আজকের এই আধুনিক বিশ্বে দাঁড়িয়ে ,স্যোশাল সাইট থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে , মানুষের সাথে মানুষের পরিচিতি বা মেলামেশার অগাধ যে পরিসর , এক কথায় যাকে সম্পর্কের বিশ্বায়ন বললেও অত্যুক্তি হয় না ৷ ঠিক সে জায়গায় দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে খুব সহজেই বন্ধুত্ব স্থাপন করা হচ্ছে ৷ সে সম্পর্কগুলোই আবার ধীরে ধীরে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার পর্যায়ে চলে যাবার দারুন এক সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে ৷এটাই খুব স্বাভাবিক ৷
কিন্তু সমস্যা ঠিক সেখানেই ৷ চটজলদি গড়ে ওঠা এই সম্পর্কগুতে দুজনের মধ্যেই একটা সময় স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন জাগে ৷ এটা কী আদৌ ভালোবাসা ! অর্থাৎ সে তোমাকে সত্যিই ভালোবাসে তো ? ঠিক যতটা ভালো তুমি তাকে বাসো ৷ তাই কখনও এই প্রশ্নের মুখোমুখি যদি তুমি হও , তুমি কীভাবে তার উত্তর পেতে পার , সে বিষয়েই আজকের আলোচনা ৷
১) ঠিক কখন এই প্রশ্নের মুখোমুখি তুমি:—
সে তোমাকে ভালোবাসে কিনা , কীভাবে বুঝবে ? প্রথমেই বলে রাখি ,ঠিক দু-রকম পরিস্থিতিতে এই প্রশ্নটি এসে তোমার মনে ধাক্কা দিতে পারে ৷
ক:—
তুমি একটা সম্পর্কে আছ ৷ আর সেটা চলতে চলতে বিভিন্ন কারনে ,এই প্রশ্নটি তোমার মধ্যে আসতেই পারে ৷ তুমি তাকে ঠিক যতটা ভালোবাসো , সে কি তোমাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসে ?
খ:—
একটি মেয়ের সাথে তোমার খুব ভালো বন্ধুত্ব ৷ কিন্তু মনে মনে তার প্রতি তুমি দুর্বল হয়ে পড়েছো ৷অর্থাৎ মনে মনে তুমি অনেকটা এগিয়ে গেছো ৷ বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে ,তুমি তাকে সবটা খুলে বলতে পারছ না ৷ বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার প্রবল টানাপোড়েনে ভুগছ একা একা ৷ কিন্তু তুমি কী করে বুঝবে ,সেও তোমাকে মনে মনে ভালোবাসে কিনা ? এ বিষয়টিরও আজ উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব ৷ তবে বলা ভালো , এরকম পরিস্থিতিতে মনের কথাটি বলে ফেলাই ভালো ৷ তাতে যা হবার হবে ৷
২) ভালোবাসা কী:—
সে তোমাকে ভালোবাসে কিনা —আমার মতে বিষয়টি আলোচনার পূর্বে “ভালোবাসা” শব্দটির একটু ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন ৷ অর্থাৎ ভালোবাসা কী ?
Love is not a temporary feeling and emotion. Emotions and feelings change sometimes daily. But true unconditional love is everlasting.
Sandeep Maheshwari
অর্থাৎ ভালোবাসা একটি সম্পূর্ণ অনুভূতির বিষয় ৷ প্রতি মুহূর্তে আমাদের আবেগ ও অনুভূতির বদল ঘটে ৷কিন্তু ভালোবাসা তাৎক্ষণিক কোনো আবেগ বা অনুভূতির বিষয় নয় ৷ এটি একদিকে চিরন্তন অন্যদিকে ভয়হীন ,শর্তহীন এবং বাহ্যিক জগতের সমস্ত কিছুর উর্ধে হল ভালোবাসা ৷
৩) ভালোবাসার চারটি স্তর:—
সে তোমাকে ভালোবাসে কিনা , সে বিষয়ে নিশ্চিত হবার জন্য ,ভালোবাসার এই চারটি স্তর সম্বন্ধে সচেতন থাকা প্রয়োজন ৷ ভিয়েতনামের এক সন্ন্যাসীর লেখা “Teaching of Love” গ্রন্থে সুস্পষ্ট ভাবে এই চারটি স্তরের ব্যাখ্যা রয়েছে৷
পারস্পরিক বোঝাপড়া:—
একটি সম্পর্কে দুটো মানুষের মধ্যে ,পারস্পরিক বোঝাপড়া ভীষণ গুরত্বপূর্ণ ৷ তুমি কি তার সমস্ত ভালোলাগা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ? অথবা সে ? তুমি কি জান , সে কী পেলে খুশি হয় ,অথবা সে কি জানে তুমি কী পেলে আনন্দ বোধ কর ? যদি একে অপরের বোঝার ব্যাপারে তোমরা সার্থক , তবে ভালোবাসার প্রথম স্তম্ভে তোমরা উত্তীর্ণ ৷
কষ্টকে অনুভব এবং তা থেকে মুক্তি:—
তোমাদের মধ্যে কি এরকম হয় ? কোনো কারনে দুজনের মধ্যে একজন খুব কষ্ট পাচ্ছ ৷
সেই কষ্টটাকে বুঝে ,একে অপরকে তোমরা খুব বিনয়ের সাথে কথা বলার মধ্যদিয়ে , সেই কষ্টকে কি দূর করতে তোমরা সক্ষম ? অর্থাৎ তোমরা কি একে অপরের কষ্টে ,ডাক্তারের ভূমিকা পালন কর ? যদি পার ,তবে ভালোবাসার দ্বিতীয় স্তরেও তোমরা সফল ৷
শান্তি এবং সন্তুষ্টি:—
তোমাদের সম্পর্ক নিয়ে , মানসিকভাবে তোমরা কতটা শান্তি ও সন্তুষ্টি বোধ কর ? বাস্তব জীবনের অনেক কিছুর ছোবলে প্রতিনিয়ত আমরা ক্ষতবিক্ষত হই ৷ ঠিক সে সময়গুলোতেও , তোমরা একে অপরের কাছে , একে অপরকে বলা কথা সমানভাবে গুরত্ব পায় তো ? অর্থাৎ যে কোনো পরিস্থিতিতে , তোমরা মানসিকভাবে একে অপরের কাছে সমান গ্রহণযোগ্য ৷
ভয়ভীতিহীন প্রকাশের স্বাধীনতা:—
তোমরা কি একে অপরের কাছে যে কোনো বিষয় ,ভয়-ভীতি ছাড়া স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পার ? পারিবারিক থেকে মানসিক , নিজের ভালোলাগা , মন্দলাগা ৷ অর্থাৎ তোমরা কেউ কারো কাছে মুখোশ পড়ে নেই ৷ তোমাদের সম্পর্ক ঠিক এমনটাই তো ?
৪) পর্যবেক্ষণ বা গভীরভাবে চিন্তা করা:—
তোমার সম্পর্কটি নিয়ে হঠাৎই তোমার মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে , তোমার মতো সেও কী ভালোবাসে তোমাকে ? তুমি খুব সচেতনভাবে ,তোমার সাথে তার প্রতিটা কাটানো মুহূর্ত ,তার সমস্ত বলা কথা , সে ঠিক কী বলতে চায় , তোমার সম্পর্কে তার কী ধারণা সবটা নিয়ে গভীরভাবে একটু পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা কর ৷ অবশ্যই তুমি তা থেকে কিছু না কিছু উত্তর নিশ্চই পাবে ৷
৫) নিজেকে বাস্তবের উপর দাঁড় করাও:—
তোমার ভেতর এরকম প্রশ্নের উদ্রেক হলে ,নিজেকে একলা রেখে ,কিছুক্ষণের জন্য অনুভূতির সাথে খাঁটি বাস্তবের উপর নিজেকে দাঁড় করাও ৷ তবে খুব সাবধান ,যাতে হিতে বিপরীত না হয় ৷এটা জেনো ভালোবাসা ছিল , আছে , থাকবে ৷ তবে বর্তমান কালে বিভিন্ন কারনে , ভালোবাসার সংজ্ঞাটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও পাল্টেছে ৷ ভালোবাসার পাশাপাশি চাই কিছুটা বুঝে নেওয়া , কিছুটা শর্ত নির্ভরতা ৷
৬) অতীতের সে আর আজকের সে:—
মানুষ পরিবর্তনশীল ,খুবই স্বাভাবিক ৷ তাই তোমার মনে ভালোবাসা বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে , বোঝার চেষ্টা কর ,অতীতের সেই মানুষটা আজও একই আছে কিনা ৷ তার অতীতের দেওয়া কথা , তার চিন্তা ভাবনা , বলার ভঙ্গি , ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যা ছিল , সবটা একই আছে কিনা ৷ সমস্তটা বোঝার জন্য , প্রয়োজনে খুব সচেতনভাবে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে পার৷
৭) রাগ বা ইর্ষার উদ্রেক:—
তোমার কলেজের একটি মেয়েকে তুমি মনে মনে ভালোবাসো ৷ অথচ ভালো বন্ধু বলে ,বলতে পারছ না ৷সে তোমাকে ভালোবাসে কিনা , তার জন্য তুমি তার উপস্থিতিতেই অদূরে অন্য একটি মেয়ের সাথে গল্প কর ৷ তার কিছুক্ষণ পর ,ভালোবাসার মানুষটির কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা কর ,তার চোখে-মুখে কোনো রকম রাগ-ইর্ষার প্রকাশ পড়ছে কিনা ৷ যদি তোমাকে সেও মনে মনে ভালোবাসে ,তবে সেরকমটা হওয়াই স্বাভাবিক ৷
৮) কারণে অকারণে ফোন বা ম্যাসেজ:—
তোমার কলেজের কোনো বন্ধু যদি কারণে অকারণে তোমাকে ফোন বা ম্যাসেজ করতে থাকে ,অর্থাৎ তোমার সাথে কিছুটা সময় সে কাটাতে চাইছে ৷ কেবলমাত্র ফোন বা ম্যাসেজ তার উদ্দেশ্য নয় , বুঝতে হবে তোমার সাথে তার সময় কাটাতে ভালো লাগে ৷ আর এটা কখন হয় ,এটা নিশ্চই বুঝতে পারছ ।
৯)একটু আলাদা থাকতে চাওয়া:—
তুমি তাকে ভালোবাসো অথচ তোমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের । কলেজের সব বন্ধুরা একসাথে আড্ডা দিচ্ছো ৷ তখন কি সে তোমার সাথে একটু আলাদা সময় কাটানোর অজুহাত খোঁজে ? যদি তাই হয় ,তবে তারও ভালোলাগা সম্পর্কে তুমি নিশ্চিত থাকতে পার ৷
১০) জানার আকাঙ্ক্ষা:—
তোমার কলেজের এমন কোনো বন্ধু আছে ,তোমার সম্পর্কে অর্থাৎ তোমার ব্যক্তিজীবন এবং পরিবার সম্পর্কে প্রবল জানার আকাঙ্ক্ষা ? তুমি যদি তাকে মনে মনে ভালোবাসো ,তবে বুঝবে তার দশাও তোমারই মতো ৷
সবশেষে তোমাদের একটা কথা না বললেই নয় ৷ ভালোবাসা সম্পর্কে এতভাবে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার যে প্রয়াস ,হয়তো কিছুটা হলেও উত্তর তোমরা পেলে ৷ কিন্তু সম্পর্ক অর্থাৎ ভালোবাসা — একে কোনো সূত্র দিয়ে অঙ্কের মতো কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারি না ৷ ভালোবাসা বিষয়ে তোমার বাড়তি সাবধানতা অবশ্যই অবলম্বন করা ভীষণ জরুরি ৷ কেননা এটা তোমার জীবনের প্রশ্ন ৷ একটা ভুল ,তোমার জীবনকে তছনছ করে দিতে পারে ৷ আশা রাখি ,তোমরা সবাই তোমার সত্যিকারের ভালোবাসা খুঁজে পাও ৷ জীবন হোক সুন্দরময় ৷
This Article Is Written By