বুকস রিভিউ

জীবন বদলে দেওয়ার মতো ৫-টি বই

11 Minute Read

জীবন বদলে দেওয়ার মতো ৫-টি বই

Think before you speak . Read before you think .

Fran Lebowitz

“ Wear the old coat and buy the new book .”
– Austin Phelps

বইয়ের কোনো বিকল্প নেই । বিশ্বের সফল মানুষদের সাফল্যের পেছনে বই-এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ । বই যেমন শারীরিক মানসিক অনেকগুলি বিষয়ের উৎকর্ষ সাধন করে , তেমনি জীবন বদলে দিয়ে সফল ও উন্নত মানের করে তুলতে পারে বই। আমরা পড়তে ভালোবাসি । অনেক সময় প্রতিদিনের সংবাদ পত্রের এমন সমস্ত লেখাও পড়তে থাকি যেগুলি আমাদের ‘ কিছু করার নেই’ ব’লে বা ‘ টাইম পাস ‘ করার জন্যই পড়ি । শুধু অবসর বিনোদনই নয় , নিয়ম করে বই পড়লে ভেতরে এমন একটা তাগিদ অনুভব করতে পারি যা মানসিক ও বাহ্যিক জগতে পরিবর্তন এনে দিতে পারে ।

আজকে আমরা তোমাদের এমন কয়েকটি বই নিয়ে আলোচনা করব যা ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারলে এবং জীবনে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে জীবন বদলে অনেক উন্নত হয়ে উঠতে পারে ।

The-Alchemist-review

(1) The Alchemist – Paulo Coelho দ্য অ্যালকেমিস্ট – পাওলো কোয়েলহো

When you want something , all the universe conspires in helping you to achieve it.

Paulo Coelho, The Alchemist , page 25

ব্রাজিলিয়ান লেখক , গীতিকার এবং বিশ্বখ্যাত ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো যে বইটির জন্য বিশ্বে খ্যাত হয়েছেন তা হল দি অ্যালকেমিস্ট ।

বইটি একটা রাখাল বালকের গল্প নিয়ে রচিত । কিন্তু এর ভেতরে যে শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে তাও সংক্ষেপে কাহিনির শেষে এখানে দেখানো হলো :

কাহিনী সংক্ষেপ :
গল্পের মূল চরিত্র একজন রাখাল বালক , নাম স্যান্টিয়াগো । তার পিতার জীবনে স্বপ্ন ছিল দেশ বিদেশ ঘুরে দেখার । স্যান্টিয়াগো লক্ষ্য করলো যে , যে দোকানে সে সাময়িক কাজ করত , সেই দোকানের মালিকেরও স্বপ্ন ছিল হজ-এ যাবার । কিন্তু স্যান্টিয়াগো উপলব্ধি করলো যে এদের সবার জীবনে স্বপ্ন আছে , কিন্তু কেউ তারা সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য সেভাবে সচেষ্ট নয় ।

স্যান্টিয়াগোর স্বপ্ন ছিল পিরামিড দেখার এবং সেখানে থাকা রত্ন ভান্ডার উদ্ধার করা । অনেক বাধা বিপত্তি সে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করে কীভাবে স্বপ্ন পূরণ করল —– এটাই বইটির মূল বিষয় ।

শিক্ষা :-
এবারে আসা যাক মূল কথায় । এই বইটি থেকে আমরা যে বিষয়গুলো শিখতে পারি , সেগুলি হল : –

(i) প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো স্বপ্ন আছে ।
(ii) স্বপ্ন পূরণের জন্য উঠে পড়ে লেগে থাকতে হয় , ততক্ষণ থামা যাবে না — যতক্ষণ না স্বপ্ন পূরণ হয় ।
(iii) স্বপ্ন পূরণের পথে অনেক বাধা আসবে –ব্যক্তি বা ঘটনা যে কোনো রূপেই তা আসবে ।
(iv) এই দুনিয়ায় সব্বাই চাইবে যে তুমি তাদের মতো হও , তাদের স্বপ্নই পূরণ করো ।
(v) কারো কাছে শুনে শুধু নয় — সত্যিকারের শিক্ষালাভ হবে কাজে নেমেই । ভাবলে হবে না কাজেই নেমে পড়তে হবে ।
(vi) জীবনে সুযোগ বারবার আসবে না । সঠিক সুযোগের সঠিক ব্যবহার করতে হবে ।
(vii) নিজের লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা আর কর্তব্যের মধ্যে ব্যালান্স করতে হবে ।
(viii) Live in the Present . জীবন পরিবর্তনের জন্য তুমি শুধু বর্তমানকেই কাজে লাগাতে পারো ।
(ix) ব্যর্থতার ভয় (fear of failure)-কে জয় করতে হবে । মনে রাখতে হবে ব্যর্থতার চেয়ে ব্যর্থতার ভাবনাকেই মানুষ বেশি ভয় পায় ।
(x) আত্মবিশ্বাস ও সাহসকে পাথেয় করেই এগিয়ে যেতে হবে ।
এরকম অনেক মূল্যবান শিক্ষা আমরা বইটির ছত্রে ছত্রে পাই । আরো অনেক বিষয় রয়েছে , সেসব জানতে বইটি পড়ে ফেলাই ভালো ।

The-Monk-Who-Sold-His-Farrari-Review

(2) The Monk Who Sold His Ferrari – Robin sharma

আপন ঐশ্বর্য ত্যাগ করা এক সন্ন্যাসী
—- রবিন শর্মা

“…If you don’t even know where you are going, how will you ever know when you get there? “
—- Robin Sharma , ” The Monk Who Sold His Ferrari “

কাহিনি সংক্ষেপ:-
গল্পটি একজন আইনজীবীর । যার জীবনে ধন-সম্পদ-যশ সবই ছিল , কিন্তু শান্তি ছিল না । একদিন তিনি যখন কোর্টে প্র্যাক্টিস করছিলেন , হঠাৎ-ই হার্ট এটাক হয়ে তিনি পড়ে যান । ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানান যে তার হার্ট এত চাপ সহ্য করতে পারবে না । একথা শুনে তাঁর চেতনার উদ্রেক ঘটে এবং তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁকে শান্তির খোঁজে বের হতেই হবে । তিনি একে একে বাড়ি ঘর অফিস সব বিক্রি করে দিলেন । এমনকি তার প্রিয় ফেরারি গাড়িটিও । শান্তির খোঁজে বেরিয়ে তিনি হিমালয়ের কোলে এক সন্ন্যাসীর দেখা করেন এবং তার কাছ থেকেই শান্তির পাঠ গ্রহণ করেন ।
সেখানেই তিনি যে গল্পটি শোনেন তা-ই তার জীবনে বদল আনার শিক্ষা দেয় । আর এভাবে এই গল্পটিই তার জীবনে শান্তির পাঠ হয়ে ওঠে ।
একটি সুন্দর বাগানে একটি লাইট হাউস , যেখান থেকে একজন সুমো রেসলার বেরিয়ে এল । সুমো রেসলার স্বল্প তারের নির্মিত পোশাক পরে ছিল । কিছুর ওপর সে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল , আসলে সেটা একটা ঘড়ি ছিল । পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারায় সে । অনেক্ষন অজ্ঞান থাকার পর সুমিষ্ট ফুলের ঘ্রানে তার চেতনা জাগে । এরপর সুমো রেসলারটি ডায়মন্ড বিছানো আঁকা বাঁকা পথে চলে গেল ।

শিক্ষা :


এই গল্পটির মধ্যে দিয়েই মত ৭টি বিষয়ের শিক্ষা দিয়েছেন লেখক খুব সুন্দরভাবে । এই সাতটি উপদেশ বা শিক্ষাকেই শান্তিপূর্ণ সফল জীবন যাপনের পাঠ বলা যেতে পারে ।
সেই সাতটি বিষয় ও তার অর্থ খুব সংক্ষেপে তুলে ধরলাম :-

১.বাগান : বাগানের প্রতীকে মনের চিন্তা ভাবনাকে বোঝানো হয়েছে । প্রতিদিন মানুষের মাথায় প্রায় ষাট হাজার চিন্তা আসে । আর এর মধ্যে সিংহভাগ হলো গত দিনের পুরোনো বিষয় । তাই সুন্দরভাবে পজিটিভ চিন্তার দ্বারা মনকে সাজানো উচিত ।

২. বাতিঘর : বাতিঘর হলো জীবনের লক্ষ্যের প্রতীক । লক্ষ্য না থাকলে কোনো কাজই করার মানে নেই । তাই সবার আগে দরকার নিজের জীবনের লক্ষ্য স্থির বা goal set করা ।

৩. সুমো রেসলার : নিজের উপর আস্থা রাখা । তুলোনা করা কখনোই উচিত নয় । আর তুলনা যদি করতেই হয় , নিজের সঙ্গেই করা উচিত । গতকাল আমি যা ছিলাম , আজ কতটা উন্নত করতে পারলাম তার মূল্যায়ন করা ।

৪. সুমো রেসলার পরিহিত ছোট পোশাক(তার) : ছোটো ছোটো অভ্যাসগুলোর প্রতি যত্নবান হওয়া । অনেকগুলি সূক্ষ্ণ সুতো দিয়ে তৈরি দড়ি দিয়ে বড় জাহাজও বাঁধা যায় । তাই নিজের ছোট ছোট অভ্যাসের দ্বারাই বড় স্বপ্ন সফল করা সম্ভব ।

৫. ঘড়ি : এই বইতে ঘড়ির দ্বারা বোঝানো হয়েছে সময়কে ।
সত্যিই তো একমাত্র সময়কে কাজে লাগিয়েই আমরা জীবনকে পাল্টে দিতে পারি । তাই সবার আগে সময়কে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ।

৬. ফুলের ঘ্রাণ : নিজেকে অন্যের কল্যানে উৎসর্গ করা প্রয়োজন । কারণ , যে হাত অন্যকে ফুল দেয় সেই হাতে ফুলের সুন্দর গন্ধ লেগে থাকে । তাই একাধিক মানুষের মনে সুন্দর খুশি ছড়াতে পারলে নিজের জীবনও হয়ে ওঠে ফুলের মতো সুন্দর ।

৭. ডায়মন্ড ঘেরা পথ : এই প্রতীকে বোঝানো হয়েছে বর্তমানকে । মানুষের হাতে একটাই ব্যবহারযোগ্য সময় আছে , তা হলো বর্তমান । অতীত নয় ভবিষ্যৎও নয় — শুধু বর্তমানকে সঠিক ব্যবহার করেই আমরা সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবন গড়তে পারি ।
এইভাবেই গল্পের ভেতরে সন্ন্যাসীর ধাঁধায় সাতটি উপদেশের মাধ্যমে বইটিতে আমরা দারুন শিক্ষা পাই । যা জীবন বা জীবনের ধারণাটাই বদলে দিতে পারে । আরও অনেক বিষয় রয়েছে বইটিতে , জানতে হলে বইটিই হাতে তুলে নিতে হবে ।

The-Magic-of-thinking-big-review

(3) The Magic Of Thinking Big / বড় স্বপ্নের বড় জাদু – David J. Schwartz

” Hope is a start. But hope needs action to win victories . ” —-David J. Schwartz

আমাদের পছন্দের আরেকটি বই যা জীবন বদলে দিতে পারে সেটা হল The Magic Of Thinkinh Big
——- David J. Schwartz

বইটির বাংলা সংস্করণ এর নাম ‘বড় স্বপ্নের বড় যাদু ।’
মূল বিষয় : এই বইটিতে কতগুলি বিষয়কে কেন্দ্র করে মোট ১৩ টি অধ্যায় সাজানো হয়েছে। সুন্দর ভাবে গল্পের মাধ্যমে সাজানো কথাগুলি বেশ সুখপাঠ্য । এই বইয়ের বাংলা অনুবাদটিও খুব সুন্দর ভাবে , সুন্দর ভাষায় অনূদিত ।
এই বইতে যেসব বিষয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বলে হয়েছে
তা এর মোট তেরটি অধ্যায়ের সুচিপত্র দেখলেই বোঝা যাবে :–

খুব গভীরভাবে পাঠ করলে যে বিষয়গুলো জীবনকে অন্য মাত্রা দেবার শিক্ষা দেবে সেগুলি সংক্ষেপে হল :

১. জীবনে যে কোন কিছু অর্জন করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস অর্জন করা । সাফল্যে আস্থা রাখলে তবেই তা অর্জন করা যায় ।
২. নেতিবাচক চিন্তা ত্যাগ করা প্রয়োজন । কারণ একটি নেতিবাচক চিন্তা আরেকটি নেতিবাচক চিন্তার জন্ম দিয়ে থাকে ।
৩. সর্বদা আশাবাদী থাকা দরকার কারণ পজিটিভ থিংকিংই পজিটিভ রেজাল্ট দিতে পারে ।
৪. দৃঢ় ভাবে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেই সাফল্যের শিখরে পৌঁছানো সম্ভব ।
৫. শরীর ও স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে হবে , কেননা সুস্থ শরীরেই সুস্থ মন বাস করে ।
৬. বড় স্বপ্ন দেখলে তবেই বড় সাফল্য অর্জন করা যায়।
৭.ভাগ্যকে দোষ দেওয়া উচিত নয়। প্রতিটি পরাজয়ের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে দেখা জরুরি। কোথায় কি ভুল হয়েছে তা খুঁজে বার করতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন ভাগ্যকে দোষ দিয়ে জীবনের বৃহত্তর লক্ষ্যে পোঁছানো যায় না।
এই বইতে সুন্দর ভাবে সাজানো রয়েছে 30 দিনের গাইড যা যে কোন মানুষ পালন করে সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করতে পারে ।
এই বইটি এইজন্য ভালো ও কার্যকরী যে , এতে সহজভাবে বাস্তব জীবনের সত্যটিকেই তুলে ধরা হয়েছে । প্রত্যেকেই এর বক্তব্যের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারবে । তো পড়ে তো দেখাই যায় — কী বলো বন্ধুরা ।

The-5am-Club-Review

(4) The 5AM Club /দি 5 এ.এম ক্লাব – Robin Sharma

All change is hard at first, messy in the middle and gorgeous at the end. .

The 5 AM Club, Chapter 4

গল্পটি শুরু হয়েছে একটি বড় বিজনেস সেমিনার দিয়ে ।
যেখানে একজন বড় বিজনেসম্যান বক্তব্যের মাধ্যমে অন্যদের উদ্দীপ্ত করছিলেন । অংশগ্রহণকারী শ্রোতাদের মধ্যে দু’জন ছিলেন , যাদের নিয়ে এই গল্পের কাহিনী বিধৃত হয়েছে । সেই দু’জনের মধ্যে একজন ছিলেন অবসাদগ্রস্ত বিনিয়োগকারী আরেকজন ছিলেন হতাশ শিল্পী । একজন ছিলেন হতাশাগ্রস্ত অপরজন ছিলেন সফল হবার স্বপ্নে বিভোর ; কিন্তু কেউই তাদের সঠিক পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না । সেমিনারে বক্তা অসুস্থ হয়ে পড়ায় মাঝে মাঝেই সেমিনারে বিরতি নিতে হচ্ছিল । এরই কোন অবসরে ওই দু’জন মানুষ নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা-পরিচয় করে নিচ্ছিলেন । এমন সময় তাদের পেছনে একজন এমন মানুষ আবির্ভূত হলেন , যার পোশাক আশাক ছিল একদম দরিদ্র মানুষের মতো । আশ্চর্যের বিষয় তার হাতে ছিল লক্ষ ডলার মূল্যের ঘড়ি ।

উদ্যমহীন ব্যবসায়ীটি ওই তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলেন যে , তিনি আসলে দরিদ্র কেউ নন — একজন বিলিওনিয়ার । এমন দরিদ্র পোশাক পরার কারণ হিসেবে তিনি জানালেন , তিনি যেন কখনোই ভুলে না যান যে তিনি কীরকম পরিস্থিতি থেকে উঠে এসেছেন ।

কথা প্রসঙ্গে ওই বিলিওনিয়ার জানান , তিনি এমন এক World Class Technique জানেন যা পৃথিবীর বড় বড় সফল ব্যক্তিরা সাফল্য পাবার জন্য ব্যবহার করে থাকেন ।
এবং তিনি কথা প্রসঙ্গে ওই দু’জনকে বলেন যে তিনি তাদের ওই ওয়ার্ল্ড ক্লাস টেকনিক বিনামূল্যে শেখাতে রাজি আছেন , যদি তারা দু’জন পরদিন ভোর পাঁচটায় দেখা করতে পারেন ।

পরেরদিন যথা সময়ে ঐ বিনিয়োগ ব্যবসায়ী এবং ঐ শিল্পীকে নিয়ে বিলিওনিয়ার মানুষটি তাঁর নিজস্ব প্লেনে যাত্রা শুরু করলেন । তাদের আলোচনা এখানেই শুরু হয় ।

বিলিওনিয়ার জানালেন যে ভোর পাঁচটায় ওঠার ফলেই তিনি আজকের জায়গায় আসতে পেরেছেন । আর এই ভোর পাঁচটায় ওঠার ফলেই তাঁর সৃজনশীলতা (creativity ) বেড়ে যায় , ক্ষমতা (energy) দ্বিগুন হয় আর উৎপাদনশীলতা (Productivity) তিনগুন হয়ে যায় ।
তিনি একে একে বলতে থাকেন যে , আমাদের প্রত্যেকের মস্তিষ্কের ক্ষমতা নির্দিষ্ট । প্রতি মুহূর্তে কাজ করার বা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা আছে । আমরা প্রতিদিন আমাদের মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখি গুরুত্বহীন কাজগুলিতে , যেমন সংবাদপত্র , টিভি , সোশ্যাল মিডিয়া প্রভৃতি । যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কের Energy কমতে থাকে । দুপুরের পর কোনো কাজে তাই আর মনোযোগ দিতে পারি না , –ক্রমশঃ অবসন্ন হয়ে পড়তে থাকি । আর তার সঙ্গে সঙ্গেই একাধিক বিষয়ের কাজের ভার বাড়তে থাকে , এভাবে ক্রমে জীবন অতীষ্ট হয়ে উঠতে থাকে আমাদের ।
বন্ধুরা , এভাবেই রবীন শর্মা তাঁর গল্পের মাধ্যমেই বিষয়গুলি তুলে ধরেন । চার বছর ধ’রে লেখা “The 5AM Club”-এও এই গল্পটির মাধ্যমে মূল বিষয়টি যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তা আমরা পাঁচটি পয়েন্টে খুব সংক্ষেপে তুলে ধরছি :

a) 20/20/20 Formula :


এই বইটিতে কাহিনীর মূল ব্যক্তি ওই বিলিওনিয়ার সাফল্যের যে প্রথম কথাটি বললেন তা হলো এই 20/20/20 Formula ।


একে বলা হয়েছে Victory Hour । সকাল ৫-টা থেকে ৬-টা পর্যন্ত সময়কে ২০মিনিটের তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে । এই তিনটি পর্যায় এবং তার কার্য কলাপ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা হল :


5am to 5:20am 1st 20 minutes — move — exercise
5:20am to 5:40am 2nd 20 minutes –reflect — meditation , deep thinking , planning etc .
5:40am to 6:00am 3rd 20 minutes — Grow

ঘুম থেকে উঠে 20 মিনিট ঘাম নিঃসরণকারী ব্যায়ামের ফলে শরীরের cortisone হরমোনের নিঃসরণ কমে যায় । এই হরমোন ভয়ের উদ্রেক করে থাকে । BDNF ( Brain Derived Neurotropic Factor ) প্রোটিন যা মস্তিষ্কের কোষকে মেরামত করে ও স্নায়বিক সংযোগের উন্নতি ঘটায় । ব্যায়ামের ফলে সেটা বৃদ্ধি পায়।

b) Freedom from Destruction :


মানুষের attention কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে attention economy । সারা বিশ্বে আজ সোশ্যাল মিডিয়া , টিভি , ইন্টারনেট , ইউটিউব জাঁকিয়ে ব্যাবসা করছে এই attention economy দ্বারাই । কিন্তু সফল ব্যক্তিরা এই ইকোনোমির ফাঁদ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখেন । ইন্টারনেট ফ্রি নয় আসলে আমরাই ফ্রি হয়ে উঠছি ওই ব্যাবসায়ীদের কাছে । আমরা কী দেখছি , কী খুঁজছি সবই attention economy তে ধরা পড়ে । আর সেই অনুসারেই আমাদের সামনে একটার পর একটা মনোলোভা বিষয় উপস্থাপিত হতে থাকে । অর্থাৎ আমাদের attention অন্যের ব্যাবসার বিষয় হয়ে উঠছে । এভাবেই আজ ক্রমে আমরাও তাদের দাস হয়ে উঠছি । আমাদের মূল্যবান সময় , মেধা , শক্তি হারিয়ে আমরা একই রকম থেকে যাচ্ছি দিনের পর দিন ।

সফল হতে এই সব Destraction থেকে মুক্ত হতে হবে । এককথায় time wasting activity থেকে মুক্ত হওয়ার কথাই বলা হয়েছে বইটিতে ।

c) Three Step Success Formula :

এই বইতে প্রাপ্ত আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় হল 3 step formula ।
Better awareness , Better choice and better results .খুব ভালোভাবে সচেতন হলেই তার better result-ও মিলবে । সচেতনতার ফলে সবকিছু দেখার ও বিবেচনার নজর বদলে যাবে এবং খোলা মনের উদার দৃষ্টির অধিকারী হওয়া সম্ভব । আর তার ফলেই নিজের পছন্দগুলোও better হতে শুরু করবে । যার ফলশ্রুতিতে better result মিলতে বাধ্য ।

d) The Four Interior Empires :


মানুষের বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে যেমন interior বা বসবাসের জন্য ভেতরের স্থানটিকে সুন্দর ও সুখকরভাবে সাজানোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া হয় । তেমনি আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে চারটি empires কেও সুন্দরভাবে বিনির্মাণ করা প্রয়োজন । এই চারটি interior empires হলো :-
I) Mindset
II) Heartset
III) Healthset
IV ) Soulset

e) The Habit Instollation Process :


এই বইটিতে লেখা একটি দারুন শিক্ষণীয় বিষয় হল , যে কোনো অভ্যাস গড়ে তুলতে 66 দিন সময় লাগে ।প্রথম 22 দিন পুরোনো অভ্যাস ত্যাগ করতে কাজে লাগবে । এই পর্যায়টি খুব কঠিন । নতুন অভ্যাসের সাথে মানিয়ে নিতে খুব কষ্ট হয় এই সময় । কষ্ট করে প্রথম 22 দিন কাটানোর পর দ্বিতীয় 22 দিন নতুন অভ্যাস গড়ে ওঠার জন্য । আর তৃতীয় 22 দিন ভালো লাগতে শুরু করবে । এই দিনগুলোতে নতুন অভ্যাস গুলি Subconscious mind এ স্থান নিতে শুরু করবে ।
এর পর নতুন অভ্যাসই হয়ে যাবে স্বাভাবিক রুটিন ।
এইভাবে যত কঠিনই হোক না কেন যারা নিয়মিত কাজগুলি করেন তাদের কাছে বিষয়গুলি সহজ হয়ে যায় । আর জীবনে সাফল্যের পর সাফল্য অর্জন করতে করতে সাফল্যের শিখরে অবস্থান করেন । অন্যদিকে বাকিরা তাদের ঈর্ষা করে আর নিজেদের ভাগ্যকে দোষ দিতে থাকে । সেইসঙ্গে সমালোচনা , নিন্দা -মন্দের ভীড়ে জীবন বিসর্জন দিয়ে শেষ পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে ।

Rich-dad-Poor-dad-Review

(5) Rich Dad Poor Dad /রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড – Robert T. Kiyosaki

You’re only poor if you give up. The most important thing is that you did something. Most people only talk and dream of getting rich. You’ve done something .

Robert T. Kiyosaki/ Rich Dad Poor Dad

রবার্ট টি কিওসাকির নিজের জীবন থেকে লেখা এই বইটি এক কথায় অদ্বিতীয় । বইটিতে লেখক জানান তার দুজন বাবা ছিলেন । একজন ধনী বাবা আর অপরজন গরিব বাবা । একজন ক্লাস এইটও পাশ করেননি অপরজন উচ্চশিক্ষিত । দুজনেই নিজেদের স্বপ্ন পূর্ণ করেছেন দুজনেই পরিশ্রমী এবং জীবনে সফল ছিলেন । একজন পরিশ্রম করে হাওয়াই এর অন্যতম ধনী ব্যক্তি হয়ে ওঠেন । আর অপর জন শিক্ষিত অথচ অর্থের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে চলেন । দুজনেই বেশ প্রভাবশালী ছিলেন । রবার্টকে দুজনেই উপদেশ দিতেন । কিন্তু দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল দু’ রকমের । তাই দু’ধরনের বক্তব্য থেকে তিনি যে শিক্ষা পান, সেই শিক্ষা থেকেই তিনি জীবনে অন্যতম ধনী ব্যক্তি হয়ে ওঠেন । এই রিচ ড্যাড হলেন তার বন্ধু মাইক এর বাবা আর পুওর ড্যাড হলেন তার নিজের বাবা ।

ধনী হয়ে ওঠার পর রবার্ট বলেন , অর্থনীতি ও অর্থনৈতিকভাবে ধনী হবার জন্য যে শিক্ষা প্রয়োজন তা , সাধারণ বিদ্যালয় কিংবা বাবা-মা কেউই দেন না । ফলে এই বইটিতে তিনি সেই 6 টি শিক্ষার কথা বলেন যে শিক্ষা গুলির জন্য বইটিকে বলা হয় হয় “নাম্বার ওয়ান পার্সোনাল ফাইন্যান্স বুক অফ অল টাইম।”

বইটিতে নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে 6 টি অধ্যায়ে 6 টি শিক্ষার কথা বলেন লেখক । সেগুলি হল—

১. অর্থের জন্য কাজ করো না — অর্থ তোমার জন্য কাজ করবে । এই অধ্যায় লেখক শিখিয়েছেন নিজেই পরিশ্রম করে সব কাজ করতে যাবার ইঁদুর দৌড়ে নেমে নিজেই সিস্টেমের কারাগারে মানুষ বন্দি হয়ে যায় । যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই দুটো ভয় কাজ করে —– হেরে যাবার ভয় আর সমাজ কি বলবে — তার ভয় ।

২. অর্থনৈতিক শিক্ষার প্রয়োজন : – আর্নিং এর জন্য নয় লার্নিং এর জন্য কাজ করা উচিত । বেশিরভাগ মানুষ রোজগারের জন্য পরিশ্রম করতে থাকে । কিন্তু রবার্ট বলেন কাজ করতে হয় শিক্ষা অর্জনের জন্য ।

৩. জীবনে রিস্ক নিতে হয় । রিস্ক কে ভয় পাওয়া নয় , ম্যানেজ করতে শেখা প্রয়োজন ।

৪. সম্পদ ও দায় এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে । সম্পদ তৈরি করতে হবে , দায় নয় । বাড়ি-গাড়ি এসবকে অনেকেই সম্পদ বলে ভুল করেন । সম্পদ হল যে সব অর্থের যোগান দেয় এবং ঘন ঘন হস্তান্তর যোগ্য । আর দায় হল যা টাকা খরচ করায় — অর্থের যোগান দেয় না ।

৫. প্রফেশন আর বিজনেস এর পার্থক্য আছে । প্রফেশন বা জীবিকা জীবন ধারণের জন্য , আর বিজনেস সম্পদ সৃষ্টি করার জন্য ।

৬. ধনী হবার মূল লক্ষ্য হল minimise your tax . নিজের কোম্পানিতে আয় এর পর খরচ করা হয় , আর তারপর শেষে পড়ে থাকা বাড়তি টাকার উপর ট্যাক্স দেওয়া হয় । কিন্তু জব বা ভালো চাকরির এর ক্ষেত্রে আগে ট্যাক্স দেওয়া হয় , তারপর পরে ভোগ ।

এইভাবে এই গ্রন্থে ধনী হবার মূল মন্ত্রটিকে সুন্দরভাবে তুলে ধরা আছে । যার ফলে এই বইটি আজ বিশ্বের বহু মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে ও দিচ্ছে ।

তাহলে বন্ধুরা আমার জীবনের অন্যতম সেরা পাঁচটি বই এর মূল বক্তব্য ও তার থেকে আমরা কী কী শিক্ষা পেতে পারি তা জানালাম । এই বইগুলো তোমার জীবনেও আশা করি বদল আনতে সক্ষম হবে । আরো বিস্তারিত জানতে হলে বইগুলো পড়তে হবে । এর পর এরকম আরো বই এর খবর নিয়ে আসছি । আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে সঙ্গে থেকো । খুব ভালো থেকো বন্ধুরা ।

Summary
Review Date
Reviewed Item
Life Changing Five Books
Author Rating
51star1star1star1star1star

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *