জীবন যে কতটা মূল্যবান এটা ভুলে গিয়ে অনেক মানুষ সামান্য ঘটনায় দুঃখ পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন । WHO (World health Organisation) -এর পরিসংখ্যান দেখলে চোখ কপালে উঠে যায়। WHO পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ্য মানুষ অর্থাৎ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪০জন মানুষ আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যা বিশ্বে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারন হলেও যে কোনো বয়সেই আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটতে পারে। ৭৯% আত্মহত্যাই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে দেখা যায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী যে মানুষ একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে তার মধ্যে বারবার সেই প্রবণতা দেখা যায়। সবথেকে বেশি আত্মহত্যা ফাঁসি ও কীটনাশক পানের মাধ্যমে হয়ে থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আত্মহত্যার নিরিখে শীর্ষে রয়েছে লিথুলিয়া তারপর লিষ্টে রয়েছে রাশিয়া , জাপানের মতো উন্নত দেশ । বিশ্বের মধ্যে আন্তেগুয়া ও বারবুড়ায় সবচেয়ে কম সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন।
ভারতবর্ষের কথা যদি বলা হয় তাহলে তামিলনাড়ু (১২.৫%) আত্মহত্যার নিরিখে সর্বপ্রথম ,তারপরে মহারাষ্ট্র (১১.৯%) ঠিক তারপরেই আমাদের পশ্চিমবঙ্গের (১১%) স্থান । আর যদি শহরের নিরিখে দেখা যায় তাহলে প্রথম হল চেন্নাই তারপর ব্যাঙ্গালোর তারপর দিল্লি ও মুম্বাই । গবেষণায় দেখা গেছে মহিলাদের তুলনায় পুরুষরাই বেশি আত্মহত্যা করে থাকেন । পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে অনুপাত হচ্ছে ৪:৩ , তবে পশ্চিমবঙ্গে পুরুষের তুলনায় মহিলারা বেশি আত্মহত্যা করে থাকেন । ভারতবর্ষে প্রায় ৩৩% মানুষ বিষ পান করে, ২৭% মানুষ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন । বাকি মানুষ বিভিন্নভাবে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ।
১০ই সেপ্টেম্বকে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করা হয় । আমাদের ভারতবর্ষে মানুষ মোটামুটি নিম্নলিখিত কারনে আত্মহত্যা করে থাকেন । বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে এমন কিছু কারণ যেগুলি নীচে তুলে ধরা হল : —
১) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে ।
২) বিবাহে জটিলতা থাকায় ।
৩) প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ।
৪) অবৈধ সম্পর্কের জন্য।
৫) পারিবারিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ।
৬) কৃষি ঋনে জর্জরিত হয়ে ।
৭) স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা বাড়তি চাপ ও রিগিং- এ দিশাহারা হয়ে ।
৮) বেকার সমস্যায় হতাশ হয়ে ।
৯) মানসিক চাপ ও অবসাদ, সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত।
১০) সম্পত্তি নিয়ে বচসা ।
১১) ক্ষতিকারক নেশা যেমন ড্রাগসের প্রভাবে ।
১২) উচ্চাঙ্খা ও সন্তোষজনক ফল না মেলা ।
১৩ ) সাম্প্রতিক কালে প্রাণঘাতী ব্লুহোয়েলের মতো অনেক অনলাইন গেম যা বয়ঃসন্ধির কিশোর কিশোরীদের আত্মঘাতী হতে বাধ্য করে ।
১৪ ) কষ্টকর শারীরিক রোগ।
আমরা সবাই জানি এ জগত দুঃখময় তবে দুঃখের কারন আছে আবার দুঃখ নিবারনের জন্য উপায়ও আছে এটা আমরা ভুলে যাই । অনেকে সামান্য ব্যাপারে কষ্ট পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় , তারা ভুলে যায় একটা জীবন তৈরি হতে কত সময় লাগে , আর তার জন্য সুন্দর একটা সময় অপেক্ষা করছে । হয়তো যে সমস্যার জন্য সে আত্মহত্যা করছে তার পরবর্তীকালে তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ তার জন্য অপেক্ষা করে আছে । কেননা কোন দুঃখ বা সমস্যাই চিরন্তন নয় তা একদিন মিটে যাবেই। কিন্তু জীবন চলে গেলে আর জীবনকে ফিরে পাওয়া যাবে না । কবি বলেছেন –
” মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়
আড়ালে তাঁর সূর্য হাসে। “
আমরা এমন কাজ করে থাকি যেটা পরে জীবনকে সমস্যার মুখে ফেলে । যদি কোনো কাজ করার আগে একটুখানি ভাবি তাহলে হয়তো সহজ জীবন অত কঠিন নাও হতে পারে । অনেক দুর্বল চিত্তের মানুষেরা আছে যারা একটু সমস্যায় পড়লে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় । কোনো সমস্যা থেকে পালিয়ে বাঁচা বীরের কাজ নয় , বরং সমস্যার মুখোমুখি হওয়াটাই বীরত্বের কাজ । আর আত্মহত্যা করলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয় তা নয় বরং সমস্যা আরও বাড়ে । মানুষ এটা ভুলে যায় যে সে শুধু একা নয় , তার জীবনের সাথে আরও কত প্রিয়জনের জীবন জড়িয়ে আছে ।
ছাত্র- ছাত্রী বয়সে আত্মহত্যার প্রবণতাটা অনেক বেশি তাই স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের পাশাপাশি যদি জীবন সচেতনতা মূলক সাবজেক্ট যুক্ত করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায় তাহলে কিছুটা হলেও আত্মহত্যার প্রবণতাটা কমবে ।
সকল সমস্যার সমাধান আছে এটা আমরা ভুলে যাই । অতি উচ্চ এভারেস্টের চেয়ে মানুষ কিন্তু বেশি উঁচু ঠিক তেমনি সমস্যার চেয়েও কিন্তু মানুষ বড় । সমস্যার থেকে না পালিয়ে তাকে মোকাবিলা করতে হবে । হয়তো একটু কষ্ট হবে কিন্তু অসম্ভব নয়।
অনেক মানুষ আছেন চাপা স্বভাবের কাউকে কিছু বলতে চায়না তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাটা অনেক বেশি। যে কোনো সমস্যা নিজের মধ্যে চাপা না রেখে সবার সাথে শেয়ার করা উচিত কে জানে তোমার সমস্যার সমাধান সামনের জনের কাছে আছে ।
যখনি আত্মহত্যার পরিবেশ তৈরি হবে তখন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো করতে পারো :
জীবনে দুঃখ আছে যন্ত্রণা আছে তাই কে বলেছে জীবন যন্ত্রণাময় ? জীবনে সবার একটু আধটু কষ্ট আছে , আর তা নিয়েই আমরা পড়ে থাকি , আর সবাইকে বলে বেড়াই আমার জীবন দুঃখে ভরা । জীবনে তো অনেক আনন্দ আছে কই আমরা তো কখনো বলি না যে আমরা খুব সুখে আছি বা আনন্দে আছি । আমাদের জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো উচিত । তাহলে এই সমস্যার সমাধান হবে ।
চোখ খুলে দেখতে হবে পৃথিবী কত সুন্দর ।
কবির ভাষায় –
” মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে
মানবের মাঝে বাঁচিবারে চাই ।”
লেখাটি তোমাদের কেমন লেগেছে কমেন্ট করে জানাও । আমাদের ফেসবুক পেজে সঙ্গে থাকো । আর লিখে ফেলো কোন কোন বিষয়ের উপর লেখা চাও তোমরা । খুব ভালো থেকো , সুস্থ থেকো ।
This Article Is Written By
কবি – সম্পাদক “অন্বেষণ” পত্রিকা
আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র । আমি সুন্দর সুশীল এক সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি । আমি লিখতে ভালোবাসি ও কবিতা- গল্প -প্রবন্ধ পড়তে ভালোবাসি।