অন্যরা যতটা না আমাদের ক্ষতি করে তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি ক্ষতি আমরা নিজেরাই নিজেদের করে থাকি। আমাদের ছোট ছোট আচরণই খুব সূক্ষ্মভাবে আমাদের ক্ষতি করে। মানুষ অনুভূতি দিয়ে গড়া। আর সেই অনুভূতির স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশ ঘটানোই মানুষের অভ্যাস। কিন্তু কিছু কিছু অনুভূতি যা অজান্তেই আমাদের ক্ষতিসাধন করতে থাকে সেই অনুভূতিগুলোর সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকা জরুরি। এরকমই পাঁচটি হার্মফুল ইমোশন বা ভাবনা যা আমাদের self esteem, decision making ,thinking power কে ধীরে ধীরে নষ্ট করতে থাকে। আজ সেই পাঁচটি ক্ষতিকারক আবেগ বা ভাবনাগুলো সম্পর্কে জানব এবং কী করে সেই ক্ষতিকারক আবেগ থেকে নিজেকে মুক্ত করা সেই বিষয়েও আলোচনা করব :
” A person who thinks all the time has nothing to think about expect thoughts.“- Alan Watts
চিন্তা করা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু অতিরিক্ত চিন্তা – যা বাস্তব জীবনে ক্ষতিসাধন করতে পারে , বিশেষ করে তা যদি নেতিবাচক চিন্তা হয় তবে সেই চিন্তা জীবনকে পুরোপুরি অগোছালো করে দিতে পারে। কারণ অতিরিক্ত চিন্তা করার অভ্যাস মানসিক অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। আমরা অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা যা হয়তো আমাদের আশানুরূপ ছিলো না তা বার বার স্মৃতিপটে নিয়ে এসে দুশ্চিন্তা করতে থাকি আবার ভবিষ্যৎ নিয়ে অহেতুক চিন্তা করে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে থাকি। ধরো তুমি কোনো একটি কাজ করছো , কিন্তু কাজটা করার সময় তুমি কাজটির প্রতি মনোযোগী না হয়ে অনবরত ভেবে যাচ্ছ কাজটা কেমন হচ্ছে ,ঠিক হচ্ছে কিনা , লোকে কি বলবে ,কি ভাববে ইত্যাদি। তখন অনেক চিন্তা অনেক রকম ভয় তোমার মাথায় কাজ করতে থাকবে যা তোমার মনের অনেকটাই দখল করে নেবে। ফলে কাজের ফলাফল হয়তো আশানুরূপ হয় না। এবং ধীরে ধীরে এই অভ্যাস ,ভাবনা তোমাকে বিষন্নতার দিকে ঠেলে দিতে থাকে।
ভয় নামক অনুভুতিটির সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত। fear is a natural emotion in a human being. ভয় দুধরণের হতে পারে একটি হলো real fear আরেকটি irrational fear – প্রথম ভয়ের উৎস হলো বাইরের কোনো বাস্তবিক ঘটনা। এই ভয় অনেকক্ষেত্রেই থাকা প্রয়োজন। যেমন আগুন, বিদ্যুৎ, উচ্চতা,জন্তু-জানোয়ার ইত্যাদি। এই ভয় মানুষকে সাবধান ও সুরক্ষিত রাখে। আর দ্বিতীয় ভয় হলো কোনো কাজ করার ভয় ,কারো সামনে কথা বলতে ভয় , কোনো পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে ভয় ইত্যাদি। এই ধরণের ভয় আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিয়ে আমাদের বিষন্নতার দিকে ঠেলে দেয়।
[জেনে নিন : ভয়কে জয় করতে চাও ? তাহলে তার মুখোমুখি হতে শেখো]
অস্ট্রেলিয়ার Adelaide universityর সমাজ মনোবিদ্যার একজন গবেষক Ian Mckee তার গবেষণা পত্রে জানান যারা ক্ষমতার জন্য উৎগ্রীব তারা বেশি পরিমানে প্রতিশোধস্পৃহার অধিকারী হয়। মানুষের একটি বিশেষ অনুভূতি প্রতিশোধস্পৃহা। মনে রাখতে হবে সামাজিক অনেক নিয়ম -কানুনের বিরুদ্ধে চলার স্বাধীনতাস্পৃহাও মানুষের আছে। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার বাসনা মানুষের নিজেরই ভেতরে সমস্যা তৈরী করে। তাই কারো উপর ক্ষোভ না রেখে বৃহত্তর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্ষমা করে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত। নিউরোসায়েন্স এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ক্ষমা করার পরিবর্তে ক্ষোভ জমা রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং সেই সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার হার বাড়ে।
আমরা প্রায়শই অন্যের সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ি। গবেষকদের মতে ঈর্ষান্বিত ব্যক্তিরা ক্রোধ অনুভব করেন এবং পরবর্তীতে এই ক্রোধ হীনমন্যতার জন্ম দেয়। ঈর্ষান্বিত হওয়া মানসিক শান্তি এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী নয়। মানসিক শান্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসের ওপরও তা ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে। যা জীবনের লক্ষ্যকে নষ্ট করে দিতে পারে এক মুহূর্তে। আমরা ঈর্ষান্বিত হই কেন ? এই প্রশ্নের উত্তরে এটা বলা যেতে পারে যে আমরা যখনই অন্যের তুলনায় নিজেদের কম মনে করি এবং নিজের মধ্যে খুশি থাকি না তখনই ঈর্ষা নামক অনুভূতি আমাদের গ্রাস করতে থাকে। আমাদের উচিত এই অনুভূতির ঊর্ধে ওঠা। অনেকেই মনে করে থাকে এগুলো মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম , এই অনুভূতি বন্ধ করা যায় না। কিন্তু অনুভূতি বন্ধ না করা গেলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
Guilt is a socially cultivated emotion. পৃথিবীতে কেউ -ই ভুলের ঊর্ধে নয়। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে মানুষ ভুল করে। যে ভুল অন্যের অনুভূতিতে আঘাত করে বা অন্যের প্রতি অবিচার করে তার থেকে সৃষ্টি হয় অনুশোচনা বা অপরাধবোধ। কারো প্রতি অন্যায় করলে সেই অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া সবচেয়ে উত্তম পন্থা। কিন্তু দেখা যায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে সেই অপরাধবোধ আমাদের সঙ্গে বয়ে বেড়াই যা আমাদের আত্মবিশ্বাস ,আত্মসম্মানবোধকে ধ্বংস করে জীবনের আনন্দকে মাটি করে দেয়। মনোসমীক্ষকদের মতে অপরাধবোধ থেকে সৃষ্টি হতে পারে নানা জটিল রোগ। অপরাধবোধ বা অনুশোচনায় সারা দিয়ে একজন মানুষ যখন নিজের আচরণকে সংশোধন করে তখন এই অপরাধবোধই আত্ম -উন্নয়নের সহায়ক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
[জেনে নিন : ভালোবাসার সম্পর্ককে রোমান্টিক ও দীর্ঘস্থায়ী করার ৭ টি অভ্যাস]
চিন্তা – খুব বেশি চিন্তায় ডুবে গেলে একটু সময় নিয়ে নিজের চিন্তাভাবনাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করো। তাহলেই বুঝতে পারবে তোমার চিন্তা গুলো ইতিবাচক না নেতিবাচক। প্রয়োজনে প্রিয়জন এর সাথে শেয়ার করো। সঠিক ডিসিশন নাও। সবকিছু ঠিক আছে এই অভিনয় না করে বাস্তবটা মেনে নাও। কারণ নিজের সমস্যাগুলো মেনে নেওয়াই ব্যক্তিত্বের উন্নয়নের প্রথম ধাপ।
ভয় – ভয় স্বাভাবিক এর তুলনায় বেশি মাত্রায় দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নাও। ভয়ের কারণ বোঝার চেষ্টা করো, নিজের আইডেন্টিটিতে নতুন কোনো গুন্ সামিল করো , কনফিডেন্স লেভেলকে বাড়িয়ে তোলো,নতুন নতুন মানুষদের সাথে দেখা করো , বই পড়ো, ভয় এর সম্মুখীন হতে শেখো।
প্রতিশোধস্পৃহা :- দুনিয়ায় কেউ -ই পারফেক্ট নয়। তাই সমস্ত ক্ষোভ ঝেড়ে ক্ষমা করতে শেখো ।
ঈর্ষা :- কোনধরনের কমতির জন্য তোমার ভেতর ঈর্ষা জাগছে সেই অপূর্ণতাগুলো খুঁজে বের করো। নিজের অপূর্ণতার জন্য হীনমন্যতায় না ভুগে আত্মবিশ্বাসের সাথে তা পূরণের চেষ্টা করো। তোমার থেকে যে বেশি সফল হয়েছে তার প্রতি ঈর্ষান্বিত না হয়ে তার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করো তাকে প্রেরণা হিসেবে নাও।
অপরাধবোধ :- ভুলে যাও অতীত ভুলকে সম্ভবনাময় ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করো। ভুল করলে স্বীকার করো, ক্ষমা চেয়ে নাও। নিজেকে ক্ষমা করো। রাগ পুষে রেখো না।
আশা করি আমাদের দেওয়া এই তথ্যগুলি আপনাদের কাজে লাগবে, আর এই ধরনের লেখার আপডেট পেতে নিচের বেল আইকনে ক্লিক করে আমাদের ওয়েবসাইটের সমস্ত নোটিফিকেশন নিজের মোবাইলে পেয়েযান। আমাদের সাথে যুক্ত থাকতে আমাদের ফেসবুক পেজটি ফলো করুন।