প্রিয়জনের রাগ ভাঙানোর অভিনব ১২টি উপায়
ভালোবাসার মাঝে মান অভিমান থাকবেই । মাঝে মাঝে মান অভিমান সম্পর্ককে আরো গাঢ় ও গভীর করে তোলে । আবার কখনো রাগ থেকে ক্ষোভ , ক্ষোভ থেকে অভিযোগ , অভিযোগ থেকে ইগো প্রবলেম , আর বুঝতেই তো পারছো ইগো প্রবলেম থেকে কী হতে পারে । না না , সে ভয় পাবার কিছু নেই । কারণ তোমার প্রিয়জনের রাগ অভিমানকে মিষ্টি করে ভেঙে দিয়ে সুন্দর ও রোম্যান্টিক সম্পর্ককে আরো মধুময় করে তুলতে কিছু সুন্দর সুন্দর টিপস নিয়ে এসেছি তোমাদের জন্য। তাহলে কথা না বাড়িয়ে চলো দেখে নিই প্রিয়জনের রাগ ভাঙানোর উপায়গুলো কী কী : –
প্রিয়জন অভিমান করে আছে? অভিমান ভাঙানোর সবচেয়ে সুন্দর উপায় হল প্রিয়জনের পছন্দের উপহার দেওয়া। উপহার পেতে আমরা সকলেই ভালোবাসি। উপহার ছোট বা বড় হয় না। ভালোবেসে দেওয়া সব উপহারই কিন্তু মূল্যবান হয়। তাই তোমার প্রিয়জনের রাগ ভাঙাতে ফুল ,চকোলেট, কার্ড অথবা সে যেটা সব থেকে বেশি পছন্দ করে এরকম কিছু জিনিস দিতে পারো। যা মুহূর্তের মধ্যে তোমার প্রিয়জনের মুখে হাসি ফোটাবে। আর সঙ্গে সঙ্গেই সব রাগ গলে জল হয়ে যাবে।
বললে হয়তো বিশ্বাস হবে না — এটা খুব সত্যি যে, ভালোবাসার মানুষের কাছে অনেক আবদার থাকে , অনেক শখ জমানো থাকে । আর সেগুলি সব শীঘ্রই পূরণ করা সম্ভব হয় না অনেকেরই পক্ষে । যদি কখনো প্রিয় মানুষটির সেরকম কোনো চাওয়া বা জমে থাকা কোনো ইচ্ছে পূরণ করে সারপ্রাইজ দেওয়া যায় ; তাহলে সেই প্রিয়জন তোমার দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সন্দেহমুক্ত হবে । আর সেটা রাগ ভাঙানোর পাশাপাশি সম্পর্ককে চিরস্থায়ী করবে । হতে পারে পছন্দের কোনো উপহার , হতে পারে তার প্রিয় কোনো পোশাক , কিংবা ঘুরতে যাওয়া, ভালো কোনো খাবার। দেরি না করে ভেবে ফেলো কোনটি করতে যাচ্ছ প্রিয়জনের রাগ ভাঙানোর জন্য ।
এটা এক অভিনব সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট। যে প্রিয়জন খুব কম রাগে। কিন্তু একবার রাগ করলে দীর্ঘক্ষণ থাকে। কিংবা তোমার প্রিয়জন যদি খুব বেশি রাগ করে থাকে তাহলে এই উপায়টি তোমার জন্য।কি করতে হবে এবার বলি। তোমাকে বলতে হবে “আমি নিজেকে একটু শুধরে নিতে চাই । তাই আমার এমন পাঁচটি দোষ বলো, যেগুলো শুধরে নেওয়া খুব দরকার।” … এরপর তোমার প্রিয়জন একটা করে তোমার দোষ বলবে আর তুমি কাউন্ট করবে। এক একটা দোষ বলবে আর দেখবে তোমার উপর তার রাগগুলো ঝরে পড়বে আর নিজে তোমার প্রতি বেশি অনুরুক্ত হতে থাকবে। এটা আসলে পার্গেশন পদ্ধতি, যা মনোবিদেরা প্রয়োগ করে থাকেন। বিশ্বাস না হয় পরোখ করেই দেখো এর ম্যাজিকটা ।
তোমার প্রিয়জনকে যদি খুব ভালোবাসো , আর সে রাগ করায় তোমার কাজ কর্ম ঘুম উবে যাবার জোগাড়। তোমার হাতে সময় যদি কম থাকে বা তুমি যদি কর্মব্যস্ত হয়ে থাকো, তাহলে তুমি এটা করে দেখতেই পারো। যে কোনো মানুষ এখন বড় পেইন্টিং পছন্দ করেন। তোমার প্রিয়জনকে বড় কোনো ছবি বিশেষ করে তার প্রিয় ফুল, বা স্থান বা সেরকম কিছু এনে উপহার দাও । যাদের আঁকার দক্ষতা আছে তারা নিজের হাতে এঁকেই দিতে পারো। সেটা কিন্তু তার চোখের সামনে দেয়ালে বা কোথাও রাখতে হবে । বার বার তোমার উপহারটি চোখে পড়লে তোমার প্রিয়জন তোমার নানা কথা ভাবতে থাকবে আর অভিমানের মোম গলতে শুরু করবেই করবে ।
এই পদ্ধতি আধুনিক ডিজিটাল যুগের মানুষের জন্য , বিশেষ করে শিক্ষিত যারা, তাদের কাছে খুব কার্যকরী কৌশল। কারণ মুখে যা বলা যায় না, তা অনেক সময় লিখে বোঝানো যায় । আর লেখায় যে গভীরতা থাকে মুখের কথায় তা থাকে না। সেটা নিশ্চয় জানো যে লিখিত কোনো বার্তা না পেলে মৌখিক কথায় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাজই হয় না।প্রিয়জনের খুব গাঢ় অভিমান কিংবা তোমার উপর কোনো গুরুতর দোষ আরোপিত হয়েছে — বিষয়টা যদি এমন হয়ে থাকে , তাহলে কাগজ কলম নিয়ে বসে যাও চিঠি লিখতে। আর মন প্রাণ উজাড় করে গভীর ভালোবাসায় ভরা চিঠিটি লিখে দাও তোমার প্রিয়জনকে। দেখবে চোখের জলে একসা হয়ে তোমার কাছে ছুটে আসবে তোমার প্রিয়জন ।
Sorry তো আমরা কথায় কথায় বলে থাকি। শব্দটার বহুল প্রয়োগের ফলে এর গভীর মাহাত্ম্যটাই নষ্ট হয়ে যায় । ফলে প্রিয়জন রাগ করলে শুধু Sorry তে কাজ হয় না । তাই এই Sorry বলার পদ্ধতিটি বদলে নাও । যেমন- ” সেদিনের আচরণের জন্য আমি খুবই মর্মাহত । তোমার ভেতরের ভালো মানুষটাকে আমি সম্মান দিতে পারিনি । আমায় ক্ষমা করে দিও । ” এই ধরণের বাংলা শব্দগুলি আসলে “Sorry ” বা “দুঃখিত” শব্দগুলোর থেকে বেশি গভীরভাবে হৃদয়কে নাড়া দিয়ে থাকে । তুমি তোমার মতো ক’রে গভীরভাবে “Sorry ” বলো । কিন্তু শব্দগুলি বদলে দাও । দেখো কিরকম সুফল পাও ।
ঘুরতে যাওয়া আর লং ড্রাইভে যাওয়া এক নয়। কেননা ঘুরতে যাওয়ার আগে সব ঠিক ঠাক করা থাকে , শুধু যাওয়াটাই বাকি । আর লং ড্রাইভে থাকে অ্যাডভেঞ্চার এর সুযোগ। অর্থাৎ ঘোরার বা ভালোলাগার বিষয়ের খোঁজ করা । কোনোকিছুই ঠিক করা থাকে না সেখানে। আর মজাটাই এখানে। প্রিয়জন খুব রাগ করে আছে ? কথাই বলছে না ? বেশ, তাহলে আয়োজন করো লং ড্রাইভের। যেতে যেতে গুনগুন করে গেয়েই ফেলো না — “এই পথ যদি না শেষ হয় , তবে কেমন হতো …. ” দেখো পরের লাইনটা নিশ্চয় তোমার প্রিয়জন গেয়েই উঠবে । আর তাতেই হবে কেল্লা ফতে। তাও যদি না হয়। তাহলে চলতে থাকো নতুন কোনো টপিকের খোঁজ পেয়ে যাবে নিশ্চয়। সেটা আমি এখান থেকে তো বলে দিতে পারব না । আর না হয় ইউটিউবে গানটি চালিয়ে দাও “চলতে চলতে পথ পেয়েছি তোমায়/ বলতে বলতে মন বলে নি তোমায়।”দেখবে মুখে কুলুপ এঁটে রাখা প্রিয়জনও মুখ ফুটে কথা বলতে শুরু করবে।
এবার আসি বেড়াতে যাওয়া প্রসঙ্গে। প্রিয়জন খুব বেশি রাগ করে আছে ? তোমায় ভুল বুঝে দূরে সরে যাচ্ছে ? বেশ তাহলে সময় বের করে তোমাদের দু’জনের প্রিয় স্থানে বেড়াতে চলে যাও। যে স্থানটি তোমার ভালোবাসার মানুষটির খুব প্রিয় । হয়তো সেখানে তোমাদের ভালোবাসার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সেখানে গিয়ে হয়তো একটু নস্টালজিক হয়ে পড়তে পারো দুজনই। হয়তো মাথায় আসতে পারে “ইস! কত বদলে গেছে সে দিনগুলো । কত ভালো ছিলো আগেকার সেই সময় “। মনে হোক তাতে ক্ষতি নেই । এই নস্টালজিয়াকে দু’জন ভাগ করে নাও । গল্প শুরু করো । তবে গল্প থেকে যদি ঝগড়া শুরু হয়ে যায় , তাহলে আমাকে দোষ দিও না যেন । তবে তুমি কিন্তু অভিযোগ ক’রো না নতুন করে । তাকে বলতে দাও । দেখবে রাগ গলে জল হয়ে গেছে ।
তোমরা হয়তো শুনে থাকবে টাচ ট্রিটমেন্ট এর কথা । যাকে বলা হয় TT বা touch therapy এই বিষয়ে বর্তমানে গভীর গবেষণা শুরু হয়েছে । আজ সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে যে , স্পর্শের মাধ্যমে energy-র এবং positivity-র সঞ্চারণ ঘটে । উইকিপিডিয়াতে এ সম্পর্কে স্পষ্ট বলা হয়েছে , “Therapeutic touch (commonly shortened to “TT”), known by some as “non-contact therapeutic touch” (NCTT), is a pseudoscientific energy therapy which practitioners claim promotes healing and reduces pain and anxiety.” অর্থাৎ রেগে থাকা প্রিয়জনের মনের ব্যথা বা উত্তেজনা স্পর্শের মাধ্যমে দূরে সরে যেতে বাধ্য।তাই হাত ধ’রে থাকা শুধু নয় । ভালোবাসার মানুষকে আলিঙ্গন করার মাধ্যমে তার মনের কষ্ট, জমে থাকা রাগ কমে যেতে বাধ্য ।
এটি প্রচলিত ও পুরোনো পদ্ধতি । প্রিয়জন রাগ করলে তাকে হাসানোর চেষ্টা করা। এটা তো সত্যি যে তোমার উপর রাগ করে থাকা প্রিয়জন তোমার কথায় সহজে হাসবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার ছোটবেলার মজার কোনো গল্প বলো , যেখানে তুমি বোকামি করেছিলে। আর তার জন্য হাস্যকর কিছু সৃষ্টি হলো। এই ধরণের কথা কোনো বইতে লেখা নেই । তুমি ছাড়া আর কারো কাছে শোনা সম্ভব নয় । সেই কথা মনে দিয়ে শুনবে আর হাসবে । হয়তো তোমাকে আবার বোকা, হাবা, বুদ্ধুরাম ইত্যাদি বলে মজা করবে । আর তখুনি বুঝবে প্রিয়জন তোমার ভালোবাসায় ডুবতে শুরু করেছে । আর রাগ ? কখন হাওয়া হয়ে গেছে তোমরা টেরই পাও নি।
ভালোবাসায় রাগ করার একটি প্রধান কারণ কিন্তু ভালোবাসার মানুষটির কাছে গুরুত্ব কম পাওয়া । তোমার প্রিয়জনের যদি এরকম অভিযোগ থাকে যে তুমি তাকে সময় দাও না , পাত্তা দাও নি , বা ছোটো করেছো কারো সামনে । অথবা কিছু ভুলে গেছো কিংবা অন্য কারো প্রতি একটু বেশি মনোযোগ দিচ্ছ ব’লে তার মনে হয়েছে । এরকম কোনো রোগের কারণ হলে তোমার জন্য এই টিপস । তুমি এমন কিছু কাজ করবে যেখানে তোমার ভালোবাসার মানুষটির গুরুত্ব বেশি হয়। যেমন প্রিয় মানুষটির জন্মদিন , ভালো কোনো রেজাল্ট ইত্যাদির জন্য বন্ধুদের বা কাছের আত্মীয়দের নেমন্তন্ন করে খাওয়ানো। সেরকম কোনো টপিক না পেলে প্রিয়জনের হাসিমুখের ছবিটি আর্টিস্টকে দিয়ে আঁকিয়ে নিয়ে এসো। আর ঘরের দেয়ালে টাঙিয়ে দাও । কিংবা মেকআপ আর্টিস্টকে নিয়ে এসো আর তাকে সাজিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যাও একদিনের জন্য ফটোশ্যুট করতে । মেয়ে বা ছেলে যে কেউই এখন এটা ভালোই বাসবে আশা করি । দেখবে রাগ কোথায় চলে গেছে ।
সব্বাই নিজের প্রশংসা শুনতে ভালোবাসে । আর সব মানুষের মধ্যেই প্রশংসা করার মতো কোনো না কোনো বিষয় থাকবেই । সে যদি তোমার ভালোবাসার মানুষই হয়ে থাকে , তবে তার প্রশংসার বিষয় তোমার থেকে আর কারো জানার কথা নয় । বন্ধু, আত্মীয়দের সামনে তার প্রশংসা করো । ফোনে কথা বলার সময় তাকে নিয়ে গর্ব করো । অথবা সরাসরি বলো যে , “তোমার এই গুনকে আমি শ্রদ্ধা করি । কিংবা তোমার জন্য আমার গর্ব হয় ।” দেখবে তোমার গর্ব করা দেখে তোমার প্রিয়জনের রাগ লা-পতা হয়ে গেছে । মনে রাখবে , ভালোবাসার সম্পর্কগুলো কিন্তু এরকম প্রিয়জনের ভালো কাজের গর্ব করার মাধ্যমে গভীরতা পায় । তাই প্রিয়জনকে গুরুত্ব দিলে তোমার প্রতি তারও শ্রদ্ধা বাড়তেই থাকবে। আর রাগ ? তথৈবচ ।
আশা করি বন্ধুরা , আজ থেকে তোমার প্রিয়জনের রাগ আর বেশিদূর এগোবে না। নিশ্চয় বুঝে নিয়েছো প্রিয়জন রাগ করলে তার রাগ ভাঙানোর জন্য কী কী করতে হবে। এই আর্টিকেল এর লিংকটি Save করে রেখে দিতে পারো । কিংবা বন্ধুকে শেয়ার ক’রে তার বড় উপকার করতে পারো । আর্টিকেলটি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাও । আমাদের সঙ্গে থাকতে ফেসবুক পেজে চলে এসো। খুব ভালো থেকো । ভালোবাসার মানুষটিকেও ভালো রেখো।