৷৷১৷৷
‘আজ’-ই একমাত্র সত্য
অনেকদিন আগের কথা । একটা সময় ছিল যখন মোটর গাড়ি স্টার্ট করতে হতো ইংরেজি Z অক্ষরের মতো একটা হ্যান্ডেল দিয়ে । অনেক পরিশ্রম , শক্তি ও সময় ব্যায় ক’রে গাড়িগুলো স্টার্ট করতে হতো । অর্থাৎ সেই সময় যে কোনো গাড়ি স্টার্ট করা ছিল একটা রীতিমতো হুজ্জতির ব্যাপার ।
একজন তরুণ যুবক যিনি ছিলেন ‘জেনারেল মোটর্স রিসার্চ কর্পোরেশনের ‘ ভাইস প্রেসিডেন্ট । তিনি বন্ধুদের বললেন যে একটা ছোট্ট চাবি দিয়ে গাড়িগুলো স্টার্ট করা যেতে পারে । কিন্তু বন্ধুরা হেসে উড়িয়ে দিলেন তার কথাটি । এবং যারা শুনলেন সকলেই বললেন যে , অসম্ভব কল্পনা তার । আর তার খেয়ালি কল্পনার জন্য মজাও করতে ছাড়লেন না । বললেন যে , “একটা ছোট্ট চাবি দিয়ে এত বড় মোটর গাড়িকে স্টার্ট করা সম্ভব নয় ।” কিন্তু আজ আমরা জানি যে এটাও সম্ভব হয়েছে । এখন একটা ছোট্ট চাবি দিয়ে অর্থাৎ সেল্ফ স্টার্টারের মাধ্যমে গাড়ি স্টার্ট করা যায় ।
কীভাবে এটা সম্ভব হলো ? এবার সে বিষয়ে বলা যাক।
তার নাম চার্লস ফ্রাঙ্কলিন ক্যাটারিং ( Charles Franklin Kettering) । সংক্ষেপে চার্লস এফ ক্যাটারিং নামেই পরিচিত আজ । যিনি এই অসাধ্য সাধন করতে পেরেছিলেন । তিনি যখন গাড়ির সেল্ফ স্টার্ট এর আবিষ্কারের স্বপ্ন দেখতেন । তখন তার এই স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজন ছিল প্রচুর সময় এবং পরিশ্রম । বাধ্য হয়েই তিনি চাকরিটি ছেড়ে দেন । যে কোনো গবেষণার জন্য অর্থেরও প্রয়োজন । চাকরি না থাকায় তাঁর অর্থের অভাব দেখা দিল । তাঁর ব্যাংক ব্যালান্স ফুরোতে লাগলো । একটা সময় সবই ফুরিয়ে গেল । তখনও চার্লস ক্যাটারিং সফল হতে পারলেন না । একটার পর একটা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে লাগলো । গবেষণা চালিয়ে যাবার জন্য আরো পয়সার প্রয়োজন হতে লাগলো । হতাশ হয়ে কাজ বন্ধ করে দেবেন , নাকি কাজ চালিয়ে যাবেন । তিনি জমি জমা গয়না ইত্যাদি বিক্রি করতে লাগলেন । একটা সময় সেসবও ফুরিয়ে গেল । শেষ সম্বল রইলো পৈতৃক সম্পত্তি চাষের খেত আর বসত বাড়িটি । পৈতৃক সম্পত্তি আর ফিরে পাওয়া যায় না , তাই তিনি বসত বাড়িটি বিক্রি করে দিলেন । আর ক্ষেতের এক ধারে কুঁড়ে ঘর বানিয়ে স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাস করতে লাগলেন ।
গভীর গবেষণায় তিনি এতই নিমগ্ন যে , আত্মীয় বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে লাগলেন । তার উপর বন্ধু , আত্মীয় সকলেই তার স্ত্রীকে বললেন যে তিনি কেন এত পাগলামি মেনে নিচ্ছেন ? সন্তানদের ভবিষ্যৎ নেই ?
কিন্তু তাঁর স্ত্রী বললেন যে তারা তো কষ্ট করছেনই , কিন্তু ক্যাটারিং সাহেব নিজে যে এত পরিশ্রম করছেন নিজের শরীরের দিকে তাকানোর পর্যন্তও অবসর নেই -এটাই তাকে বেশি চিন্তায় রাখছে । অর্থাৎ তার স্ত্রী স্বামীর কাজকে, তার অধ্যবসায়কে সমর্থনই করছেন ।
এত কিছু সত্ত্বেও চার্লস ক্যাটারিং কিন্তু বিশ্বাসে অটল ছিলেন যে , তিনি একদিন সফল হবেন । দীর্ঘ কয়েক বছর পর অবশেষে তাঁর স্বপ্ন সফল হলো । তিনি যেদিন সেল্ফ স্টার্টের প্রদর্শন করেন , সে দিন সকলেই অবাক । সমস্ত মোটর শিল্পের লোকেরা তার টেকনিক কিনে নিতে লাগলেন আর দেখতে দেখতে তিনি অনেক অর্থের মালিক হয়ে উঠলেন ।
বিশ্বের বিখ্যাত সব পত্র পত্রিকা তাঁকে ঘিরে ধ’রে তাঁর সাফল্যের কারণ জানতে চাইলো । ” অনেক অনেক বাধার পরেও নিজের লক্ষ্য পূরণ করেই ছাড়লেন , আপনার এতো ধৈর্যের উৎস কী ? ”
এর উত্তর দেওয়ার জন্য ক্যাটারিং সাংবাদিককে তাঁর সেই কুঁড়ে ঘরে নিয়ে গেলেন , আর ঘরের সমস্ত জিনিসের মাঝে থেকে একটা ছোট্ট পাথর বের করে দেখালেন আর বললেন , ” এটাই আমার সাফল্যের উৎস “।
দেখা গেল সেই পাথরে লেখা ছিল একটি ছোট্ট কথা “আজ” । তিনি বললেন ” এই ‘আজ’ই আমার সফলতার উৎস । কারণ গতকাল মানুষের জীবনে হতাশা এনে দেয় , আগামী কাল এনে দেয় অলসতা । তাই আজই একমাত্র সত্য । আর তাই দেখুন আজ আমি সফল । ”
তাহলে বন্ধুরা , দেখো এই গল্প থেকে আমরা যে শিক্ষাগুলি নিতে পারি সেগুলি হলো :
১। যারা ‘আজ’ নিয়ে বাঁচে তারাই সফল হয় ।
২। দুনিয়ার সমস্ত কাজ আসলে ‘আজ’ই সম্পন্ন হয় ।
৩। তাই বর্তমানকে নিয়ে বাঁচাই সাফল্যের মূল সূত্র ।
৪। এখন নয়তো কক্ষণো নয় ।
৫। প্রতিটি সময়ই মূল্যবান । তাই সময়ের সঠিক ব্যবহার করা উচিত ।
আরও পড়ুন : 30 Bengali Motivational Quotes
৷৷২৷৷
যদি
একটা গ্রামে পিন্টু আর মিন্টু নামে দুই যুবক বাস করত । তারা দুজনেই বেকার । দিনমজুরের কাজ ছাড়া গ্রামে আর কোনো কাজই তারা দেখছে না । এইদিকে নব বিবাহিতা স্ত্রী নিয়ে দুজনের একই রকম পারিবারিক অবস্থা । ভিন্ন মানসিকতার হলেও দুজনের একটাই সাধারণ সমস্যা , আর সেটা হলো কী করে টাকা রোজগার করা যায় ।
এই সব ভাবতে ভাবতে পিন্টুর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল । সে মিন্টুকে বলল দুজনে মিলে যদি একটা মহিষ কেনা যায় , তাহলে কেমন হবে । মহিষের দুধ বিক্রি ক’রে কিছু টাকা পাওয়া যাবে । আর মহিষের বাচ্চাও হবে , ফলে মহিষের সংখ্যা বাড়তে থাকবে । দুধও বেশি বেশি হবে । আর এভাবে দুজনই একদিন অনেক টাকার মালিক হয়ে যাবে । মহিষের সংখ্যা যখন বাড়বে , তখন অনেক লোক রাখবে দেখাশুনার জন্য —-এভাবে দুজনই একদিন ধনী হয়ে উঠবে ।
এভাবে পিন্টু তার ভাবনার কথা মিন্টুকে জানায় । এই প্রস্তাবটি মিন্টুরও খুব ভালো লাগে । সেও প্রস্তাবে রাজী হয়ে যায় । তারা দুজনে কথা পাক্কা করে ফেলে । খুব আনন্দ আর উদ্দীপনা নিয়ে দুজনেই বাড়ি যায় । দুজনেই তাদের এই উদ্যোগের কথা নিজের স্ত্রীকে জানায় ।
পিন্টুর স্ত্রী সব শুনে খুব আনন্দের সঙ্গে তার গয়না খুলে স্বামীর হাতে দিয়ে বলল ” খুব ভালো পরিকল্পনা , আমার গয়না বিক্রি করে মহিষ কেনো । যখন বেশি বেশি রোজগার হবে , গয়না কিনতে আর কতক্ষন । ” স্ত্রীর কথায় গর্বিত হয় পিন্টু ।
ঐদিকে মিন্টু তার পরিকল্পনার কথা স্ত্রীকে জানালে তার স্ত্রী বলে , ” দেখো একে তো আমাদের কিছুই নেই । খালি কয়েকটা মাত্র গয়না সম্বল । আর তা বিক্রি করে মহিষ কিনবে । কিন্তু যদি মহিষ মরে যায় …..”
মিন্টুর মনেও খটকা লাগে । মনে হয় তার স্ত্রী ঠিকই বলছে । কারণ মহিষ যদি মরে যায় , একমাত্র সম্বল গয়নাগাটিও যাবে — মহিষও যাবে । এত ঝুঁকি নেওয়াটা ভুল হবে ।
পরের দিন দুই বন্ধুর দেখা হলে মিন্টু বলে ” ভাই পিন্টু , মহিষ যদি মরে তাহলে…. ? “
পিন্টু বলে , ” এসব বাজে কথা ভাবছিস কেন ? কেনার আগেই মহিষ মরার কথা ভাবছিস ? আর মহিষ কোন কারণেই বা মরতে যাবে ? ”
মিন্টু একই সুরে হতাশ জবাব দেয় , ” তা তো বুঝলাম যে মহিষ মরবে না । কিন্তু ধর , যদি মরে ? তাহলে কী হবে ? “
পিন্টু অত্যন্ত স্নেহ ভ’রে জবাব দেয় , “তোর ‘তাহলে’র জবাব আমার কাছে নেই । ”
মিন্টু বলে ” এই তাহলে’র জবাব আমার কাছে আছে । আমরা বরবাদ হয়ে যাবো । সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবো । “
অত্যন্ত বেদনাহত হয়ে পিন্টু বলে , ” কিন্তু তুই কেন বার বার ভাবছিস যে মহিষটা মরে যাবে …..একটু অন্যভাবে ভেবে দেখ , মহিষটা দুধ দেবে । আমরা বিক্রি করবো । প্রথমে পয়সাগুলো জমাবো । তারপর আরও মহিষ কিনবো । অনেক পয়সা হবে যখন , তখন অনেক গয়না কেনা যাবে , বাড়িও বানানো যাবে । এভাবে দুধের বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠব দুজন । ”
কিন্তু মিন্টুর ওই এক বুলি এক জিকির ” ব্যবসা টাকা বাড়ি গয়না সব হবে তখনই , যখন মহিষটা বেঁচে থাকবে । ”
এরপর অনেক বোঝানোর পরেও মিন্টু তোতাপাখির মতো বলতে থাকে মহিষ মরার কথা ।
পিন্টু আর বোঝাতে পারে না শুধু বলে , ” দেখ মিন্টু , ঐরকম ভাবলে তুই কোনোদিনও কোনো কাজ করতে পারবি না । এই ধরণের ভাবনা ঠিক নয় । কারণ তুই আগে অন্ধকার দিকটাই দেখছিস । ” এইভাবে দুই বন্ধুর তর্কের পর কয়েকদিন গেল । পিন্টু একাই একটা দুগ্ধবতী মহিষ কিনে ফেলে । সে এখন আর দিন মজুরের কাজে যায় না । সকাল থেকে সন্ধ্যা মহিষের দেখাশুনা করে , দুধ দোয় । প্রথম কিছুদিন দুধের গ্রাহক খুঁজতে , মহিষের পরিচর্যা করতে কষ্ট হয়েছিল । ধীরে ধীরে পিন্টু এই কাজগুলোতে দক্ষ হয়ে উঠতে লাগলো ।
আর দিনমজুরের কাজের শেষে মিন্টু রোজ তার কাছে আসতো , আর পিন্টুর সংঘর্ষ করার , পরিশ্রমের বিষয়টি দেখতো । আর ভাবতো তাদের দিনমজুরের জীবন কত ভালো ছিল । রোজ সকালে কাজে যেত আর বিকেলে ফিরে এসে সন্ধ্যায় কাজ কর্মহীন আড্ডা দিতে পারত । এখন পিন্টুর জীবনে আড্ডা দেবার অবসর নেই । তার উপর এত ঝুঁকি নিয়ে কেন যে মহিষ কিনলো । যদি মরেই যায় । সবই যাবে তার ।
আর ঐ দিকে কালো মহিষের মধ্যেই জীবনের আলো দেখতে পায় পিন্টু । সে দ্বিগুন উৎসাহে কাজ করতে লাগলো । এটা ঠিক যে তার কাছে এখন অবসর নেই । কিন্তু সুন্দর ভবিষ্যতের কল্পনায় সময় নষ্ট করতে সে রাজি নয় ।
এইভাবে দিন যায় । আস্তে আস্তে তার গ্রাহক বাড়তে থাকে । মহিষ বাড়তে থাকে । কাজের লোকও বাড়তে থাকে । মহিষও তার মরে নি ।অন্যদিকে মিন্টু মহিষের মরার কথা ভাবে আর একইভাবে দিনমজুরের কাজ করে যায় । পিন্টু ধনী হতে থাকে ক্রমশঃ ।
বন্ধুরা , এই গল্পের ভেতরের বিষয়টিকে যদি আমরা বুঝতে পারি , তাহলে আমাদের জীবনে পদক্ষেপ নেবার শিক্ষাটি অর্জন করতে পারবো । এসো খুব কম কথায় দেখে নেই আমরা সেসব :
১. কিন্তু , যদি , তবে ইত্যাদির জালে আটকে পড়তে নেই ।
২. নেতিবাচক ভাবনা কখনোই মাথায় আনতে নেই ।
৩. পজিটিভ ভাবনাই পারে জীবনে সাফল্য এনে দিতে ।
৪. নো রিস্ক নো গেইন । ঝুঁকি নিতে পারলেই জীবনে সাফল্য আসবে ।
ভালো থেকো বন্ধুরা , এইরকম ভালো কিছু গল্প এখানে আরো পোস্ট করা হবে । আমাদের ফেসবুক পেজ-এ এসো আর সঙ্গে থেকো ।
View Comments
awesome আজই + যদি গল্প দুটো।
It is very inspirable story which can be change anybody life.
Sottei khub sundor laglo...
Lekhalikhi amaro pochonder...
https://readyourwayfirst.blogspot.com/2020/07/blog-post_24.html
Icche hole dakhte paren