মোটিভেশন

প্রতিদিনের জীবনকে সফল করতে অত্যাধুনিক ১০টি টিপস

5 Minute Read

জীবনকে সফল করতে টিপস

This Article By Kishore Majumder

সফল মানুষের সাথে অসফল মানুষের প্রধান পার্থক্য শক্তি বা জ্ঞান নয়। পার্থক্যটা হলো সত্যিকার সফল হওয়ার ইচ্ছা। – ভিন্স লম্বারডি

সবই তো সুখী হতে চায় । মানুষের জীবন নিজের নিজের দ্বারাই চালিত হতে পারে । কিন্তু বেশীরভাগ মানুষই স্রোতের অনুকূলে চলতে থাকে । তুমি যদি সহজ ও সুন্দরভাবে তোমার আধুনিক ব্যস্ত জীবনকে সফল ও সুন্দর করতে চাও , তাহলে এই ছোট্ট ছোট্ট ১০ টি টিপস মনে রেখো ।

১. জড়িয়ে ধরতে শেখো। জড়িয়ে পড়তে যেও না :-

তোমার দুটো হাত – একটি নিজেকে পরিষেবা দেবার জন্য , অপরটি অপরকে সাহায্যের জন্য । কথাটি ঠিক । কিন্তু মনে রাখতে হবে তুমি নিজে বৃহত্তর লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছ । তাই যে কোনো ছোট ছোট ক্ষেত্রে কাজ করো , সাহায্য করো । সেখানে নিজেকে আটকে রেখো না । আমরা প্রতিদিনের জীবনকে ব্যস্ত ও বোরিং করে তুলতে থাকি আমাদের ভালোবাসার কাজগুলোর বাইরে বাড়তি কাজে জড়িয়ে পড়তে থাকি। তাই যদি বড় হতে চাও তাহলে ঠান্ডা মাথায় ভালো লাগা বিষয়কে জড়াও আপত্তি নেই । কিন্তু নিজে সেখানে জড়িয়ে পড়ো না । আবেগের বশে নিজেকে সবার সামনে বড় করতে গিয়ে কথা দিয়ে ফেলো না ।

২. কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসলে, তার অজান্তেই তার কল্যাণ করে যাও :-

ভালোবাসাতে অনেক দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রনা থাকতে পারে । কিন্তু এটাও সত্যি যে ভালোবাসাই পারে মানুষের জীবনকে অর্থবোধক করে তুলতে। কাজেই তুমি তোমাকে এমন ভাবে গড়ে তোলো যাতে ভালোবাসো কিন্তু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য প্রত্যাশা বেশি না থাকে । ভালোবাসার মানুষের জন্য ভেতর থেকে কল্যাণ কামনা করো , তার সুখের কথা ভাবো । দেখবে তুমি তোমার ভালোবাসার কাছেই বিজয়ী হয়ে উঠছো । বিনিময় চাইলে কম পড়তে বাধ্য। কারণ , চাহিদা কোনোদিন শেষ হয় না।তাই ভালোবাসাকে নিজের প্রেরণা ও উন্নয়নের পথ করো — সওদা নয় ।

৩. আলোচনা করো মন খুলে। সমালোচনা করো লোক বুঝে :-

আমরা আলোচনা সমালোচনা করতে ভালোবাসি । বর্তমান সমাজে বেশিরভাগ মানুষই সমালোচনা করে থাকেন । কিন্তু তুমি যে কোনো মানুষের সামনে সমালোচনা করতে যেও না — তাহলে তুমিও ওই এভারেজ এর দলে পড়বে । নিজের ব্যক্তিত্ব উন্নত করতে চাইলে লোক বুঝে সমালোচনা করো , যিনি তোমার সমালোচনার অবমূল্যায়ন করে তোমার সম্পর্কে ভুল ধারণা নেবেন না । আর যখন খুব কাছের মানুষের সঙ্গে কোনো বিষয়ে আলোচনা করবে , তখন প্রাণ খুলে কথা বলো। কারণ আলোচনায় মানুষ নিজে সমৃদ্ধ হয়ে থাকেন। সেখানে আড়াল থেকে গেলে নিজের ধারণা অস্পষ্ট ইহেকে যেতে পারে।

আরও পড়ুন : ভয়কে জয় করতে চাও ? তাহলে তার মুখোমুখি হতে শেখো

৪. বন্ধুত্বকে সম্মান দাও কিন্তু ব্যক্তিত্বকে বিকিয়ে দিও না :-

তোমার বন্ধুকে সম্মান দাও। সম্মান বলতে তার কথা শোনো , তার পরামর্শ নাও । কিন্তু এমনভাবে ফ্রী হয়ে মিশবে যাতে সে তোমার উপর জোর খাটাতে না পারে। মনে রেখো , নেশা করা , অনর্থক মজা করা এসব বিষয় বন্ধুরাই তোমাকে বাধ্য করবে । তাদের সম্মান রাখতে গিয়ে হয়তো তুমি তোমার ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে ফেললে। এতে কিন্তু বন্ধু হলেও সে তোমার ক্ষতিই করতে থাকবে। তাই বলা হয় বন্ধুকে সম্মান দাও , প্রাণ খুলে মেশো। কখোনই নিজের আদর্শ বিকিয়ে দিও না।

৫. চলতে শেখাটাই শেষ কথা নয়। থামতে জানাটাই আসল কথা :-

“চলাই জীবন , থেমে যাওয়ায় মরণ ” আক্ষরিক কথাটি সত্য। কেন না জীবন মনেই চলমানতা , আর জড়তা মৃত্যুরই নামান্তর । বাস্তব জীবনে কোন কাজ বা কোনো সম্পর্ক যেগুলো আর এগোনো উচিত নয় , সেটা আমরা অনেক সময়ই বুঝতে পারি না। হয় অভ্যাসের বশে , নয়তো আবেগের বশে নিজেই নিজের সীমানা লঙ্ঘন করতে থাকি । আর তার ফল হতে থাকে উল্টো । যতই বেরুতে চাই ঠিক ফাঁদের মতো ততই ছটফট করতে থাকি । জীবনের আসল বা বৃহত্তর উদ্যেশ্য ভুলে এসব ছোট্ট ছোট্ট বিষয়েই সময় , পরিশ্রম , অর্থ , উদ্যম হারাতে থাকি। তাই তুমি যদি জীবনকে সফল দেখতে চাও , তাহলে মনে রাখবে জীবনে শুধু চলতে জানলেই হবে না । কোথায় থামতে হবে তা জানা ও বোঝা খুব জরুরি ।

৬. সব ভালোবাসার মূল হল ভালো বাঁচা। তাই নিজেকে ভালো রাখতে শেখো :-

মনীষীদের মূল বক্তব্য হল নিজেকে ভালোবাসো । যদি সত্যি সত্যি মানুষ নিজেকে ভালোবাসতে শেখে তাহলেই সে অপরকে ভালোবাসতে শিখবে । নিজেকে ভালো রাখতে পারলেই অপরকেও ভালো রাখা সম্ভব । তাই নিজের ছোট ছোট খুশিকে গুরুত্ব দাও । প্রতিদিনের জীবনকে ভালোবেসে অর্থময় করে তোলো । ভবিষ্যতের বাসনায় বর্তমানকে দুঃসহ করে তুললে তুমি ও তোমার চারপাশের পরিবেশ অসহ্য মনে হবে । কাজেই ভালোভাবে বাঁচো ও নিজেকে ভালো রাখো ।

তোমার নিজেরও নিজের কাছে ঠিক ততটাই ভালোবাসা ও স্নেহ প্রাপ্য যতটা এই মহাবিশ্বে অন্য যে কারোর।”- গৌতম বুদ্ধ

৭. প্রতিশোধ নয় প্রতিরোধ গড়তে শেখো :-

মানুষের স্বভাবেই রয়েছে জিঘাংসা প্রবৃত্তি ও প্রতিশোধ স্পৃহা। কেউ তোমার প্রতি অন্যায় করলে তুমি যদি তার বদলা নিতে চাও তাহলে তোমার মস্তিস্কে একটা চাপ তৈরি হবে । আর হয়তো প্রতিশোধের পর একটা ফিল গুড বোধ হয় । এটা তোমাকে তোমার কাজ ও মূল উদ্যেশ্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে । ফলে তুমি তোমার উন্নয়নমুখী কাজ থেকে বিরত থাকবে । সমূহ ক্ষতি হবে তোমার নিজেরই । তাই ক্ষমা করতে শেখো । আর তোমার প্রতি অন্যায় থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য প্রতিরোধ গড়তে শেখো । প্রতিরোধ গড়তে শেখা মানে তোমার কাজে আরেকটি বাড়তি গতি নিয়ে আসা । কাজ যদি নাই করো তাহলে তো প্রতিরোধের ভাবনাই আসবে না তাই না ?

আরও পড়ুন : জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে কিছু অনুপ্রেরণামূলক উক্তি

৮. প্রত্যাশা সর্বদাই অপূর্ণ থাকে। তাই প্রত্যাশা নয় প্রচেষ্টা করো :-

মহাপুরুষেরা সর্বদা খুশি থাকেন । থাকতে পারেন এইজন্য যে , তারা কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করেন না । রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ” চাইলেই কম পড়ে “। অর্থাৎ চাহিদার বৈশিষ্ট্য হল ক্রমবৃদ্ধি । নিজের কাজের মধ্যে ডুব মেরে যদি কাজকে ভালোবেসে যাও , দেখবে একের পর এক সাফল্য আসবে । সাফল্য পাওয়ার জন্যই কাজ করতে নেই । কোনো কিছুর প্রচেষ্টা করাটাও একটা সাফল্য । আর চরম সাফল্য তখনই আসবে , যখন কাজকে ভালোবেসে অনলসভাবে প্রচেষ্টার পর প্রচেষ্টা করে মানুষ । গীতাতেও বলা হয়েছে ” মা ফলেসু কদাচন” — অর্থাৎ ফলের আশা করো না ।

৯. শক্তি অর্জন করো। অপচয় নয় :-

বর্তমান সমাজে তো দেখতেই পাচ্ছ , মানুষ কীভাবে শক্তি ও ক্ষমতার অপচয় করে । যার ক্ষমতা আছে সে তাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তৎপর । তোমার লক্ষ্য হওয়া উচিত শারীরিক বা সামাজিক শক্তি ও সক্ষমতা অর্জন করা । আর ক্ষমতা পেলে তার মর্যদা দেওয়া । ক্লাব , সংস্থা সংগঠন , পরিবার , রাজনীতি কিংবা কোনো সরকারি কোনো দায়িত্ব পেলে সেখানে নিজেকে সংযত রাখা খুব বুদ্ধিমানের কাজ । কেন না শক্তি সবার থাকে না । আর থাকলেও সবাই তার মর্যাদা দিতে জানে না । তুমি তোমার ক্ষমতাকে সঠিক কাজে লাগাতে পারলে দেখবে তুমি একজন সফল মানুষ হয়ে উঠছো ।

১০.ভালোবাসার জন্য সবকিছু ত্যাগ করো। কোনোকিছুর জন্য ভালোবাসাকে ত্যাগ করো না :-

কারো কাছে ভালোবাসাই সব , আর কারো কাছে নাম , খ্যাতি , অর্থ , ক্যারিয়ারই সব । কিন্ত বাস্তবটা হল এটাই যে, অর্থ প্রতিপত্তি সব পাবার পরেও মানুষ অসুখীই থেকে যায় । এর কারণ কী ? যুগ যুগ ধরে মনীষীরা এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, সুখ শান্তি মানুষের ভেতর থেকে আসে । কখনোই পার্থিব বাহ্যিক উপাদানে সুখ থাকে না । আর আশ্চর্যের বিষয় বেশিরভাগ মানুষ এটাই বিশ্বাস করে থাকেন যে, বাহ্যিক উপাদানই সুখ শান্তি লুকিয়ে আছে ।কেবল অর্থ প্রতিপত্তি পাবার পরেই মানুষ শান্তি পান না । অপেক্ষা করতে হয় অর্থের উপরে অন্য কিছুর। সেটা হল পরমার্থিক সম্পদ অর্থাৎ ভালোবাসা। মনীষীদের বাণীগুলোই প্রমান করে অর্থের বাইরে এমন কিছু আছে যা সুখ শান্তির উৎস । গবেষণায় জানা যায় , মানসিক কোনো অভাব থাকলে মানুষ সব থাকার পরেও একা হয়ে যায় ,আর এই একাকীত্বই অশান্তির মূল । তাই ভালোবাসা প্রয়োজন।কথাগুলো আবার ভুল বুঝো না । সত্যি বলতে কি এই ভালোবাসা কোনো মানুষ হতে পারে , বিষয় হতে পারে , আবার কোনো কাজও হতে পারে — যা তোমার একাকীত্বকে দূর করে ভালোলাগায় ভরিয়ে রাখতে পারে জীবন । তাই নিজের ভালোবাসাকে কখনোই ত্যাগ করো না । অর্থের ও খ্যাতির বিনিময়ে এই ভালোবাসাকে জলাঞ্জলি দিও না ।

তাহলে বন্ধুরা , আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি টিপস জানলাম , যা আধুনিক ব্যস্ত জীবনকে সফল ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারে । আশা করি আর্টিকেলটি তোমাদের ভালো লেগেছে । আমাদের ফেসবুক পেজে সঙ্গে থেকো তাহলে এরকম আরো অনেক লেখাই পেয়ে যাবে । আর হ্যাঁ মনে করে তোমার প্রিয়জনদেরও শেয়ার করে দিও । খুব ভালো থেকো , সুস্থ থেকো।

Share
PreronaJibon