মানুষের জীবনে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারে তার চারপাশের মানুষ। আর তাই আমাদেরও সতর্ক হওয়া উচিত। আমাদের চারপাশে কয়েক ধরণের মানুষ দেখা যায় যারা কোনো না কোনো ভাবে আমাদের মানসিক শক্তি ক্ষয় করে। তাদের সঙ্গে বেশিক্ষন সময় কাটালে তাদের প্রভাব আমাদের ওপর পড়তে থাকে। এসব মানুষ আমাদের ব্রেইনের ম্যাসিভ স্ট্রেসের কারণ। তাদের ব্যবহার ,তাদের কথা বলার ধরণ, তাদের চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা বলে দেয় তারা Energy Sucker না Energy Giver চলো আজ জেনে নেওয়া যাক সেই ধরণের মানুষের বিহ্যাভ আপ্রোচ গুলি যা দেখে তাদের চেনা যাবে –
১) কট্টরবাদী ( Fundamentalist Dogmatic ) :-
যারা কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কট্টরপন্থী মনোভাব পোষণ করে ,সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শুধু ধারণার ওপর ভর করে চলে , তাদের থেকে নিজেকে দূরে রাখো। কখনো কখনো দেখা যায় বন্ধুমহলে কিংবা পরিবারে কোনো একজন একটা বিষয় কে কেন্দ্র করে তার কট্টরবাদিতা প্রমাণ করতে চায় ,সেই সময় তার সঙ্গে তর্কে লিপ্ত না হয়ে সহমত পোষণ করা উচিত। কারণ তুমি যদি তর্ক করা শুরু করো সময় যেমন নষ্ট হবে , তেমনি তাকে বোঝাতে না পেরে তোমার মানসিক শক্তি ক্ষয় হবে। তাই এই ধরণের মানুষ থেকে সর্বদা দূরে থাকো।
২) ভুক্তভোগী মানুষ :-
যারা সর্বদা নিজের দুঃখের গান গেয়ে বেড়ায় , তারা দেখায় যে পৃথিবীর যাবতীয় দুর্ঘটনা শুধু তাদের সাথেই ঘটে। এসব বলে তারা খুব সহজেই সহানুভূতি গ্রাস করে। ফলে আমরাও তাদের সমস্যাগুলো নিজেদের মনে করে সমাধান করতে চেষ্টা করি। এই ধরণের মানুষদের দুঃখও কখনই ঘোচে না , এরা সর্বদা ভিক্টিম মেন্টালিটির হয়ে থাকে। নিজেরা দায়িত্ববোধ এড়িয়ে আজীবন তোমার কাছে সহানুভূতি চাইতে থাকবে। তাই নিজেদের সমস্যা সমাধানে যারা তোমায় ব্যবহার করে , তাদের থেকে সর্বদা দূরে থাকো। যদি তুমি তাদের সাহায্য করতে চাও দূর থেকে করো , কাছে গেলেই তারা তোমায় প্রভাবিত করতে থাকবে।
৩) Negative People :-
কিছু মানুষ রয়েছে যারা ভয় ব্যতীত কোনোদিন সাহস দিতে পারে না। তারা সব কিছুর মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে থাকে। এরা সব ব্যাপারে অন্যদের নিরুৎসাহিত করে তোলে। এই ধরনের মানুষেদের সঙ্গে যারা বেশিক্ষন থাকে , তারাও নেতিবাচক হয়ে যায়। তাই যারা শুধু ভীত করে দেয় তাদের থেকে সর্বদা দূরে থাকো।
৪) পরশ্রীকাতর :-
যারা অন্যের ভালো দেখে কাতর হয়ে পড়ে। এই ধরণের মনোভাব হিংসা ও বিদ্বেষাত্মক আচরণ তৈরী করে। বিশেষজ্ঞদের মতে সবচেয়ে বড় স্ট্রেস হলো পরশ্রীকাতরতা। এই ধরণের মানুষের সাথে বেশিক্ষণ সময় কাটালে তাদের ভাবধারা তোমার মধ্যেও সঞ্চারিত হতে থাকবে। তাই তাদের থেকে নিজেকে দূরে রাখো।
৫) গসিপিং :-
বিশাল মনের মানুষেরা চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। গড়পড়তা মানুষেরা ইভেন্ট নিয়ে কথা বলেন। আর ক্ষুদ্র মানসিকতার মানুষ অন্য মানুষকে নিয়ে গসিপ করেন।
এলেনর রুজভেল্ট
অন্যদের দুর্ভাগ্য নিয়ে কিংবা সীমাবদ্ধতা নিয়ে সমালোচনা করে অনেকেই আনন্দ পায়। পরনিন্দা বা পরচর্চা একটি হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহকর্মীদের মধ্যে দেখা যায় অবসর সময়ে বসে গসিপ করছে , যা অন্যকে আঘাত দিতেও পারে। এসব গল্পে মশগুল না থেকে তুমি ওই সময়টাকে প্রোডাক্টিভ কোনো কাজে লাগাতে পারো।
৬) নির্দয় বা বদমেজাজী মানুষ :-
যদি কোনো মানুষ খুব সূক্ষ্ম ভাবে তোমার সাথে হিংস্রতা দেখায় তা সে ফিজিক্যালি হোক বা মেন্টালি , তাদের থেকে সর্বদা নিজেদের বাঁচিয়ে রাখা ভালো। বদমেজাজী মানুষেরা নিজের রাগ সর্বদা অন্যের ওপর ঝাড়তে থাকে , তারা অন্যকে দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখে। এইসব মানুষদের দূরে রাখা উচিত নইলে তারা আমাদের চিন্তাভাবনার অনেকাংশ দখল করে আমাদের ব্রেন কে ডিসটার্ব মুড এ নিয়ে যাবে।
৭) ধান্দাবাজ :-
ধান্দাবাজ মানুষ বন্ধুত্বের আড়ালে তোমার সময় নষ্ট করবে। এসব মানুষ তোমাকে খুব ভালোভাবে জানে , তারা জানে তোমার পছন্দ অপছন্দকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে ফায়দা নিতে হয়। তারা প্রথমে তোমাকে জয় করবে , তারপর তোমাকে কাজে লাগিয়ে তার স্বার্থসিদ্ধি করবে । কাজেই এই ধরণের মানুষ চিনে নেওয়া খুব প্রয়োজন।
৮) Confused people :-
এই ধরণের মানুষ কখনো ভীষণ কাজের কথা বলবে , কখনো একদম বেকার জিনিস নিয়ে কথাবার্তায় মশগুল থাকবে। এরা Unpredictable এদের সাথে কথা বলে কখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। তারা কখনো তোমায় clarity দিতে পারবে না। তাই কাজের ক্ষেত্রে তাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো।
৯) সবজান্তা :-
যারা সব বিষয়ে ইন্টারেস্ট দেখায় এবং শুধু কথাবার্তায় অন্যকে ডুবিয়ে রাখে ,এদের কাছে সব ধরণের উত্তর তৈরী থাকে। তারা বিচার বিবেচনা না করেই এমন কিছু কথা বলে ফেলে , যা অন্যকে নিরুৎসাহিত করে তোলে। তারা তাদের ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে চায় না , তারা নিজেদেরকেই সঠিক মনে করে। এদের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য থাকে না। মনে রেখো এরা কখনো কখনো কথার মাধ্যমে তোমায় অপদস্ত করতেও পারে।
জেনে নাও : মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কয়টি উপায়
১০) অহংকারী :-
যারা ভীষণ অহংকারী তারা নিজেদের নিয়ে একটি মিথ্যা আত্মবিশ্বাসে ডুবে থাকে। তারা নিজেদের খুব বড় মনে করে। অহংকারী মানুষ সব কিছুকেই পারসোনাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখে। এইধরণের মানুষ সামনের জনকে কখনই গুরুত্ব দেন না । অহংকারী ব্যক্তিরা কর্মক্ষেত্র নানা গোলযোগ সৃষ্টি করে , এরা নিজেদের যেমন ধ্বংস করে তেমনি এদের চারপাশে যারা থাকে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যতটা পারা যায় তাদের থেকে দূরে থাকা ভালো , কারণ এরা মানসিক শক্তি ক্ষয় করতে ভীষণ পারদর্শী।
১১) Aimless :-
লক্ষ্যহীন মানুষ হাল ছাড়া নৌকার মতো ভাসতে থাকে । জীবনের স্রোত যে কোনোখানেই তাদের নিয়ে ফেলতে পারে । এই ধরনের মানুষ কখনোই সময়ের মূল্য দিতে পারেন না । তারা অন্যদের সময়কেও গুরুত্ব দেয় না । কাজেই এই ধরণের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে সময় যেমন ক্ষতি হবে , তেমনি ক্ষতি হবে তোমার জীবনের লক্ষ্য পূরণের মানসিকতাও । তাই যতটা পারো লক্ষ্যহীন মানুষের সাহচর্য এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
তাহলে বন্ধুরা , নিশ্চয় বুঝে গেছ , কীভাবে এই মানুষদের চিনে নেবে যারা তোমার পক্ষে ক্ষতিকর । লেখাটি কেমন লাগলো ? কমেন্ট বক্সে লিখে জানাও । আমাদের ফেসবুক পেজ-এ চলে এসো এরকম অনেক পোস্ট রয়েছে সেখানে । ভালো লাগলে তোমার বন্ধুদের লেখাটি শেয়ার করে দাও । খুব ভালো থেকো , সুস্থ থেকো।