ভয় থেকে মুক্তির উপায়
মানুষের এক বিশেষ অনুভূতি হলো ভয়। ভয় দু’রকমের হতে পারে – এক বাহ্যিক ভয়, দুই মানসিক ভয়। প্রথম ভয়ের উৎস হলো বাইরের কোনো বাস্তবিক ঘটনা। এই ভয় অনেকক্ষেত্রেই থাকা প্রয়োজন। যেমন আগুন, বিদ্যুৎ, বজ্রপাত, উষ্ণতা, সাপ ইত্যাদি। এই ভয় মানুষকে সাবধান ও সুরক্ষিত রাখে। ভবিষ্যতের সাম্ভাব্য বিপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখে । দ্বিতীয় ভয় হলো কোনো কাজ করার ভয়। যে ভয় মানুষকে সাফল্য অর্জন করতে বাধা দেয়। আজ আমরা এই মানসিক ভয় থেকে মুক্তির কতগুলি উপায় তুলে ধরছি।
প্রথমত তুমি তোমার ভয়ের সঠিক কারণটি খুঁজে বের করো। একটু ভেবে দেখো আদৌ সেখানে ভয় পাওয়ার মতো কোনো বিষয় আছে নাকি অহেতুক দুঃশ্চিন্তা করে তুমি তোমার ভয়টা বাড়িয়ে তুলছো। তোমার ভয়ের কারণগুলো ঠিক কি ,সেটা এক দুই করে ডাইরিতে লিখে ফেল। কিছুটা সময় নিয়ে বিষয়গুলো সম্পর্কে ভাবো। নিজেকে সঠিক প্রশ্ন করো। এর থেকে উত্তরণের সঠিক উপায় কী হতে পারে সেই বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠো। নিজের ভয় কে জানার চেষ্টা করো। এরপর এর থেকে বেরোনোর জন্য তুমি নিজে কী কী করতে পারো তার একটা তালিকা বানাও।
“If we can really understand the problem, the answer will come out of it, because the answer is not separate from the problem.“– Jiddu Krishnamurti
জীবনের কঠিন থেকে কঠিনতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করো। এই জীবনে যখন তখন যে কোনো ঘটনা ঘটতে পারে আমাদের সঙ্গে । সেই সময় মানসিক প্রস্তুতিই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। নিজেকে বলো যেকোনো পরিস্থিতির জন্য আমি প্রস্তুত। জীবন মানেই সমস্যা থাকবে। দূর থেকে ছোটো সমস্যাও অনেক বড়ো মনে হয় , তাই সমস্যা দেখে ভয়ে পালিয়ে যেও না – তার মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করো। জেনে রেখো সমস্যার ভেতর সমাধান লুকিয়ে আছে।
ভয়কে জয় করতে চাও ? তাহলে তার মুখোমুখি হতে শেখো
কিছু কিছু বিশ্বাস আমরা অচেতন ভাবে মেনে চলি। সমাজ ,পরিবার যখন কোনো একটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয় তখন সেটাকেই আমরা ধ্রুব সত্য হিসেবে মেনে চলি। কখনো তার ওপর প্রশ্ন তুলি না। অনেক সময় মেনে নিতে না পারায় আমাদের ভেতর দ্বন্দ্ব তৈরী হয়। ভয় দুঃশ্চিন্তা বাড়তেই থাকে। হয়তো ছোট থাকতেই কেউ তোমায় বলে দিয়েছিলো তুমি খুউব ভীতু ,তুমি খুব বোকা ,তুমি জীবনে কিছু করতে পারবে না , তোমার দ্বারা কাজটি করা অসম্ভব , হয়তো ছোট থাকতে তোমার কথায় তোমার ক্লাসফ্রেন্ডরা তোমায় নিয়ে খুব হাসিঠাট্টা করেছিল ,এই কথাগুলোই অবচেতন মনে গেঁথে যাওয়ার ফলে তুমি আজ ভুল বিশ্বাস নিয়ে চলছো। ফলে তুমি সাহস করে এগিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছ। একবার নিজেকে প্রশ্ন করো এগুলোর কি কোনো সত্যতা আছে ? এসব বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে এস কারণ এসব বিশ্বাসই তোমার ভয়ের মূল কারণ।
ভয় এর মধ্যে একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। ভয় তোমাকে কাজ করার জন্য উৎসাহী করতে পারে। যে জিনিসটা করতে তুমি ভয় পাও সেটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে কাজটি করার চেষ্টা করো। দেখবে ধীরে ধীরে সেটার প্রতি ভয় দূর হচ্ছে।
‘ আমি পারবো ‘এই বাক্যটি কিন্তু আমাদের ভীতি অনেকটাই কমিয়ে দেয়। নিজেকে অভয় দান করো। কাঙ্ক্ষিত ফল না এলেও কখনো হার মেনে ভয় পেয়ো না কারণ কোনো পরাজয়ই স্থায়ী নয়।
বই মানুষের এক বিশ্বস্ত সঙ্গী। বই পড়া অভ্যাস করলে দেখা যায় আমরা বই এর ভেতরে এক জগতে প্রবেশ করি। তাৎক্ষণিকভাবে ভয়ের বিষয়টি থেকে চিন্তাভাবনা দূরে সরে যায়। আর দীর্ঘ মেয়াদি ভয় দূর করতেও বইয়ের গুরুত্ব রয়েছে। বিভিন্ন মনীষীর বাণী , জীবনী , ও নানা তত্ত্ব আমাদের ভয়ের। ….. ও কারন সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। ফলে মনের মধ্যে জমে থাকা অকারণ ভয়ের অন্ধকার দূর হয়ে যায়।
জেনে নিন : বই পড়ব কেন ? বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা কী ?
শিশুরা যেমন ভয়ের বিষয়গুলি বাবা মাকে শেয়ার করে একটি সান্ত্বনা লাভ করে থাকে। তেমনি কোনো মানসিক ভয়ের বিষয় প্রিয়জনকে শেয়ার করা, তার ভালো পরামর্শ ও সাহস দান তোমাকে ভয় কাটাতে সাহায্য করবে। এছাড়া খুব বেশি ভয় যদি অসুস্থতার কারণ হয় তবে অবশ্যই মানসিক চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নাও।
লেখাটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট বক্সে আমাদের জানাও। এই ধরনের লেখার আপডেট নিয়মিত পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ টি লাইক করে আমাদের সাথে যুক্ত থাকো।
View Comments
ভালো।তবে আমি ভীষণ ভয় পাই।আমি কিছুতেই নিজেকে সাহসী করতে পারছি না।কি করবো বোঝতেছিনা।কোনো উপায় আছে কি?