The 5 Second Rule Book Review in Bengali
আমাদের অনেকের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে থাকে যে কখনো কখনো মনে হয় যে, আমি ঠিকমতো সাফল্য পাচ্ছি না । আমার যা যা করার ছিল তা করে উঠতে পাচ্ছি না । কী করে আমি আরো বেশি কর্মক্ষম হবো এবং কী উপায়ে আমার স্বপ্ন ও চাহিদাগুলো পূরণ করে একজন সফল মানুষ হতে পারবো !
আপনার কী মনে হয়েছে যে, কোনো উপায় যদি বের করতে পারতাম যাতে সময়গুলো কাজে লাগিয়ে আমার সব ধ্যান জ্ঞান কাজে লাগিয়ে দিতাম লক্ষ্য পূরণের জন্য। কখনো কী নিজের প্রতি আস্থাটাই কমে যাচ্ছে আপনার ? যদি এমইনটাই হয় তাহলে আপনার জন্য মেল রবিন্স এর ‘The 5 second Rule’ বইটি অপেক্ষা করছে ।
সবসময় আমাদের হাতে সব বই এসে পৌঁছোয় না , আর যখন হাতে পাই তখন পড়ার সুযোগ আর থাকে না । তাহলে উপায় কী ? উপায় আছে । আসুন আমরা এক বৈঠকে ‘দ্য ফাইভ সেকেন্ড রুল ‘ বইটির মূল বিষয়টি খুব সহজে ও সংক্ষেপে বুঝে নিই । দেখুন কত সহজেই একটি বই মানুষের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে ।
সবার আগে আমাদের আলোচনার বিষয়কে কয়েকটি পর্বে ভাগ করে নিই –
২০১৭ সালে আমেরিকায় প্রকাশিত হয় মেল রবিন্স এর লেখা বই “The 5 Second Rule: Transform Your Life, Work, and Confidence with Everyday Courage” । প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব বিখ্যাত জনপ্রিয় একটি মোটিভেশনাল ও লাইফ চেঞ্জিং এর বিষয় হয়ে ওঠে বইটি। ৫ টি পর্বে মোট ১৭টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত ২৫২ পাতার বইটির মধ্যে লেখক মেল রবিন্স খুব সুন্দরভাবে আলোচনা করেছেন – 5 সেকেন্ড রুল বিষয়টি কী , 5 সেকেন্ড রুল কাদের জন্য , কীসের জন্য আপনি 5 সেকেন্ড রুল ব্যবহার করবেন , কীভাবে 5 সেকেন্ড রুল শুরু করবেন। লেখিকা মেল রবিন্স মূলত এই বই এর মাধ্যমে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, প্রোডাক্টিভিটি এসবের উন্নতি করা এবং সময় নষ্ট করা বা অলসতার অভিশাপ থেকে বাঁচাতে চেয়েছেন। কয়েক বছর ধরেই বইটি হাজার হাজার মানুষের জীবনকে বদলে দিয়েছে। আসলে জীবনকে কীভাবে গতিশীল করে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারা যায় , তার শুরুটা কীভাবে করবেন তা গল্পের মতো করে বলা হয়েছে এখানে।
সম্পূর্ণ নাম মেলানি রবিন্স । জন্ম অক্টোবর 6, 1968 আমেরিকার কানাসাস সিটিতে। বর্তমানে তিনি একজন আমেরিকান আইনজীবী, টেলিভিশন হোস্ট, লেখক এবং মোটভেশনাল স্পিকার । রবিন্স CNN এর জন্য জর্জ জিমারম্যান ট্রায়াল কভার করার জন্য পরিচিত; তার TEDx বক্তৃতা, How to Screwing Yourself Over; এবং তার বই, The 5 Second Rule এবং The High 5 Habit। এছাড়াও তার একাধিক পডকাস্ট সিরিজ রয়েছে যা অডিবলে হোস্ট করা হয়েছে। তিনি বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগে ভুগছিলেন এবং ADD (attention deficit disorder) নামক স্নায়ুঘটিত রোগ ধরা পড়েছে বলে বর্তমানে বিশ্রামরত । ভেবে দেখুন জীবনের ৪০ বছর পার করে একজন মানুষ যদি দেখতে পান যে, এতদিন ধরে যা কিছু গড়ে তুলেছেন – তা চোখের সামনে ধ্বংস হচ্ছে একটু একটু করে – তাহলে কেমন লাগতে পারে ? রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় নিজেদের সব টাকা ও সম্পদ বিনিয়োগ করে বিশাল ক্ষতি হবার পর মেল ও তাঁর স্বামী বড়সড় ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তাঁর স্বামী ক্রিস্টোফার রবিন্স যখন প্রতিদিন ভোর বেলা ঘর থেকে টাকার খোঁজে বের হয়ে যেতেন, রবিন্সকে তখন পাওনাদারদের ফোন ও বাড়িতে এসে ধমক দেয়া সামলাতে হত। এক সাক্ষাৎকারে চোখের জল মুছতে মুছতে সেই সময়কার অবস্থার বর্ণনা করেছিলেন মেল রবিন্স। একটা পর্যায়ে তিনি উপলব্ধি করলেন, তিনি আসলে কিছুই করছেন না। জীবন যেমন চলছে, তিনিও তার সাথে গা ভাসিয়ে চলছেন। তাঁর অনেক সময়েই নিজের অবস্থা বদলানোর কথা মাথায় আসত। কিন্তু তিনি শুয়েই থাকতেন, অথবা বসেই থাকতেন – কোনও এ্যাকশন নিতে পারতেন না। এমনভাবে চলতে চলতেই একটা সময়ে তিনি এই ৫ সেকেন্ড রুল আবিষ্কার করলেন। এবং তখন থেকেই তাঁর জীবন বদলে যেতে শুরু করে।
সোজা কথায় বলতে গেলে এটি একটি অতি সাধারণ , গবেষণায় প্রমাণিত চিন্তা করবার পদ্ধতি – যা আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীরে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন সাধন করে । এই পদ্ধতি আসলে নিজের অলস ও কর্মহীন অভ্যাসের বিরুদ্ধে এমন এক সাহসের সৃষ্টি করে যা আমাদের গতিশীল ও কর্মমুখী করে । অর্থাৎ লক্ষ্য পূরণের দিকে যাত্রা শুরু করে । এখানে প্রসঙ্গত লেখিকার দেওয়া সাহসের সংজ্ঞাটি বলা যেতে পারেঃ- “ভয় পাওয়ার পরও কঠিন কাজটি করার জন্য পদক্ষেপ নেয়াটাই মূলত সাহস। নিজের আইডিয়া শেয়ার করা, সত্যি কথা বলা, অসম্ভব মনে হওয়ার পরও কোনও কাজে হাত দেয়া। এমনকি আরামের ঘুম বাদ দিয়ে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতেও সাহস লাগে। ” তবে ৫ সেকেন্ড রুল এর সবচেয়ে মজার দিকটি হল, এই পদ্ধতিটি ভীষণ রকম সহজ। ভাবলে অবাক হবেন, এত সহজে কীভাবে জীবনের বড় বড় সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয় ; শুধু ৫ থেকে ১ পর্যন্ত গুনেই অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব।
লেখিকা মেল রবিন্স এর মতে, যদি কোনও কাজ করার কথা মনে আসে, তবে সেটা ৫ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে শুরু করতে না পারলে, আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে সেই কাজ থেকে বিরত রাখতে মনের মধ্যে নানান রকম অজুহাত তৈরি করবে। লেখিকা বলেন, “যদি কোনও জরুরী কাজের কথা মনে হয়, যেটা একটু কঠিন, আপনাকে ৫-৪-৩-২-১ গুনে সাথে সাথে কাজটি করার উদ্দেশ্যে জায়গা ছেড়ে নড়তে হবে – না হলে আপনার মস্তিষ্ক বেশিরভাগ সময়েই আপনাকে থামিয়ে দেবে” । উদাহরণ দিতে গিয়ে রবিন্স ব্যায়াম করার কথা বলেছেন, আপনি জানেন আপনার এখন শরীরচর্চা করা দরকার, কিন্তু আপনার মুড নেই। আপনাকে এই অবস্থায় ৫ থেকে ১ পর্যন্ত গুনতে হবে। তারপর সঙ্গে সঙ্গে যে অবস্থায় আছেন, সেই অবস্থা থেকে সরে গিয়ে শরীরচর্চা অথবা জিমের দিকে হাঁটা শুরু করতে হবে। কোনও রকম চিন্তা করা যাবে না। একবার কাজ শুরু করে দিলে মস্তিষ্ক তখন আর আপনাকে থামাতে চাইবে না, বরং কাজটি সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে উদ্দীপ্ত করতে শুরু করে দেবে।
গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের মস্তিষ্কের ডিজাইনই এমন যে, সে মানুষকে কষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে চায়। কিন্তু অনেক সময়ে কষ্ট না করলে আরও বড় কষ্টের সম্ভাবনা থাকে। সাইকোলজির ভাষায় একে বলে “এ্যাসার্ট কন্ট্রোল”। আপনি যখন সামনে থেকে পেছনে উল্টো গোনা শুরু করবেন আপনার মস্তিষ্ক তখন সেই গোনার কাজে শক্তি ও মনোনিবেশ করতে বাধ্য হবে। এর ফলে অজুহাত সৃষ্টি করার সুযোগই পাবে না। আর এই সুযোগে আপনি কাজ শুরু করে দিতে পারবেন, কোনও রকম ভয় বা দ্বিধা ছাড়া। আমাদের মস্তিষ্কের যে অংশটি ‘ফোকাস’ এর জন্য দায়ী – তাকে বলে ”প্রিফ্রন্টাল করটেক্স” । আমাদের সচেতন কাজগুলো এই অংশ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। আপনি যখন বারবার এই ৫ সেকেন্ড রুল ব্যবহার করে কাজ করবেন – তখন ধীরে ধীরে এই অংশটি ৫-৪-৩-২-১ গোনাকেই একটি কমান্ড হিসেবে ধরে নেবে ও কাজে নিযুক্ত করে দেবে।
তবে লেখিকার মতে এটা একদিন-দুদিনেই নাও হতে পারে। কিন্তু হতাশ না হয়ে আপনাকে চেষ্টা করে যেতে হবে । যে কোনও কাজের আগেই ৫-১ গুনে শুরু করুন। এভাবে ধীরে ধীরে এই অভ্যাসটি আপানার মধ্যে স্থায়ী একটি অভ্যাস হয়ে দাঁড়াবে । ৫ থেকে ১ গোনার পর আপনি এ্যাকশন না নিয়ে থাকতেই পারবেন না একটা সময় ।
Read More : জীবন বদলে দেওয়ার মতো ৫-টি বই
লেখিকা মেল রবিন্স বলেন, ৫ সেকেন্ড রুল ব্যবহার করতে হলে আপনাকে ২টি খুব সাধারণ পদক্ষেপ নিতে হবে। যথা –
i) যখনই কোনও প্রয়োজনীয় কাজ করতে হবে, বা কোনও প্রয়োজনীয় কাজ করার সময় হবে – তখনই ৫ থেকে ১ পর্যন্ত গুনুন ।
ii) ৫ থেকে ১ গোনার সঙ্গে সঙ্গে Start বলে কাজ শুরু করে দিন।
উদাহরণ হিসেবে লেখিকা বেশ কিছু কাজের কথা তুলে ধরেছেন, যাতে বিষয়টি সহজ হয়। যেমন –
১। লেখিকা এই 5 সেকেন্ড রুল অভ্যাস রপ্ত করার জন্য প্রথমেই “ওয়েক আপ চ্যালেঞ্জ” এর চর্চা করতে বলেছেন। আপনার ঘুম থেকে ওঠার নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে এ্যালার্মটিকে সেট করুন। এ্যালার্ম শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ৫ থেকে ১ গুনুন, এবং ১ গোনার সঙ্গে সঙ্গেই বিছানা ছেড়ে এক সেকেন্ডও দেরি না করে উঠে পড়ুন।
২। আপনার হয়তো মানুষের সামনে কথা বলার সাহস কম। কোনো মিটিং বা এই ধরনের জনসমক্ষে বলার মত কথা মাথায় এলেও আপনি বলতে পারেন না। এরকম সময় এলেই মস্তিষ্কের নানা অজুহাত সৃষ্টি করা শুরু হয়। এ ধরণের পরিস্থিতিতে আপনি কোনও দরকারি কথা মাথায় এলেই ৫ থেকে ১ পর্যন্ত গুণেই কথাটি বলে ফেলুন। ১ গোনার পর সরাসরি এ্যাকশনে চলে যান। এক সেকেণ্ডও সময় নষ্ট করবেন না। দেখবেন আপনার কথা বলতে কোনও সমস্যাই হচ্ছে না। অবাক হয়ে যাবেন আপনার সাহস ও আত্মবিশ্বাস দেখে। অবাক হয়ে ভাববেন, আপনি তাহলে এটা পেরেছেন।
৩। যেমন ধরে নিন আপনার ওজন বেড়ে যাচ্ছে। ভালো করেই জানেন যে আপনার প্রতিদিন সকালে ব্যায়াম করা দরকার। কিন্তু অলসতার জন্য সকালে উঠতেই পারছেন না। এক্ষেত্রে ৫ থেকে ১ গোনার সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে উঠেইসোজা এক্সারসাইজ করতে শুরু করুন। একবার এই অভ্যাস হয়ে গেলে আপনার কাছে অলসতাই হার মানবে।
৪। অনেক বড় বড় সম্ভাবনাময় ও প্রতিভাবান মানুষের জীবনকে শেষ করে দিয়েছে এমন কিছু অভ্যাস যেগুলিকে এই 5 সেকেন্ড রুল প্রয়োগ করে দূর করা সম্ভব । যেমন- কাজ ফেলে রাখার অভ্যাস বা ঢিলেমি । আপনার যদি অসাধারণ মেধা , সৃজন ক্ষমতা বা দুর্দান্ত কোনো গুণ এই অভ্যাসের কারণে স্ফুরিত হতে না পারে, তাহলে অসামান্য উপকার পেতে পারেন এই 5 সেকেন্ড রুল প্রয়গের দ্বারা। তাই কাজের কথা ভাবুন আর ৫-৪-৩-২-১ বলে শুরু করে দিন আর দেখুন ম্যাজিক । আপনার মস্তিষ্ক অজুহাত বানানোর সুযোগই পাবে না।
আমাদের জীবনে এমন কিছু অভ্যাস থাকে যেগুলি ব্যক্তিত্বের পক্ষে এবং সম্পর্কের পক্ষেও ক্ষতিকারক । সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- সন্দেহ, নীরব থাকা, অ-নিরাপত্তাবোধ , দুশ্চিন্তা, দ্বিধা , সিদ্ধান্তহীনতা, ভয় ইত্যাদি। অর্থাৎ আপনার জীবনের যাবতীয় নেগেটিভ দিকগুলিকে দূর করে জীবনে হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল ও সার্থক মানুষ। এই গ্রন্থে 5 সেকেন্ড রুল আলোচনার প্রসঙ্গে লেখা এরকম কিছু মোটিভেশনাল কথা রয়েছে যেগুলি খুব মূল্যবান। এই 5 সেকেন্ড রুল শেখার ও প্রয়োগের পাশাপাশি আপনি আপনার জীবনের অর্থকেও নতুন করে খুঁজে পাবেন সেইসব উক্তির দ্বারা। কয়েকটি উক্তি এখানে তুলে ধরা হল :
১। আপনি নিজে কিন্তু একজনই । এবং আপনার মতো আর একজন কোনোদিনই আসবে না । এটাই আপনার শক্তি।
২। আপনি কি এমন কাউকে খুঁজছেন যে আপনার জীবন বদলে দিতে পারে ? তাহলে আয়নায় দেখুন।
৩। ৫ সেকেণ্ডের মনোবল বদলে দেয় সবকিছু।
৪। আপনি যদি আপনার সকালের কর্মসূচি পরিবর্তন করতে পারেন , তবে সবকিছুই পরিবর্তন করতে পারেন।
৫। হয় আপনি দিনটিকে চালাবেন , না হয় দিনটি আপনাকে চালাবে।
৬। আপনার সকালগুলোর মালিক হোন আপনি।
৭। প্রস্তুত হবার আগেই শুরু করে দিন। তৈরি হতে হবে না এগিয়ে যান।
৮। নিজেকে ক্ষমা করুন।
৯। আপনাকে হয় কোনো একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে , না হয় একটি অজুহাত।
১০। ভয় পাওয়া খারাপ না । এর মানে আপনি সত্যি সত্যি কোনো সাহসী কাজ করতে যাচ্ছেন।
১১। মানুষকে আপনার স্বপ্নের কথা বলবেন না । তাদেরকে দেখান।
তাহলে বন্ধুরা, আজ আমরা শিখলাম ,পড়লাম , জানলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের মূল কথাগুলো। আশা করি আজকের লেখাটি খুব কাজে লাগবে জীবনে। ভালো কিছু শেয়ার করার মাধ্যমে তাঁর গুণ আরো বেড়ে যায় । তাই এখুনি এই পোস্টটি শেয়ার করে আপনার প্রিয় কোনো মানুষের জীবনে সত্যি উপকার করতে পারেন। আমাদের (ফেসবুক পেজ) সঙ্গে থাকুন আর এরকম আরও নতুন নতুন বিষয়ে লেখা পড়তে থাকুন।