শরীর ও স্বাস্থ্য

জেনে নাও ৭ টি Mind Blowing মনস্তাত্বিক Fact

4 Minute Read

তোমরা কি জানো হাসিখুশি মানুষ অসুস্থ কম হয় আর গোমড়া মুখো মানুষের শরীর বেশি অসুস্থ থাকে ? মানুষের শরীরের উপর মনের কতটা প্রভাব পড়ে ?
অনেক কাজ আমাদের খুব আনন্দিত করে থাকে, আবার অনেক কাজ খুব বেদনার জন্ম দেয় , কেন ? আমরা ভেবেই দেখি না এর পেছনে কী মনস্তাত্বিক কারণ আছে । গবেষণা করে মনোবিজ্ঞানীরা আরো সব আশ্চর্য বিষয় আবিষ্কার করেছেন । যেমন , কারো ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বললে তার সফলতার সম্ভাবনা কমতে থাকে । কেননা সফলতার সঙ্গে মনস্তাত্বিক বিষয়ের গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে । ১৮৭০ সাল থেকে মানুষের মনকে ঘিরে সৃষ্ট ‘মনোবিজ্ঞান ‘ একটি আলাদা শাখা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে । তারপর থেকে নানা গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষায় এমন কিছু চমকে দেবার মত তথ্য ও তত্ব সামনে উঠে এসেছে । তার থেকেই কয়েকটি বিষয়টি এখানে তুলে ধরা হল ।

(১) Dunning-Kruger effect :


মানব সম্প্রদায়ের একটি বিরাট অংশ মনে করে তার জ্ঞান ও দক্ষতার দিক দিয়ে সাধারণ মানুষের তুলনায় উচ্চ অবস্থানে রয়েছে । মনস্তত্ত্বে এই ব্যাপারটিকে বলা হয় অলীক উচ্চতরবোধ বা “Illusory Superiority”। একটি বিশেষ ধরনের অলীক উচ্চতরবোধ হলো Dunning-Kruger effect । এটি হলো এমন এক মানসিক অবস্থা বা মানসিক জ্ঞান সম্পর্কিত ভাবনা যাতে মানুষ নিজেকে নিজের প্রকৃত যোগ্যতার থেকে বেশি যোগ্য বলে মনে করে । বিভিন্ন সময়ে করা কিছু বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেছে কিছু মানুষ কোনো একটি বিষয়ে খুব স্বল্প জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও নিজেদেরকে সেই বিষয়ে প্রকৃত জ্ঞানধারী পারদর্শী মানুষদের থেকেও জ্ঞানী বলে মনে করে থাকে। উল্টোদিকে যারা প্রকৃত দক্ষ ও যোগ্য তারা বরং নিজেদের খানিকটা অবমূল্যায়ন করে থাকে ।

একটা উদাহরনের মাধ্যমে বোঝাতে চাইলে, আমরা প্রত্যেকেই হয়তো পরীক্ষার সময় এরকম কিছু মানুষ পেয়ে থাকি যারা বলে তাদের সব পড়া আছে তাদের পুরো সিলেবাস মুখস্থ এবং তাদের মুখে এক আজব ধরনের কনফিডেন্স থাকে, অন্যদিকে যারা প্রকৃত ভালো পড়াশোনায় তাদের কাছে আপনি এরকম কনফিডেন্স দেখতে খুব কমই পাবেন , মনের জোর থাকলেও তারা তা প্রকাশ করবে না। আর বাস্তবে যখন পরীক্ষার ফলাফল আসে তখন দেখা যায় যে বাস্তবে ঠিক তার উল্টো ।

Dunning-Kruger effect এর ফলাফল :

১. নিজেকে বাস্তবের থেকে বেশি যোগ্য মনে করা ।

২. অন্যদের জ্ঞান ও যোগ্যতাকে ছোট করে দেখা ।

৩. মিথ্যা জ্ঞানের বহরে নিজের ভুল ত্রুটি না দেখা ও সেগুলি সংশোধন থেকে বিরত থাকা ।

(২) ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও লক্ষ্য সম্পর্কে অন্যদের জানালে সেটা অর্জন করতে প্রেরণা কমে যায় :-

আমরা ভবিষ্যতে কী করব তার একটা পরিকল্পনা নিজের মধ্যে করে রাখি ; কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আমরা আমাদের পরিকল্পনা ও লক্ষ্যগুলি পরিবার – পরিজন , বন্ধু-বান্ধবের কাছে আগাম জানিয়ে রাখি । এককথায় কথার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বেড়াই । তারপর দেখা যায় সেই কাজটি আর করা হয়ে ওঠে না। সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায়, সেটা হলো তোমার নিজের মন। ১৯৩৩ সাল থেকে বিভিন্ন গবেষণায় জানা গিয়েছে , যারা নিজেদের পরিকল্পনা সম্পর্কে আগেভাগে সকলকে জানিয়ে দেয় তাদের নিজেদের মধ্যে কাজ করার উদ্যম এবং প্রেরণা হারিয়ে ফেলে। এমনটা ঘটে থাকার কারন ” আইডেন্টিটি সিম্বল “। আমরা যখন আমাদের পরিকল্পনাগুলো নিয়ে কথা বলি তখন আমাদের মস্তিষ্কে একটি ‘সেল্ফ ইমেজ’ তৈরী হয়। আসলে কাজটি নিয়ে কথা বলা আর কাজটি পরিপূর্ন করা এই দুইটি বিষয় একই রকমভাবে আমাদের মস্তিষ্ককে সন্তুষ্ট করে থাকে। এর ফলে আমরা অনেকটা আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকি। পরিকল্পনা বা লক্ষ্যগুলি নিয়ে আগে থেকে কথা বলা শুরু করলে মস্তিক অনেক বেশি সন্তুষ্টি বোধ করে ফলে পরবর্তী পর্যায়ে সেই কাজটি করার প্রতি আমাদের উদ্যম অনেকটা কমে যায়।

(৩) অন্যের জন্য ব্যয় করলে বেশি আনন্দিত হওয়া যায় :-

হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল এর গবেষণায় একটি তথ্য উঠে এসেছে সেটা হলো, সেই সকল মানুষ অন্যদের তুলনায় বেশি সুখী ও আনন্দিত থাকেন যারা নিজেদের থেকে অন্যদের জন্য বেশি ব্যয় করেন । অর্থাৎ একই অর্থ দিয়ে নিজের জন্য কিছু কেনার চেয়ে ওই অর্থ দিয়ে অন্যের জন্য কিছু কেনা অনেক সময় সুখের হয়। অন্যের জন্য ব্যয় করার এই প্রবণতা মনে একপ্রকার প্রশান্তি প্রদান করে। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক ও ” Happy Money : The Science of Smarter Spending ” বই এর সহ লেখক Michael Norton তাঁর বইয়ে লিখেছেন – ” আসলে সুখকে পাশে রেখে আমরা অর্থ দিয়ে কিছু কিনি না। বরং আমরা আমাদের সুখকে পণ্যের মধ্যে স্থানান্তর করতেই অর্থ ব্যয় করি। “

এই বিষয়ে পুরোটা জানতে হলে Michael Norton এর এই ভিডিও টি দেখতে পারো

(৪) শরীরের ওপর সূর্যের আলোর চমকপ্রদ প্রভাব :-

সূর্যের আলো আমাদের অস্থি থেকে শুরু করে মস্তিস্ক পর্যন্ত সবকিছুর ওপর দারুণভাবে প্রভাব ফেলে। দিনে অন্তত ১০ মিনিট হলেও সূর্যের আলো সরাসরি শরীরে মাখতে হয়। এই আলো আমাদের মস্তিষ্কে এমন কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসে যা আমাদের মন-মেজাজ ভালো রাখে। যখন শরীর দিনের আলো ফুটছে বলে টের পায়, আমাদের অপটিক নার্ভ দিয়ে এই আলোর সংকেত যখন মস্তিষ্কে পৌঁছায় তখন সেরোটনিন হরমোন নামক এক হরমোন নিঃসৃত হয় । সেরোটনিন আমাদের মন মেজাজ ফুরফুরে ও তরতাজা রাখে। যাদের রাত জেগে কাজ করতে হয় , যারা পর্যাপ্ত দিনের আলো থেকে বঞ্চিত থাকে তাদের বিষন্নতায় ভুগতে দেখা যায় ।

(৫) গান মানুষের উদ্বেগ আর হতাশার অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে :-

যখন তুমি উদ্বিগ্ন বা হতাশ অনুভব করবে , তখন গান করার চেষ্টা করো । গান করলে অনেক মাংসপেশির কাজ হয়, শ্বাস প্রশ্বাস এর উন্নতি হয় এবং গান গাইলে শরীরে এন্ডোরফিন আর অক্সিটসিন নামক হরমোনের নিঃসরণ ঘটে , যার ফলে আমাদের বিষন্নতার মাত্রা অনেকটা কমে যায়। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে গান আমাদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে । তাই গান করো খুশি থাকো ।

Image Source : Tenor

(৬) শরীরের ওপর মনের প্রভাব :-

আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ মস্তিষ্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । এই কারণেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় সুখী মানুষ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী , অন্যদিকে নিরাশ মানুষ শারীরিক অসুস্থতার শিকার । কিন্তু এই সাধারণ ঘটনাটির ব্যাখ্যা সাধারণভাবে পাওয়া না । মনস্তাত্বিকগণ গভীর গবেষণায় প্রমাণ করেছেন যে , মানুষ যত ভালো কথা ভাববে ততই তার শরীর তার দেহের প্রয়োজনীয় হরমোনের ক্ষরণ ঘটাবে । অন্যদিকে এর ঠিক উল্টোটাও ঘটে , অর্থাৎ নেতিবাচক চিন্তা মানুষের শরীরে ক্ষতিকর হরমোন নিঃসরণ করে তার অসুস্থতার কারন হয়ে দাঁড়ায় । অর্থাৎ মানুষের শরীরের সুস্থতা -অসুস্থতাও মনের অবস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে —- এটাই মনস্তাত্বিকদের অভিমত ।

(৭) ধর্মীয়চর্চা হতাশা ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে :-

মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হওয়া এবং তার বিস্তারের নেপথ্য কারণ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। এই মানসিক চাপ কমানোর উপায় কী কী হতে পারে তা নিয়ে গবেষণার শেষ নেই । এমনি একটি গবেষণার তথ্যে উঠে এসেছে ” দ্যা আমেরিকান সাইকিয়াট্রি পাবলিশিং টেক্সটবুক অফ মুড ডিসঅর্ডার ” বইটিতে । সেখানে বলা হয়েছে যে বেশ কিছু গবেষণা থেকে জানা গেছে , যারা বিভিন্ন ধরনের ধমীর্য় আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে নিজেদের জড়িত রাখে তাদের হতাশার লক্ষণ এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা দেখা দেবার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে অন্যান্যদের থেকে ।

বন্ধুরা , আজ আমরা জানলাম 7 টি Mind Blowing Fact । আশা করি এই বিষয়গুলো জেনে তোমাদের ভালো লাগবে এবং জীবনে কাজে আসবে । লেখাটি তোমাদের কেমন লেগেছে কমেন্ট করে জানাও । আমাদের ফেসবুক পেজে সঙ্গে থাকো । আর লিখে ফেলো কোন কোন বিষয়ের উপর লেখা চাও তোমরা । খুব ভালো থেকো , সুস্থ থেকো ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *