আমরা অনেক মানুষের সঙ্গে মিশে থাকি, নানা প্রয়োজনে অনেক কথা বলে থাকি। আর বাঙালির প্রিয় আড্ডায় অনেক কিছুই আলোচনার বস্তু হয়ে ওঠে। তাই এমন গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি বিষয় আলোচনা করা হল যা খুব কাছের মানুষ ছাড়া অপরের কাছে শেয়ার করা উচিত নয়।
তোমার গোল বা লক্ষ্য সবাইকে বলো না। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে কোনো গোল এ পৌঁছানোর পর ‘Endorphins’ নামক হরমোন ক্ষরিত হয়। একে ‘Happines’ হরমোনও বলা হয়। কাউকে নিজের গোল এর ব্যাপারে বললে সেই ‘Endorphins’ হরমোন এর ক্ষরণ ঘটে আর ‘Happy feelings’ আসে। ফলে গোল বা লক্ষ্য পূরণের তাগিদ ভেতর থেকে কমে আসে। তাছাড়া নিজের লক্ষ্য অন্যদের বললে তারা তোমায় নেতিবাচক ভাবনার দ্বারা হতাশ করেও তুলতে পারে।
প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব ধর্ম, জীবনদর্শন থাকে। সে বিষয়ে বাইরের কারও সঙ্গে আলোচনা করতে নেই। তার কারণ হল তোমার ব্যক্তিগত জীবন ভাবনা সম্পূর্ণ তোমার নিজস্ব বিষয়। অন্য কেউ তোমার মতো করে ভাবুক এটা কখনোই প্রত্যাশা করা উচিত নয়। কেননা তাদেরও নিজস্ব ভাবনা রয়েছে। সেটা তোমার সঙ্গে না মেলার সম্ভাবনাই বেশি। কাজেই তোমার ব্যক্তিগত ভাবনা অন্যদের শেয়ার করলে দুটি প্রত্যক্ষ সমস্যা আসতে পারে-
(ক) তোমার ভাবনার জন্য অপদস্ত হতে পারো।
(খ) অনর্থক বিতর্কে জড়িয়ে যেতে পারো।
হ্যাঁ আরেকটা বিষয় মনে রাখা উচিত যে তুমি কাউকে সাহায্য করেছো সেটা অন্যদের বলতে যাবে না। কারণ কাউকে সাহায্য করা তোমার মহত্ব বা উদারতা। কিন্তু অন্য কাউকে সেটা বললে সেটা তোমার অহংকার বা আত্মগরিমাই প্রকাশ পাবে। এক্ষেত্রে সামনের জনও তোমায় ঈর্ষা করবে। এমনও হতে পারে সে প্রয়োজন না হলেও তোমাকে ঐরকম সাহায্যের আদেশ দিয়ে বসবে। তুমি কাউকে সাহায্য করলে তোমার কৃতিত্ব এমনই প্রকাশ পাবে, তা কখনো বলে বেড়াতে যেও না। এতে তোমার ব্যক্তিত্ব বজায় থাকবে নিশ্চিত।
জেনে রাখুন : সকালের 6টি অভ্যাস যা তোমার জীবন বদলে দেবে
আমি একটা গাড়ি কিনলাম, ফ্ল্যাট কিনলাম, কিংবা একটি দামি ক্যামেরা কিনলাম জানিস ? এ ধরণের কথা অহংকারকেই প্রকাশ করে। মনে রাখবে তোমার সম্পত্তি তোমার ব্যক্তিগত, তার সুবিধা তুমিই ভোগ করবে। অন্যদের সে বিষয়ে বললে সে জেলাসি ফিল করবে। সম্পত্তি লোক দেখানোর জন্য নয়- নিজের ভোগের জন্য। সম্পত্তি নিয়ে অন্যদের বললে ক্ষতি ছাড়া কখনোই লাভ হয় না। জেনে শুনে কেন নিজের ক্ষতি করবে বা শত্রু বৃদ্ধি করবে।
প্রত্যেকটি পরিবারেই কোন না কোন ড্রামা থাকে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে পরিবারই হল জীবন সমস্যার আঁতুড়ঘর। তুমি নিজের পারিবারিক সমস্যার কথা কখনোই অন্যদের বলতে যেও না। মনে রাখবে এই সমস্যার গল্পই অন্যদের গসিপের বিষয় হয়ে উঠবে। পরে বাকি লোকদের সঙ্গে মিশতে গেলেও দেখবে তারা তোমাকে ঐ পারিবারিক সমস্যার নিরিখে কথা বলবে ও তোমার মূল্যায়ন করবে। ভালো ভেবে হয়তো কাউকে পরিবারের সমস্যার বিষয়ে বলেছো- একসময় সেটা বুমেরাংও হয়ে উঠতে পারে।
অপরের গোপন তথ্য নিয়ে কখনো গসিপে অংশ নেবে না। এতে তোমার চরিত্রের অবক্ষয়ই ঘটতে থাকবে। আর কেউ যদি তোমাকে তার গোপন কথা বলে সেটা অন্যদের বলে দিলে বিশ্বাস ভঙ্গের অপরাধ ঘটতে পারে। আর যার গোপন কথা বলছো সে অন্যদের কাছে হাসির খোরাক হয়ে উঠবে- যার জন্য তুমি দায়ী হয়ে পড়বে। তাই অপরের গোপন তথ্য কখনোই অন্য কাউকে বলতে যাবে না।
প্রত্যেকেরই জীবনের অতীত রয়েছে। অনেকেই দেখবে অতীতচারী। তারা অতীতের ঘটনা আর ভুলগুলি আলোচনা করে আর আপসোস করে। তুমি অতীত থেকে শিক্ষা নেবে- অতীতকে নেবে না। অপ্রিয় কোন অতীত যা নিজের বা আর কারও যাই হোক না কেন – সে বিষয়ে কারো সাঙ্গে আলোচনা করতে যেও না। কারো অপ্রিয় অতীতকে স্মরণ করিয়ে দিলে তার দুঃখ-কষ্টকে উসকে দেওয়া হয়। শুধু অপরের নয় নিজেরও অপ্রিয় অতীত থাকতে পারে। অবশ্যই মনে রাখবে নিজের বা অপরের অপ্রিয় অতীতকে উসকে খুঁচিয়ে ঘা করার মতো ব্যক্তিত্বের অধিকারী তুমি নও- আর কখনোই তা করতে যেও না।
তাহলে বন্ধুরা নিশ্চয়ই বুঝে গেছো যে, সাতটি বিষয় যা অন্যদের বললে ক্ষতি ছাড়া কখনোই লাভ হয় না। এগুলি মনে রেখে চলতে পারলেই তুমি হয়ে উঠবে অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী। লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের শেয়ার করো আর আমাদের ফেসবুক পেজের সঙ্গে থেকো। আর খুব ভালো থেকো।
This Article Is Written By – Kishore Majumder