মধ্যবিত্ত সংসারে অর্থ সঞ্চয়ের আটটি কার্যকর টিপস
মধ্যবিত্ত সংসারে অর্থ সঞ্চয়ের টিপস
মানুষের জীবনে দুটি দিক সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে। অনেক সময় এই দুটি বিষয়ের বৈপরীত্য মনে দ্বন্দ্বেরও সৃষ্টি করে থাকে। সেই দুটি বিষয় হল – একটি আর্থিক অন্যটি পরমার্থিক।
বাস্তবিক জগতে খেয়ে পরে বাঁচতে হলে অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু আবার অর্থের উর্ধে মানবতা , গৌরব , জাতীয়তা , আত্মসম্মান ইত্যাদি জীবনের মহৎ বৈশিষ্ট্যগুলি হল পরমার্থিক বিষয়। শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত পরিবারে এই পরমার্থিক বিষয়ে নম্বর বেশি দিতে গিয়ে অনেক সময় অর্থনীতির ভরাডুবি ঘটে যায়, আবার অনেকেই অর্থের প্রতি নজর বেশি দেন বলে তার স্বাভাবিক গুণগুলির অভাব সকলের কাছে ধরা পড়ে। তাই সংসারের পরিকল্পনায় কীভাবে সুন্দর ভাবে অর্থ সঞ্চয় বাড়ানো যায় তার আটটি টিপস নিয়ে আজ আলোচনা করব –
১. খরচের হিসেবে রাখুন ( কাকেইব ):-
জাপানে মহিলারা সংসার চালানোর জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন এবং তা সন্তানদের শিখিয়েও দেন। সেটা হল – Kakeibo । কাকেইব হল জাপানি মহিলাদের বিশেষ লেজার খাতা। যার মধ্যে সংসারের খরচকে সুসংবদ্ধভাবে করার পরিকল্পনা থেকে। আর্থিক আয় অনুসারে প্রত্যেকের কাকেইব আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। তাই আমাদের মধ্যবিত্ত মানুষের হিসেবের নিরিখে আমরা বলতে পারি – কোনো ডিজিটাল অ্যাপ নয় – সাধারণ নোট বুকে চারটি ভাগে তালিকা করতে হবে – অত্যবশ্যকীয় , শিক্ষা , বিনোদন ও অন্যান্য।
তারপর সাপ্তাহিক বা মাসিক হিসেবে খরচের প্রস্তুতি নিতে হবে। মনে রাখতে হবে কাকেইব একটি পারিবারিক পরিকল্পনা মাত্র। সেটা প্রত্যেকের প্রয়োজনীয় খরচটুকু করার শিক্ষা দেয়।
২. Clear fixed Expenses :-
নিশ্চিত খরচের স্বচ্ছ তালিকা প্রস্তুত : সংসারের খরচ নিয়ে আমাদের রোজগেরে মানুষের মাথাব্যথার শেষ নেই। অপরিকল্পিত খরচ করি আর অন্যদিকে সংসারের জন্য এই করি , ঐ করি বলে খোটা দিতেও ছাড়ি না। সময় বয়ে যাচ্ছে সময়ের মতো। যদি আমরা প্রতিটি সময়ের বিচারে বেঁচে থাকার ও সুস্থ থাকার মূল প্রয়োজনীয় খরচের তালিকা বানাই এবং সেই হিসেবে খরচ করি – একশো শতাংশ গ্যারান্টি দেয়া যাবে কিছুটা হলেও বাজে খরচ কমবে।
আরেকটি বিষয় মধ্যবিত্ত পরিবারে ঋণ থাকবে না – তা কি হয়। যাদের loan বা সুদযুক্ত ঋণ রয়েছে তারা কিন্তু সুদযুক্ত ঋণকে আগে শোধ করবেন। কেন না ব্যাঙ্ক ঋণ কিন্তু প্রতিটা দিনের ওপর সুদ হিসেবে করে থাকে।
৩. List before shopping (তালিকা বানিয়ে বাজার) :-
মাসের রোজগারের সঙ্গে শপিং এর সম্পর্ক আছেই। যারা শপিং করেন তাদের কিন্তু দুটো কাজ করতে হবে –
ক ) Compulsive Shopping ও Impulsive Shopping সম্পর্কে জানতে হবে।
খ ) তালিকা বানিয়ে বাজার করতে হবে।
মানুষের মস্তিষ্কের ওপর গবেষণা করেই কিন্তু শপিং মলগুলোর পসরা সাজানো হয়। তাই প্রয়োজনীয় খরচের চেয়ে আবেগপ্রবণ খরচ কমাতে পারলেই অনেকটা কেল্লা ফতে। হাস্যকর হলেও আরেকটি বিষয় গবেষকরা জানিয়েছেন shopping করতে যাবার আগে ভরপেট খেয়ে যান। কারণ ভর পেটে নাকি impulsive(আবেগ প্রবণ) খরচের ইচ্ছা কমে যায়।
৪. Shop with cash :-
খরচ কমাতে আধুনিক ডিজিটাল সুবিধাগুলি শিখে রাখুন কিন্তু ব্যবহার করুন সনাতন কয়েকটি বিষয়। তারমধ্যে Cash Payment অন্যতম – এমনটাই Home Savings Advisory thought – এর কথায় উঠে আসছে।
হাত থেকে ক্যাশ পে করলে একটা লস বা হারানোর অনুভূতি আসে। অনেক কোটিপতি মানুষও সাধারণ খরচ ক্যাশ -এই করে থাকেন তাদের বিশেষ অৰ্থনৈতিক ভাবনা থেকেই। ক্রেডিট কার্ড , ডেবিট কার্ড – এ কেবল নিত্য প্রয়োজনীয় Pay গুলো করে shopping cash এই করা তাই লাভজনক।
ক্যাশ পেমেন্ট বা নগদ কেনাকাটার পর খুচরো টাকাগুলো গৃহে নির্দিষ্ট সঞ্চয় ভাণ্ডারে রাখুন। দেখবেন অনেক জরুরি খরচ ওখান থেকেই করে ফেলতে পারছেন।
৫. Review your paid subscription :-
নিয়মিত রিচার্জ বা সাবস্ক্রিপশনগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করুন। কারণ তিল তিল করেই তাল হয়। আমার দরকার 1GB ডেটা আমি 3GB রিচার্জ করছি নিয়মিত। সেখানে একশো দেড়শো টাকা বেশি নিয়মিত খরচ করছি। জিমে যাচ্ছেন না কিন্তু ফিস দিয়ে যাচ্ছেন। একই কথা টিভি কিংবা ডিজিটাল অনেক বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৬. Whatsapp Group তৈরী :-
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটি Whatsaap Group তৈরী করুন। প্রত্যেকেই সেখানে কী কী খরচ করছেন তা লিখে রাখুন। এভাবে দেখবেন অপ্রয়োজনীয় খরচের বিষয়টি যেমন উঠে আসবে তেমনি – ” এত টাকা কী করো ?” – এই প্রশ্নটি আর শুনতে হবে না আপনাকে , আজই তাই খুলে ফেলুন Group টি।
৭. 24hr and 30days Rule :-
তালিকা বানিয়ে শপিং -এ যাবার পরও আমরা কিছু পণ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। সেক্ষেত্রে Home Science এর আলোচকগণ 24 hours /30 days rules এর কথা বলেছেন। 50% sale বা ঐ জাতীয় ‘ অফার ‘ দেখে 24hours rules ব্যবহার করতে হবে। মানে পরেরদিন কেনা যাবে সিদ্ধান্ত নিন। আর বড় বাজেটের জিনিসগুলো টিভি ফ্রিজ ইত্যাদির ক্ষেত্রে 30 days পিছিয়ে দিন। মানুষের ভেতরে কিছু conditioning ঘটে থাকে যা 24 hours /30 days পর চিন্তা ভাবনা বদলে যায়। নিশ্চয় এই অভিজ্ঞতা আপনারও হয়েছে।
৮. ছোট ছোট বিনিয়োগ, লম্বা সময় :-
আলোচনার শুরুতে সঞ্চয়ের কথা বলা হলেও ছয়টি টিপস শুধু বাজে বা অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর কথা বলা হয়েছে। হ্যাঁ বন্ধু একটা কথাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা হয়ে থাকে। সঞ্চয় বাড়ানো মানেই বাজে খরচ কমানো। এরপরে কথা থাকে যা , তা হল বিনিয়োগ বা সঞ্চয়ের উপায়। মধ্যবিত্ত পরিবারে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল ছোট ছোট বিনিয়োগ কিন্তু লম্বা সময়ের। কোথায় ,কীভাবে এসব এখানে আলোচ্য নয়। আপনি খরচ বাঁচিয়ে উদ্বৃত্ত টাকা বুদ্ধিমতো সঞ্চয় করতেই পারবেন বলে আশা রাখছি। আধুনিক বিজ্ঞাপনের ভোগপণ্যের যুগে নিজেকে আমরা কতটা সংযত রাখতে পারছি – সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
আশা করি বন্ধু লেখাটি পড়ে কিছুটা হলেও কাজে লাগবে। সবাই স্বাস্থ্য বিধি মেনে সুস্থ থাকুন , এই কামনা করি। আর হ্যাঁ আমাদের ফেসবুক পেজটি লাইক করে পাশে থাকুন। আসছি নতুন কোনো বিষয় নিয়ে পরে আবার। ভালো থাকুন।
my mother also tells like these. she manages exactly in this way.
Thank you very much Deepa for sharing your views. Hope you like our other articles also.