রাষ্ট্রীয় একতা দিবস পালন। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান।
৩১ শে অক্টোবর- National Unity Day ( রাষ্ট্রীয় একতা দিবস)
দিনটির মাহাত্ম্য :-
১৮৭৫ সালের ৩১ শে অক্টোবর ভারতের প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল গুজরাটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে সম্মান জানাতে ভারত সরকার ২০১৪ সাল থেকে এই দিনটিকে “রাষ্ট্রীয় একতা দিবস” হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের অবদান :-
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভের পর যে সমস্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল তার মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণ সংক্রান্ত সমস্যা।কারণ ব্রিটিশ সরকার ভারতের স্বাধীনতা আইনে দেশীয় রাজ্যগুলিকে যেকোনো দেশে সংযুক্ত হওয়ার এবং স্বাধীন থাকার অধিকার দেয়। এই আইনে বলা হয় – ভারতের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের চুক্তির সমাপ্তি ঘটবে । ফলে দেশীয় রাজ্যগুলি স্বাধীন থাকতে পারে অথবা ভারত বা পাকিস্তান যে কোনো দেশে তাদের ইচ্ছা মতো যোগদিতে পারবে । এই পরিস্থিতিতে দেশীয় রাজ্যগুলির অন্তর্ভুক্তিকে কেন্দ্র করে বিরোধ সৃষ্টি হয় । স্বাধীনতা লাভের পর দেশীয় রাজ্যগুলির ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে এক জটিল সমস্যা দেখা দেয় । দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল । সর্দার ভাই প্যাটেল এর পরামর্শ ক্রমে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু দেশীয় রাজ্যগুলির অন্তর্ভুক্ত সংক্রান্ত বিষয় তত্ববোধনের জন্য নিযুক্ত হন বিশিষ্ট আমলা ভি.পি.মেনন।
স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতবর্ষে প্রায় ৫০০টির ও বেশি রাজ্যকে একীকরণ এর পেছনে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এর অবদান অবিস্মরণীয়। জম্মু ও কাশ্মীর, জুনাগড় ও হায়দরাবাদ বাদে সকল রাজ্যকে সংহত করতে তিনি সফল হয়েছিলেন। অবশেষে তিনি তার তীব্র রাজনৈতিক বুদ্ধির সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছিলেন এবং জম্মু ও কাশ্মীর, জুনাগড় ও হায়দরাবাদ কে ভারতের অধীন করেছিলেন। আমরা যে ভারতকে আজ দেখতে পাচ্ছি তা হল সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন তার ফল। ফলে স্বাধীন, অখণ্ড,ঐক্যবদ্ধ ভারতের অন্যতম রূপকার হিসেবে তাঁকে দেশের ‘লৌহমানব‘ (Iron Man of India) বলা হয়।
সম্মাননা: – সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের সম্মাননায় ভারতের গুজরাট রাজ্যে তাঁর জন্মস্থানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য মূর্তিটি ( যার উচ্চতা ৫৯৭ ফুট , স্ট্যাচু অফ লিবাটি -র প্রায় দ্বিগুণ উচ্চ) তৈরি করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় “ঐক্যের মূর্তি।” যা গত ৩১শে অক্টোবর ২০১৮ইং সালে উন্মোচিত হয় । এইছাড়াও সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নামে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে। ২০১৪ সালে তাঁর জন্মদিবস ৩১ অক্টোবরকে “রাষ্ট্রীয় একতা দিবস” হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়। তাঁকে বলা হয় জাতীয় জীবনে প্রজাতন্ত্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি যেমন ছিলেন নিঃস্বার্থ নেতা , তেমনি একটি আধুনিক ও অখন্ড ভারত গড়ার স্বপ্নে বিভোর একজন প্রকৃত যোদ্ধা।
এছাড়াও ১৯৯১ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁকে ”ভারতরত্ন” পুরস্কারের সম্মানে সম্মানিত করা হয় ।
সেইসঙ্গে তিনি ভারতবাসীর পরম আদরের উপাধি পেয়ে লৌহ-মানব বলে সর্বত্র পরিচিত ও সম্মানিত হন।
কেন ৩১ শে অক্টোবরকে ভারতের “রাষ্ট্রীয়একতা দিবস” হিসেবে পালনের নির্দেশ দেওয়া হল , তার কারণগুলো হল :-
১. স্বাধীন ভারতে সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল-ই সর্বার্থে সামগ্রিক জাতীয় ঐক্য স্থাপনে প্রকৃত উদ্যোগ নেন। তাই তাঁকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানাতে এই দিনটিকে “রাষ্ট্রীয় একতা দিবস” হিসেবে পালন করা হয় ।
২. বর্তমানে এই দিনটিকে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের বার্তা দেওয়া এবং একতা বোধকে দৃঢ় করার উদ্যেশ্যেই “রাষ্ট্রীয় একতা দিবস” হিসেবে পালন করা হয় ।
৩. সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল এর আদর্শ ও চিন্তা ধারাকে জাতীয় জীবনে ছড়িয়ে দিতে এই দিনটি পালন করা হয় ।
৪. এই দিনে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে ম্যারাথন দৌড়ের আয়োজন করা হয় , এই উদ্যেশ্যে যাতে স্বাধীন চেতনা ও জাতি-ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে এক দেশ এক জাতির বোধ বেশি করে ভারতীয়দের মধ্যে জেগে ওঠে । এই দৌড়ের মূল মন্ত্র হল ” Run for unity”.
৫. ছাত্রজীবনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে ও ভবিষ্যৎ জীবনে একটা শক্তিশালী জাতি গড়ে তুলতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই দিনকে স্মরণে রেখে নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
আশাকরি লেখাটা ভালো লাগবে। ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারো। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকো।