মোটিভেশন

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার রচনা, অধ্যায়,গীতার উপদেশ ও শ্রীকৃষ্ণের বাণী

6 Minute Read

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা :

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা বা গীতা একটি ৭০০-শ্লোকের ধর্মগ্রন্থ। সাতশত শ্লোকের একটি গ্রন্থ বিধায় একে সপ্তশতী বলে। এটি প্রাচীন সংস্কৃত মহাকাব্য মহাভারত-এর একটি অংশ। গীতা-র বিষয়বস্তু কৃষ্ণ ও পাণ্ডব রাজকুমার অর্জুনের কথোপকথন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু ঠিক আগে শত্রুপক্ষে আত্মীয়, বন্ধু ও গুরুকে দেখে অর্জুন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। এই সময় কৃষ্ণ তাকে ক্ষত্রিয় যোদ্ধার ধর্ম স্মরণ করিয়ে দিয়ে এবং বিভিন্ন প্রকার যোগশাস্ত্র ও বৈদান্তিক দর্শন ব্যাখ্যা করে তাকে যুদ্ধে যেতে উৎসাহিত করেন। তাই গীতা-কে বলা হয় মানব ধর্মতত্ত্বের একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ এবং হিন্দুদের জীবনচর্যার একটি ব্যবহারিক পথনির্দেশিকা।গীতা-কে গীতোপনিষদ বলা হয়। কৃষ্ণর মুখ থেকে যে বাণী নিঃসৃত হয়েছে গীতায় তা ঐশ্বরিক বাণী হিসেবে মানা হয়।

গীতার রচনা :-

মনে করা হয়, বেদব্যাস রচনা করেছিলেন মহাভারত। সে জন্য মহাভারতের অংশ গীতাকেও মানা হয়। তাই গীতাকেও তাঁর রচিত বলে মনে করা হয়।

গীতার অধ্যায় :-

মহাভারতের যুদ্ধ শুরুর আগে অর্জুনকে গীতার বাণী দান করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। গীতা ৭০০ টি শ্লোক নিয়ে ১৮টি অধ্যায়ে বিভক্ত।

১৮টি অধ্যায়ের নাম:-
১.বিষাদ-যোগ
২.সাংখ্য-যোগ
৩.কর্মযোগ
৪.জ্ঞানযোগ
৫.কর্মসন্ন্যাস-যোগ
৬.ধ্যানযোগ
৭.বিজ্ঞান-যোগ
৮.অক্ষরব্রহ্ম-যোগ
৯.রাজগুহ্য-যোগ
১০.বিভূতি-যোগ
১১.বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ
১২.ভক্তিযোগ
১৩.প্রকৃতি-পুরুষ-বিবেকযোগ
১৪.গুনক্রয়-বিভাগ-যোগ
১৫.পুরুষোত্তম-যোগ
১৬.দৈবাসুর-সম্পদ-বিভাগযোগ
১৭.শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ
১৮.মোক্ষযোগ

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার উপদেশ ও বাণী|| শ্রীকৃষ্ণের বাণী

ভগবদগীতার উদ্দেশ্য হচ্ছে অজ্ঞানের অন্ধকারে আচ্ছন্ন এই জগতের বন্ধন থেকে মানুষকে উদ্ধার করা। প্রতিটি মানুষই নানাভাবে দুঃখ কষ্ট পাচ্ছে, যেমন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় অর্জুনও এক মহা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন এবং তার ফলে তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে গীতার তত্ত্বজ্ঞান দান করে মোহমুক্ত করলেন। এই জগতে অর্জুনের মত আমরাও প্রত্যেকেই সর্বদা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় জর্জরিত। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় জর্জরিত জীবন থেকে মুক্তি পেতে গীতার বাণী ব্যক্তিকে সমস্ত কষ্ট থেকে মুক্তির পথ খুঁজে দেবে। তাই আজ আমরা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার মহামূল্যবান উপদেশ ও বাণী, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী নিয়ে আলোচনা করব। যা প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের জীবনে মেনে চলা উচিত।

শ্রীকৃষ্ণের বাণী :-

“জীবন না ভবিষ্যতে আছে আর না আছে অতীতে, জীবন তো কেবল এই মুহূর্তে আছে;- অর্থাৎ এই মুহূর্তের অনুভব করাকেই জীবন বলে।”- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“যে সব ইচ্ছাকে ত্যাগ করে দেয় এবং ‘আমি’ ও ‘আমার’ এই লালসাপূর্ণ ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে যায় | সেই একমাত্র প্রকৃত শান্তিলাভ করে।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“অনেকে মনে করে থাকেন যে সংসারে কাজর্কম ত্যাগ করাই হল সন্ন্যাস। কাজ মাত্রকইে তারা বন্ধন বা দুঃখরে কারণ মনে করনে, তাই সকল রকম কাজই পরিত্যাজ্য মনে করনে । কিন্তু তারা ভুল করেন, কর্ম ত্যাগ করা নয়, র্কমফলের লোভকে ত্যাগ করাই হল আসল ত্যাগ বা সন্ন্যাস।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“নরকের তিনটে দরজা হয়- কামনা, ক্রোধ এবং লোভ।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“যখন কোনো ব্যক্তি তার লক্ষ্যকে প্রাপ্ত করে ফেলে, তখন তার জীবনের সব দুঃখ ঘুঁচে যায় এবং জীবনে নতুন আনন্দ ও খুশি ভরে ওঠে।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“যার কাছে সুখ, দুঃখ, মান ও অপমান সবই সমান, সেই একমাত্র সিদ্ধপুরুষ।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“দুর্বলই কেবল ভাগ্যের দোষারোপ করে আর
বীর ভাগ্যকে অর্জন করে।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“যেকোনো ব্যক্তি যা চায় জীবনে সেটাই হতে পারে, যদি সে বিশ্বাসের সাথে সেই বিষয়ের উপর চিন্তা করে।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“কর্ম করে যাও কিন্তু ফলের চিন্তা করো না।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“অহংভাবই মানুষের মধ্যে বিভিন্নতা সৃষ্টি করে। অহংভাবের অভাব থাকলে পরমাত্মার সাথে বিভিন্নতার কোনো আর কারণই থাকেনা।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“যেটা ঘটতে চলেছে সেটা ঘটবেই, যা ঘটবে না তা কখনোই ঘটবে না এরকম নিশ্চয়তাপূর্ণ মনোভাব যার মধ্যে আছে; তাকে দুশ্চিন্তা কখনোই কষ্ট দিতে পারেনা।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“বাহ্যিক বস্তুর ত্যাগকে বাস্তবে ত্যাগ বলেনা, আন্তরিক ত্যাগই হচ্ছে প্রকৃত ত্যাগ। আমাদের কামনা, মমতা, আসক্তিই হচ্ছে বন্ধনযুক্ত কিন্তু সংসার তা নয়।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“আত্মার জন্ম নেই , না কখনো মৃত্যু হয়। শরীর নষ্ট হয়ে গেলেও , আত্মা নষ্ট হয় না।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“খালি হাত এসেছো খালি হাত চলে যাবে , যা কিছু আজ তোমার সেটা অন্যদিন কারো ছিল ,পরশু সেটা আরো কারো হয়ে যাবে । আজ তুমি যে জিনিস নিজের বলে প্রসন্ন , সেটাই তোমার দুঃখের কারণ।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“যখনই সত্যের সাথে অসত্যের লড়াই হয় তখন সত্য একা দাঁড়ায় অসত্যের বাহিনী হয় বিশাল, কারণ তার পেছনে মূর্খ, লোভী, স্বার্থপর ও বিশ্বাসঘাতকেরা থাকে।”-ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী || Lord Krishna Quotes In Bengali

“হে অর্জুন , যবে যবে এই সংসারে ধর্মের অনিষ্ট হয় , এই সংসারে অধর্ম বৃদ্ধি পায় , তখন তখন ধর্মের রক্ষার জন্য এই পৃথিবীতে আমি আবার ঘুরে আসি।”- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“যে ব্যক্তি পঞ্চ – কর্মেন্দ্রিয় সংযত করেও মনে মনে শব্দ , রস আদি ইন্দ্রিয় বিষয়গুলি স্মরণ করে , সেই মূঢ় অবশ্যই নিজেকে বিভ্রান্ত করে এবং তাকে মিথ্যাচারী ভন্ড বলা হয়ে থাকে।” – ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“যে ব্যক্তি পঞ্চ-কর্মেন্দ্রিয় সংযত করেও মনে মনে শব্দ , রস আদি ইন্দ্রিয় বিষয়গুলি স্মরণ করে , সেই মূঢ় অবশ্যই নিজেকে বিভ্রান্ত করে এবং তাকে মিথ্যাচারী ভন্ড বলা হয়ে থাকে।” – ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“সজ্জন ব্যক্তি আরো ভালো চরিত্রের সজ্জন ব্যক্তির সাথে, নীচ ব্যক্তি আরো নীচ চরিত্রের ব্যক্তির সাথেই থাকতে চায় । স্বভাব দ্বারা জন্ম যার যেমন প্রকৃতি হয়, সে তার সেই প্রকৃতিকে কখনোই ছাড়েনা।”- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“যদি কোন ঘটনার মানুষ ভয়প্রাপ্ত হয় তবে তার পরাজয়ই হয়। আর জে মানুষ সব হারিয়েও শান্ত আর একাগ্র থাকে সেই জয়ী।” –Lord Krishna

“তোমার কি চলে গেছে ,
যে কারণে তুমি কাঁদছো ?
তুমি কি নিয়ে এসেছিলে ,
যা তুমি হারিয়ে ফেলেছো ?
তুমি কি সৃষ্টি করেছিলে ,
যা নষ্ট হয়ে গেছে ?
তুমি আসার সময় কিছু নিয়ে আসো নি ,
যা নিয়েছো এখান থেকে নিয়েছো
যা দিয়েছো এখান থেকে দিয়েছো।” – Lord Krishna

“যে প্রাণী লোভ , মায়া , ক্রোধ , অশান্তি , ঈর্ষা , থেকে মুক্তি আমি তার মধ্যে বিরাজ করি ।”– Lord Krishna

“সকলেই মায়াজাত গুণসমূহের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অসহায়ভাবে কর্ম করতে বাধ্য হয় ; তাই কর্ম না করে কেউই ক্ষণকালও থাকতে পারে না ।” – ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উপদেশ

“হে অর্জুন , আমিই অতীত , আমিই বর্তমান , আমিই ভবিষ্যৎ , আমি সর্ব প্রাণীর মধ্যে বিরাজ করি ,যে প্রাণী আমাকে মন দিয়ে স্মরণ করে , আমি সর্বদা তাদের পাশে থাকি ।” – ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী

“শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যেভাবে আচরণ করেন , সাধারণ মানুষেরা তার অনুকরণ করে। তিনি যা প্রমাণ বলে স্বীকার করেন , সমগ্র পৃথিবী তারেই অনুসরণ করে।”-ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“সর্বদা সন্দেহ করে যাওয়া মানুষের প্রসন্নতা পাওয়া, না এই জীবনে সম্ভব আর না অন্য জীবনে।”-ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“উৎসাহ এর চেয়ে বড় বল আর কিছুই নেই,উৎসাহী ব্যাক্তি জগত ও জয় করতে পারে।” – ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“শুধুমাত্র মনই মানুষের মিত্র কিংবা শত্রু হয়ে থাকে।”– শ্রী কৃষ্ণ

“এই সংসার প্রতিটা মূহুর্তে পরিবর্তন হচ্ছে, আর পরিবর্তনশীল বস্তু সর্বদা অসত্যই হয়।” –ভগবান শ্রী কৃষ্ণ

“সময় কখনও মানুষের নির্দেশিত পথে চলে না, মানুষকে সময়ের নির্দেশিত পথে চলতে হয়। – Shri Krishna

“যে বিষয় টি তোমার হাতে নেই , সেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে কোনো লাভ নেই।”-শ্রীকৃষ্ণের বাণী

“অগ্নি যেমন ধুম দ্বারা আবৃত থাকে, দর্পণ যেমন ময়লা দ্বারা আবৃত থাকে, অথবা গর্ভ যেমন জরায়ুর দ্বারা আবৃত থাকে ,তেমনি জীবাত্মা বিভিন্ন মাত্রায় এই কামের দ্বারা আবৃত থাকে।”

শ্রী কৃষ্ণের প্রেমের বাণী || Krishna Quotes On Love

“ভালবাসা আত্মার সাথে হয়, দেহের সাথে নয়, যা দেহের সাথে থাকে তা কেবল আকর্ষণ, যা আত্মার সাথে থাকে তা অনন্ত প্রেম।” – শ্রী কৃষ্ণের প্রেমের বাণী

“যদি হৃদয়ে সত্যিকারের ভালবাসা থাকে তবে অপেক্ষা করার প্রতিটি মুহূর্ত আনন্দ দেয়। ”-শ্রীকৃষ্ণ

“ভালবাসার প্রথম পর্যায় হ’ল বিভ্রান্তি যা আপনাকে আপনার ভালবাসার নিকটে নিয়ে আসে।”-শ্রীকৃষ্ণ

“মানুষ প্রেম তাকেই দিতে পারে, যে তার প্রত্যাশা পুরন করতে পারে। – ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“প্রেম উন্নতি দেয়,উচিৎ অনুচিতের জ্ঞান দেয়। –ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“প্রেম আর মোহর মাঝে পার্থক্য থাকে – বাস্তবে যা প্রেম, তা কোন মোহ নয়।” – ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“সর্বদা মনে রাখবেন এই পৃথিবীতে প্রেমের চেয়ে মধুর আর কিছু নেই।” – ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“প্রেম – যে অবহেলা ভোগ করে সে রাগ এবং প্রতিশোধের অনুভূতি থেকে মুক্ত হয়।”– ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

মৃত্যু নিয়ে গীতার বাণী || আত্মা নিয়ে গীতার শ্লোক

“পরিবর্তন সংসারের নিয়ম ,যাহাকে তুমি মৃত্যু বলে ভাবছো , সেটাই তো জীবন । আমার – তোমার , ছোট, বড় ,আপন , পর সবকিছু মন থেকে মিটিয়ে দাও , তারপর দেখো সব তোমার , তুমি সবার ।”- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“আত্মার জন্ম নেই , না কখনো মৃত্যু হয় । শরীর নষ্ট হয়ে গেলেও , আত্মা নষ্ট হয় না।” – ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“শরীর এবং আত্মার সম্পর্ক – অগ্নি, জল, বায়ু, পৃথ্বী এবং ব্যোম –উপাদানে তৈরি আমাদের রক্তমাংসের শরীর, এর ক্ষয় হয়। শরীর অর্ন্তভূত আত্মার কোনও ক্ষয় না।”-ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

“যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদন করার সময় তোমার শোক করা উচিত নয়।”-ভগবান শ্রীকৃষ্ণ

‘মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, দেহীও তেমনি জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করেন।”

“আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পোড়ানো যায় না, জলে ভেজানো যায় না, অথবা হাওয়াতে শুকানো যায় না।”

” এই আত্মা অব্যক্ত, অচিন্ত্য ও ও অবিকারী বলে শাস্ত্রে উক্ত হয়েছে। অতএব এই সনাতন স্বরূপ অবগত হয়ে দেহের জন্য তোমার শোক করা উচিত নয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *