আব্রাহাম লিংকন Abraham Lincoln (জন্ম: ১৮০৯ – মৃত্যু: ১৮৬৫) কেন্টাকি রাজ্যের হার্ডিন কাউন্টির এক কৃষক পরিবারে আব্রাহাম লিঙ্কনের জন্ম হয়। তাঁর বাবা থমাস লিংকন এবং মা ছিলেন ন্যান্সি হ্যাংকস । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের১৬তম রাষ্ট্রপতি। যিনি ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রথম রাষ্ট্রপতি, এবং তাঁর কার্যকর ছিল ১৮৬১ হতে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত। সে সময় যে দাস প্রথা খুব নিন্দনীয় অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চরম ঘৃণ্য এক অধ্যায় ছিল আব্রাহাম লিংকন এই প্রথার বিরূদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিলেন । তিনি ১৮৬০ সালে প্রথম রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসাবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি হয়ে তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ছিল তা তিনি করতে সক্ষম হন । এই পদক্ষেপ শুরু হয় ১৮৬৩ সালে । তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসান ঘটান ও দাসদের মুক্ত করার ব্যবস্থা করেন। দাস প্রথা নিয়ে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সময় তিনি ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তাঁর জীবদ্দশায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা হল ১৯ নভেম্বর ১৮৬৩ সালে এক স্মরণসভায় তাঁর একটি সংক্ষিপ্ত ও দুনিয়া কাঁপানো ভাষণ। মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে ২৭২ শব্দের এই বিখ্যাত ভাষণটি ‘গেটিসবার্গ স্পিচ’ নামে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ। এখানে তিনি গণতন্ত্রের যে সংজ্ঞাটি ফুটিয়ে তোলেন সেটি হল , । ‘গণতন্ত্র হলো জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার, জনগণের জন্য সরকার’।
সব শিক্ষার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হল স্বশিক্ষা । আব্রাহাম লিংকন ছিলেন প্রকৃত স্ব-শিক্ষিত ব্যক্তি । প্রথাগত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তিনি লাভ করেছিলেন মাত্র ১৮ মাস । তিনি শিক্ষায় এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে, জীবনের প্রকৃত শিক্ষার জন্য কোনোকিছুর উপর নির্ভর না করে নিজেই নিজের আগ্রহ অনুযায়ী বই পড়ে ও নানাভাবে শিখে নিতেন । আইন বিষয়ে আগ্রহ থেকেই তিনি ডিগ্রি না নিয়েও ওকালতি পরে ওকালতি করেছিলেন । একসময় সফল উকিল হিসেবে পেশাজীবনে শুরু করেন। ১৮৪৯ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্টে একটি কেস লড়েন এবং তাতে হেরে যান ।
এক সময় তিনি হুইগ পার্টির নেতা হিসেবে আট বছর রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারনের কাজ করেন এবং দুই বছর কংগ্রেসের কর্মী হিসেবে কাজ করেন। ডেমক্রেটিকরা প্রেইরি ল্যান্ডে দাসপ্রথার চালু করলে লিংকন ক্ষিপ্ত হয়ে পুনরায় ১৮৫৪ সালে রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ করেন। এভাবেই তিনি নিউ রিপাবলিকান পার্টির নেতা হয়ে ওঠেন।তার অসামান্য রাজনৈতিক দক্ষতার জন্য জাতীয় স্তরে নজর কাড়তে সক্ষম হন । ক্রমশ পশ্চিম থেকে প্রার্থী হয়ে এভাবেই ১৮৬০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী বিবেচিত হন। এভাবেই উত্তরকে হারিয়ে তিনিই নির্বাচিত হন। উত্তর ও দক্ষিণ লড়াইতে দেখা যায় বিচ্ছিন্ন হবার প্রক্রিয়ার চক্রান্ত। ন্যাশনালিজম উত্তরের ক্ষমতাবান শক্তি এবং এটি এই বিচ্ছিন্নতাকে মেনে নেয়নি। ফলে স্বাধীনতা বজায় রাখতে নব গঠিত কনফেডারে স্টেটস অব আমেরিকা দক্ষিণের ফোর্ট সুমটারে আক্রমন চালায়। লিংকন প্রকৌশলে স্বেচ্ছাসেবী এবং মিলিশিয়া গঠন করেন এবং ইউনিয়ন ধরে রাখতে বিদ্রোহীদের দমন করতে আহ্বান জানান।
আরও পড়ুন : মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর বিখ্যাত উক্তি ও বাণীসমূহ
এই মানব সভ্যতার অন্যতম ব্যক্তিটির জীবনের পথটি কিন্তু কখনোই সুগম ছিল না । ২১ বছর বয়সে তিনি ব্যবসায় খুব ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন । এর পরের বছরেই রাজনীতিতে নেমে আইনসভার নির্বাচনে দাঁড়ান এবং ভীষণভাবে পরাস্ত হন । কিছুদিন পরে অর্থাৎ ২৬ বছর বয়সে তাঁর প্রিয়তমা মারা যান । তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও ভেঙে পড়েন নি । ৩৪ বছর বয়সে কংগ্রেসের নির্বাচনে হেরেই ক্ষান্ত হন নি । রাজনৈতিক জীবনে ব্যর্থতার পর ব্যর্থতা তাঁকে আরো জেদি করে তোলে । ৪৫ বছর বয়সে তিনি দাঁড়ান সাধারণ নির্বাচনে । আবার হেরে যান । এখানেই শেষ নয় , ভাইস প্রেসিডেন্ট হবার জন্য এবং সিনেটের নির্বাচনে মিলে আরো দু’বার হেরে যান । এই অবস্থায় অন্য কেউ হলে হয়তো হল ছেড়ে দিতেন । কিন্তু তিনি প্রচন্ডভাবে কর্মঠ ও কর্মতৎপর ছিলেন বলেই ৫২ বছর বয়সে আবার দাঁড়ালেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে । এবার তিনি তাঁর পরিশ্রম ও মানুষের ভালোবাসার ফল পেলেন । জিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন । তাহলে আব্রাহাম লিঙ্কনের এই ব্যর্থতার পর ব্যর্থতা কি তাকে থামাতে পেরেছিল ? পারেনি । কারণ তিনি ব্যর্থতাকে এক একটা শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন । আর তাই তিনি শেষ পর্যন্ত সফল হন ।
এই মানুষটির জীবন ও আদর্শ থেকে উৎসারিত বাণীগুলি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা একবার পড়লেই বোঝা যাবে । আসুন তাহলে একবার দেখে নিই আব্রাহাম লিংকন অসাধারণ কিছু বাণী ও উক্তি –
১.”আমার সবচেয়ে সেরা বন্ধুটি হচ্ছে সেই ব্যক্তি , যে আমাকে একটি বই দিয়েছে যেটি আমি পড়ি নি”- আব্রাহাম লিংকন
২.“ মানুষ যতটা সুখী হতে চায়, সে ততটাই হতে পারে। সুখের কোনো পরিসীমা নেই। ইচ্ছে করলেই সুখকে আমরা আকাশ অভিসারী করে তুলতে পারি । ”
৩.”যারা অপেক্ষা করে তারাই পাই, আর তারাই হারায় যারা তাড়াহুড়া করে।” – আব্রাহাম লিংকন
৪.”যথাস্থানে পা রেখেছ কিনা তা আগে নিশ্চিত হও, এরপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়াও”- আব্রাহাম লিঙ্কন
৫.”যারা অপেক্ষা করে তারা হয়ত কিছু পায়, কিন্তু তারা সেইটুকুই পায় যা পরিশ্রমীদের পুরস্কার দেওয়ার পর উদ্বৃত্ত থাকে।”
৬.”প্রত্যেককে বিশ্বাস করা বিপদজনক; কিন্তু কাউকে বিশ্বাস না করা আরো বেশী বিপদজনক”।
—আব্রাহাম লিংকন।
৭.”তুমি সবসময় কিছু লোককে বোকা বানাতে পারো, কিছু সময় সবলোককে বোকা বানাতে পারো, কিন্তু সব সময় সব লোককে বোকা বানাতে পারো না ।” – আব্রাহাম লিংকন
৮.“তুমি যা-ই হও না কেন ভাল কিছু হও।”
৯.”যখন আমি ভাল কাজ করি আমি ভাল অনুভব করি , যখন আমি খারাপ কাজ করি আমি খারাপ অনুভব করি , এটাই আমার ধর্ম”
১০.”আমি প্রস্তুতি নেব এবং কোনও দিন আমারও সুযোগ আসবে।”
১১. “স্বীকৃতি না পেলে চিন্তিত হবেন না, তবে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য হওয়ার চেষ্টাটি করুন।”
১২.”মিতব্যয়ী না হয় আপনি সম্পদশালী হতে পারেন না। শক্তিমান কে দুর্বল করে আপনি দুর্বলকে শক্তিমান করতে পারেন না। ধনীদের দরিদ্র করে, দরিদ্রকে ধনী করতে পারেন না। ঋণের টাকায় উন্নত আর্থিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেন না। যারা মজুরি দেয়, তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে যারা মজুরি উপার্জন করে তাদের সাহায্য করা যাবে না। মানুষের স্বাধীনতা এবং উদ্যোগ নষ্ট করে চরিত্র এবং মনোবল গঠন করা যাবে না, শ্রেণি ঘৃণা জাগ্রত করে মানুষের ভ্রাতৃত্ববোধের উন্নতি করা যাবে না, আয়ের থকে ব্যয় বেশি করে সংকট এড়ানো যাবে না। মানুষ নিজে যা করতে পারে বা মানুষের করা উচিত তা করে দিলে মানুষকে স্থায়ীভাবে সাহায্য করা যায় না।”
১৩.”গোলাপ গাছে কাঁটা থাকে বলে আমরা অভিযোগ করতেই পারি; কিংবা কাঁটাওয়ালা গাছে গোলাপ জন্মে—এটা ভেবে আনন্দিতও হতে পারি।”
১৪.”যদি আমার কাছে একটি গাছ কাটার জন্য ৮ ঘন্টা সময় থাকে, তাহলে আমি কুড়াল ধার করার জন্য ৭ঘন্টা ব্যয় করব।”-আব্রাহাম লিঙ্কন
১৫.”আমি হাসি কারণ আমি কাঁদলে চলে না।”
১৬.”আজকে ফাঁকি দিয়ে তুমি আগামীকালের দায়িত্ব থেকে পালাতে পারবেনা।”
১৭.”কোন ব্যক্তি কি কারণে রেগে যাচ্ছে তা দেখে তার চরিত্র সম্পর্কে জানা যায়।”
১৮.”চরিত্র হচ্ছে গাছের মত, পরিচিতি ছায়ার মত ।”
১৯.”কোন মানুষেরই একজন সফল মিথ্যাবাদী হওয়ার মত যথেষ্ট স্মৃতিশক্তি নেই।”
২০.”দুর্দশা দিয়ে নয় বরং কাউকে ক্ষমতা দিয়ে দেখ তার আসল চরিত্র জানতে হলে।”
২১.”গণতন্ত্র হলো জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা সরকার, জনগণের জন্য সরকার।”
২২.”বুলেটের চেয়েও শক্তিশালী ব্যালট।”
২৩.”নির্বাচন জনগণের। এটা তাদের সিদ্ধান্ত।”
২৪.”শিক্ষার অর্থ মানুষে যা জানেনা তা শেখানো নয়। শিক্ষার অর্থ তাদের সঠিক আচরণ করতে শেখানো যা তারা করে না।”
২৫.”এক প্রজন্মের স্কুল কক্ষের দর্শনটি পরবর্তী সময়ে সরকারের দর্শন হবে।”
২৬.”শাস্তির চেয়ে ক্ষমা মহৎ।”
২৭.”বিয়ে আত্মশোধনের ব্যাপার, আনন্দ বা দুঃখের নয়।”
২৮.”যার মা আছে, সে কখনও গরীব নয়।”
আমাদের লেখাটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটিতে যুক্ত থাকো।