ভারতবর্ষ সহ বিশ্বের ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ জন্মেছিলেন যারা নিজেদের মতাদর্শ ও কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানব সভ্যতা ও চিন্তাধারার মধ্যে আমূল পরিবর্তন করেছিলেন, যা সমাজ ও সভ্যতার উন্নতিতে এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। এই মানুষগুলির মধ্যে অন্যতম ছিলেন মহাত্মা গান্ধী বা গান্ধীজি। গান্ধীজীর সম্পূর্ণ নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, তিনি ১৮৬৯ সালের ২রা অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯১ সালে তিনি লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করে ভারতে ফেরেন। দুই বছর ভারতে থাকার পর তিনি কর্মসূত্রে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। ১৯১৫ সালে তিনি ভারতবর্ষে ফিরে আসেন এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের ওপর হয়ে থাকা সামাজিক ও রাজনৈতিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার অবদান অনঃস্বীকার্য। আজ আমরা জানবো গান্ধীজীর কিছু বিখ্যাত উক্তি সম্পর্কে।
১.”এমন ভাবে বাঁচো যেন কাল তুমি মরবে। এমনভাবে শেখো যেন তুমি সর্বদা বাঁচবে।“-মহাত্মা গান্ধী
২.”আপনি নিজে সেই পরিবর্তন হোন যা আপনি সারা বিশ্বে সবার মধ্যে দেখতে চান।“- মহাত্মা গান্ধী
৩.”আপনার বিশ্বাস আপনার চিন্তাধারা হয়ে যায়, আপনার চিন্তাধারা আপনার শব্দে পরিণত হয়, আপনার শব্দ আপনার কর্ম হয়ে যায়, আপনার কর্ম আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়, আপনার অভ্যাস ই আপনার মূল্য, আপনার মূল্য ই আপনার নিয়তি।“- মহাত্মা গান্ধী
৪.”যদি সঠিক পথ বেছে নেন, তাহলে আশা ছাড়বেন না। কারণ, যতই বাঁধা-বিপত্তি আসুক না কেন একদিন না একদিন ভাল মানুষদের জয় হবেই হবে।“- মহাত্মা গান্ধী
৫.”একজন মানুষের চরিত্র এবং জীবন কতটা সুন্দর হবে, তা নির্ভর করে তাঁর মানসিকতার উপরে। তাই কোনও মানুষকে যদি ভিতর থেকে চিনতে চান, তাহলে তাঁর মানসিকতা কেমন, তা জানার চেষ্টা করুন।“- মহাত্মা গান্ধী
৬.”কাউকে সন্তুষ্ট করতে বা কোনও ঝামেলা এড়াতে কোনও কাজে ‘হ্যাঁ’ বলাটা সবথেকে বড় পাপ। যদি মনে করেন এই কাজটা আপনি করতে পারবেন না, তাহলে বিশ্বাসের সঙ্গে ‘না’ বলতে শিখুন।“- মহাত্মা গান্ধী
৭.”মানুষ তার চিন্তাধারা নির্মিত প্রাণী, সে যা ভাবে তাই হয়ে যায়।“- মহাত্মা গান্ধী
৮.”মানুষ নিজেকে যা ভাবে তাই হয়ে যায়। যদি আমি ভাবি আমি একটি কাজ করতে পারব না, সম্ভবত আমি কাজটি করতে অক্ষম হয়ে যাব। অন্যদিকে, আমি যদি বিশ্বাস করি যে আমি কাজটি করতে পারব, তাহলে অবশ্যই আমি কাজটি করার জন্য সক্ষমতা অর্জন করব, যদিও প্রথম দিকে আমি কাজটি করতে সমর্থ নাও হই।“
৯.”এমন হতে পারে যে আপনি জানতে পারলেন না আপনার কর্মের ফলাফল কি হল। কিন্তু আপনি যদি কিছু না করেন, তবে কোন ফলাফলই উৎপন্ন হবে না।“
১০.”কেউ আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে বা সমালোচনা করলে আপনার কিছু করার নেই। কিন্তু সেই খারাপ ব্যবহার বা সমালোচনার জবাব আপনি কীভাবে দিচ্ছেন, তা কিন্তু আপনি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাই ভেবে-চিন্তে জবাব দিন।“
১১.”সামান্য অভ্যাস অধিক উপদেশের থেকে ভালো।“
১২.”নিজস্ব প্রয়োজনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছোট জীব ইতিহাস পরিবর্তন করতে পারে।“
১৩.”আপনি আদৌ শক্তিশালী কিনা, তা কিন্তু দৈহিক ক্ষমতার উপর নির্ভর করে না। বরং আপনি মানসিক ভাবে কতটা শক্তিশালী,তার উপর সবটা নির্ভর করে থাকে। তাই মানসিকভাবে নিজেকে শক্তিশালী করে তুলুন।“
১৪.”নোংরা পায়ে ঘরের ভিতরে আসা যেমন ঠিক নয়, তেমনই নেতিবাচক চিন্তাকে প্রশ্রয় দেওয়াও উচিত নয়।“
১৫. “আমার অনুমতি ছাড়া আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে মানসিকভাবে আঘাত করতে পারেনি।“
১৬.”অনেক টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন না দেখে, বরং ছোট ছোট সুখের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ুন। দেখবেন, দুঃখ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।“
১৬.”পরিশ্রম করেই সন্তুষ্ট থাকুন। তার ফল কী ফেলেন তা নিয়ে বেশি ভাবতে যাবেন না।“
১৭.”মানুষ হিসেবে আমাদের সবথেকে বড় দক্ষতা কি জানেন? নিজেকে বদলে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের মধ্যে।“
১৮.”সর্বদা নিজের বিচার, শব্দ এবং কর্ম অনুসারে লক্ষ্য স্থির করুন। সর্বদা নিজস্ব চিন্তাধারা, বিচার কে পবিত্র রাখুন এবং সেই ভাবে লক্ষ্য স্থির করুন। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।“
১৯.”সত্য এক, পথ অনেক।“
২০.”শান্তির কোন পথ নেই, কেবলমাত্র শান্তি আছে।“
২১.”যেই দিন প্রেমের শক্তি, শক্তির প্রেম থেকে বড় হবে সেই দিন বিশ্বে শান্তি কায়েম হবে।“
২২.”প্রত্যেক মানুষকে তার নিজের মধ্যেই শান্তি খুঁজতে হবে। আর শান্তি কে বাস্তবায়িত করার জন্য বাহ্যিক পরিস্থিতি দ্বারা নিজেক অপ্রভাবিত রাখতে হবে।“
২৩.”আমরা যদি দুনিয়াতে প্রকৃত শান্তি চাই, তবে তা শিশুদের সাথে শুরু করতে হবে।“
২৪.”আমি হিংসার বিরোধিতা করি কারণ যখনই মনে হয় হিংসার দ্বারা কিছু ভালো হচ্ছে তখন সেটা অস্থায়ী হয় আর যখন খারাপ হলে সেটা স্থায়ী হয়।“
২৫.”হিংসার ছাপ সহজে মিটতে চায় না। তাই অহিংসার পথে এগলেই মানুষের মঙ্গল।“
২৬.”হিংসা গড়তে জানে না। সে শুধু ধ্বংস করে।“
২৭.”যে সত্যে নম্রতার ছোঁয়া নই, সেই সত্য অহংকারীর ক্যারিকেচার ছাড়া আর কিছুই নয়।“
২৮.”সততা, নম্রতা এবং সাহস, প্রতিটি মানুষের মধ্যেই এই তিনটি গুণ থাকা চাই।“
২৯.”যখন আমি নিরাশ হয়, তখন আমি মনে করি ইতিহাসে সর্বদা সত্য এবং ভালোবাসার জয় হয়েছে। অনেক স্বেচ্ছাচারী রাজা এবং খুনি কিছু সময়ের জন্য অজয় ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের পতন হয়েছে। সর্বদা এই বিষয়টি মনে রাখবে।“
৩০.”যেখানে ভালবাস রয়েছে, সেখানেই তো জীবনের সন্ধান মেলে।“
৩১.”আমি যেমন, ঠিক সেই ভাবে নিজেকে মেলে ধরাটাই আসল স্বাধীনতা।“
৩২.”জীবন না দিলে যেমন স্বাধীনতার স্বাদ মেলে না, তেমনই স্বাধীনতাকে বাঁচিয়ে রাখতেও প্রয়োজনে জীবন দিতে হবে।“
৩৩.”সাধারণ মানুষদের হাতে যদি নিজেদের মতো করে বেঁচে থাকার অধিকার না থাকে, তাহলে সেই রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তকমা দিলে ভুল কাজ হবে।“
৩৪.”রাষ্ট্র নিজের দায়িত্ব সঙ্গে পালন না করলে শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাধ গড়ে তোলাটাই একজন নাগরিকের প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য।“
৩৫.”প্রকৃত গণতন্ত্রে একজন সবল ব্যক্তির যে অধিকার, সেই একই অধিকার একজন দুর্বলেরও থাকা উচিত।“
৩৬.”স্বাধীনতা এবং দাসত্ব, দুইই হল মানুষের মেন্টাল স্টেট।“
৩৭.”বিরোধী শক্তির মতামত শোনার মতো ধৈর্য যদি আমাদের না থাকে, তাহলে নিজেদের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ভাবাটা ভুল হবে। কারণ, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।“
৩৮.”বল প্রয়োগ করে বা ভয় দেখিয়ে নেতা হওয়া যায় না। জননেতা হতে গেলে মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, তাঁদের একজন হয়ে উঠতে হয়।“
৩৯.”দেশের স্বাধীনতা শুধু বীরত্বের মধ্যে দিয়েই অর্জন করা যায় না।“- মহাত্মা গান্ধী
৪০.”একটি দেশের মহানতা এবং নৈতিক প্রগতি এই বিষয়ে মাপা যেতে পারে যে সেই দেশে জন্তু-জানোয়ার দের সাথে কি রকম ব্যবহার করা হয়।“
৪১.”ভুল করার স্বাধীনতা না থাকলে সেই স্বাধীনতা মূল্যহীন।“
[ আরও পড়ুন : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনী, উক্তি ও সমাজে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান ]
৪২.কোন কিছুতে বিশ্বাস করা কিন্তু তাতে জীবন অতিবাহিত না করা অন্যায়।
৪৩.”সাতটি মহাপাপ: কর্মহীন ধন, অন্তরাত্মা হীন সুখ, মানবতাহীন বিজ্ঞান, চরিত্রহীন জ্ঞান, নীতিহীন রাজনীতি, নৈতিকতা ছাড়া ব্যবসা, ত্যাগ ছাড়া পুজো।“
৪৪.”বিশ্বের সব ধর্ম অন্যান্য বিষয়ে নানা মত পোষণ করলেও এই বিষয়ে একমত যে দুনিয়াতে সত্য ছাড়া আর কোন কিছুই চিরদিন বাঁচেনা।“
৪৫.”আমার ধর্ম সত্য ও অহিংসার উপর নির্ভরশীল। সত্য আমার ঈশ্বর। অহিংসা তাকে পাওয়ার উপায়।“
৪৬.”মনুষত্বের উপর বিশ্বাস হারাবেন না। মনুষত্ব ভালো সাগরের মত। সাগরের কয়েক ফোঁটা জল নোংরা হলে সমস্ত সাগর নোংরা হয়ে যায় না।“
৪৭.”আমি তাকেই ধার্মিক মনে করি যে অন্যের ব্যথা বুঝতে পারে।“
৪৮.”আমি দুনিয়ার সব ধর্মের মূল সত্যে বিশ্বাস করি।“
৪৯.”হ্যাঁ আমি একজন মুসলিম, একজন খ্রিস্টান, একজন বৌদ্ধ এবং একজন ইহুদি।“
৫০.”পাপকে ঘৃণা করুন, পাপীকে নয়।“
৫১.”ঈশ্বরের কোন ধর্ম নেই।“
৫২. “ক্রোধ এবং অসহিষ্ণুতা হল সঠিক বোধগম্যতার শত্রু।“
৫৩.”প্রার্থনা চাওয়া নয়। প্রার্থনা হলো আত্মার লালসা। প্রার্থনা হল প্রতিদিন নিজের দুর্বলতার স্বীকারোক্তি। প্রার্থনার বচনে মন লাগানো, বচন থাকতেও মন না লাগানোর থেকে ভালো।“
৫৪.”একটি কাজের মাধ্যমে কাউকে খুশি করা প্রার্থনায় রত হাজার মাথার থেকে ভালো।“
৫৫.”চিন্তার থেকে অধিক আর কোন কিছুই শরীরের ক্ষতি করে না এবং যে একটু হলেও ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখে তার কোনো কিছুর জন্য চিন্তা হলে লজ্জিত হওয়া উচিত।“
৫৬.”কর্ম তার ফলের থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে সঠিক কর্ম করতে হবে। আপনি সেই কর্মের ফল পাবেন কিনা তা আপনার হাতে নেই। তার মানে এই নয় যে আপনি সঠিক কর্ম করা ছেড়ে দেবেন।“
৫৭.”দয়ালু ভাবে করা ছোট্ট কর্ম প্রার্থনাই নত হাজার মাথার থেকে অধিক ভালো।“
৫৮.”তখনই কথা বলো যখন তা মৌন থাকার থেকে ভালো।“
৫৯.”মনুষ্যত্বের মহানতা মনুষ্য হওয়াতে নয়, দয়ালু হওয়াতে।“
৬০.”চোখের বদলে চোখ সমস্ত বিশ্বকে অন্ধ করে দেবে।“
৬১.”আমার জীবন আমার বার্তা।“
৬২.”ভয়ই হল শত্রু, যদিও আমরা সেটাকে ঘৃণা ভেবে থাকি, কিন্তু আসলে এটা ভয়।“
৬৩.”যে দুর্বল সে কোনদিনও ক্ষমা করতে পারে না। ক্ষমা হলো বলবান এর লক্ষণ।“
৬৪.”জনসমর্থন ছাড়া সত্য দাঁড়িয়ে থাকে। সত্য আত্মনির্ভরশীল।“
৬৫.”সাহসীরাই মন খুলে ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারেন। কারণ, এ কাজ ভীতুদের সাধ্যের বাইরে।“
৬৬.”নিজস্ব জ্ঞানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিশ্বাস করা মুর্খতা। মনে রাখবেন সবথেকে শক্তিশালী মানুষ দুর্বল হতে পারে এবং বুদ্ধিমান মানুষও ভুল করে।“
৬৭.”তুমি আমাকে শিকলে বেঁধে রাখতে পারো, তুমি আমাকে কষ্ট দিতে পারো, তুমি আমার এই শরীর নষ্ট করতে পারো, কিন্তু তুমি আমার মনকে কোনদিনই বন্দী করে রাখতে পারবেনা।“
৬৮.”প্রতি রাতে, যখন আমি ঘুমোতে যাই, আমি মারা যায়। এবং পরদিন সকালে যখন আমার ঘুম ভাঙে, আমার পুনর্জন্ম হয়।“
৬৯.”নিঃশব্দ সবথেকে বড় কথন। ধীরে ধীরে গোটা দুনিয়া আপনাকে শুনবে।“
৭০.”আমার অনুমতি ছাড়া আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে মানসিকভাবে আঘাত করতে পারেনি।“
৭১.”ভিড়ের অংশ হওয়া সহজ কাজ। কিন্তু একা দাঁড়ায়ে লড়াই চালাতে হলে সাহসের প্রয়োজন পড়ে।“
৭২.”অনেক টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন না দেখে, বরং ছোট ছোট সুখের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ুন। দেখবেন, দুঃখ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারবে না।“
৭৩.”জীবন নশ্বর, তাকে অমর করতে শেখো।“
৭৪.”চোখের বদলে চোখ গোটা বিশ্বকে অন্ধ করে দেবে।“
৭৫.”ব্যক্তির দেহ, মন ও আত্মার সুষম বিকাশের প্রয়াস হলো শিক্ষা।“ -মহাত্মা গান্ধী
“True education must correspond to the surrounding circumstances or it is not a healthy growth.“
আশা করি মহাত্মা গান্ধীর উক্তি সমূহ লেখাটি ভালো লাগবে। ভালো লেগে থাকলে বাকিদের সাথে শেয়ার করো। নিয়মিত লেখার আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটি ফলো করো।