১৯৭৯ সালে Harvard M.B.A Programme এ স্টুডেন্টদের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণা করা হয়। স্টুডেন্টদের জিজ্ঞেস করা হয় , তাদের মধ্যে যারা এখানে রয়েছে তাদের জীবনে ভবিষ্যতের জন্য কোন লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে কি না ? কিংবা সেগুলো অর্জনের জন্য কোন পরিকল্পনা করা আছে কি না ? ৮৪% student উত্তর দিল , না তাদের জীবনে কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই। ১৩% student উত্তর দিল যে, হ্যাঁ আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে , কিন্তু তা আমাদের মাথায় আছে, কোথাও লিখিত নেই। তাদের মধ্যে মাত্র ৩% এর লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা লিখিত ছিল।
১০ বছর পর একটা ইন্টারভিউয়ে আবার তাদের সাক্ষাতকার নেওয়া হল, এবং দেখা গেল , ১৩% স্টুডেন্ট যাদের অলিখিত লক্ষ্য ছিল তাদের উপার্জন লক্ষহীন ৮৪% স্টুডেন্টদের থেকে দ্বিগুন। কিন্তু যে তিন শতাংশের লিখিত ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল তাদের উপার্জন ছিল পুরো ৯৭ শতাংশের থেকে অনেক বেশি , প্রায় ১০ গুন বেশি।
আমরা যখন আমাদের লক্ষ্যগুলি লিখে ফেলি তখন সাফল্য পাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এই সমীক্ষাটি নিয়ে আবার অনেক জল্পনাও আছে যে এটা আদৌ হয়েছিল কি হয়নি , কিন্তু অনেক বইতে এটার উল্লেখ আছে। আমি সত্য টা জানি না , তবে গবেষণায় যে outcome টা দেখানো হয়েছে তাতে এটা প্রমাণিত হয় যে , আমরা যখন আমাদের লক্ষ্যগুলি লিখে রাখি তখন সেটা achieve করার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়।
তুমি যদি না জানো তুমি কোথায় যেতে চাইছো তাহলে তুমি কখনোই তোমার গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারবে না। কারন বেশিরভাগ মানুষ জানেই না যে তারা আসলে কোথায় যাচ্ছে। কারন তারা কখনো সেই জায়গায় যাওয়ার কথা ভাবে নি। তারা জীবন দ্বারা চালিত হতে থাকে কোন ডিরেকশন ছাড়াই। কারন বেশিরভাগ লোকের কাছেই স্পষ্ট , প্রমাণযোগ্য, সময়সীমাবদ্ধ লক্ষ্য নেই যে তারা সেটার ওপর কাজ করবে। লক্ষ্য যদি স্পষ্ট ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয় তবে তুমি তোমার স্বপ্ন অবশ্যই ছুঁতে পারবে। তাহলে চলো দেখা যাক সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ ও কর্মসম্পাদন করতে আমরা কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি।
১. তোমার লক্ষগুলি এখনই লিখে ফেল : –
সারাদিন আমাদের মাথায় অনেক আইডিয়া ঘুরতে থাকে কিংবা অনেক কিছু হবার ইচ্ছা জন্মে মনে। এত ভাবনা চিন্তার মাঝে আমরা গুলিয়ে ফেলি ঠিক কোনটা আমাদের জীবনের সঠিক লক্ষ্য। আমরা যদি আমাদের লক্ষ্যগুলি কোথাও লিখে রাখি এবং সেটা আমাদের সঙ্গে সর্বদা রাখি তাহলে সেটা আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দেবে কোন কোন কাজগুলি করা এখনো বাকি , বা কোন কোন লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে হবে। যদি কখনো লিস্ট করা কাজটা নাও করতে পারি তবুও সেটা বার বার আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে , যাতে আমরা কাজটা করি। প্রকৃতপক্ষে লক্ষ্যের লিখিত রূপ একটা Guide Map এর কাজ করে, যা আমাদের প্রগতি ও সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে।
২০১৫ সালে একটি গবেষণায় ডোমিনিক্যান ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ডঃ গেইল ম্যাথিউস দেখিয়েছিলেন যে , সফল লক্ষ্য অর্জনের জন্য যারা কর্মক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লক্ষগুলি লিখে রেখেছিল , সেই লক্ষ্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল এবং লক্ষ্য নির্দেশিত কর্মসম্পাদন করেছিল তারাই জীবনে তাদের লক্ষগুলি অর্জন করতে পেরেছে। সুতরাং আজই তোমার লক্ষগুলি লিখে ফেল আর সেটার ওপর action নাও।
২. লক্ষ্যগুলিকে smart বানাও : –
অর্থাৎ তুমি যে লক্ষ্য গুলি স্থির করেছো একবার দেখে নাও সেগুলি স্মার্ট Goal কি না। SMART শব্দটি বিশ্লেষণ করে বলছি :–
ক. S – Specific :- তোমার লক্ষ্য হবে সুনির্দিষ্ট। লক্ষ্যের মধ্যে যেন কোন অসংগতি না থাকে। তোমার লক্ষ্য যত পরিষ্কার হবে তত তাড়াতাড়ি সেই লক্ষে পৌঁছতে পারবে। যেমন – অনেকেই বলে থাকে আমি সুখী হতে চাই , ধনী হতে চাই , সাফল্য পেতে চাই ইত্যাদি। এগুলি কোনো লক্ষ্য নয়, কেবল একটি ইচ্ছা মাত্র। ধরো, আমার লক্ষ্য হচ্ছে ওজন কমাবো , কিন্তু এটি একটি ইচ্ছা মাত্র , এই লক্ষ্য হয়ে উঠবে যখন আমি সুনির্দিষ্ট ভাবে ঠিক করব যে আমি তিরিশ দিনে চার কেজি ওজন কমাবো, না পারলে খাওয়া ছেড়ে দেব।
খ. M – Mesarable ;- তুমি যে লক্ষ্য ঠিক করবে সেটা যেন অবশ্যই পরিমাপযোগ্য হয়। যদি আমরা পরিমাপ করতে না পারি তাহলে আমরা সেই লক্ষ্য সাধন করতেই পারবো না।
গ. A – Attainable :- লক্ষ্য এমন হতে হবে যেন সেটা অর্জনযোগ্য হয়। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য যত কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হোক না কেন তবু যেন সমস্ত বিপত্তি অতিক্রম করে তা লাভ করা সম্ভব হয়। লক্ষ্য যদি সামর্থ্যের বাইরে হয় তবে তা তোমাকে হতাশ করতে পারে।
ঘ. R – Realistic :- লক্ষ্য হতে হবে বাস্তবসম্মত।যেমন- কেউ বলল আমি দশ দিনে দশ কেজি ওজন কমাব।এটা সম্ভব নয়।
ঙ. T – Time -bound :- লক্ষ্যটা কতদিনের মধ্যে পূরণ করা যাবে সেটা সুনির্দিষ্ট থাকতে হবে। অর্থাৎ প্রত্যেকটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটা সময়সীমা set কর , অর্থাৎ কত দিন বা কত মাস বা কত বছরের মধ্যে তুমি তা অর্জন করতে চাও। প্রত্যেকটা লক্ষ্যের যেন একটা শুরুর তারিখ এবং একটি সমাপ্তির তারিখ থাকে।
৩. এবার কাজ শুরু কর :-
তোমার জীবনের লক্ষ্যগুলি স্থির করলে , সেগুলি লিখে ফেললে , তারপর দেখলে সেগুলি SMART Goal কি না। এবার শুরু লিখিত লক্ষ্য গুলিকে অর্জনের জন্য কাজ করা। অনেকেই বড় বড় goal set করে কিন্তু অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য কোনো action নেয় না। ধরো , আমার লক্ষ্য হল একটি আত্মউন্নয়ন মূলক বই লেখা , আমি ঠিক করলাম বইটি লিখব। সময়সীমাও বেঁধে দিলাম কবে ,কখন , কোথাথেকে বইটি প্রকাশ করব। সমস্ত কিছু প্ল্যান করার পর এবার আমি বসে আছি , তাহলে কি কোনোদিন আমার বইটি প্রকাশ হবে ? নিশ্চয়ই না। তার জন্য আমাকে বইটি লিখতে হবে। রোজ বইটির ওপর কাজ করতে হবে তবেই নির্দিষ্ট দিনে আমি তা শেষ করতে পারব।
তাই শুধু লক্ষ্য লিখে ফেলাটাই শেষ কাজ নয় , সেটার ওপর কাজ করাটাই অন্যতম প্রধান কাজ। লক্ষগুলিকে খন্ড খন্ড করে বিভক্ত কর , একেবারেই বড় Goal set কর না , রোজ ছোট ছোট Goal set কর আর সেটার ওপর প্রতিনিয়ত কাজ করে যাও। দিনের শেষে দেখো কতটা কাজ করতে পেরেছো , কতটা করা বাকি আছে। বাকি থাকলে হতাশ হয়ো না। ছোট ছোট জয় গুলিকে উদযাপন করো। পাশে কাউকে না পেলে নিজেই নিজেকে বাহবা দাও।
কেউ তোমাকে বিশ্বাস না করলে , নিজের প্রতি কখনো বিশ্বাস হারিও না।
আর লক্ষ্যের প্রতি শুধু আগ্রহী হয়ো না প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হও। তোমার লক্ষ্যের সাথে কোনো একটি গভীর ইমোশনকে যুক্ত করো। খোঁজো কি কারনে সেই লক্ষ্য অর্জন করা তোমার জন্য জরুরী ? দেখবে একদিন ঠিক তুমি তোমার লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছো। সর্বদা ইতিবাচক ভাবনা পোষণ কর, ইতিবাচক বাক্য বল নিজেকে এবং বিশ্বাস নিয়ে আজই লক্ষ্যের প্রতি এগোতে থাকো।ঠিক একদিন তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছোবে।
View Comments
Very much encouraging lines.....
Thanks for your support.