ডঃ এ. পি. জে. আবদুল কালামের জীবন সংগ্রাম ও সফলতার কয়েকটি বাণী
ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি তথা বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ছিলেন ডক্টর এ. পি. জে আবদুল কালাম । তাঁর পুরো নাম আবুল পাকির জইনুলআবেদিন আবদুল কালাম। ১৯৩১ সালে মাদ্রাসের (বর্তমান নাম তামিলনাড়ু) দ্বীপশহর রামেশ্বরে এক মধ্যবিত্ত মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পিতা জইনুলআবেদিন (নৌকা চালক) মাতা আশিয়াম্মা। তারা মোট ভাই বোন ছিলেন ৫ জন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় রামেশ্বরের “এলিমেন্টারি স্কুলে “।তারপর রামনাথপুরণ স্কোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুলে পড়েন এবং ১৯৫৪ সালে তিনি তিরুচিরাপল্লির “সেন্ট জোসেফ কলেজ “থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হন।
তাঁর বাবা চাইতেন তিনি একজন কালেকটর হবেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন ছিল ভারতীয় বায়ুসেনার একজন বিমান পাইলট হবেন। তাই তাঁর স্বপ্নকে পূরণ করতে তিনি “মাদ্রাজ ইনস্টিনিউট অফ টেকনোলজি “তে ভর্তি হন। সেখানে ভর্তি হওয়ার জন্য ১০০০ টাকার দরকার কিন্তু তা দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর বাবার ছিল না তাই সেই সময় তার বোন জোহরা তাঁর চুরি ও গলার হার দিয়ে কালাম স্যারকে সাহায্য করেন।
কলেজে পড়া কালীন কলেজের প্রফেসর তার কাজ দেখে তাঁকে বড় একটি কাজের দায়িত্ব দেন । কিন্তু সেই কাজ করতে তিনি অসমর্থ হলে কালামের স্যার বলেন তিন দিনের মধ্যে এই কাজটি সম্পন্ন করতে না পারলে তাঁর বৃত্তি ফিরিয়ে নেওয়া হবে। অবশেষে তিনি কাজটি সম্পন্ন করতে সমর্থ হয়েছেন ।
এর পর তার জীবনে আসে আর এক অধ্যায় । একটি আসে DTD & AIR অন্যটি এয়ারফোর্স থেকে ইন্টারভিউ এর জন্য তিনি দুটোতেই যাবেন ঠিক করলেন। আর গেলেনও দুটিতেই। এয়ারফোর্সে ২৫ জন এর ইন্টারভিউ হয় । নেওয়া হবে ৮ জন কে। “কালাম “স্যার হয়েছিলেন নবম । তিনি হতাশ হয়ে পরলেন। তারপর তিনি প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থায়( DRDO)তে নিযুক্ত হন। সেখানে হভারক্রাফ্ট প্রকল্পের সুন্দর ভাবে পরিচালনা করেন। তারপর তিনি ভারতীয় মহাকাশে গবেষণার সুযোগ পান এবং তিনি সর্বপ্রথম রোহিণী উপগ্রহ বা SLV3 এর উৎক্ষেপন করেন ।
কিন্তু তা প্রথম বার অসফল হয়। তিনি হতাশা গ্রস্ত হয়ে পরেন কিন্তু হাল না ছেড়ে আবার চেষ্টা চালান এবং ১৯৬২ সালে “রোহিণী” অর্থাৎ SLV3 এর সফল উৎক্ষেপন করেন এবং পৃথিবীর কক্ষপথে তা স্থাপনে সফল হন ।
ISRO তে কাজ করার সময় আমেরিকার স্পেস এজেন্সি NASA তাকে ডাকেন কিন্তু তিনি সেখানে যেতে করতে রাজি হন নি। ১৯৯৮ সালে তাঁর নেতৃত্বে দ্বিতীয় বার ভারতে পরমাণু তৈরী হয়। ঠিক তখনই তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের সফল পরমাণু বৈজ্ঞানিক। তিনি তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান “ভারতরত্ন”।২০০২ সালে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি হন এবং ২০০৭ সালে সসম্মানে সেই পদ ছাড়েন । ২০১৫ সালে ২৭ শে জুলাই মহান ব্যক্তি আমাদের ছেড়ে চলে যান ।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় তিনি বার বার ব্যর্থ হয়েছেন কিন্তু হাল না ছেড়ে প্রতিটি কাজ করে সফল হয়েছেন :
১) ” স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে দেখ, স্বপ্ন সেটা যা পূরণের প্রত্যাশা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না। “
২) ” যদি সূর্যের মতো উজ্জ্বল হতে চাও তোমাকে সূর্যের মতই পুড়তে হবে। “
৩) ” প্রথম জয়ের পর কখনই থেমে যাওয়া উচিত নয় তাহলে দ্বিতীয় বার ব্যর্থ হলে বলবে প্রথমটা ভাগ্যের জোড়ে পেয়েছ। “
৪) ” তুমি যদি ব্যর্থ হও বা fail করো তাহলে হাল ছেড়ে দিও না । Fail শব্দটির অন্য অর্থ আছে। First attempt in learning. শিক্ষার প্রথম ধাপ। “
৫) ” প্রশংসা করতে হবে প্রকাশ্যে কিন্তু সমালোচনা করতে হবে ব্যক্তিগত ভাবে। “
পরিশেষে বলা যায় তিনি আমাদের ভারতবাসীর গর্ব। তাঁর সব কিছু ছাত্র ছাত্রী থেকে দেশের সমস্ত মানুষকে প্রেরণা জোগায়। তাঁর কাজ তাঁর বাণী আমাদের জীবনের নানা ক্ষেত্রেই সামনে এগিয়ে চলতে সাহায্য করে ।
বন্ধুরা , আশা করি এই লেখাটি পড়ে তুমি জীবনে বড় একটা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে । আমাদের ফেসবুক পেজ এ চলে এসো । খুব ভালো থাকবে । সঙ্গে আমরাও আছি ।
This Article Is Written By