মোটিভেশন

আত্মবিশ্বাস বাড়াতে চাও ? আজই জেনে নাও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ৮টি কার্যকরী উপায়

6 Minute Read

আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপায়

Confidence is preparation. Everything else is beyond your control.” – Richard Kline

Self-confidence can be learned, practiced, and mastered–just like any other skill. Once you master it, everything in your life will change for the better.” -Barrie Davenport

জীবনে বড় হতে হলে আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন। একজন আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তির মানসিক শক্তি সাধারণ যে কারো থেকে কয়েকগুণ বেশি থাকে। একমাত্র আত্মবিশ্বাসই মানুষের পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে পারে। আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে কোনও কাজই ঠিকমত করা যায় না; সব সময়েই মনের মধ্যে ব্যর্থ হওয়ার ভয় কাজ করে। আর ভয় হলো জীবনে ব্যর্থতার সবচেয়ে বড় কারণ। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বলা যাক- ধরো একটি গুহার সামনে দুইজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তারা জানে যে এই গুহার ভেতরে গুপ্তধন থাকতে পারে। দু’জনের হাতেই একটি করে মশাল, তাদের শারীরিক শক্তিও প্রায় একই রকমের। কিন্তু তাদের একজন বিশ্বাস করে যে সে চেষ্টা করলে ভেতরের গুপ্তধন বের করে আনতে পারবে। অন্যজন গুহার ভেতরে কি কি বিপদ হতে পারে, তা নিয়ে চিন্তা করছে। কাজেই প্রথমজন গুহায় ঢুকলো এবং দ্বিতীয়জন ভয় পেয়ে বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকল। এখন ভেতরে যদি সত্যিই গুপ্তধন থাকে তাহলে সাহসী লোকটিই লাভবান হবে। একটি প্রাচীন ইংরেজী প্রবাদ আছে “যে গুহায় যেতে আমরা সবচেয়ে বেশি ভয় পাই, তার ভেতরেই সাধারনত সবচেয়ে দামী গুপ্তধন রয়েছে”।

এটা ঠিকই, সবার আত্মবিশ্বাস সমান নয়। অনেকেই একেবারেই আত্মবিশ্বাসী নয়। এবং তাদের এই আত্মবিশ্বাসের অভাব তাদের কথাবার্তা, চালচলন, কাজেকর্মেও ফুটে ওঠে। ফলে অন্যরাও তাদের দিয়ে কিছু করাতে ভরসা পান না। তা ছাড়া তাদের এই অভাব তাদের জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মজার বিষয় হল, অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন আত্মবিশ্বাসও কিন্তু গড়ে তোলা যায়। এমন নয় যে সেটা পাঁচ মিনিটে গড়ে তোলার কোনও মন্ত্র আছে। এর জন্য সঠিক অনুশীলন দরকার। আজ জানব আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার বা আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ৮টি কার্যকরী উপায়।

১.ছোট দিয়ে শুরু করো:-

তোমার লক্ষ্য অনেক বড় হতে পারে। কিন্তু মনে রেখো, যে কোনও বড় লক্ষ্যই কিন্তু ছোট ছোট লক্ষ্য মিলিয়ে তৈরি হয়। রোজকার যেসব ছোটখাটো বিষয় গুলো যখন তুমি দারুণভাবে সামলাবে, তখন সেগুলোই হয়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসের কারণ। কীভাবে তুমি নিত্যদিনের খুব সাধারণ অথচ ঝামেলার একটা কাজ সম্পন্ন করছো, কেমন করে প্রতিনিয়ত নিজের রাগ প্রশমন করছো, কিংবা অন্য কারো কাজে সাহায্য করছো- এই সকল বিষয়ই তোমার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। তাহলে দেখবে ধীরে ধীরে তুমি তোমার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছ। এমনটা হওয়া জরুরি নয় যে কেবল খুব বড় অর্জনগুলোই হিসাবের খাতায় উঠবে।

২. ঝুঁকি নাও, শিক্ষাও নাও :-

We gain strength, and courage, and confidence by each experience in which we really stop to look fear in the face … we must do that which we think we cannot.” – Eleanor Roosevelt
আমাদের অনেকেরই সমস্যা হল, আমরা অনেক কাজ করতে গিয়েও পিছিয়ে আসি ব্যর্থতার ভয়ে। মনে হয়, যদি ওটা না পারি তা হলে লোকে কী বলবে! আত্মবিশ্বাসী মানুষেরাও কিন্তু ঝুঁকি নেন। এমন নয় যে তাঁরাও প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সফল হন। হারের মুখ তাঁদেরও দেখতে হয়। আত্মবিশ্বাসী হলে কেউ ভীত বা উদ্বিগ্ন হয় না এটা ভুল ধারণা। উদ্বেগ, উত্তেজনা এগুলো যেকোনো নতুন কাজ বা প্রচেষ্টার মুখোমুখি হওয়ার স্বাভাবিক অংশ। কোনো ঝুঁকি নেওয়া বা নতুন কোনো কাজে হাত দেওয়ার সময় ভীত বা উদ্বিগ্ন হওয়াটা তোমার মনের স্বাভাবিক অবস্থাকেই প্রকাশ করে। বরং এতে করে তুমি আরো নিশ্চিত হতে পারবে যে তুমি যা করতে যাচ্ছ তা সত্যিকার অর্থেই বেশ গুরুত্ববাহী। যে কোনো খেলোয়াড়কে দেখো । তারা অনেক পরিকল্পনা করে থাকেন । সব সময় যে সফল হন তা কিন্তু নয় , অনেক ব্যর্থতা থেকে তাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় । ব্যর্থতার পরেও আত্মবিশ্বাস হারান না বা পরের ম্যাচে আবার কোনও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হন না। তাই বলছি, জীবনে ঝুঁকি না নিলে এগোতে পারবে না। অবশ্যই তা নিজের সাধ্য বুঝে। আর যদি কোনও কারণে ব্যর্থও হও, ভেঙে পড়ার কিছু নেই। বরং তার থেকে শিক্ষা নিতে হবে। খতিয়ে দেখতে হবে কী কী কারণ তোমার পদক্ষেপগুলো কাজ করল না।

৩. নিজের প্রতি দায়িত্বশীল হও :-

একটি গবেষণার কথা বলে বিষয়টি বোঝানো যেতে পারে । মার্টিন গবেষক স্যালিগম্যান ১৯৬৭ সালে একবার কয়েকটি পোষা কুকুর নিয়ে তাদের পরীক্ষামূলক ভাবে ইলেকট্রিক শক দেবার ব্যবস্থা করেন । তবে তিনি প্রত্যেকবার শক দেবার পূর্বে একটা ঘন্টা বাজাতেন । কিছুদিন পর থেকে দেখা যায় ওই কুকুরগুলো শুধু ঘন্টার শব্দ শুনলেই ভয়ে কুঁকরে যেতে লাগলো । ইলেকট্রিক শক না দিলেও তারা তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুসারে ঘন্টার শব্দকেই ভয় পেতে থাকে । ইলেকট্রিক শক তাদের অভিজ্ঞতা লব্ধ ভয়ের কারণ ।

তেমনি আমাদের জীবনেও দেখি যে কোনো ব্যর্থতার পূর্ব অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করে দেয় । কুকুরের ওই পরীক্ষা থেকে স্যালিগম্যান একটি তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন যা ” Learned Helplessness ” নামে পরিচিত । বাস্তবিক দেখা যায় কোনো মানুষের আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করে ফেলা যায় খুব সহজেই। তাই বলা হয় নিজের দ্বায়িত্ব নিজে নাও। কারণ তোমার আত্মবিশ্বাস, ক্ষমতা অন্যের উপরে ছেড়ে দিও না । নিজের আত্মবিশ্বাস , ক্ষমতা ও পরিকল্পনার দ্বায়িত্ব নিজে নিতে শুরু করো।

আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপায়

৪. লক্ষ নির্ধারণ কর :-

কথায় বলে ‘লক্ষ্যহীন জীবন, মাঝিহীন নৌকার মত’। তুমি যদি না জানো তুমি কোথায় যেতে চাও তাহলে তুমি সেখানে কখনও পৌঁছতে পারবে না । চারপাশে তাকিয়ে দেখো শত শত মানুষ যেন ছুটছে আর ছুটছে। যাদের নিজেদের জীবনের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই । সমাজে যা দেখে তাই করে । কেউ পরিবার করতে বাধ্য করে বলেই করে । আর কারো রোজগার করা দরকার বলেই করে । কিন্তু নিজের জীবনের লক্ষ্য , প্যাশন কিছুই ঠিক নেই । ফলে ব্যর্থতার সব দায় চাপায় ওই সমাজ , পরিবার কিংবা ভাগ্যের উপর । আসলে তাদের লক্ষ্যহীন , পরিকল্পনাহীন অভ্যাসই সম্পূর্ণ দায়ী । যার ফলে নিজের উপর আত্মবিশ্বাসটাই হারিয়ে যেতে থাকে । কাজেই তুমি তোমার জীবনের লক্ষ্য ও পথ নির্ধারণ করে কাজ করতে থাকো দেখবে তুমি তোমার মত আত্মবিশ্বাস পেয়ে যাবে।

জেনে নাও : আশা নিয়ে মনীষীদের বিখ্যাত কিছু উক্তি ও বাণীসমূহ

৫. নিজেকে প্রশ্ন করো :-

আমরা অনেকেই যেটা করি না তা হল নিজেদের প্রশ্ন করা। প্রশ্ন করে দেখা, কোন কোন বিষয় গুলোতে আমারা পারদর্শী, বা কোথায় কোথায় আমাদের খামতি আছে। ধরো তুমি হয়তো এই কয়েকটি ক্ষেত্রে বা বিষয়ে ভীষণ পারদর্শী যেমন-জনসংযোগ, খেলাধুলো, পড়াশোনা, গানবাজনা,ছবি আঁকা ইত্যাদি। তুমি একটা নোটবুকে তা লিখে রাখো। জীবনের কোন কোন সাফল্য তোমাকে গর্বিত করে ? অন্যরা তোমার মধ্যে কোনগুলোকে তোমার দক্ষতার জায়গা মনে করেন ? তুমি এই ক্ষেত্রগুলিতে কীভাবে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারবে সর্বদা সেইদিকে মনোনিবেশ করো।

আবার খামতির ক্ষেত্রে নিজেকে প্রশ্ন করো – কোন কোন কাজ করার ক্ষেত্রে তুমি আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করো? তোমার নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী ? অর্থাৎ, তুমি কি সব কাজ করতে দেরি করো, তুমি কি চট করে রেগে ওঠো, বা কোনও কঠিন পরিস্থিতি একদম সামলাতে পারো না? তুমি যা পড়াশোনা করেছ বা করছ এবং এত দিনে যে সব দক্ষতা অর্জন করেছ, তা তোমাকে জীবনে এগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট? কোন বৈশিষ্ট্যটি তোমার এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ? এই বিষয়গুলোও নোটবুকে লিখে রাখো। এবং এগুলোর ওপর কাজ করা শুরু করে দাও।

৬. নিজের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নাও :-

বিখ্যাত লেখক জর্জ আর.আর. মার্টিন তাঁর “দি সং অব আইস এ্যান্ড ফায়ার: এ গেম অব থ্রোনস” উপন্যাসে লিখেছেন: “নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে লজ্জা করো না। একে তোমার শক্তি বানাও….. ঢাল হিসেবে ব্যবহার করো। তাহলে আর অন্য কেউ এটা তোমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে না”। দুনিয়ার সবাই সমান হয় না । সৃষ্টিকর্তার এটাই বৈশিষ্ট্য যে কাউকেই সবকিছু গুন দেন না । প্রত্যেকেই কোনো না কোনো দিকে সীমাবদ্ধ । আবার প্রত্যেকের মধ্যেই কোনো না কোনো বিশেষ গুন রয়েছে । তোমার উচিত নিজের সীমাবদ্ধতাকে মেনে নেওয়া । আর খুঁজে বের করো তোমার সেই বিশেষ গুন বা দক্ষতাকে । যা তোমার সব সীমাবদ্ধতাকে দূর করে সফল করে তুলতে পারে । সুরদাস ছিলেন একজন অন্ধ । কিন্তু তার কবিত্ব গুণের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে অমর হয়ে আছেন । নায়কোচিত রূপ , উচ্চতা না পেয়েও কমেডি অভিনেতা জনি লিভার দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় । তাই নিজের সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করে , ভেতরের রাজাকে জাগিয়ে তোলা প্রয়োজন । নিজের ক্ষমতা ও গুণের উপরেই আত্মবিশ্বাস নির্ভর করে থাকে ।

৭. নিজেকে নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা :-

নিজের সম্পর্কে খারাপ ধারণাগুলো ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে পরিবর্তন করো। অন্যেরা যখন আমাদের সমালোচনা করে তখন সেটা গ্রহণ করতে আমাদের ভীষণ কষ্ট হয় । কিন্তু আমরা যখন সারাক্ষণ নিজের ভেতরে নিজের সমালোচনা করতে থাকি সেটা তো অনায়াসে গ্রহণ করি। যেমন- আমি পারবো না,আমার দাঁড়া হবে না,প্রতিনিয়ত নিজের ভুল ধরা, নিজেকে তিরস্কার করা, হাজারটা নিষেধের জালে জড়ানো ইত্যাদি। নিজেকে নিয়ে যে সমালোচনা গুলো আমরা ভেতরে আওড়াতে থাকি তা যদি ভীষন নেতিবাচক হয় তবে তা আমাদের আচরণে ধরা পড়বে। নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা আত্মবিশ্বাসহীনতার মূল কারণ। তাই এমন ধারণা দেয়, এমন মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকো। এবং নিজের কট্টর সমালোচক হয়ে নয়, বরং নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে সাহায্য করো নিজেকে। নিজের ভেতরে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়াও। সবার আগে নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস বাড়িয়ে নেয়াটা সবচেয়ে জরুরী। যে মানুষের নিজের ওপর ভরসা নেই, অন্যরাও তার ওপর ভরসা করতে ভয় পায়।

৮. বই পড়ো :-

একজন মানুষের মানসিক বিকাশের জন্য বইয়ের বিকল্প কিছু হতে পারে না। তাই নিয়মিত বই পড়ার অভ্যেস তৈরি করো। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য সফল মানুষদের জীবনীমূলক বই পড়ো। তাঁদের সফলতার পেছনের গল্পটি থেকে আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা নাও। তাঁদের মতো তুমিও একদিন পারবে। শুধু নিজের ওপর এই বিশ্বাসটি রাখতে হবে। এছাড়া সেল্ফ হেলফ বই গুলো পড়তে পারো যা তোমার সেল্ফ ইস্টিমকে অনেকখানি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে।

তুমি জীবনে কতটা উন্নতি করবে, কতটা অর্থ বা খ্যাতি অর্জন করবে, সংসার ও পারিবারিক জীবনে কতটা সুখী হবেন, তার অনেকটাই নির্ভর করে তোমার আত্মবিশ্বাস আর আত্মসম্মানের ওপর। নিজের ব্যাপারে তুমি কেমন অনুভব করো , নিজের ব্যাপারে তোমার ভাবনা কি – এসব তোমার জীবনে এগিয়ে চলার জন্য অনেক বেশি জরুরী বিষয়। তাই নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকাটা ভীষণ জরুরী। আশা করি আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য উপরের আটটি কার্যকরী টিপস তোমার কাজে লাগবে।

আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপায় লেখাটি তোমাদের কেমন লাগলো তা আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাও। লেখাটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। এই ধরণের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকো। আমাদের সমস্ত ভিডিওর নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেলটিতেও যুক্ত থাকো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *