শিক্ষা ও জীবন

মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার ৮ টি কার্যকরী উপায়। Strong Mindset

4 Minute Read

শরীর তোমার যতই শক্তিশালী হোক না কেন , মন যদি সাহসী ও শক্তিশালী না হয় তাহলে তোমার জীবনে বড়ো বড় ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো অধরাই থেকে যাবে । তাই সবার আগে যেতা প্রয়োজন তা হল মানসিকভাবে শক্তিশালী হওয়া । মনের জোর এমন এক সম্পদ যার দ্বারা সমস্ত বাধাকে জয় করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো যায়। বিশ্বের সমস্ত পরিশ্রমী ও সফল মানুষের জীবনে মানসিক শক্তির ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ করে কতগুলো বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। সেগুলি আজ তোমাদের সামনে তুলে ধরা যাক। আজ তাই চলো জেনে নিই মানসিকভাবে শক্তিশালী হবার সেরা আটটি উপায়।

ইতিবাচক ও নেতিবাচক এই দুই ধরণের চিন্তাই মনের উপর অনেক প্রভাব ফেলে। ইতিবাচক চিন্তা মনের ভেতর শক্তির যোগান দেয়। তুমি যদি নিজেকে নিয়ে ভালো কিছু ভাবো এবং সেটার ওপর কাজ করো তবে কিছুটা হলেও তোমার জীবনে সঠিক কিছু ঘটবে। নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা থেকে ধীরে ধীরে অতিমাত্রায় দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা, বিষণ্নতা, মানসিক চাপ ইত্যাদির জন্ম হয়। নেতিবাচক চিন্তা আমাদের দুর্বল করে দেয়। তবে মাঝে মাঝে নেতিবাচক চিন্তা তোমাকে তোমার ভুলসম্পর্কে আগেভাগেই সচেতন করে দেয়। একটা কথা মনে রেখো –
Long term – Optimist
Short term – Pessimist
Pure pessimist and pure optimist both are equally dangerous. Being a rational optimist can be beneficial.

শক্তিশালী মানুষ উষ্ণতা ও দয়ায় পরিপূর্ণ থাকে। মানসিক শক্তি ছাড়া সত্যিকারের অর্থে কেউ ভদ্র হতে পারে না। সবসময় চেষ্টা করবে বিভিন্ন কাজে অন্যদের সহায়তা করতে, ভালো ব্যবহার করতে, কেউ ভুল করলে ক্ষমা করে দিতে। এর মাধ্যমে জীবনে নেতিবাচক আবেগের পরিমাণ অনেকাংশেই কমে আসবে। জীবনে নেতিবাচক আবেগের পরিমাণ কমিয়ে ইতিবাচক আবেগের পরিমাণ বাড়াতে পারলে দেখবে মানসিকভাবে অনেক শান্তি পাচ্ছো। আর তখন দেখবে নিজেকে মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী মনে হবে।

অন্যের জয়ের সঙ্গে যখন নিজের জয়ের তুলনা করবে তখন সব সময় নিজেকে পরাজিতও মনে হবে। অন্যের সফলতা নিয়ে চিন্তা করলে কিংবা ক্ষুব্ধ হলে নিজের ভেতর একপ্রকার নেতিবাচক চিন্তা বাসা বাঁধবে। এর ফলে মানসিক শক্তি নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষ যখন অন্য কোনো মানুষের সঙ্গে লড়াই করে তখন স্পষ্ট জয় দিয়ে শেষ করা খুব কঠিন। প্রকৃতপক্ষে তুমি যদি খুব কাছ থেকে সেই সব মানুষকে লক্ষ্য করো যারা অন্যদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছে তুমি দেখবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ জীবনের যুদ্ধে জয়ী হয়নি। এর ফলে এটাই বোঝায় যে মানুষ যখন অন্য কারো সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সেখানে পরিষ্কার জয় হতে পারে না। সব শেষে তুমিই তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী।

ছোট ছোটো কাজগুলোকে দায়িত্বের সাথে সম্পূর্ণ করো। একজন বুদ্ধিমান মানুষ, মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষ কখনোই সব দায়িত্ব গ্রহণ করে না। কোন একটি দায়িত্ব নিয়ে যদি তুমি শেষ করতে না পারো তাহলে সেটা তোমাকে মানসিকভাবে অনেক যন্ত্রণা দেবে। তাই দায়িত্ব নেয়ার আগে তোমার ক্ষমতা বুঝে দায়িত্ব নেয়া উচিত। আর যেই কাজ তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তা স্বীকার করে নাও, এতে মানসিকভাবে অনেক শান্তি পাবে।

মানুষমাত্রই ভুল হবে। আমরা কেউ এ ভুলের ঊর্ধে নই। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া আমাদের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। আমরা প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো ভুল করছি। কাজেই ভুল থেকে শিক্ষাগ্রহণের কাজটি সুষ্ঠুভাবে করতে পারলে ভালো কিছু শিক্ষা ঘন ঘন পাওয়ার সুযোগ হবে। আর শিক্ষা যত বেশি নেবে, ভুলের সম্ভাবনাও তত বেশি কমতে থাকবে। ভুল নিজেকে নিজের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। কী ত্যাগ করতে হবে এবং কোনটাকে ভালোবাসতে হবে, তার উপলব্ধি এনে দেয় ভুল। নিজের ভুলকে হেসে উড়িয়ে দিলেই চলবে না, তা শুধরে নিতে হবে। মানসিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তিরা সর্বদা নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায়।

Read More : জেনে রাখো জীবনের সাতটি মূল মন্ত্র

তুমি অন্যদের কী দিয়েছো সেটা সবসময় ভাবলে এবং তোমাকে অন্যেরা কী দিয়েছে সেটা ভুলে গেলে জীবনে অশান্তি শুরু হয়। অশান্তির আরম্ভ-মুহুর্ত হল ‘ আমি ওর জন্য এত করলাম, পরিবর্তে ও আমার জন্য কিছুই করেনি,’ এই চিন্তা। আর এটাই মানসিক শক্তি বিঘ্নিত হওয়ার অন্যতম একটা কারণ। যখন তুমি অন্যের জন্য কিছু করবে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে এজন্য তুমি কোন পুরস্কার আশা করবে না এবং কি করেছ দ্রুত ভুলে যাবে। বরং যতটুকু অন্যের কাছ থেকে পেয়েছ সেটা নিয়ে সন্তুষ্ট ও তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। তাহলে মানসিকভাবে শান্তি পাবে।

এই দ্রুত বহমান জীবনযাত্রায় আমরা ভুলে যাই বর্তমান মুহূর্তে সুন্দর করে বাঁচতে। আমাদের মন সর্বদা ভয়ভীতি…. চিন্তা , পরিকল্পনা সমাধান ও উদ্বেগ নিয়ে থাকে। যার ফলাফল হলো মানসিক চাপ। অতীতে যা ঘটে গেছে তা তুমি চাইলেও তা কখনো বদলাতে পারবে না। তাই অতীত নিয়ে চিন্তায় থেকে মানসিক অশান্তি বাড়িয়ে, বর্তমান সময়টাকে নষ্ট করো না। মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হলে অতীত নিয়ে ভাবা বাদ দিয়ে বর্তমান সময়টার ওপর ফোকাস করো। বতর্মান সময়কে কাজে লাগিয়ে কতটা নিজের প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো যায় সেই দিকে খেয়াল রাখো। এতে তোমার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে।

একটি বিষয় সর্বদা মনে রেখো মানুষকে উপরওয়ালা পর্যন্ত খুশি করতে পারে নি – মানুষ তো কোন ছার । তাই তুমি ক্ষমতা অনুসারে কাজ করবে । আর সেটাই করবে যেটা তোমার হৃদয় বলে । বিবেকের কাছে তুমি সর্বদা স্বচ্ছ থাকবে। অন্যকে খুশি করার জন্য নয় – অন্যের ভালোর জন্য কাজ করবে । একজন মাতাল এক বোতল মদ পেলে খুশি হয় , শিশুরা সারাদিন মোবাইল ফোন পেলে খুশি হয় – কাজেই কারো খুশি করার জন্য কাজ করলে তার পক্ষে সেটা ক্ষতিকরও হতে পারে। আর প্রিয়জনের আবদার রক্ষা করবে নিশ্চয় , কিন্তু মনে রাখবে সেটা তার পক্ষে কল্যানকর কি না । কেউ তোমার দ্বারা খুশি হল কি না সেটা কখনোই যেন তোমার টেনশনের কারণ না হয়।

তাহলে নিশ্চই জেনে গেলে মানসিকভাবে শক্তিশালী হবার উপায়গুলি। আশা করি লেখাটি তোমার জীবনে কাজে লাগবে । তোমার কাছে একটাই অনুরোধ , সম্ভব হলে এই আর্টিক্যালটি তোমার সেই প্রিয়জনকে শেয়ার করে দাও যার মানসিকভাবে শক্তিশালী হবার প্রয়োজন রয়েছে । ভালো থেকো । পরের লেখার জন্য অপেক্ষা করো , আরো নতুন বিষয় নিয়ে শীঘ্রই আসছি। Follow us on YouTube.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *