ব্রেক-আপের পর কীভাবে নিজেকে ভালো রাখবে ?
ব্রেক-আপ অর্থাৎ সম্পর্কের বিচ্ছেদ ৷ অনেক সময় মানুষ একটি সম্পর্কের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে থাকতে থাকতে , গভীরভাবে সে সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে ফেলে ৷ তারপর হঠাৎই কোনো কারনে ,সেই সম্পর্ক ভেঙে গেলে ভীষণ রকম অবসাদ মানুষকে গ্রাস করে ৷ এটাই স্বাভাবিক ৷
কিন্তু কীভাবে তুমি সেই অবসাদ থেকে নিজেকে মুক্ত করে ,স্বাভাবিক আর দশটা মানুষের মতো একটা ভালো জীবন যাপন করতে পারো , সে বিষয়েই আজ তোমাদের সাথে আলোচনা করব ৷ তবে তার আগে আমাদের মাথায় একটা জিনিস ভালো করে ঢুকিয়ে নিতে হবে ,আমাদের মস্তিষ্ক(brain) এমনভাবে তৈরী , তুমি যেভাবে তোমার মস্তিষ্ককে ব্যবহার করবে , সেভাবেই সে কাজ করতে বাধ্য ৷ এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কর্ম জলের ধর্মের মতোই বললেও কোনো অত্যুক্তি হয় না ৷
১ ) ব্রেক-আপ মস্তিষ্কের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে :
একটি গবেষণায় দেখা গেছে , যে কোনো ধরনের শারীরিক ব্যথা আমাদের মস্তিস্কের(brain) যে অংশকে সক্রিয় করে , ঠিক একইভাবে যে কোনো ধরনের মানসিক যন্ত্রণাও আমাদের মস্তিষ্কের একই অংশকে উত্তেজিত করে ৷ সুতরাং শারীরিক বা মানসিক এই দু’ধরনের ব্যথাই কিন্তু মস্তিষ্কের কাছে সমান ৷
সমস্যা হল , মানুষের শারীরিক যে কোনো যন্ত্রণা বিভিন্ন ঔষধের দ্বারা নিরাময় হতে পারে ৷ কিন্তু মানসিক ব্যথা যেহেতু কোনো ঔষধের দ্বারা নিরাময় সম্ভব নয় ৷ সুতরাং কেবল মাত্র তোমার বিভিন্ন চিন্তা শক্তির দ্বারাই , তোমার মানসিক যন্ত্রণাকে তুমি বিলুপ্ত করতে পারো ৷এক্ষেত্রে তোমার ডাক্তার কিন্তু তুমি নিজেই ৷
২) ব্রেক-আপের অবসাদ থেকে মুক্তির পথ :
এতদিন সে যা কিছু বলেছে , যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে , সবই কী তাহলে মিথ্যে ! এই প্রশ্নগুলোই তোমাকে বার বার বিদ্ধ করবে , যার উত্তর তোমার কাছে থাকার কথাও নয় ৷ সমস্ত পৃথিবী তোমার কাছে মিথ্যে মনে হবে , মনে হবে সব স্বপ্ন ভেঙে চৌচির হয়ে গেল ৷
আসলে তুমি সেই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে , তোমার চিন্তাভবনাটাও একটা ছোট্ট গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে ৷ আর তোমার মস্তিষ্কও সারাক্ষণ তা নিয়েই ভাবছে ৷ ফলে তুমি গভীর অবসাদে ভুগবে ,খুবই স্বাভাবিক ৷ আগেই বলেছি , তুমি যেভাবে ভাববে , তোমার মস্তিষ্কও সেরকই ভাবতে বাধ্য ৷ চলো এবার দেখা যাক , ব্রেক আপের পর , কীভাবে নিজেকে অবসাদ থেকে মুক্তি দিতে পারো ৷
৩) ইতিবাচক চিন্তাভাবনা (positive thinking) :
যেহেতু তোমার মস্তিষ্ক তোমার চিন্তা ভাবনার ক্রীতদাস ৷ সুতরাং মনে রাখবে ,ব্রেক আপের অবসাদ কাটাতে হলে , যতটা পারো নিজেকে একটু বেশি পরিমান সময় দিয়ে , সবকিছু গভীরভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করো ৷ কথা দিচ্ছি , ভাবতে ভাবতে একটা রাস্তা ঠিক বের হতে বাধ্য , যা তোমাকে সব অবসাদ থেকে মুক্তি দেবে ৷ কিন্তু সেই রাস্তা অবশ্যই বের হবে , যার ভিত্তিই হল ইতিবাচক ভাবনা ৷
উদাহরন হিসেবে যদি একটু বলি , তবে কয়েকটা ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা পয়েন্ট আকারে আসতে পারে :-
(i) যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে ৷ তার জন্য ভবিষ্যতের দিকে তাকাও ৷
(ii) যে সম্পর্কটা ভেঙেছে ,সেটা হয়তো কখনই হবার ছিল না ৷ আজ না কাল সেটা নষ্ট হতই হত ৷
(iii) হয়তো সে তোমার উপযুক্ত ছিল না ৷ অথবা তুমি তার ৷
৪) নিজেকে ভালোবাসতে শেখো (self love)
আমরা এ রকম পরিস্থিতির সন্মুখীন হলেই , সাধারণ যা করে থাকি , তা হল আমরা নিজেকেই হারিয়ে ফেলি ৷ আমরা ভুলে যাই শরীরের যত্ন নেওয়া ৷ অর্থাৎ আমরা নিজেকে ভালোবাসতেই ভুলে যাই ৷ আর কেউ যদি নিজেকেই ভালোবাসতে না জানে , সে অন্য কাউকে ভালোবাসতেও কখনও পারে না ৷ নিজেকে ভালোবাসা বলতে যা বোঝায় তা হল—
(i) সময় মতো স্নান,খাওদাওয়া করো ৷ শরীরকে সুস্থ রাখো ৷ তাহলে অনেক পজিটিভ চিন্তা চলে আসতে বাধ্য ৷
(ii) ছেলেদের ক্ষেত্রে চুল দাঁড়ি বড়ো হলে , সেগুলো কেটে ফেল ৷ নিজেকে পরিপাটি রাখলে , মনের ভেতর পজিটিভ এনার্জি আসে ৷ এটাই হিউম্যান সাইকোলজি ৷
(iii) বেশি রাত অবধি না জেগে , তাড়াতাড়ি ঘুমোও , পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাও ৷ তার জন্য দিনের বেলা ভালো লাগার মতো , পরিশ্রমের কাজ করো ৷
(iv) সকালে উঠে শরীর চর্চা এবং মেডিটেশন করো ৷ দেখবে সারাদিন মনটা তরতাজা থাকবে এবং বিভিন্ন রকম কাজের জন্য এনার্জি আসবে , যা তোমাকে সেই অবস্থা থেকে দূরে রাখবে ৷
(v) বন্ধুদের সাথে খোলামেলা আড্ডায় অংশ নাও । দেখবে
সবার মধ্যেই কম বেশি দুঃখ রয়েছে । সব ভুলে কীভাবে নতুন ভাবে বাঁচা যায় — তার আলোচনা করো । দেখবে একদিন যা নিয়ে কেঁদেছিলে , তা নিয়েই একদিন হাসাহাসি করবে ।
জেনে রাখুন : চুমু খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
৫) নিজেকে খুঁজে বের করো :
এরকম পরিস্থিতির শিকার হলে , দেখবে অতীত রোমন্থনের জন্য অজস্র সময় তুমি বের করে নিচ্ছ ৷ যে সব ভাবনায় তোমার কিচ্ছু লাভ তো হবেই না — সময় নষ্ট ছাড়া ৷ আর সেটা তুমি বুঝতে পারবে অনেক পরে ৷ তাই সেই অবসর গুলোয় অতীত রোমন্থন না করে , বরং নিজেকে নিয়ে চিন্তা করো ৷ তুমি তোমাকে খুঁজে বের করো ৷ তোমার কোন কাজটা ভালো লাগে , যেটা তোমার জীবনের একটা প্যাশান ৷ সেই কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে তোলো ৷ দেখবে তখন এই সমস্ত বাজে চিন্তা থেকে তোমার মস্তিষ্ক অন্যদিকে ডাইভার্ট হতে বাধ্য ৷ মনে রাখতে হবে প্রতিটা আঘাত আসলে , জীবন তৈরীর একটা ভিত এবং অনুপ্রেরণাও বটে ৷
৬) সত্যিটাকে মানতে শেখা :
সত্যিটাকে মানতে শেখো ৷ যাকে তুমি সবচেয়ে আপন ভাবতে , তার সাথে হঠাৎই ব্রেক-আপ হওয়া , অস্বাভাবিক কিছু নয় ৷ কিন্তু এরকম কিছু ঘটলে , আমরা অলীক এবং অবাস্তবতার উপর নিজেকে ভাসিয়ে দেই ৷ কোনো ভাবেই সেই ছিন্ন হওয়াটাকে মানতে পারি না ৷ তাকে ছাড়া পৃথিবীতে কেউ বাঁচবে না , এতো সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা ৷ তাই সত্যটাকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করো ৷ দরজা , জানালা বন্ধ করে প্রাণ খুলে কাঁদ ৷ নিজেকে বোঝাও , হ্যা তোমার জীবনে এটাই হয়েছে ৷
৭) সম্পূর্ণভাবে নিজেকে বের করে আনা :
মৃত্যু এবং ব্রেক আপ , দুটো আসলে একই জিনিস ৷ মৃত্যুতে শরীরের অবলুপ্তি ঘটে ৷ আর ব্রেক আপে সম্পর্কের ৷ তাই যেখানে সম্পর্ক শেষ , তাকে নিয়ে মিথ্যে মিথ্যে ভেবে কষ্ট পাওয়ার অর্থহীন ৷ তার সঙ্গে সম্পর্কের যত রকম মাধ্যম ছিল , সম্পুর্ণভাবে তার থেকে নিজেকে ছিন্ন করো ৷ যেমন ফোন নম্বর , হোয়াটস-আপ , ফেসবুক প্রভৃতি থেকে তাকে ব্লক করো ৷ কেননা সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর , তার সাথে এমনি এমনি যোগাযোগ থাকলে , তাতে তোমার কষ্ট শুধুই বাড়াবে ৷
৮) ভেতরে কোনো অভিমান বা ক্ষোভ পুষে রেখো না :
তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষ , তোমার থেকে হঠাৎ মুখ ফিরিয়ে নিলে , যে যন্ত্রণা কাজ করে ৷ সেটা যাতে কখনই তোমার ভেতরে ক্ষোভ সঞ্চার না করে ৷ যদি করে তবে প্রথমেই বুঝবে , আসলে তোমাদের সম্পর্কটা প্রেম বা ভালোবাসার ছিল না ৷ সেটা আসলে চাওয়া পাওয়ার সম্পর্ক ছিল ৷তাই শেষ হয়েছে মানে , এক অর্থে ভালো হয়েছে ৷ তোমার জন্য উত্তম কিছু অপেক্ষা করছে — এটাই বুঝবে ৷
সুতরাং বন্ধুরা , এসব আলোচনায় যে বিষয়গুলো উঠে এল , তা থেকে একটা বিষয় আমাদের বুঝতে আর অসুবিধে নেই যে , ব্রেক-আপের পর যে স্বাভাবিক অবসাদ নেমে আসে আমাদের মনে ৷ তা থেকে মুক্তির পথ কেবল তোমাকে তুমিই দেখাতে পার ৷ অন্য কেউ এসে তোমার ভেতরের দুঃখ যন্ত্রণার উপশম দিতে পারে না ৷ জীবন তোমার , সুতরাং তোমার ভালো তোমাকেই বুঝে নিতে হবে ৷ সুতরাং বন্ধুরা ভেঙে পড়লেও , প্রতি মুহুর্তে নিজেকে নিজস্ব ভাবনায় তাড়িত করো ৷ কেননা পৃথিবীতে তোমার একমাত্র বিকল্প কেবল তুমি ৷ বন্ধুরা লেখাটি কেমন লাগল কমেন্ট করে জানাও । এরকম আরো লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ সঙ্গে থাকো । আর শেয়ার করতে কিন্তু ভুলো না , কে জানে কোনো বন্ধুর জীবনে হয়তো কাজে লাগতে পারে । আর তা তোমার শেয়ার করার ফলেই হয়তো সম্ভব হলো ।
This Article Is Written By