্য কিছু করার থাকে ; সময় দেওয়া , উপহার দেওয়া ,কাজে সাহায্য করা ইত্যাদি । যাই হোক ভালোবাসার সম্পর্ক ততই মধুর থাকবে , দুজন দুজনের প্রতি যতটা কৃতজ্ঞ বা thankful থাকবে । ছোট ছোট বিষয়ের উপরেও ধ্যান দিতে হবে । সম্পর্কে আবদ্ব হবার পর থেকেই একে অপরের জীবনে মিশে যেতে থাকে । সেখানে উভয়ে উভয়ের প্রতি যে কৃতজ্ঞতাবোধ তা কথায়ও প্রকাশ করা প্রয়োজন । প্রতিটি কাজের সঙ্গে থ্যাংক ইউ , নাইস , দারুন ব্যাপার , খুব ভালো করেছো এই কথাগুলো যেমন পজিটিভিটি ছড়াবে তেমনি সম্পর্কের বন্ধনকেও দৃঢ় করে দুজনের জীবনকে সুখী করে তুলবে।
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ নিজের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে । তেমনি তোমার ভালোবাসার মানুষটারও নিশ্চই এমন কিছু গুন্ আছে যেগুলির প্রশংসা সে পেতেই পারে । কোনো ভুল করলে বকা ঝকা না করে তাকে পজিটিভ ভাবে বোঝাতে হবে । আর যে কোনো কাজে প্রশংসার মাধ্যমে উৎসাহিত করতে হবে । আর কোনো নতুন নতুন পোশাকে কেমন মানাচ্ছে সেইসব খেয়াল করতে হবে আর প্রশংসা সূচক উক্তি ব্যবহার করতে হবে । যে কোনো সম্পর্কে কাজের বিচার নয় প্রশংসাই সম্পর্ককে আরো গভীর ও মধুময় করে তুলতে পারে ।
ভালোবাসার সম্পর্ককে সুন্দর রাখতে হলে খুব বড় বড় বিষয় নয় , বরং সামান্য ও ছোট ছোট বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনস্তাত্বিকগণ মত প্রকাশ করেছেন । ছোট ছোট বিষয় বলতে সব কাজে ভুল ধরা আর খুঁত খুঁত করা নয় , খুশির উদ্রেককারী বিষয়গুলির কথাই এখানে বলছি । যেমন মাঝে মাঝে চাবি রিং , বই , কলম , ফুল , চুলের ক্লিপ , ইত্যাদি ছোট ছোট উপহার দেওয়া যেতে পারে । সারা বছরে একদিন খুব দামি একটা উপহারের চেয়ে প্রতিদিনের অল্প অল্প সময় ও ভালোবাসার মুহূর্তগুলিই রোমান্টিক সম্পর্ককে বজায় রাখে বলেই আধুনিক মনোস্তাত্বিকদের ধারণা।
ভালোবাসার সম্পর্ককে ভালো রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পরস্পরের অনুভূতিকে বোঝা । দুঃখ , কষ্ট , মান-অভিমান , ঈর্ষা , অনুরাগ এইসব একে অপরের অনুভূতিকে যদি নাই বুঝতে পারে তাহলে সে সম্পর্ক মেকি বা নকল । সত্যিকারের ভালোবাসার সম্পর্কে পরস্পর পরস্পরের অনুভূতিকে বুঝতেই হবে । আর সেই অনুভূতি বুঝেই তার সঙ্গে ব্যবহার করা প্রয়োজন । দুঃখের সময় মজা না করে পাশে থাকা , অভিমানের সময় একটু বেশি আদর করা ইত্যাদি বজায় রাখতে হবে।
যদি তোমাদের ভালোবাসার সুন্দর সম্পর্ক চির মধুর রাখতে চাও তবে আজই কথা বলে ঠিক করে নাও যে , সারাদিনের কোনো বিতর্ক , মতবিরোধ বা ঝগড়ার বিষয় রাতে শোবার সময় আলোচনা করবে না । দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রায়ই শোনা যায় অভাব অনটন , মেয়ের বিয়ে , ছেলের পড়া ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনায় ঘুম কাবার হয়ে যায় । মনে রাখতেই হবে রাতের দুঃখ কষ্ট কিন্তু পরের আরেকটা কষ্টের দিন তৈরি করবে । তাই রাতের শেষ সময়টুকু ভালোবাসার সুন্দর আলোচনায় সম্পন্ন হলে পরের দিনটাও সুন্দর একটা ” শুরু” কে উপহার দেবে।
বন্ধুরা , বুঝতে পারলে নিশ্চয় শুধু টাকা থাকলেই সুখী হওয়া যায় না । দামি দামি উপহারের চেয়েও প্রিয়জনের প্রতি একটু যত্ন , একটু সান্নিধ্য সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদি ও সুখী করে তুলতে পারে । আশা করি এই লেখাটি তোমার জীবনে কাজে লাগবে । তবে হ্যাঁ তোমার প্রিয়জনকে এই লেখাটি পড়াতে ভুলো না কিন্তু । আর সবাইকে শেয়ার করে দাও লেখাটি , কারণ তোমার বন্ধুরাও উপকৃত হতে পারে এর থেকে । আমাদের ফেসবুক পেজে সঙ্গে থেকো । খুব সুন্দর ও সুখী সম্পর্কের বন্ধনে ভালো থেকো।
This Article Is Written By – Kishore Majumder