শিক্ষা ও জীবন

সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ৬ টি গুরুত্বপূর্ণ আচরণ। 6 Parenting Tips in Bengali

4 Minute Read

সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ৬ টি গুরুত্বপূর্ণ আচরণ

6 Parenting Tips in Bengali

বাবা -মা -র ভূমিকা অনেকটা ডাক্তারের মতো। যত্ন ভালোবাসার পাশাপাশি থাকতে হয় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি। একটু খোলসা করে বলি বিষয়টা –
এলিশার মা-বাবাকে পাড়াশুদ্ধ লোক বদনাম দেয় । বলে , বাবা-মা আদর দিয়ে মেয়েটাকে নষ্ট করেছে। আবার অন্যদিকে ঋতুর বাবা-মা সম্পর্কে বলে, এমন পরিবারের সন্তান ভালো না হয়ে যাবে কোথায় ?

আসলে সব বাবা-মায়ের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে দেখা যাবে একটা চরম সত্য – সেটা হল, – সকলেই সন্তানকে প্রাণাধিক ভালোবাসেন । সকলেই এতো ভালোবাসেন তবুও সকলের সন্তান কেন আদর্শ মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে না। কোনো সন্তান হয় আদর্শ মানুষ আর কারো বা সন্তানের গড়ে ওঠে ভালো ক্যারিয়ার। হ্যা বন্ধুরা এই বিষয়ের সিংহভাগ যে parenting এর পদ্ধতির ওপরই নির্ভর করে -এ কথা বলতে কোনো গবেষণার প্রয়োজন হয় না।

কারো সন্তান বিপথগামী হতে থাকলে তার বাবা-মাকে  জিজ্ঞেস করলে বলবেন –
১. আমরা তো সন্তানের ভালোই চাই, কিন্তু তবু কেন যে এরকমটা হচ্ছে !
২.আমরা প্রানান্ত পরিশ্রম করি সন্তানের জন্যই , আর কত চেষ্টা করব… ইত্যাদি ইত্যাদি। লক্ষণীয় বিষয় যে গড়পড়তা বা।।-মা নিজের  Ego কেই বড়  করে দেখতে গিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে থাকেন। বেশিরভাগ বাবা-মা কখনো চুপ করে শুনে বিষয়টি থেকে শিখতেই চান না।

ধরুন, একজন ডাক্তার যদি বলেন ,যে আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি ,আমার অনেক সহানুভূতি,সমানুভুতি আপনাদের প্রতি ,কিন্তু আমি তো ভালো অপারেশন করতে পারব না। OT থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। – তখন কি কেউ তাকে ভালো ডাক্তার বলবেন।  হ্যা ,ঠিক একথাই বলতে চাইছি যে আদর ,স্নেহ ,মমতা ,মঙ্গল কামনা সকলেরই আছে কিন্তু সন্তানের সত্যিকারের পথ -আদর্শ তৈরি করে দিতে হলে কিছু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি আদর্শ পিতামাতাকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে । আর এই দৃষ্টিভঙ্গি স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালবাসার উর্ধে এক বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ।

আসুন তাহলে জেনে নি তেমনি ৬টি parenting tips –

১. Role of conduct :-

সন্তানের প্রতি আচরণ হবে অনেকটা অতিথির সঙ্গে আচরণের মতো। মনে রাখতে হবে , পিতামাতার ব্যবহৃত কিছু শব্দ-ই সন্তানের জীবনপথ নির্মাণের নকশা তৈরী করতে থাকে। অনেকেই জানেন না সন্তানের সঙ্গে বলা কথাগুলো কীভাবে ফল্গুধারার মতো আ-জীবন সন্তানতে বইতে হয়। কোনো অতিথি যদি তার ব্যাগটা আপনার বাড়িতে ফেলে যায় আর আপনি সেটা নিয়ে পেছন পেছন দৌড়ে গিয়ে বলেন -তুমি রোজ রোজ ব্যাগ ভুলে যাও। বারবার তোমাকে বলি বেরোনোর সময় সব দেখে শুনে বেরোবে। কই  তোমার বোন তো কোনোদিন ব্যাগ ভুলে যায় না। আর তার বদলে যদি বলেন – এই যে ব্যাগটা ভুলে গেছ। ভুলে গেছ তো কি হয়েছে। আমি তো এনেই দিলাম। এই  স্বল্প পরিসরে তো বেশি বিস্তৃত বলা সম্ভব না। তাই নিশ্চয় বুঝে গেছেন সন্তানের সঙ্গে অতিথির মতো আচরণ করা বলতে ভালো ব্যবহারের কথাই বলা হচ্ছে।

২.প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন নয় :-

সবাই জানেন সন্তানের কৌতুহলী মন সর্বদা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতে থাকে। কিন্তু লক্ষ্য করেছেন কি ; আপনি প্রশ্নের বদলে পাল্টা প্রশ্ন করছেন না তো ? মানে , প্রশ্নের পেছনে লুকানো উৎসাহটি কি ধরতে পেরেছেন ? হ্যা ,সন্তানের শিক্ষানুরাগী মন নানা সমস্যায় পড়ে, তার জন্যই কোনো প্রশ্ন করে এবং কিছু জানতে চায় – সমাধান চায় না।
যেমন – আট বছরের রনিত মাকে জিজ্ঞাসা করে – মা ভূত কি মানুষের ক্ষতি করে ? তার মা উত্তর না দিয়ে বলে -তোর তাতে কি এসে যায় ? বড় হ সব বুঝবি ? বাবা আসার [পর গভীর আলোচনা করে দেখা যায় – রনিত ভাবছে যে, বাড়িতে ও যদি কোনোদিন একা থাকে তখন কী হবে। অর্থাৎ একাকীত্ববোধ ওর মধ্যে বাড়ছে। আর সেই কারণেই হয়তো তার মনে এই ধরনের প্রশ্ন এসে জমা হচ্ছে। সন্তানদের করা প্রশ্নের পেছনে লুকোনো অনুভূতিটা আমাদের দেখা ও বোঝা উচিত। অনেক ধরণের প্রশ্নই তারা করতে পারে আপনি তার প্রশ্নটি মন দিয়ে শুনুন। পাল্টা প্রশ্ন  করবেন না কিংবা এড়িয়ে যাবেন না।

সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার গুরুত্বপূর্ণ আচরণ

৩. Respect বা সম্মান :-

মনে রাখতে হবে সন্তান হল An adult with a small body . অনেক সময় সন্তানের বলা কথাগুলি ,অসহায়তা বা কোনো সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়। মনে রাখতে হবে সরাসরি সমাধান করে দিতে নেই – এগুলি আসলে জীবনের Lesson মাত্র। সহানুভূতি ,সমানুভূতি প্রদর্শন করতে হবে।  তার দুঃখে দুঃখবোধ তার বেদনায়  বেদনা বোধ করতে হবে, সম্মান জানানো বলতে সন্তানদের অনুভূতিগুলিকে সম্মান জানানোর কথা বলা হয়েছে।

যেমন –  অরুনিমার বয়স ৯ বছর। তার  আদরের পুতুলটি হঠাৎ ভেঙে যায়। এমন অবস্থায় তার দুঃখ হচ্ছে। তার মায়ের উচিত নয় তৎক্ষণাৎ আরেকটি পুতুল কিনে দেওয়া – এতে  জীবনের একটা শিক্ষা থেকে সে বঞ্চিত হবে। তাই তার মা পাশে বসে অরুনিমার মনঃকষ্টের অংশীদার  হতেই  অরুনিমা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

৪. মনোলগ পরিত্যাগ করা :-

Monologue  (মনোলগ) মানে একক ভাষণ।  আপনি কি জানেন যখন বাবা অথবা মা দীর্ঘক্ষণ ধরে বকবক করেই চলেন, ঠিক ওই সময়ে সন্তানের মানসিক অবস্থা কেমন থাকে ?  ছোট্ট কিছু জানতে চাইলে ছোট্ট  উত্তরই  দিতে হবে। একটা বিষয় লক্ষ করবেন বাবা-মা শিক্ষক হলে তাদের সন্তান দীর্ঘ উত্তর পাবার ভয়ে প্রশ্নটিই করতে চায় না। অর্থাৎ দীর্ঘক্ষণ বোঝানো সন্তানের পক্ষে বিরক্তির সৃষ্টি করে। অনেক বাবা-মা  ভাবেন আমার সন্তান একটু বেশি  জানুক।  যেহেতু আমি অনেক জানি। ভুলটা ওখানেই হয়ে যায়। সন্তানকে ভালোবাসুন কিন্তু সন্মান করুন। সন্তানের সামনে একা একা বকবক করা আজই পরিত্যাগ করুন।

Parenting Tips Bengali

৫. Understanding :-

হ্যাঁ বন্ধুরা সন্তানের সঙ্গে বোঝাপড়া আদর্শ পিতা-মাতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য । –আপনার সন্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ? এইরকম একটা প্রশ্নের উত্তর অনেক অভিভাবকেই একটু ভেবে তারপর দিতে হয়। এর কারণ আমরা সন্তানের সঙ্গে সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলবো ভেবেও কিন্তু ধীরে ধীরে সরে যেতে থাকি। এগুলি ঘটে যায় ছোট ছোট আচরণের মাধ্যমেই।
তাই,মনে রাখতে হবে বাড়ন্ত সন্তানের মনের ভেতর অনেক ভাবনা আসে বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির সময়গুলোতে। যেমন বাচ্চারা তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা বকাঝকা করলে তাদের সম্পর্কে খুব খারাপ কিছু ভাবতে থাকে – এসব কিন্তু বাবা মাকে বলতে পারেনা। এই ধরণের না-বলা কথাগুলো বুঝে নিয়ে তাদের স্বাভাবিক করে দিতে হবে। নাহলে তাদের মনে অপরাধবোধ জমতে থাকে। তাই সন্তানের সঙ্গে তাদের সহমর্মী হতে হবে, আর ভেতরে জমে থাকা ক্ষতিকর বারুদকে বিস্ফোরণের আগেই নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে।

৬. Mixed Feelings :-

সন্তান বড়ো হতে থাকে, তাদের মধ্যে কিন্তু মিশ্র অনুভূতি গড়ে উঠতে থখতিক যেমন ভালো তেমনি মন্দ অনুভিতিগুলোকেও স্বীকার করতে হবে। দুঃখ পাবে কষ্ট পাবে হিংসা, ঈর্ষা, বেদনা, আনন্দ, প্রভৃতি সব একজন সাধারণ মানুষেরই থাকে। সন্তানের মিশ্র অনুভূতির মধ্যে খুব ভালোগুলিকে স্বীকার করলে হবে না। তাহলে সন্তান ভেতরে অনুভূতিকে লুকোনোর চেষ্টা করবে । সেগুলি কিন্তু মারাত্বক হয়ে উঠতে পারে।  মনে রাখতে হবে ছোট ছোট সন্তানদের মধ্যে হিংসা,ঈর্ষা যাই থাকে তাকে নিজের ছোটবেলার সঙ্গে না মিলিয়ে ছোটবেলার গল্প বলে বলে  বোঝাতে হবে সেগুলির কোনটি ভালো আর কোনটি মন্দ । একজন সন্তান ভুল করতে পারে কিন্তু জেনে রাখা উচিত সন্তানের মানসিকতা কখনোই খারাপ হয় না। বিভিন্ন পরিবেশই খারাপ করে তুলতে থাকে। পিত-মাতা, শিক্ষক-শিক্ষিকার আচরণের অস্বাভাবিকতাও এর জন্য দায়ী হতে পারে ।

আশা করি আজকের বিষয়টি ভবিষ্যতে কাজে আসবে। লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করে দিন সেইসব পিতামাতাদের, যাদের সন্তানকে মানুষ করার স্বপ্ন নিয়ে হয়তো সঠিক পথ না পেয়ে ভুল কোনো পথ বেছে নিচ্ছেন।

আমাদের ফেসবুক পেজ লাইক করে সঙ্গে থাকুন আর পেতে থাকুন এইরকম লেখা। ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *