শরীর ও স্বাস্থ্য

অলসতা দূর করার ৮ টি উপায়

4 Minute Read

কাল করবো , এখন না পরে করছি , দূর ভাল্লাগে না , কোনো কাজেই আর মন দিতে পারছি না , শরীর ভালো লাগছে না — কোনো রকম অসুস্থতা ছাড়াই যদি তোমার এরকমই মনে হয় সর্বদা , বুঝবে তুমি অলসতার শিকার । একজন মানুষের সফলতার পথে যত বাধা আছে তারমধ্যে সবচেয়ে বড় বাধাটাই হল অলসতা । আমরা আসলে অলস নই , আমরা স্বাভাবিক প্রবৃত্তির এই পিছুটানকে এড়াতে পারি না বলে আলস্য আমাদের ওপর ভর করে । প্রতিদিন একই কাজ করতে করতে নিস্তেজ হয়ে যাই । জীবনে সজীবতা নেই বলে আমরা পেশাজীবনে যেমন আলস্য দেখাই , তেমনি ব্যক্তিজীবনে হয়ে উঠি বর্ণহীন , উদ্যমহীন ।

• অলসতা আসলে কী ?

অলসতা হচ্ছে কর্মহীন থাকার শারীরিক ও মানসিক ইচ্ছা, কোনকিছুই করতে না চেয়ে উদ্যমহীন হয়ে থাকা । সোজা কথায় নিস্ক্রিয় থাকার ইচ্ছার নাম অলসতা ।সময়কে কাজে লাগিয়ে সব সময় কোনো কাজে যুক্ত থাকাই সত্যিকারের বুদ্ধিমানের কাজ । কিন্তু অলসতা আমাদের কর্মঠ থাকতে দেয় না । সব কাজের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় । আর এটা আসে মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি থেকে । তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই । কিছু কৌশল বা আচরণীয় পন্থা অবলম্বন করে আমরা সহজেই অলসতা কাটিয়ে উঠতে পারি । তোমাদের জন্য অলসতা কাটানোর সেই ৮ টি উপায় তুলে ধরা হল : –

1 . অলসতার কারণগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখো :

অলসতা দূর করার প্রথম পদক্ষেপ হল , যে বিষয়গুলো অলসতা তৈরী করে সেগুলো থেকে দূরে থাকা । এই যন্ত্রযুগে অলস সময়গুলোর সঙ্গী হয়ে থাকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, স্মার্ট ফোন, টিভি ইত্যাদি । এগুলো থেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও দূরে থাকো । মোবাইল গেম এর মত বিষয়ের থেকে সরে গিয়ে , হাতে পায়ে সক্রিয় থাকার মতো কিছু করো ; যেমন – হাতের কাজ , লেখালেখি , ড্রইং বা কিছু বানানো ইত্যাদির মধ্যে মনোনিবেশ করো ।

2 . ছোট ছোট পদক্ষেপ নাও :

বিন্দু বিন্দু জলেই সিন্ধু গড়ে ওঠে । বড় কোন কিছুর শুরু হয় ছোট থেকেই । তাই ধারাবাহিকভাবে ছোট ছোট কাজের মাধ্যেমে অলসতাকে হার মানাতে পারো ।
একটি কাজকে ছোটছোট অনেকগুলো অংশে ভাগ করে নাও। আমরা অনেক সময় বেশ বড় ও জটিল কোন কাজ হলেই ঘাবড়ে যাই । এই কাজটি করতে গেলে অনেক সময় লাগবে, বেশ পরিশ্রমের কাজ- এমন ভাবনা থেকে কাজ করার ইচ্ছাটা চলে যেতে থাকে । কিংবা কিছুদিন কাজটি চালিয়ে যাবার পর একপর্যায়ে ছেড়ে দেই । এমন ক্ষেত্রে সহজেই তুমি সমস্যাটিকে সমাধান করতে পারবে ৷ সামনে একটা খাতা নাও আর কাজের স্টেপগুলো লেখো , প্রথমের কাজটিতে হাত দাও , নিজের অজান্তেই দেখবে কাজটির শেষে পৌঁছে গেছ ।

মনে রাখবে — Begining is the part of work .

3 . জীবনে নতুন অভ্যাস গড়ে তোলো :

নতুন অভ্যাস গড়ে তোলো , পুরোনো অভ্যাস কাটানোর জন্য নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। পুরোনোকে বাদ দেওয়ার চেয়ে নতুন অভ্যাস গড়ে তুললে নিজের আলস্য কাটানো যায় । ছোট ছোট অভ্যাসে নিজের অলসতা কাটানো শুরু করো ৷ আজই লিফটে না চড়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠো কিংবা পুরো পত্রিকা মনোযোগ দিয়ে পড়ো । আর হ্যা আজই শুরু করে দাও ।

4 . সমস্যা নয় কাজের ফলাফল নিয়ে ভাবো :

আমাদের সবার একটা সাধারণ সমস্যা হচ্ছে কোন কাজ করতে গেলে তার ভালোটা নিয়ে ভাবার আগেই খারাপ চিন্তাগুলো আগে মাথায় নিয়ে আসি । তুমি যদি পড়ে যাওয়ার ভয়ে দৌড়তে সাহস না করতে , তাহলে তুমি দৌড়ানো শিখতে পারতে না । তুমি যা অর্জন করতে চাইছ সেটা নিয়ে কল্পনায় একটা ঘটনা তৈরি করো ৷ যে কাজটি করতে চাইছ তার সমস্যা অথবা জটিলতা নিয়ে না ভেবে , ভাবো অলসতাকে জয় করে তুমি যদি কাজটি ঠিকমতো করে ফেলতে পারো , তাহলে তুমি কী কী পাচ্ছ ? সমস্যা নিয়ে ভাবলে কখনো কাজ এগোবে না , বরং নিরুৎসাহিত হয়ে কাজ করা থেকে বিরত থাকবে তুমি ৷

5 . নিজের লক্ষ্যকে নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করো :

অনেক কাজ পড়ে থাকা সত্বেও যখন কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না । তখন কিছুটা সময় নাও । তারপর নিজেকে জিজ্ঞেস করো , যে কাজটি করছো তা ঠিক পথে এগুচ্ছে কি না , ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চাও , আর যেভাবে এগুচ্ছে তাতে কি সেই লক্ষ্য পূরণ সম্ম্ভব ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর তোমার কাজের সঠিক পথ বলে দেবে এবং অলসতা ত্যাগ করে কাজের প্রতি নতুন করে উৎসাহিত করে তুলবে । মনে রাখবে, হেরে যাওয়ার ভয়ে কখনো কাজকে ভয় পেও না ।

6 . শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠো :

অনেক সময় দেখা যায় শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক অস্থিরতা বা ক্লান্তি কাজের প্রতি অনীহা তৈরি করে । ক্লান্তি বা অসুস্থতা ইত্যাদির জন্যই কাজের প্রতি মনোযোগ রাখতে না পারলে , তাহলে তোমার উচিত প্রথমেই বিশ্রাম নেওয়া । পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নাও ৷ শরীরচর্চা বা হালকা ব্যায়াম করো ৷ পারলে প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশে বেরিয়ে এসো । তুমি অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠবে ৷ কাজের জন্য আনন্দ ফিরে পাবে । সময় থাকতে অলসতা দূর করার চেষ্টা করো । কাজে নেমে যাও — ঝাপিয়ে পড়ো। মনে রেখো , দীর্ঘসূত্রতার অপর নাম অলসতা । অলসতা শুধু কাজেই বাধা দেয় না , এর থেকেই জন্ম নেয় বিষন্নতা ও নানা ধরনের মানসিক অস্থিরতা । তাই অলসতাকে ত্যাগ করার উপায়গুলো জেনে রেখো। পরিশ্রমী ও কর্মোদ্যমী হয়ে কাজে লেগে যাও ৷ সফলতা আসবে অলসতাকে জয় করার মধ্য দিয়েই ৷

7 . ডাইরি বা যেকোনো কিছু লেখা :

হ্যা , অলসতা দূর করার একটা উপায় হল লেখার অভ্যাস করা । আসলে লেখার মাধ্যমে হাতের পেশী সঞ্চালনের ফলে শরীরে আলসতার ভাব কেটে গিয়ে একটা ফ্রেস চনমনে ভাব আসে। তাই অবসর পেলেই লিখতে শুরু কর ।

8 . খাদ্যাভ্যাস :

মানুষের খাদ্যাভ্যাসের উপর তার শারীরিক অবস্থা নির্ভর করে । যেমন বেশি বেশি মাংস , আমিষ জাতীয় খাবার বা বেশি মসলাযুক্ত খাবার মানুষের পেটে HCL acid তৈরি করে । যার ফলে বেশি ঘুম পায় , সবসময় তন্দ্রা ভাব আসে । আর এর পরিণতিই হল অলসতা । তাই খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন , বেশি মসলাযুক্ত আর ফ্যাটজাতীয় খাবার নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি খেতে নেই । শরীর চনমনে আর কর্মঠ রাখতে নানা ধরণের ফল খাওয়া দরকার । ফল , জুস , লেবু ইত্যাদি খাবার প্রতিদিনের তালিকায় রাখলে শারীরিক অলসতার ভাব কমে যাবে আর কাজেও আগ্রহ বাড়বে ।

তো বন্ধুরা চলো আজ থেকে আর কোনো কাজ ফেলে রাখা নয় , নতুন ভাবে নতুন উদ্যমে কাজে লেগে যাই । আর লেখাটি পড়ে কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাও । তোমার বন্ধুদের সঙ্গে লেখাটি শেয়ার করতে ভুলো না কিন্তু । খুব ভালো থেকো , আর কোন কোন বিষয়ে জানতে চাও সেসব কমেন্ট বক্স এ লিখে দাও ।

This Article is Written By

Kushal Chakraborty
Writer

YouTuber
Exam Friend চ্যানেল সঞ্চালক
অজানাকে খুজে চলার নেশা ও নতুন বিষয় শেখার ইচ্ছে ৷

Share
PreronaJibon

View Comments

Published by
PreronaJibon