“এই পৃথিবী সুন্দর তাদের জন্য
যারা সৌন্দর্য্যকে ঈশ্বরের কাছ থেকে
উপহার হিসেবে পান
আর
থরে বিথরে সাজিয়ে
পৃথিবীকে করে তোলেন মোহময়ী , সুন্দর ।
তারা হলেন পৃথিবীর নারী সম্প্রদায় । “
( — কিশোর মজুমদার )
আমাদের ছোট্ট মেয়েটি আমাদের দেশ , সেই আমাদের সৌন্দর্য্য , আমাদের আশা , স্বপ্ন ঘিরে থাকা ভবিষ্যৎ । কিন্তু কি ভয়ঙ্কর সত্যি কথা যে , কাব্যে-সাহিত্যে , সোশ্যাল মিডিয়ায় , খাতায় কলমে যতই কন্যাশিশু কিংবা নারীদের জয়গান করা হোক না কেন এখনো লিঙ্গ বৈষম্য সমানতালে চলছে । এখনো কন্যা ভ্রূণ হত্যা হয় । এখনো বসে ট্রামে ট্রেনে কন্যাদের নিরাপত্তার অভাব রয়েছে । আমাদের সমাজ এখনো কন্যা শিশু জন্মালে কিছুটা শঙ্কিত হয়ে ওঠে । শঙ্কিত এই ভেবে নয় যে তারা কন্যা শিশু ভালোবাসেন না , শঙ্কিত এই ভেবে যে কন্যাশিশুটি তার বেঁচে থাকার নিরাপদ পরিবেশ পাবে কিনা । এইসব কথা মাথায় রেখেই ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারিখে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় কন্যা শিশু দিবস পালনের প্রস্তাবটি গৃহীত হয় ও ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়।
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস গোটা বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘ রাষ্ট্রসমূহ প্রতিবছর ১১ অক্টোবর তারিখে পালন করে। এই দিবসকে মেয়েদের দিনও বলা হয়।
রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভার মধ্যে কানাডার ” প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল”নামের বেসরকারি অনুষ্ঠানের পৃষ্টপোষকতায় প্রথম ‘কারণ আমি একজন মেয়ে’ (Because I am a girl) নামক আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে কন্যা শিশু দিবসের ধারণা জাগ্রত হয়েছিল। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারিখে এই প্রস্তাব রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় গৃহীত হয় ও ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর তারিখে প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়। প্রথম কন্যা শিশু দিবসর থিম ছিল “বাল্য বিবাহ বন্ধ করা”। দ্বিতীয় বার, ২০১৩ সালে থিম ছিল “মেয়েদের শিক্ষা ক্ষেত্র অভিনব করে তোলা”।
এই দিবসের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে লিংঙ্গ বৈষম্য দূর করা। এছাড়াও শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনি সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক বাল্যবিবাহ রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্যে এই দিবসের সূচনা।
প্রথম কন্যা শিশু দিবসের অর্থাৎ ২০১২সালে থিম ছিল- “ending child marriage“( ‘‘বাল্যবিবাহ বন্ধ করা’।)
২০১৩ সালে থিম ছিল- “Innovating for girls’ education.“(“মেয়েদের শিক্ষাক্ষেত্র অভিনব করে তোলা।”)
২০১৪ সালে এই দিবসের থিম ছিল-” Empowering Adolescent girls: Ending the
Cycle of Violence.“( “কৈশোরকে ক্ষমতা সম্পন্ন করা ও হিংসা চক্র বন্ধ করা।”)
২০১৫ সালে এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল- “The power of Adolescent Girl: vison for 2030.” (“কৈশোর কন্যার ক্ষমতা : ২০৩০ এর পথ-প্রদর্শক।”)
২০১৬ সালের থিম ছিল- “Girls’ progress= Goals’ Progress: What Counts for Girls.“(“মেয়েদের উন্নতি= লক্ষ্যের উন্নতি।”)
২০১৭ সালের কন্যা শিশু দিবসের মূল থিম ছিল- ” Empower Girls: Before, during and after crises.“(“মেয়েদের ক্ষমতায়নে জরুরি সহায়তা ও প্রতিরোধ পরিকল্পনা।”)
২০১৮ সালে প্রতিপাদ্য ছিল- “With Her: A Skilled GirlForce”.
২০১৯ সালের এই দিবসের থিম হল ” GirlForce: Unscripted and unstoppable“.
2020 সালের এই দিবসের থিম হল – “My voice, our equal future.“
বিশ্বব্যাপী কিশোর বয়সের মেয়েরা দেশ কালের সীমানাতে অভিনবত্ব ও নতুন পথের দিক নির্দেশক হিসাবে তাদের শক্তিকে তুলে ধরে। 2020 সালের আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসটি তাদের যে যে দাবিগুলিতে মনোনিবেশ করবে , সেগুলি হল:-
লিঙ্গ-বৈষম্য, ক্ষতিকর অভ্যাস, এইডস ইত্যাদি থেকে মুক্ত থাকা , যুগোপযোগী দক্ষতা অর্জন করা যা তাদের ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়ক হবে ,
সামাজিক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করার পরিবেশ
রচনা ।
কিশোর-কিশোরী কিংবা নারী – নেতৃত্বাধীন সংস্থাগুলি যেন অনুপ্রেরণামূলক গল্পগুলি শেয়ার করে যাতে , সমস্ত সম্প্রদায় এবং জাতিগুলি লিঙ্গ সমতা সহ ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে । আসুন অন্যদের অনুপ্রাণিত করার জন্য তাদের নেতৃত্ব, ক্রিয়া এবং প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করি ।
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসে যুব-নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন ডিজিটাল অ্যাক্টিভিটিতে অংশ নিন। বিশ্বজুড়ে যুবক-যুবতীরা একটি ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম প্রচার চালাচ্ছে, যার লক্ষ্য মেয়েদের কন্ঠের বৈচিত্র্য এবং একটি পুনর্বিবেচিত ভবিষ্যতের জন্য তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বাড়ানো।
আশা করি আন্তর্জাতিক শিশু কন্যা দিবস নিয়ে আমাদের লেখাটা সকলের ভালো লাগবে। ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। এইসব লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটিকে ফলো করো।