প্রকৃতি তার যে অফুরন্ত ভান্ডার উন্মুক্ত করে রেখেছেন , যার সমস্তই প্রাণী জগতের কল্যান সাধনের উদ্দেশ্যে ৷ প্রকৃতির অপার ফলের সম্ভারে রয়েছে , অসংখ্য প্রজাতির বেঁচে থাকার গল্প ৷ এছাড়া মানুষের জীবনে উন্নত খাদ্য তালিকার পাশাপাশি , ফল একটি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ আজকের এ আলোচনায় আমরা আমলকি ও হরিতকির উপকারিতা সম্বন্ধে জানব ৷ অর্থাৎ এই দুটো ফলের কী এমন উপাদান রয়েছে , যা খেলে মানব শরীরে মহাষৌধির মতো কাজ করে ৷
আমরা জানি আমলকির মধ্যে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি রয়েছে ৷ কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না , ভিটামিন C ছাড়াও ভিটামিন A এবং ভিটামিন B সিরিজের সমস্ত ভিটামিন আমলকির মধ্যে বর্তমান ৷ এছাড়া বিভিন্ন রকম খনিজ উপাদানে ভরপুর আমলকি ফলটি ৷ যেমন—
আয়রন , পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম , ক্যালসিয়াম ও প্রচুর পরিমানে ফাইবার রয়েছে ৷ যা আমাদের মানব শরীরে প্রবেশ করলে , ঔষধির মতো কাজ করে ৷
আলোচনা প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভালো , আমলকিতে যেহেতু প্রচুর ভিটামিন সি থাকে , কিন্তু এই ভিটামিন সি এর পরিমান অন্যান্য ফলের তুলনায় আমলকিতে কতগুণ পরিমানে বেশি থাকে , তা নিচে দেওয়া হল ৷
ক:— পেয়ারার চেয়ে ৩ গুণ বেশি ৷
খ:— লেবুর চেয়ে ১০ গুন বেশি ।
গ:— কমলার চেয়ে ১৫/২০ গুণ বেশি ।
ঘ:— আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি ।
ঙ:— আমের চেয়ে ২৪ গুণ বেশি ।
চ:— কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ।
১। আমলকির উপকারিতা :—
সুতরাং আমরা বুঝতেই পারছি , আমলকির মধ্যে যে সমস্ত উপাদান রয়েছে , তা খাওয়ার মাধ্যমে মানব শরীরে প্রবেশ করলে , তার উপকারিতা অপরিসীম ৷ এবার বরং সরাসরি জেনে নিই , আমলকি খেলে আমাদের কী কী উপকার সাধিত হতে পারে ৷
i) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে :—
বিজ্ঞানীদের মতে আমলকিতে সবচেয়ে বেশি পরিমান এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে , যা খেলে আমাদের মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি পায় ৷ এছাড়া প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে বলে , ফ্রি রেডিকেলের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে , হাড়কে মজবুত করে ৷
ii) শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি :—
আমরা জানি আমলকির মধ্যে বিভিন্ন খনিজ উপাদান বর্তমান ৷ যার মধ্যে একটি গুরত্বপূর্ণ উপাদান হল আয়রন ৷ যা আমাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন ও শ্বেত কনিকার পরিমান বৃদ্ধিতে ভীষণভাবে সহায়তা করে ৷ ফলে সাধারন সর্দি-কাশি থেকে এজমা এবং ব্রংকাইটিসের মতো শ্বাস প্রশ্বাস জনিত রোগ থেকে শরীরকে মুক্তি দান করতে বিশেষভাবে সক্ষম হল আমলকি ৷
iii) সুন্দর ত্বক ও চুলের জন্য : –
রোজ সকালে আমলকির রস মধু মিশিয়ে পান করলে , ত্বকের কালো দাগ এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে তুমি নিস্কৃতি পেতে পার ৷ এছাড়া ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকরী আমলকি ৷ এছাড়া নির্দিষ্ট নিয়মে নারকেল তেলে আমলকি মিশিয়ে গরম করে , ঠান্ডা হবার পর নিয়মিত সেই তেল চুলে ব্যবহার করলে , তুমিও সুন্দর চুলের অধিকারী হতে পারো ৷
iv ) হজমে সহায়তা ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থেকে মুক্তি :-
আমলকিতে যেহেতু প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে , যা মানব দেহে খাদ্য পরিপাক ও হজমে বিশেষ গুরত্বপূর্ণ ৷ তাই কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের মতো খারাপ রোগ থেকে মানুষকে মুক্ত করতে বিশেষ সক্ষম আমলকি ৷
v) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কার্যকরী :-
যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত , তারা নিয়মিত আমলকি খেলে ইন্সুলিনের নির্গমন নিয়ন্ত্রিত হয় এবং রক্তে শর্করার পরিমান কমাতে বিশেষ সহায়তা করে ৷ গবেষণায় দেখা গেছে , ডায়াবেটিসের যে কোনো ঔষধের চেয়ে , আমলকি তিন গুণ বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ৷
২। এছাড়া আমলকির অন্যান্য উপকারিতাগুলো নীচে সংক্ষেপে দেওয়া হল:—
i) আমলকি যকৃতের বিষাক্ততা দূর করে , হ্নদযন্ত্র ও ফুসফুসকে শক্তিশালী করে মস্তিস্কের শক্তিবর্ধন করে ৷
ii ) যাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদের জন্য অতিরিক্ত ওজন বহন করে , নিয়মিত আমলকি খাওয়ার মাধ্যমে মেদ ঝরিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে আমলকি ৷
iii) আমলকির মধ্যে যে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে , তা মানব দেহে ক্যান্সারের বিরূদ্ধেও লড়াই করতে সক্ষম ৷
iv) বমি , পেটের ব্যথা ও পাইলসের মতো রোগ নিরাময়ে আমলকি বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে ৷
জেনে নিন : চুমু খাওয়ার ১০ টি উপকারিতা
হরতকি বা হরিতকি ফলে প্রচুর পরিমানে পুষ্টিসমৃদ্ধ উপাদান রয়েছে ৷ এটি খেলে শরীরের ক্ষতি একেবারেই নেই , বরং কোন না কোন উপকার তুমি অবশ্যই পাবে ৷ হরিতকিতে সাধারনত ট্যানিন , এমাইনো এসিড , ফ্রুকটোস , বিটা সাইটোস্টেবল প্রভৃতি পুষ্টি সমৃদ্ধ অপাদানে ভরপুর ৷ এবার দেখে নেওয়া যাক , হরিতকির এ সমস্ত উপাদান আমাদের শরীরে কীভাবে উপকারিতা সাধন করে ৷
i) দাঁতের ব্যথা ও গলা ব্যথায় বিশেষ সহায়ক : –
অনেক সময় সর্দিকাশিতে আমাদের গলা ব্যথা হলে , হরিতকির গুড়ো ইষৎ উষ্ণ জলে মিশিয়ে গারগেল করলে , ব্যথা থেকে অনেকটা উপসম পাওয়া যায় ৷এছাড়া দাঁতের ব্যথা হলে , হরিতকির গুড়ো ব্যথার জায়গায় লাগিয়ে রাখলেও অনেক আরাম পাওয়া যায় ৷
ii) রক্তচাপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয় : –
নিয়মিত হরিতকি ভেজানো জল অথবা হরিতকির গুড়ো মেশানো জল সকালে রোজ নিয়ম করে খালি পেটে পান করলে , আমাদের শরীরে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ৷ অন্ত্রের খিচুনি , হ্নদপিন্ডের অনিয়ম বর্ধক একটি মহাষৌধি হিসেবে কাজ করে ৷ দুর্বল স্নায়ুকে স্বাভাবিক করে তোলে ৷
iii ) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে :-
হরিতকিতে অ্যানথ্রাইকুইনোন থাকার জন্য , রেচক বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ ৷ ফলে নিয়ম করে হরিতকি ভেজানো জল পান করলে আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ৷ এছাড়া এলার্জি দূর করতেও সক্ষম হরিতকি মেশানো জল ৷
iv ) দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা নেয় :-
আয়ূর্বেদ শাস্ত্রে বলা হয়েছে , যারা চোখের দৃষ্টিশক্তি জনিত কারনে ভোগে , তাদের নিয়মিত হরিতকি ফল অথবা তার গুড়ো মিশ্রিত জল নিয়মিত পান করা আবশ্যক ৷ফলে চোখের দৃষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷
v) এছাড়া হরিতকির অন্যান্য উপকারিতাগুলো নিচে দেওয়া হল:—
ক) ঘন ঘন জলের তেষ্টা ও বমি অথবা বমি ভাব হলে , হরিতকি মেশানো জল পানে , আরোগ্য লাভ হয় ৷
খ) হরিতকি দেহের শক্তি বৃদ্ধিতে , স্নায়ুকে স্বাভাবিক ও মস্তিস্ককে ঠান্ডা রাখতে বিশেষ সহায়ক ৷
গ) নিয়মিত হরতকি খেলে , পেট পরিষ্কার থাকে এবং পেটের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ৷
ঘ) আমাশয় , জন্ডিস , ও গলার স্বরকে ঠিকঠাক রাখতে হরিতকি বিশেষ উপকারী ।
ঙ) খাবার রুচি ধরে রাখতেও হরতকির ভূমিকা অনস্বীকার্য ৷
আমাদের উপমহাদেশীয় দেশগুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধ’রে ভেষজ চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে ৷ আর ভেষজ চিকিৎসা বলতে আমলকি ও হরিতকির ভূমিকা অদ্বিতীয় ৷ শুধু কথার কথা নয় , সত্যি সত্যিই আমলকি এবং হরিতকি মানব দেহকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে কতটা প্রাসঙ্গিক , সেটাই ব্যবহারের দ্বারা একমাত্র প্রমাণ ৷ সুতরাং বন্ধুরা আজ থেকেই হরিতকি এবং আমলকি নিয়মিত খাবার চেষ্টা কর , নিজের শরীরকে সুস্থ রাখার চেষ্টা কর , ভালো থেকো ।
আমাদের নতুন নতুন বিষয়ে লেখা পড়বার জন্য ফেসবুক পেজ এ সঙ্গে থেকো ।আমলকি ও হরিতকির অসাধারণ উপকারিতা ৷
This Article Is Submitted By