গৃহবন্দী অবস্থায় শিশুদের মানসিক অবসাদ কাটিয়ে ভালো রাখার উপায়
শিশুদের মানসিক অবসাদ কাটিয়ে ভালো রাখার উপায়
শিশুই একটি বাড়িতে যাবতীয় দুশ্চিন্তার উর্ধে একটি অনাবিল আনন্দের পরিবেশ রচনা করে । শিশুরা পারিবারিক সম্পর্কগুলির মধ্যে সেতু রচনা করে থাকে। কিন্তু শিশুদের সামলাতে গিয়ে বড়রা নাস্তানুবাদ হয়ে পড়েন । শিশুদের দুষ্টুমি , বায়নাক্কা ,জেদ সব মিলিয়ে তাদের সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় বড়রা তাদের রাগ সামলাতে না পেরে কয়েকটি ভুল করে থাকেন। সেগুলি যেমন –
ক। ধৈর্য হারিয়ে ফেলা ।
খ। বকাঝকা বা মার দেওয়া।
গ। পাল্টা জেদ করা।
ঘ। পুরোনো ভুল নিয়ে খোটা দেওয়া।
ঙ। সারাদিন পড়াশুনা ,গান ,বাজনা ,আর্ট ইত্যাদির চাপ দেওয়া।
চ। অকারণে খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
ছ। কিংবা কোনো কঠিন শাস্তি দেওয়া ইত্যাদি।
বাবা-মা খুব ব্যস্ত থাকাকালীন কিংবা সন্তানের স্কুল খোলা থাকাকালীন নানাভাবে চরম ব্যস্ততায় দিন কেটে যায়। কিন্তু করোনা ভাইরাস বা COVID -19 আক্রান্ত দেশে লকডাউন এর সময় গৃহবন্দী থাকা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। বড়রা কিন্তু মেনে নিতে পারলেও ,ছোটদের ক্ষেত্রে চার দেয়ালের জীবন খুব কষ্টকর। তারমধ্যে বাবা -মা বড়রা বাড়িতে থাকলে অনেক সময় শিশুর জীবন জেরবার হয়ে ওঠে। তাই শিশুমনস্তত্ব গবেষণার ফলাফল বিচার করে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হল -যা Covid -19 বা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত পরিবেশে লকডাউন দেশে অন্তরীণ থাকার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের কাজে আসবে বলেই মনে হয়।
– খুব সংক্ষেপে সেই ১০টি বিষয়কে তুলে ধরা হল –
১. আপনাদের ছেলেবেলার গল্প বলুন :-
একথা প্রমাণিত সত্য যে শিশুরা বড়দের ছেলেবেলার মজার মজার গল্প শুনতে খুব ভালোবাসে। একঘেয়ামি দূর করতে বসে যান না শিশুদের নিয়ে আপনার ফেলে আসা শৈশবে।
২. সকলে মিলে প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন :-
শিশুকে কেন্দ্র করে দুপুরে খাবার পর বা সন্ধ্যাবেলা বসে যান সকলে মিলে আবৃত্তি ,গান ,নাচ ,গল্প বলা ,বক্তৃতা ,তাৎক্ষণিক বক্তব্য বলার প্রতিযোগিতা। এ বিষয়ে বেশি কি বলব , করেই দেখুন একবার মজাটা কত।
৩. Indoor game :-
লুডো ,ক্যারাম ,রুমাল-চোর ,রাম-শ্যাম , চোর -ডাকু ,মিউজিক্যাল বালিশ (বিষাক্ত বল বা মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো ) , পুতুল খেলা ইত্যাদি খেলার মাধ্যমে পারিবারিক সুসম্পর্কের পাশাপাশি শিশুর অনুভূতিগুলি গড়ে উঠতে থাকবে।
৪. বই পরে শোনানো :-
” বই পড় – বই পড় ” দুপুরে না জ্বালিয়ে গল্প বই পড়। “- এই কথাগুলি না বলে মজাদার বই নিয়ে বসে যান শিশুর কাছে। পালা করে পড়তে থাকুন বই। এতে উচ্চারণ ,আবৃত্তি ,পাঠের দক্ষতা সৃষ্টি হবে যা play way method এর অঙ্গ।
৫. হাতের কাজ :-
আপনি নিজে যেসব কিছু বানাতেন , কিংবা Youtube দেখে শিখে শিশুকে নিয়ে বানিয়ে ফেলুন কলম দানি কিংবা গৃহসজ্জার নানা সামগ্রী। এতে সৃজনশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো যাবে।
৬. Audio book শোনা :-
মোবাইল ফোন বা মিউজিক সিস্টেমে চালিয়ে দিন online -এ কিছু audio book । বাংলা , ইংরেজি , হিন্দি নানা দেশি বিদেশী গল্পের ভান্ডার এখন পর্যাপ্ত রয়েছে । sunday suspense কিছু বয়েস অনুযায়ী পছন্দ করা প্রয়োজন। ভৌতিক বিষয়গুলি শিশুমনে কেমন প্রভাব ফেলবে সেটা অভিভাবক হিসেবে মনে রাখতে হবে।
৭. শিশুর খেলাসামগ্রী নিয়ে সঙ্গদান :-
পুতুল খেলা ,খেলাঘর নির্মাণ ,বিভিন্ন Construction Game থেকে শুরু করে ,শুটিং , ভিডিও গেম , Junior Scientist Set , Magic Set থেকে খেলনা গাড়ি নিয়ে হয়ে যান শিশুদের নিত্যসঙ্গী। আসলে শিশু যেন আপনাকে বিরক্তির কারণ হিসেবে না ভাবতে পারে। এই অঢেল সময়ের সুযোগে হয়ে উঠুন শিশুর খেলার সাথী।
৮. গৃহকাজে শিশুকে সঙ্গে নেওয়া :-
সেদ্ধ আলু ছোলা , মটরশুঁটির খোসা ছড়ানো ,জলের বোতল ভরা , ইত্যাদি দা -কাটারি ছাড়া কাজগুলিতে সঙ্গী হিসেবে শিশুকে নিযুক্ত করুন। দেখবেন ওর একঘেয়ামি যেমন কাটবে ,তেমনি তৈরী হবে পারিবারিক দায়িত্ববোধ। রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ কিন্তু শিশু রবীন্দ্রনাথের মধ্যে এভাবেই দায়িত্ববোধ তৈরী করতেন।
৯. Role play খেলা :-
এটি একটি নতুন ধারণা । শিশুদের সঙ্গে হয়ে যান ট্রাফিক পুলিশ , শিক্ষক -শিক্ষিকা কিংবা মুদি দোকানদার। সমাজে যে সব সমাজবন্ধু রয়েছে তাদের অভিনয় করুন এবং শিশুকেও অভিনয় করতে বলুন। এর আরেকটি খেলা হল মূকাভিনয়। একজন মূকাভিনয় করবে অপরজনকে বলতে হবে কীসের role play বা অভিনয় করছে। দেখবেন শিশু ভীষণ মজা পাবে এতে। এটিও কিন্তু খেলার ছলে শিক্ষাদান করে। এই খেলা আনন্দ যেমন দেবে তেমনি আপনার শিশুকে সামাজিকতাবোধের শিক্ষাও দেবে নিঃসন্দেহে।
১০. আপনার আবিষ্কৃত কোনো খেলা :-
এতক্ষন বুঝে গেছেন নিশ্চয় কীভাবে শিশুর আবদ্ধদশায় একঘেয়ামি কাটিয়ে আনন্দপূর্ণ মুহূর্ত রচনা করা যায়। পড়ার বিষয় নিয়ে কোনো practical project যেমন করতে পারেন ;তেমনি পছন্দমতো সুন্দর খেলা বা খেলা -ছলে শিক্ষার আয়োজন করতে পারেন আপনিও। মনে রাখবেন শিশুদের সঙ্গদানের মাধ্যমে কিন্তু আমরাও শিখে থাকি নতুন নতুন কিছু।
আশা করি বৈশ্বিক এই দুর্দিন আমাদের বেশিদিন স্থায়ী হবে না। আমরা আশা করি – ” একদিন এমন আসবে মুষড়ে যাওয়া ফুল হাসবে ” অর্থাৎ Covid -19 বা করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আমরা সক্ষম হব। লকডাউন এর আর প্রয়োজন হবে না। শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আপনার শিশু যেন সুস্থ্য সুন্দর জীবন উপহার পায় আপনার সান্নিধ্যে । স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারের নির্দেশ মেনে চলবেন। আর আমাদের সঙ্গে থাকুন ফেসবুক পেজে। খুব ভালো থাকুন আনন্দে থাকুন।
This Article is Written By