বুকস রিভিউ

সকালবেলার পাঁচটি অভ্যাস যা জীবন একশো শতাংশ বদলে দেবে

6 Minute Read

গল্পটি শুরু হয়েছে একটি বড় বিজনেস সেমিনার দিয়ে ।
যেখানে একজন বড় বিজনেসম্যান বক্তব্যের মাধ্যমে অন্যদের উদ্দীপ্ত করছিলেন । অংশগ্রহণকারী শ্রোতাদের মধ্যে দু’জন ছিলেন , যাদের নিয়ে এই গল্পের কাহিনী বিধৃত হয়েছে । সেই দু’জনের মধ্যে একজন ছিলেন অবসাদগ্রস্ত বিনিয়োগকারী আরেকজন ছিলেন হতাশ শিল্পী । একজন ছিলেন হতাশাগ্রস্ত অপরজন ছিলেন সফল হবার স্বপ্নে বিভোর ; কিন্তু কেউই তাদের সঠিক পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না । সেমিনারে বক্তা অসুস্থ হয়ে পড়ায় মাঝে মাঝেই সেমিনারে বিরতি নিতে হচ্ছিল । এরই কোন অবসরে ওই দু’জন মানুষ নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা-পরিচয় করে নিচ্ছিলেন । এমন সময় তাদের পেছনে একজন এমন মানুষ আবির্ভূত হলেন , যার পোশাক আশাক ছিল একদম দরিদ্র মানুষের মতো । আশ্চর্যের বিষয় তার হাতে ছিল লক্ষ ডলার মূল্যের ঘড়ি ।

উদ্যমহীন ব্যবসায়ীটি ওই তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলেন যে , তিনি আসলে দরিদ্র কেউ নন — একজন বিলিওনিয়ার । এমন দরিদ্র পোশাক পরার কারণ হিসেবে তিনি জানালেন , তিনি যেন কখনোই ভুলে না যান যে তিনি কীরকম পরিস্থিতি থেকে উঠে এসেছেন ।

কথা প্রসঙ্গে ওই বিলিওনিয়ার জানান , তিনি এমন এক World Class Technique জানেন যা পৃথিবীর বড় বড় সফল ব্যক্তিরা সাফল্য পাবার জন্য ব্যবহার করে থাকেন ।

এবং তিনি কথা প্রসঙ্গে ওই দু’জনকে বলেন যে তিনি তাদের ওই ওয়ার্ল্ড ক্লাস টেকনিক বিনামূল্যে শেখাতে রাজি আছেন , যদি তারা দু’জন পরদিন ভোর পাঁচটায় দেখা করতে পারেন ।

পরেরদিন যথা সময়ে ঐ বিনিয়োগ ব্যবসায়ী এবং ঐ শিল্পীকে নিয়ে বিলিওনিয়ার মানুষটি তাঁর নিজস্ব প্লেনে যাত্রা শুরু করলেন । তাদের আলোচনা এখানেই শুরু হয় ।

বিলিওনিয়ার জানালেন যে ভোর পাঁচটায় ওঠার ফলেই তিনি আজকের জায়গায় আসতে পেরেছেন । আর এই ভোর পাঁচটায় ওঠার ফলেই তাঁর সৃজনশীলতা (creativity ) বেড়ে যায় , ক্ষমতা (energy) দ্বিগুন হয় আর উৎপাদনশীলতা (Productivity) তিনগুন হয়ে যায় ।


তিনি একে একে বলতে থাকেন যে , আমাদের প্রত্যেকের মস্তিষ্কের ক্ষমতা নির্দিষ্ট । প্রতি মুহূর্তে কাজ করার বা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা আছে । আমরা প্রতিদিন আমাদের মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখি গুরুত্বহীন কাজগুলিতে , যেমন সংবাদপত্র , টিভি , সোশ্যাল মিডিয়া প্রভৃতি । যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের Energy কমতে থাকে । দুপুরের পর কোনো কাজে তাই আর মনোযোগ দিতে পারি না , –ক্রমশঃ অবসন্ন হয়ে পড়তে থাকি । আর তার সঙ্গে সঙ্গেই একাধিক বিষয়ের কাজের ভার বাড়তে থাকে , এভাবে ক্রমে জীবন অতীষ্ট হয়ে উঠতে থাকে আমাদের।

তাই ভোর পাঁচটায় ওঠার ফলে একটা সুবর্ণ সুযোগ গড়ে ওঠে । নিজের সমস্ত কাজের পরিকল্পনা করা যায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই । কারণ আমাদের prefrontal cortex যা আমাদের over thinking করায় , তা বিশ্রামে যেতে থাকে আর ভোরে ওঠার ফলে এই over thinking এর সমস্যা কমতে থাকে ।

এভাবে জেট প্লেন এ তারা বিলিওনিয়ারের বাড়ি মরিশাস এ পৌঁছান । সেখানে তিনি জীবনের সাফল্যের রহস্যটি তাদের বলতে থাকেন ।

বন্ধুরা , এভাবেই রবীন শর্মা তাঁর গল্পের মাধ্যমেই বিষয়গুলি তুলে ধরেন । চার বছর ধ’রে লেখা “The 5AM Club”-এও এই গল্পটির মাধ্যমে মূল বিষয়টি যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা আমরা পাঁচটি পয়েন্টে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরছি ।

১. 20/20/20 Formula :

এই বইটিতে কাহিনীর মূল ব্যক্তি ওই বিলিওনিয়ার সাফল্যের যে প্রথম কথাটি বললেন তা হলো এই 20/20/20 Formula ।
একে বলা হয়েছে Victory Hour । সকাল ৫-টা থেকে ৬-টা পর্যন্ত সময়কে ২০মিনিটের তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে । এই তিনটি পর্যায় এবং তার কার্য কলাপ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা হল :

5am to 5:20am 1st 20 minutes — move — exercise

5:20am to 5:40am 2nd 20 minutes –reflect — meditation , deep thinking , planning etc .


5:40am to 6:00am 3rd 20 minutes — Grow

ঘুম থেকে উঠে 20 মিনিট ঘাম নিঃসরণকারী ব্যায়ামের ফলে শরীরের cortisol হরমোনের নিঃসরণ কমে যায় । এই হরমোন ভয়ের উদ্রেক করে থাকে । BDNF ( Brain Derived Neurotrophic Factor ) প্রোটিন যা মস্তিষ্কের কোষকে মেরামত করে ও স্নায়বিক সংযোগের উন্নতি ঘটায় । ব্যায়ামের ফলে সেটা বৃদ্ধি পায়।
পরের 20 মিনিট peaceful মানসিকতার তৈরির জন্য । এই সময় যে বিষয়গুলো কার্যকর সেগুলি হল ডাইরি লেখা (Journaling) , নিজের সঙ্গে কথা বলা (self affirmation) ইত্যাদি । যা যা ভাবনা আসে এই সময়েই সব লিখে ফেলতে হবে । আর তৃতীয় 20 মিনিট হবে নিজেকে উন্নত করার জন্য । এই সময় ভালো বই পড়া , অডিও বুক , পডকাস্ট ইত্যাদি শোনার মতো শিক্ষণীয় কাজগুলি করার কথা বলা হয়েছে । বইতে এভাবে দেখানো হয়েছে :

২. Freedom from Distraction :

মানুষের attention কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে attention economy । সারা বিশ্বে আজ সোশ্যাল মিডিয়া , টিভি , ইন্টারনেট , ইউটিউব জাঁকিয়ে ব্যাবসা করছে এই attention economy দ্বারাই । কিন্তু সফল ব্যক্তিরা এই ইকোনোমির ফাঁদ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখেন । ইন্টারনেট ফ্রি নয় আসলে আমরাই ফ্রি হয়ে উঠছি ওই ব্যাবসায়ীদের কাছে । আমরা কী দেখছি , কী খুঁজছি সবই attention economy তে ধরা পড়ে । আর সেই অনুসারেই আমাদের সামনে একটার পর একটা মনোলোভা বিষয় উপস্থাপিত হতে থাকে । অর্থাৎ আমাদের attention অন্যের ব্যাবসার বিষয় হয়ে উঠছে । এভাবেই আজ ক্রমে আমরাও তাদের দাস হয়ে উঠছি । আমাদের মূল্যবান সময় , মেধা , শক্তি হারিয়ে আমরা একই রকম থেকে যাচ্ছি দিনের পর দিন ।

সফল হতে এই সব Distraction থেকে মুক্ত হতে হবে । এককথায় time wasting activity থেকে মুক্ত হওয়ার কথাই বলা হয়েছে বইটিতে ।

৩. Three Step Success Formula :

এই বইতে প্রাপ্ত আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় হল 3 step formula । বিষয়টি নিম্নরূপ :

খুব ভালোভাবে সচেতন হলেই তার better result-ও মিলবে । সচেতনতার ফলে সবকিছু দেখার ও বিবেচনার নজর বদলে যাবে এবং খোলা মনের উদার দৃষ্টির অধিকারী হওয়া সম্ভব । আর তার ফলেই নিজের পছন্দগুলোও better হতে শুরু করবে । যার ফলশ্রুতিতে better result মিলতে বাধ্য ।

জেনে রাখুন : হতাশা দূরীকরণের ১০ টি উপায়

৪. The Four Interior Empires :

মানুষের বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে যেমন interior বা বসবাসের জন্য ভেতরের স্থানটিকে সুন্দর ও সুখকরভাবে সাজানোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয় । তেমনি আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে চারটি empires কেও সুন্দরভাবে বিনির্মাণ করা প্রয়োজন । এই চারটি interior empires হলো :-
I) Mindset
II) Heartset
III) Healthset
IV ) Soulset

মানসিকতা তৈরির সঙ্গে হৃদয়ের আবেগকেও যুক্ত করতে হয় । এই আবেগ মানুষকে ভেতর থেকে তাগিদ তৈরি করে । আর ভাবো খুব সফল হবার পর সেটা উপভোগ করার জন্যই শরীরের সক্ষমতার প্রয়োজন কতটা । আর শারীরিক সুস্থতা না থাকলে কোনোভাবেই উন্নতি করা যাবে না । তাই স্বাস্থ্যও নির্মাণ করা প্রয়োজন । আর একটি বিষয় হলো Soulset , spirituality বা আধ্যাত্মিকতা । এটা খুব প্রয়োজন হলো মানসিক প্রশান্তির জন্য । এটা না হলে জীবনের কোন উদ্যেশ্যই বোঝা সম্ভব নয় । তাই বলা হয়েছে জীবনের এই চারটি Empires কে সুন্দরভাবে build করলেই জীবনে সত্যিকারের সাফল্য আনা সম্ভব ।

এই চারটি অভ্যন্তরীণ বিষয় বইটিতে যেভাবে চিত্রিত করা হয়েছে তা দেখানো হল :

৫. The Habit Installation Protocol :

এই বইটিতে লেখা একটি দারুন শিক্ষণীয় বিষয় হল , যে কোনো অভ্যাস গড়ে তুলতে 66 দিন সময় লাগে । বইতে দেওয়া চিত্রটি দেখলেই বোঝা যাবে :

অর্থাৎ প্রথম 22 দিন পুরোনো অভ্যাস ত্যাগ করতে কাজে লাগবে । এই পর্যায়টি খুব কঠিন । নতুন অভ্যাসের সাথে মানিয়ে নিতে খুব কষ্ট হয় এই সময় ।
কষ্ট করে প্রথম 22 দিন কাটানোর পর দ্বিতীয় 22 দিন নতুন অভ্যাস গড়ে ওঠার জন্য । আর তৃতীয় 22 দিন ভালো লাগতে শুরু করবে । এই দিনগুলোতে নতুন অভ্যাস গুলি Subconscious mind এ স্থান নিতে শুরু করবে । এর পর নতুন অভ্যাসই হয়ে যাবে স্বাভাবিক রুটিন ।


এইভাবে যত কঠিনই হোক না কেন যারা নিয়মিত কাজগুলি করেন তাদের কাছে বিষয়গুলি সহজ হয়ে যায় । আর জীবনে সাফল্যের পর সাফল্য অর্জন করতে করতে সাফল্যের শিখরে অবস্থান করেন । অন্যদিকে বাকিরা তাদের ঈর্ষা করে আর নিজেদের ভাগ্যকে দোষ দিতে থাকে । সেইসঙ্গে সমালোচনা , নিন্দা – মন্দের ভীড়ে জীবন বিসর্জন দিয়ে শেষ পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ।

তাহলে বন্ধুরা , আজ আমরা জানলাম Robin Sharma র লেখা The 5AM Club বইটি থেকে সাফল্যের মূল রহস্যগুলি কী , এবং কীভাবে সফল ব্যক্তিরা সফল হন এই সম্পর্কে । লেখাটি তোমাদের কেমন লেগেছে কমেন্ট করে জানাও । আমাদের ফেসবুকে সঙ্গে থাকো । আর লিখে ফেলো কোন কোন বিষয়ের উপর লেখা চাও তোমরা । খুব ভালো থেকো , সুস্থ থেকো ।

This Article Is Written By

Kishore Majumder
Editor & Writer

Kishore Majumder is the editor and writer of preronajibon. He is a teacher, poet and songwriter of bengali culture. He is also well-known as a youtuber and reciter of bengali poetry . He likes to inspire others to live a better life.

Share
PreronaJibon

Published by
PreronaJibon