কোরোনা ভাইরাস (CoV) কি ? সতর্কতা ও সুস্থ থাকার উপায়
কোরোনা ভাইরাস (CoV) একটি বড়ো ভাইরাস গ্রূপের সদস্য। এই ভাইরাস সাধারণ সর্দি কাশি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভয়ানক রোগের কারন হতে পারে। কোরোনা ভাইরাস থেকে হওয়া কিছু ভয়ানক রোগের মধ্যে রয়েছে – Middle East Respiratory Syndrome (MERS-CoV) এবং Acute Respiratory Syndrome (SARS-CoV)। বর্তমানে যে নতুন কোরোনা ভাইরাসটি চীন থেকে শুরু করে সমগ্র বিশ্বে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরী করেছে তা হলো 2019-Novel coronavirus (nCoV).
কোরোনা ভাইরাস (CoV) এর সূত্রপাত :
কোরোনা ভাইরাস থেকে হওয়া মারাত্বক রোগ প্রথম ধরা পরে চীনে ২০০৩ সালে, রোগটি ছিল Acute Respiratory Syndrome (SARS-CoV), গবেষণায় ধরা পরে যে এই রোগটি বিড়ালের থেকে মানুষের শরীরে আসে, আরেকটি ভয়ানক রোগ Middle East Respiratory Syndrome (MERS-CoV) প্রথম ধরা পরে ২০১২ সালে সৌদি-আরবে, জানাযায় এই রোগটি উটের থেকে মানুষের শরীরে আসে।
বর্তমানের 2019-Novel coronavirus (nCoV) প্রথম নজরে আসে ২০১৯ এর ডিসেম্বর মাসে, স্থান : চীনের উহান প্রদেশ।ঠিক কোন প্রাণী থেকে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে এসেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় এবং সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত রোগের সাথে এর লক্ষণগুলির মিল থাকায় প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণের আগেই রোগটি উহান সহ চীনের অন্যান্য প্রদেশে ও পরবর্তীতে চীনের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশে ছড়াতে থাকে।
চিকিৎসা ও প্রতিকার :
দুঃখের বিষয় যে এখনো পর্যন্ত (এই আর্টিকেলটি লেখা পর্যন্ত) এই রোগের সঠিকভাবে প্রমাণিত কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরী করা যায়নি। যদিও চীন সহ বিশ্বের সমস্ত উন্নত দেশের বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসকরা দিন রাত চেষ্টা করে চলেছেন এই ভাইরাস মোকাবিলা করার জন্য, এবং এই চেষ্টায় সমস্ত রকম সহযোগিতা করছে WHO (World Health Organization).
যে সমস্ত মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং যাতে তাদের থেকে অন্য মানুষদের আর এই রোগ সংক্রমণ না করে সেই বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই বৈজ্ঞানিকদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম সাফল্যের নাগাল পাবে।
সুস্থ থাকতে যা যা করবেন :
যেহেতু এই রোগটি এখনো নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় সীমাবদ্ধ রয়েছে, তাই কিছু সতর্কতা মেনে চলে আমরা এই রোগের ছড়িয়ে পড়া অনেকটাই আটকাতে পারি এবং নিজে ও পার্শবর্তী মানুষদের সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে পারি।
WHO (World Health Organization) এর তরফ থেকে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি নিজেকে এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। দেখে নিন সেই পদ্ধতিগুলি :
১. হাত ধোয়া :
সময়ে সময়ে হাত সাবান, জল বা এলকোহল বেসড হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করুন। এর ফলে যদি আপনার হাতে কোনোরকম ভাইরাস থেকে থাকে তা শরীরের ভেতরে প্রবেশ করবে না।
২. সর্দি কাশী হলে পরিষ্কার থাকুন :
সর্দি কাশী হলে সবসময় রুমাল বা টিসু ব্যবহার করুন, মুখে মাস্ক লাগান, কাশি হলে মুখ ঢেকে নিন, কফ, থুথু নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন। নাক বা মুখে হাত দিলে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
৩. অসুস্থ ব্যক্তি থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন :
এই ধরনের রোগের লক্ষন রয়েছে এমন রোগীর থেকে অন্তত ৩ ফিট দূরত্ব বজায় রাখুন, এতে সংক্রমণের সম্ভবনা অনেকটাই কম থাকে।
৪. চোখ নাক মুখ স্পর্শ :
অপরিস্কার হাত দিয়ে বা হাত না ধুয়ে চোখে মুখে হাত দেবেন না, কারন আমাদের হাত অনেক অপরিষ্কার জায়গা স্পর্শ করে ফলে তা নাক বা মুখের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ :
শীতকালে সর্দি কাশি জ্বর আমাদের হয়েই থাকে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এরকম রোগের লক্ষন চোখে পড়লেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন, আর আপনি যদি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দেশের বাইরে কোথাও গিয়ে থাকেন তাহলে সেই তথ্য চিকিৎসককে জানান।
৬. পশু-পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন :
অনেক মানুষের কাছেই পশু পাখি খুবই প্রিয় এবং যা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু মনেরাখবেন যেহেতু কোরোনা গ্রূপের ভাইরাস zoonotic প্রকৃতির, অর্থাৎ যা পশু পাখি থেকে মানুষের শরীরে আসে তাই নিজেকে ও বাকিদের সুস্থ রাখতে খুব প্রয়োজন ছাড়া পশু-পাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন। যদি আপনার বাড়িতে পালিত কুকুর বা বেড়াল থাকে সেক্ষেত্রে তাদের সংস্পর্শে আসার পর নিজের হাত সাবান দিয়ে ভালো মতন ধুয়ে ফেলুন।
৭. খাবার ভালো মতন রান্না করুন :
প্রাণী জাতীয় যেকোনো খাদ্য বিশেষত মাংস ভালোমতো ধুয়ে রান্না করে তবেই খান। অসুস্থ বা অসুস্থতার কারনে মৃত প্রাণীর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
বর্তমানে যে এই কোরোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বহু মানুষ এই ভাইরাসের শিকার হয়েছে ও কিছু মানুষ প্রাণও হারিয়েছে। চিকিৎসকেরা তাদের কাজ করছে, সমস্ত দেশের সরকার তাদের দেশের নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে, তাই আমাদের উচিত এই রোগ মোকাবিলায় নিজেদের কর্তব্য পালন করা।
WHO এর তরফ থেকে দেওয়া সতর্কতা গুলি মেনে চলা ও বাকিদের তা জানানো। কোরোনা ভাইরাস সম্পর্কিত কোনো রকম গুজবে কান না দেওয়া, কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পদ্ধতি অবলম্বন করা এবং চিকিৎসকদের দেওয়া পরামর্শ মেনে চলা। আশা করি বিশ্ব খুব শীঘ্র এই মারণ ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবে।
WHO (World Health Organization) তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে কোরোনা ভাইরাস সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য নিয়মিতভাবে আপডেট করছে, যাতে বিশ্বব্যাপী মানুষ তা জানতে ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে। আমরা এই আর্টিকেলে এখনো পর্যন্ত WHO এর তরফ থেকে দেওয়া বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনা করলাম, এই তথ্যগুলি আরও বিশদে জানতে ও নিয়মিত আপডেট পেতে এই লিংকে ক্লিক করে World Health Organization এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে কোরোনা ভাইরাস সম্পর্কিত আপডেট ফলো করতে পারেন।
আশা করি আমাদের দেওয়া এই তথ্যগুলি আপনাদের কাজে লাগবে, আর এই ধরনের লেখার আপডেট পেতে নিচের বেল আইকনে ক্লিক করে আমাদের ওয়েবসাইটের সমস্ত নোটিফিকেশন নিজের মোবাইলে পেয়েযান। আমাদের সাথে যুক্ত থাকতে আমাদের ফেসবুক পেজটি ফলো করুন।