পড়া মনে রাখার নিনজা টেকনিক | পড়া মনে রাখার উপায় | Study Hacks Bengali
কথায় বলে ‘ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ’ অর্থাৎ অধ্যয়ন বা পড়াশুনাই ছাত্রদের একমাত্র তপস্যা। কিন্তু প্রশ্ন হল এত বিষয়,এত তথ্য, এত সূত্র মনে রাখার সহজ উপায় কী ? সত্যি কথা বলতে গেলে কোনো কিছুই একেবারে সহজ হয় না – সহজ করে নিতে হয়। তেমনি সঠিক পদ্ধতি মেনে রপ্ত করলে সহজেই পড়া মনে থাকে , আর অল্প পরিশ্রমে বেশি ফল পাওয়া যায়। পড়া মনে রাখতে হলে আগে জেনে নিতে হবে পড়া মনে না থাকার কারণগুলি কী কী ? অনাগ্রহ, না বুঝে পড়া, পদ্ধতি না মেনে চাপ নেওয়া, উদ্বেগে থাকা, আত্মবিশ্বাস কম থাকা, এড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে পড়া মনে থাকে না। খুব বেশি কথা বলে শিক্ষাবিজ্ঞানের তথ্য তুলে ধরতে যাচ্ছি না । শুধু এটুকু জেনে রাখো যে, যে কোনো পড়া আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে মনে রাখে, আর কেন মনে রাখে । আগ্রহ , মনোযোগ নিয়ে যদি কোনো বিষয়ে তোমার মস্তিষ্ককে মেসেজ দাও সেটা অনেকদিন সে রেখে দেয়। আর যদি দায়সারা ভাবে জোর করে চাপ দিয়ে মস্তিষ্কে জমা রাখতে চাও – সেটা হয় না বুঝেই মুখস্থ করা। সেটা কিছুতেই মনে থাকবে না ।
তাহলে চলো কথা না বাড়িয়ে অল্প কথায় জেনে নিই –
পড়া সহজে মনে রাখার কয়েকটি নিনজা টেকনিক
১। আত্মবিশ্বাস:-
আমার পড়া মনে থাকে না, আমার মেমরি খুব কম , আমি দুর্বল ছাত্র – এসব ধারণার ফলে পড়া মনে থাকে না। তাই সবার আগে আত্মবিশ্বাস তৈরি করো। মনে রেখো সবার মতো তুমিও একজন। ওরা পারলে তুমিও পারবে। এরকম নেগেটিভ চিন্তার পরিবর্তে পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। ভীতি দূর করে সর্বপ্রথমে নিজেকে ধৈর্যশীল ও অনুপ্রাণিত করতে হবে।
২। পরিকল্পনাঃ-
যে কোনো বিষয় পড়ার জন্য সময় , স্থান, ও কীভাবে পড়বে তার পরিকল্পনা করে নাও। যেমন সকালে অঙ্ক , বিজ্ঞান ভাল মনে রাখা যায়। দুপুরে ভূগোল এর মতো আঁকা আঁকি সম্পর্কিত বিষয়গুলি পড়লে ভালো হয়। আর বাকি কথাগুলি নিচের আলোচনায় বুঝতে পারবে।
৩। পরিবেশ নির্বাচনঃ –
একাগ্র মনে অধ্যায়নের জন্য চাই উপযুক্ত পরিবেশ। বাড়িতে নিজের পড়ার পরিবেশটি আলোচনা করে তৈরি করে নাও। মনে রাখবে মাল্টি টাস্কিং কখনোই সুবিধাজনক নয়। রুটিন করে বা তালিকা প্রস্তুত করে নিজের কাজগুলি বুঝে নাও। যা করবে মন দিয়ে সেটাই করো।
৪। স্টাডি মিউজিকঃ –
আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে পরিচিত গানের সুর কিংবা স্টাডি মিউজিক চালিয়ে পড়লে পড়া খুব বেশি মনে থাকে। কারণ এই মিউজিক তোমাকে একটা এমন বর্মের মতো ঘিরে রাখবে যা বাইরের নয়েজ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে তোমায়। আর এর ফলে একাগ্রতাও বাড়বে , পড়াও মনে থাকবে।
৫। মাল্টি মিডিয়া ব্যবহারঃ –
আমাদের মস্তিস্ক একসঙ্গে বেশি মিডিয়ার ব্যবহার মনে রাখে বেশি করে। একাধিক ইন্দ্রিয় ব্যবহার করে তথ্য আয়ত্ত করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। দেখার পাশাপাশি শব্দ বা বাক্য উচ্চস্বরে পড়ার অভ্যাস করো। দেখবে মনে মনে পড়ার থেকে বেশি মনে থাকবে। আর অনেকেই বলেন মোবাইল ফোন ব্যবহার ক্ষতি করে । কিন্তু মনে রেখো আজকের যুগে মোবাইল ফোনকে তুমি আরো উন্নত মানের পড়ার কাজে ব্যবহার করতে পারো। ইতিহাস , ভূগোল , বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের সুন্দর সুন্দর ভিডিও আছে। সেগুলি দেখে শিখলে অনেক বেশি মনে থাকবে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার কিন্তু কখনোই নয়।
৬। ক্লিপিংস করাঃ –
এটি একটি পুরোনো নিনজা টেকনিক । দেখবে কোনো কোনো বিষয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ করে মনে রাখতে পারো। যেমন – একাধিক শব্দ মনে রাখতে শব্দের প্রথম অক্ষর- ব্যবহার করে বর্ণগুচ্ছ তৈরি করো। উদাহরণস্বরূপ – VIBGYOR বা রামধনুর সাত রং(সাতটি রঙের নাম – বেনীআসহকলা – এই একটিমাত্র শব্দেই ঢুকে আছে), BODMAS বা গণিতের ক্রিয়াকলাপের ক্রম। তেমনি তুমি তোমার পড়ার পয়েন্টগুলি থেকে প্রথম অক্ষর নিয়ে এক একটি এরকম মুণ্ডমাল শব্দ তৈরি করে নাও।
৭। হুক সিস্টেমঃ-
অপরিচিত কোনো বিষয় সহজে মনে থাকে না । সেরকম ঘটনা বা বিষয়কে পরিচিত বিষয়ের সঙ্গে হুক করে রাখার নামই হুক সিস্টেমে মনে রাখা। যেমন- মোঘল বাদশাহ পাঁচ জনের নাম ধারাবাহিক মনে রাখার জন্য বানানো হয়েছে – বাবার হইল আবার জ্বর সারিল ঔষধে। এখানে ক্রমান্বয়ে বাবর-হুমায়ুন-আকবর-জাহাঙ্গির-সাজাহান-ঔরঙ্গজেব এই পাচজনের ধারাবাহিক নাম লুকিয়ে আছে। তুমিও তোমার পড়াগুলো থেকে বাছাই করা কোনো বিষয়কে এরকম করে গল্প বানিয়ে নাও।
৮। গ্রুপ স্টাডিঃ –
একজন শিক্ষক নিজে ছাত্রাবস্থায় যতটা শিখে থাকেন তার থেকে বেশি ভালো করে শেখেন ছাত্রদের পড়াতে গিয়ে। তুমি যদি তোমার পড়ার বিষয় বুঝে নিয়ে বন্ধু, সহপাঠী কিংবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারো। তাহলে বিষয়টি জলের মতো সহজ লাগবে, আর মনেও থাকবে। একে অপরকে প্রশ্ন করার মাধ্যমে তথ্য সম্পর্কে আরও গভীর বিশ্লেষণাত্মক ধারণা গড়ে উঠবে আর কোন কোন স্থানে তোমার ধারণার স্বচ্ছতার অভাব আছে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
৯। বিভিন্ন উৎসের সাহায্য গ্রহণঃ –
যে কোনো একটি বিষয় একটি মাত্র বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। একাধিক বই, খবরের কাগজ, পত্রিকা, ইউটিউব, গুগল, শিক্ষক বা অভিজ্ঞ কারো কাছে ওই বিষয়টি ঝালিয়ে নেবে। তাহলে মূল বিষয়টি তোমার কাছে পরিষ্কার যেমন হবে আর মনে রাখার বিষয়ে কোন চিন্তাই থাকবে না।
১০। লিখে লিখে পড়াঃ-
কথায় বলে লেখা পড়া। অর্থাৎ আগে লেখাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাই যাই পড়বে তা যেন খাতায় এক দুবার অবশ্যই লিখে নাও । যারা বলে পড়া মনে থাকে না তারা কখনোই লিখে পড়ে না । কারণ যাই লিখবে খাতায় তাই থাকবে মাথায়। পড়ার পাশে রাফ খাতা অবশ্যই রাখবে। যেখানে কঠিন শব্দগুলি লিখে লিখে অভ্যাস করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় – পরীক্ষার খাতায় দেখা যায়- লেখক , কবিরা নাম অনেকেই ভুল লেখে। কারণ তারা এটা এতই সহজ মনে করে যে লিখে অভ্যাসের প্রয়োজনও বোধ করে না। তারা বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় লেখেন , ‘জীবানন্দ দাস’ লেখেন। খেয়াল করো এখানে ‘বন্দ্যোপাধ্যায় বানানে য- ফলা আছে। জীবনানন্দ দাশ বানানে লক্ষনীয় হল ‘জীবন+আনন্দ= জীবনানন্দ’ আর ‘দাশ’ বানানে ‘তালব্য শ’ হবে – দন্ত্য-স নয়। লেখার অভ্যাস না থাকায় মূল বানান ভুলে যায়। যে কোনো বিষয়ই তাই লিখে লিখে পড়ার চেষ্টা করো। দেখবে পড়া মনে রেখে আর ভালো রেজাল্ট করে তুমি সাবাইকে অবাক করে দিয়েছো ।
এর দশটি বিষয় হল দশটি নিনজা টেকনিক। আশা করি এর মধ্যে যেগুলি তোমার সুবিধাজনক মনে হবে সেগুলি প্রয়োগ করবে। সাফল্য তোমার জন্য অপেক্ষা করছে । তুমি তোমার পরিশ্রম , মেধা আর টেকনিক ব্যবহার করে সেখানে পৌঁছে যাও – এই প্রত্যাশা রইলো। ভালো লাগলে লেখটি কি শেয়ার করবে ? খুব খুশি হবো তাহলে। ভালো থেকো।