স্মার্ট ইন্টারভিউ দেওয়ার টিপস
যে কোনো মানুষকেই ইন্টারভিউ এর সম্মুখীন হতে হয় । আজকে চাকরি বা কোনো কাজে নিযুক্ত হবার জন্য যে বিভিন্ন ধরণের ইন্টারভিউ দিতে হয় , তার মূল বিষয়গুলো আলোচনা করবো । খুব সহজেই কীভাবে বাজিমাত করে সকলের মনে ব্যক্তিসত্তার ছাপ ফেলা যায় তার টিপসগুলো নীচে তুলে ধরা হল ।
ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে মূল যে বিষয়গুলো করতে হবে আর কী কী করা যাবে না , সেই দুটো ভাগে আলোচনাকে ভাগ করে নেওয়া যাক ।
সবার আগে কোন কোন বিষয়ের দিকে নজর রাখতে হবে আর কী কী করতে হবে সেগুলো বলি :-
কথায় বলে আগে দর্শনধারী, তারপর গুণ বিচারি— পুরোনো হলেও এ কথা এক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইন্টারভিউয়ের পোশাক হতে হবে পরিষ্কার এবং পরিপাটি। কারণ পোশাক-পরিচ্ছদ আর অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠে। তাই রঙিন, জবড়জং পোশাকের চেয়ে হালকা রঙের পোশাক পরাই ভালো। তবে পোশাকের রঙ যাই হোক, সাদা বা নীল, অবশ্যই তা যেন কুঁচকানো না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুরুষ বা নারী যেই হন না কেন পোশাকে যেন একটি অফিশিয়াল লুক থাকে ।
যে কোনো প্রতিষ্ঠানের ইন্টারভিউ দেবার আগে সেই কোম্পানি সম্পর্কে ভালোভাবে নেট ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে কোম্পানিকে আরও উন্নত করতে হলে কী ধরণের পরিশ্রম ও কর্মী দরকার সে সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে। নিজের নাম , নামের অর্থ, পদবী ও এর উৎস , ঠিকানা, জায়গার নাম ও নামের কারণ ইত্যাদি সাধারণ প্রশ্নের উত্তরগুলি রেডি রাখতে হবে। বাড়িতে কয়েকজন গ্রুপ করে মক ইন্টারভিউ দিতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা অভ্যাস করলে খুব ভালো হয়। কিছু কমন প্রশ্নের উত্তর বাংলা এবং ইংরেজিতে মুখে বলে বলে অভ্যাস করতে হয়। এতে মুখের জড়তা কেটে যায়। সঙ্গে নিজের জলের বোতল ও হাল্কা শুকনো খাবার রাখতে ভুলবেন না। কারণ অনেক সময় লাইনে পড়ে কিছুটা দেরি হতে পারে।
সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আপনার সময়নিষ্ঠতার একটি উদাহরণ হতে পারে ঠিক সময়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে আপনার উপস্থিতি। হাতে কিছু বাড়তি সময় নিয়ে আপনার যাত্রা শুরু করুন, যাতে রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম এর কারণে বিলম্ব না হয়।
ইন্টারভিউ বোর্ডে যাবার আগে অবশ্যই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিন। কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন-
ক. একটি ফাইলে কাগজপত্রগুলি পরপর সাজিয়ে রাখুন। যাতে বের করতে সুবিধা হয়।
খ. পলিথিনের ব্যাগে কাগজপত্র বয়ে নিয়ে গেলে ইন্টারভিউ যাঁরা নেবেন তাঁদের কাছে আপনি খেলো প্রতিপন্ন হতে পারেন।
গ. কোন কাগজপত্র নিজে থেকে দেখাবেন না, চাইলে পরে তবেই কাগজপত্র দেখান।
ঘ.ইন্টারভিউ শেষে সমস্ত কাগজপত্র ফেরত নিতে ভুলবেন না।
ঙ. নিজের কাগজ পত্র সিরিয়ালি সাজিয়ে রাখতে হবে আগে থেকেই। প্রয়োজনীয় কপি করে , স্বাক্ষর করে সেট করে রাখা প্রয়োজন।
চ. না চাইলেও সাধারণ কিছু ডকুমেন্ট সঙ্গে রাখুন। যেমনঃ সব ধরণের অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট, নিজের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতার নমুনা, CV ও ছবি।
আরও পড়ুন : একটি ভালো এবং আকর্ষণীয় CV কিভাবে বানাবে
ইন্টারভিউ কক্ষে বা ইন্টারভিউ রুমে প্রবেশ করার আগে দরজায় করাঘাত করে তবে ঢুকুন। আপনার নাম ডাকা হলেও করাঘাত করতে ভুলবেন না। আর অবশ্যই অভিবাদন জানিয়ে প্রবেশ করুন। ঢুকেই খুব মোলায়েম ভাবে গুড মর্নিং, গুড আফটারনুন ইত্যাদি সময় অনুসারে বলতে হবে । আর সোজা বাংলায় নমস্কার কথাটিও বলতে পারেন । সবার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক আই কন্টাক্ট করুন। আগেই বসবেন না । বসতে বলার অপেক্ষা করুন । ছয় সেকেন্ডের মত অপেক্ষা করুন । যদি বসতে না বলে থাকেন , আপনি “ বসতে পারি” ( May I be seated? ) বলে অর্থাৎ অনুমতি নিয়ে বসবেন।
আত্মবিশ্বাসী মানুষের ঘাড় উঁচু মাথা উঁচু থাকে । আর কথা বলার ভঙ্গিমাতেও আত্মবিশ্বাস ফুটে ওঠে । ইন্টারভিউতে প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় চোখে চোখ রেখে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিতে হয় । এমনকি কনফিউজিং প্রশ্নের উত্তরে “আমার অজানা” গোছের উত্তরগুলোতেও আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ থাকবে । অর্থাৎ এটা আমি ভালোভাবে জানি , এটা যেমন আত্মবিশ্বাস আবার এটা আমি জানি না সেটাও কিন্তু আত্মবিশ্বাসই প্রকাশ করে।
ব্যক্তিত্ব কথাটির অর্থ নিজস্বতাকে তুলে ধরা । প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা হয়ে থাকে । তাই তাদের নিজস্ব আচরণ, কথা, শরীরী ভাষা আলাদা আলাদা হতে বাধ্য। তাই কোনো ধরনের নকল আচরণ করতে যাবেন না । কথার মধ্যে যেমন ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায় , তেমনি পোশাক, আচরণ, যুক্তি, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ইত্যাদিও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোম্পানি যেমন দক্ষ কর্মী চায় , তেমনি চায় ব্যক্তিত্বশালী মানুষ । তাই মনে রাখবেন, অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়। নিজের স্বাভাবিক আচরণ অর্থাৎ ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলুন স্বাভাবিকভাবে।
হাসিমুখে বিশ্বজয় করা যায়। যে কোনো কাজে মানুষ সবার আগে কোনো কর্মীর ব্যবহার দ্বারা প্রভাবিত হন। তাই ইন্টার্ভিউতে পুরো সময়টা জুড়ে একটা স্মাইলি ফেস বজায় রাখুন।
সবসময় মনে রাখতে হবে মানুষ সেই ব্যক্তিকেই পছন্দ করে , যে পোজিটিভিটি ছড়ায় । তাই ইন্টারভিউতে যত ধরণের কথাই হোক না কেন , তাতে কিন্তু পজিটিভ একটা দিক যেন থাকে — সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । এটা তারা পরীক্ষাও করে থাকেন যে ক্যান্ডিডেট কতটা আশাবাদী । নেতিবাচক উত্তর কখনোই কাম্য নয় । একবার দুজনকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল যে , ” ধরুন আপনার চাকরিটা হলো না, আপনি তখন করবেন ? “
এর উত্তর দুজন দুরকম দেন। প্রথম জন বলেন “চাকরি না হলে কী আর করবো, আমার কপালে যা আছে তাই হবে ।” আর দ্বিতীয়জন বলেন , “কেন ধরতে যাব। আমি আমার জব পাবার ব্যাপারে অত্যন্ত আশাবাদী।”
ইন্টারভিউ দেবার সময় , নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বা আলোচনার সময় প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকাতে হয় । চোখে চোখ রাখা আত্মবিশ্বাসের পরিচায়ক । আর কথায় জোর বা boldness আসে এতে । তাই কক্ষে যতজন উপস্থিত থাকুন না কেন তাদের সকলের দিকে আই কন্ট্যাক্ট করেই কথা বলা প্রয়োজন ।
অনুমতি পেয়ে চেয়ারে বসতে হবে। বসার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে। রিল্যাক্স মুডে বসতে হবে যেমন , তেমনি মেরুদন্ড সোজা করে বসতে হবে । হাত দুটো খুব স্বাভাবিক দুই উরুতে বা কোলের কাছে রাখলে ভালো লাগবে। পেপারস এর ফাইলও কোলে রেখে তার উপর হাত রাখা যেতে পারে।
যে কোনো ইন্টারভিউতে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয় । যেমন রাজনীতি, প্রোডাক্ট, সামাজিক প্রথা ইত্যাদি । এসব ক্ষেত্রে রাজনীতির বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া বা সরকারি নির্দেশের পক্ষে সে দেওয়াই ভালো । আর অন্যান্য বিষয়ে পরিষ্কারভাবে নিজের মতকে অল্প কথায় তুলে ধরতে হয় । অযথা কোনো বিষয় উত্থাপন করলেও সে বিষয়ে মত জানতে না চাইলে দেবেন না। সেক্ষেত্রে শুধু তথ্য তুলে ধরেই ক্ষান্ত থাকতে হবে।
প্রবেশের মত বিদায়ের মুহূর্তে বিদায় সম্ভাষণ করাই দস্তুর । সাধারণত , ধন্যবাদ স্যার বা ধন্যবাদ ম্যাম (Thank you ) বলেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে । একটু বেশি আন্তরিক হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে আপনি “ভালো থাকবেন” জাতীয় কথা অনেকটা ইম্প্রেশন তৈরি করে থাকে ।
ইন্টারভিউতে কী কী করা যাবে না :- ইন্টারভিউ এর আগে , ইন্টারভিউ চলাকালীন এবং তাৎক্ষণিক পরে যে যে বিষয়গুলো খারাপ ইমপ্রেশন তৈরি করতে পারে , সেগুলি খুব সংক্ষেপে তালিকা করে দেওয়া হল । তাহলে আসুন দেখে নিই ইন্টারভিউতে কী কী করা যাবে না :-
১. ওভার কনফিডেন্স দেখানো ।
২. ওভার স্মার্ট সাজার চেষ্টা ।
৩. অতিরিক্ত বা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলা।
৪. ইন্টারভিউয়ের আগে ও পরে ধূমপান করা ।
৫. বেশি অঙ্গ ভঙ্গি করা বা হাত মাথা নাড়িয়ে কথা বলা।
৬. যুক্তিহীন ও নেগেটিভ কথা বলা।
৭. মোবাইল ফোন চালু রাখা, “একটু ফোনটা ধরি” গোছের কথা বলা।
৮. দেরি করে পৌঁছানো বা “sorry sir , একটু দেরি হয়ে গেল গোছের কথা বলা।
৯. দ্বিধাযুক্ত উত্তরদান বা অপরিস্কার ভাষার প্রয়োগ ।
১০. মিথ্যে বলার চেষ্টা ।
১১ আগের চাকরির বা প্রতিষ্ঠানের নিন্দা করা ।
১২ কাজের সময় , ছুটি , বাড়ি ফেরা ইত্যাদি বিষয়ে আগাম জানতে চাওয়া।
আশা করি বন্ধুরা , আজকের স্মার্ট ইন্টারভিউ দেওয়ার টিপস বিষয়টি খুব কাজে লাগবে আপনাদের । আমাদের ফেসবুক পেজ -এ চলে আসুন সেখানে যুক্ত থাকলে নিয়মিত সব আপডেট পাবেন । আর আর্টিকালটি যদি পরিচিত জনের উপকারে লাগে তাই শেয়ার করতে ভুলবেন না । ভালো থাকবেন , সুস্থ থাকবেন । ধন্যবাদ।
This Article is Written By – Ferdousi Manjira (Founder – Preronajibon.com)