এ. পি. জে. আব্দুল কালামের বিখ্যাত উক্তি ও বাণীসমূহ। A.P.J. Abdul Kalam Quotes
এমন কিছু মানুষ এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হন , যারা মানুষকে নতুন নতুন পথের দিকনির্দেশ দেন । তাঁরা শিখিয়ে যান জীবনের আসল অর্থ ও উদ্দেশ্য কী । তেমনি একজন মহান ব্যক্তি হলেন এ.পি. জে আব্দুল কালাম । আব্দুল কালামের জন্ম ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর অধুনা ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রামেশ্বরমে। যিনি ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হিসেবেই শুধু বিখ্যাত নন , জীবনকে কীভাবে মানুষের কল্যাণে ও পৃথিবীর উন্নয়নে অনলসভাবে কাজে লাগানো যায় — তা তিনি নিজের জীবন দিয়েই শিখিয়ে গেছেন । তিনি ২০১৫ সালের ২৭শে জুলাই তারিখে পরলোক গমন করেন। লেখাতে কিংবা সহকর্মীদের মধ্যে যে মতাদর্শ বা বাণীগুলি রেখে গেছেন ; সেগুলি আজ সকলশ্রেণির মানুষের জীবনে অনুপ্রেরণার আলো এনে দিতে পারে । তাহলে এসো বন্ধুরা , আজ জেনে নিই এ.পি. জে আব্দুল কালামের কিছু মূল্যবান উক্তি ।
এ.পি. জে. আব্দুল কালামের অনুপ্রেরণামূলক কয়েকটি উক্তি:

১.“স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন হলো সেটাই যা পূরণের অদম্য ইচ্ছা তোমায় ঘুমোতে দেবে না।“
২.“প্রতিদিন সকালবেলা এই ৫টি কথা নিজেকে বলবে
আমি সেরা
আমি নিশ্চই পারবো
সৃষ্টিকর্তা সর্বদা আমার সঙ্গে আছেন
আজকের এই দিনটা শুধু আমার।“
৩.“জীবনে কঠিন সব বাঁধা আসে, তোমায় ধ্বংস করতে নয় বরং তোমার ভীতরের লুকোনো শক্তিকে অনুধাবন করাতে। বাঁধাসমূহকে দেখাও যে তুমিও কম কঠিন নও।“
৪.”যদি তুমি সূর্যের মতো উজ্জ্বল হতে চাও, তাহলে আগে সূর্যের মতো পুড়তে শেখো।
৫. “প্রথম সাফল্যের পর বসে থেকো না। কারণ দ্বিতীয়বার যখন তুমি ব্যর্থ হবে তখন অনেকেই বলবে প্রথমটিতে শুধু ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছিলে।“
৬.“যে মানুষগুলো তোমাকে বলে, “তুমি পারো না” বা “তুমি পারবেই না”, তারাই সম্ভবত সেই লোক যারা ভয় পায় এটা ভেবে যে; তুমি পারবে।“
৭.”মানুষের জীবনে প্রতিবন্ধকতা থাকা দরকার, বাঁধা না থাকলে সফলতা উপভোগ করা যায়না।“
৮. “একটা কথা পরিষ্কার, সৃষ্টিকর্তা তাদেরই সহায় থাকেন, যারা কঠোর পরিশ্রম করেন।“
৯.”যদি তুমি পরাজিত হও, তাহলে হাল ছেড়ো না, কারণ সেটাই তোমার শেখার প্রথম পদক্ষপ।”
১০.”কাউকে হারিয়ে দেওয়া তো খুব সহজ, শক্ত হল কাউকে জয় করা।”
১১.”আমাদের সবার দক্ষতা সমান নয় ঠিকই, তবে আমাদের সবার কাছেই সেই দক্ষতাকে আরও বাড়ানোর সমান সুযোগ রয়েছে।”
১২.”বৃষ্টি শুরু হলে সব পাখিই কোথাও না কোথাও আশ্রয় খোঁজে। কিন্তু ঈগল মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে বৃষ্টিকে এড়িয়ে যায়।“
১৩.“ওপরে ওঠার জন্য শক্তি দরকার, সেটা মাউন্ট এভারেস্টই হোক বা আপনার পেশায়।“
১৪.কোনো একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছো না! চিন্তিত হয়ো না- ‘NO’ শব্দের মানে হচ্ছে ‘Next Opportunity’ অর্থাৎ ‘পরবর্তী সুযোগ’।
১৫.”আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। সমগ্র ব্রহ্মান্ড আমাদের প্রতি বন্ধুসুলভ। এবং যারা স্বপ্ন দেখে এবং পরিশ্রম করে তাকে তার প্রতিদান দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করে চলে এই বিশ্ব।”
১৬.”শ্রেষ্ঠত্ব একটি চলমানপ্রক্রিয়া, কোনো দুর্ঘটনা নয়।”
১৭.”আপনাকে স্বপ্ন দেখে যেতে হবে, স্বপ্ন সত্যি হওয়ার আগে পর্যন্ত।“
১৮.“তুমি যদি তোমার কাজকে স্যালুট করো, তাহলে তোমার আর কাউকে স্যালুট করতে হবেনা । কিন্তু যদি তুমি তোমার কাজকে অসম্মান করো,ফাঁকি দাও কিংবা অমর্যাদা করো, তাহলে তোমারই সবাইকে স্যালুট করে যেতে হবে।“
১৯.”তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার বার্তা হলো- তাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করবার সাহস রাখতে হবে। মনের ভেতর আবিষ্কারের তাড়না থাকতে হবে। নিজের সমস্যা নিজে মেটাবার মানসিকতা থাকতে হবে।“
শিক্ষা নিয়ে এ.পি.জে. আব্দুল কালামের বিখ্যাত উক্তি:

২০.“প্রকৃত শিক্ষা একজন মানুষের গৌরব বৃদ্ধি করে এবং আত্মসম্মান বাড়ায়। যদি প্রতিটি মানুষ শিক্ষার বাস্তবিক অর্থ বুঝে নেয় এবং তা মানব উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যবহার করে, তবে এই দুনিয়া বসবাসের জন্য আরও ভালো স্থানে পরিণত হবে।”
২১.”জাতির সবচেয়ে ভালো মেধা ক্লাসরুমের শেষ বেঞ্চ থেকে পাওয়া যেতে পারে।“
২২.”জীবন ও সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবন শেখায় সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে।“
২৩.”একজন মহান ও আদর্শ শিক্ষকের মধ্যে কয়েকটি বিশেষ গুণ অবশ্যই থাকা উচিত – করুণা, জ্ঞান এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি। “
২৪.“যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতিতে রুপান্তরিত করতে হয়, তাহলে আমি বিশ্বাস করি এতে তিনজন মানুষের সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকে – বাবা,মা আর শিক্ষক।“
২৫.“যুব সমাজকে চাকরিপ্রার্থী হওয়ার বদলে, চাকরিদাতা হওয়া প্রয়োজন।“
২৬. “একজন খারাপ ছাত্র একজন দক্ষ শিক্ষকের কাছ থেকে যা শিখতে পারে, তার চেয়ে একজন ভালো ছাত্র একজন খারাপ শিক্ষকের কাছ থেকে অনেক বেশি শিখতে পারে।“
২৭.“যে অন্যদের জানে সে শিক্ষিত, কিন্তু জ্ঞানী হলো সেই ব্যক্তি যে নিজেকে জানে | জ্ঞান ছাড়া শিক্ষা কোনো কাজেই আসেনা ।“
২৮. “যখন একটি শিশুর বয়স ১৫,১৬ বা ১৭ হয় তখন সে ঠিক করে, বড় হয়ে সে একজন ডাক্তার,একজন ইঞ্জিনিয়ার,একজন রাজনীতিবিদ হবে অথবা চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহে যাবে। এই সময় সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে এবং এই সময়টাই হলো তাদের প্রকৃত গঠন হওয়ার সময়। আপনি তাদেরকে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে সাহায্য করতে পারেন।”
২৯. “বর্তমান সময়ে ইংরেজি শেখা খুবই আবশ্যক, কারণ বিজ্ঞান এর সমস্ত কাজ ইংরেজিতে হয়। আমি বিশ্বাস করি যে আগামী দুই দশক এ বিজ্ঞান এর কাজ আমাদের ভাষায় হওয়া শুরু হবে। তখন আমরা জাপানিদের মতো সমানে এগিয়ে যেতে পারব।”
৩০.“শিক্ষন একটি মহান পেশা, যা কোনো ব্যক্তির চরিত্র, ক্ষমতা এবং ভবিষৎ কে আকার দেয়। যদি মানুষ আমাকে একজন ভালো শিক্ষক রূপে মনে রাখে তবে তা আমার জন্য সব থেকে বেশি সম্মান জনক হবে।”
৩১.”আমার মতে, আপনি অল্প বয়সে অধিক আশাবাদী হন এবং এই সময় আপনার কল্পনা শক্তি অধিক হয়। আপনার মধ্যে ভেদাভেদও কম হয়।”
৩২. “সেই ভালো শিক্ষার্থী যে প্রশ্ন করে। প্রশ্ন না করলে কেউ শিখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।“
সাফল্য, ব্যর্থতা, লক্ষ্য ,জয় ও বিজয় নিয়ে এ.পি.জে. আব্দুল কালামের বিখ্যাত কয়েকটি বাণী :

৩৩.”কঠিন কাজে আনন্দ বেশি পাওয়া যায়। তাই সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ কঠিন হওয়া উচিত।“
৩৪.”সহজ ও দ্রুত সুখের জন্য না ছুটে প্রকৃত সফলতার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হও।“
৩৫.”যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করতে পারেনা, তাদের সাফল্য অর্জন আনন্দহীন ও আকর্ষণহীন, এমন সাফল্যের থেকেই সৃষ্টি হয় তিক্ততা।“
৩৬.”জীবন একটা কঠিন খেলা, ব্যক্তি হিসাবে মৌলিক অধিকার ধরে রাখার মাধ্যমে একমাত্র তুমি জয়ী হতে পারবে।“
৩৭.”যদি তুমি ব্যর্থ হও অর্থ্যাৎ FAIL করো, তাহলে মোটেই হাল ছেড়ে দিওনা। কারণ ‘FAIL’ শব্দটার একটা অন্য মানে আছে First Attempt in Learning অর্থ্যাৎ শিক্ষার প্রথম ধাপ”
৩৮.“আমাদের কখনই হাল ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় এবং সর্বদা প্রস্তুত থাকা উচিত যাতে কোনো বাঁধা যেন আমাদের হারিয়ে দিতে না পারে।“
৪০.”ব্যর্থতা কখনো আমায় টপকে যেতে পারবেনা, যদি আমার মধ্যে সফল হওয়ার যথেষ্ট মনের জোর না থাকে।“
৪১.“আমরা শুধুই সাফল্যের উপরই গড়ি না, আমরা অসফলতার উপরেও গড়ি।“
৪২.”নিজের লক্ষ্যে সফল হওয়ার জন্য,তোমাকে তোমার লক্ষ্যের প্রতি নিষ্ঠাবান হতে হবে।”
৪৩.“সফলতার গল্পে কেবল একটা বার্তা থাকে কিন্তু ব্যর্থতার গল্পে থাকে সফল হওয়ার অনেক উপায়।“
৪৪.“ব্যর্থতা নামক রোগটির সবচাইতে ভালো ঔষুধ হলো আত্মবিশ্বাস আর কঠোর পরিশ্রম, এটা আপনাকে একজন সফল মানুষ করে গড়ে তুলবে।“
৪৫.“বিজয়ী হওয়ার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে, বিজয়ী হওয়ার দরকার নেই এটা মনে করা। যখন তুমি স্বাভাবিক আর সন্দেহ মুক্ত থাকবে তখনই তুমি ভালো ফলাফল করতে পারবে।“
বন্ধু নিয়ে এ.পি.জে. আব্দুল কালামের উক্তি :

৪৬.”একটি ভালো বই একশ ভালো বন্ধুর সমান, কিন্তু একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান।“
ধর্ম- বিজ্ঞান, দেশ ও রাজনীতি এ. পি.জে. আব্দুল কালামের কয়েকটি বাণী :
৪৭.“যেকোনো ধর্মকে; সেটাকে বানানোর জন্য আর প্রসার করার জন্য, অন্যের হত্যা করা অনিবার্য নয়।“
৪৮.“উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান, কিন্তু সংকীর্ণ মনের মানুষরা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার।“
৪৯.”আমাকে একটা কথা বলুন, ভারতীয় মিডিয়া এত বেশি নেগেটিভ কেন? নিজের দেশের ভাল কাজ, সাফল্য – এগুলো পৃথিবীর সামনে প্রকাশ করতে এত লজ্জা কিসের? আমাদের কত গর্বের ইতিহাস আছে, এমনকি বর্তমানেও আমাদের দেশে অনেক ভাল কাজ হচ্ছে, অনেক সফল ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। তাহলে তাদের নিয়ে কেন বেশি প্রচার হয় না?“
৫০.“রাষ্ট্রপতি পদের রাজনীতিকরণ করা উচিত নয়। একবার রাষ্ট্রপতি রূপে নির্বাচিত হয়ে গেলে তিনি রাজনীতির উপরে।“
৫১.”রাজনীতি কি? রাজনৈতিক প্রণালী বিকাশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক রাজনীতির সমান।”
৫২.“যেখানে হৃদয় সৎ সেই ঘরে সবকিছু সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে ; যখন ঘরে সবকিছু সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে তখন দেশে নিয়ম থাকে ; আর যখন দেশে নিয়ম থাকে তখন দুনিয়াতে সবাই শান্তিতে থাকে।”
৫৩.“ভারতকে নিজের ছত্র ছায়ায় চলা উচিৎ – আমাদের নিজস্ব ডেভেলপমেন্ট মডেল হওয়া উচিৎ।”
৫৪.”বিজ্ঞান মানবতার জন্য একটি সুন্দর উপহার। আমাদের তাকে বিকৃত করা উচিত নয়।”
৫৫.”ভারত এক বিকশিত রাষ্ট্রে বদলাতে হবে, নৈতিক মূল্যের সাথে এক সমৃদ্ধ দেশে।”
জীবনদর্শন নিয়ে এ.পি.জে. আব্দুল কালামের বিখ্যাত কয়েকটি বাণী :
৫৬.“ছাত্রজীবনে বিমানের পাইলট হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়ে, হয়ে গেলাম রকেট বিজ্ঞানী।”
৫৭.”যারা মন থেকে কাজ করে না, তাঁরা আসলে কিছুই অর্জন করতে পারে না। আর করলেও সেটা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সব সময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।”
৫৮.”আমাকে দেখতে সুন্দর নয়, কিন্তু আমি আমার অন্তরের সৌন্দর্য দিয়ে কারও জীবনে আনন্দ এনে দিতে পারি যার তা প্রয়োজন।“
৫৯.”আপনাকে দেখতে কেমন তার উপরে আপনার সৌন্দর্য নির্ভর করে না , আপনি অন্তর থেকে কতটা সুন্দর তার উপরেই আপনার সৌন্দর্য নির্ভর করে।“
৬০.”আমার মতে খারাপ অভিজ্ঞতা বলে কিছুই হয়না।“
৬১.ক.নির্দিষ্ট লক্ষ্য,
খ. ক্রমাগত জ্ঞান সঞ্চয় করা,
গ. কঠোর পরিশ্রম ও
ঘ. হার না মানা মনোভাব – এই চারটি জিনিস মেনে চললে যেকোনো কিছুকেই লাভ করা যেতে পারে।
৬২.”যা আমি বদলাতে পারব না, তা মেনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।“
আশা করি এ.পি.জে. আবদুল কালামের বিখ্যাত উক্তি নিয়ে লেখাটি সকলের ভালো লাগবে। ভালো লেগে থাকলে সকলের সাথে শেয়ার করো। আমাদের বিভিন্ন লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটিকে ফলো করো।