শরীর ও স্বাস্থ্য

ড্রাগন ফল কী ? ড্রাগন ফলের উপকারিতা

3 Minute Read

ড্রাগন ফল কী

ক্যাকটাস গোত্রের ফলগুলির মধ্যে অন্যতম একটি উপকারী ফল হল ড্রাগন ফ্রুট ।এই গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম হাইলোসিরিয়াস ক্যাক্টাস । কোথাও কোথাও এই ফল ‘ফায়ার ড্রাগন ফ্রুট’ বা ‘সুইট ড্রাগন’ নামেও পরিচিত। উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো এবং সেন্ট্রাল আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে এই ফল পাওয়া গেলেও বর্তমানে সারা বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করে আমাদের দেশেও এখন ড্রাগন ফ্রুট সহজলভ্য হয়ে উঠছে । দেখতে খুবই সুন্দর এই ফলটি সাধারণত লাল, হলুদ, গোলাপি, এবং সবুজ রঙের হয়ে থাকে। খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এর পুষ্টিগুণ অসামান্য। ভিটামিন A , ভিটামিন C , আয়রন , ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস যেমন এতে পাওয়া যায় , তেমনি এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর ক্যালরিসমৃদ্ধ উপাদান । এর ভেতরে প্রোটিনের পাশাপাশি রয়েছে ফাইবার বা আঁশযুক্ত কার্বহাইড্রেড এবং ওমেগা-৩ সহ এন্টি অক্সিডেন্ট । এককথায় একসঙ্গে অনেকগুলি প্রয়োজনীয় উপাদান । যার মধ্যে ক্ষতিকর ফ্যাটের পরিমান শূন্য ।
তাহলে এসো বন্ধুরা , কথা না বাড়িয়ে ছোট করে দেখে নিই ড্রাগন ফলের উপকারিতা কী কী ।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা :-

সবার আগে দেখে নিই নিউ ইয়র্কের গবেষকেরা এক একটি ড্রাগন ফলে কী উপাদানের উপস্থিতির কথা বলেছেন :-

Calories: 60
Protein: 1.2 grams
Fat: 0 grams
Carbs: 13 grams
Fiber: 3 grams
Vitamin C: 3% of the RDI
Iron: 4% of the RDI
Magnesium: 10% of the RDI

১। ওজন নিয়ন্ত্রণ :-

যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাও , তারা ড্রাগন ফ্রুট খেতে পারো । আমরা জানি ওজন বৃদ্ধির কারণ হল ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার । যেহেতু এই ফলটি সম্পূর্ণ চর্বি বা ফ্যাট মুক্ত , এবং ভিটামিন সহ অনেকগুলি পুষ্টি গুন সম্পন্ন। যা শরীরে শক্তি , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাটমুক্ত স্বাস্থ্য গড়ে তুলতে পারে।

২। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি :-

ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা প্রচুর ভিটামিন সি এবং বেশ কয়েক রকম এন্টি অক্সিডেন্ট যেগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই যারা নিয়মিত এই ফলটি খেয়ে থাকেন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি বলে একটি সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়।

৩। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা :-

হালকা স্বাদের এই ড্রাগন ফলটিতে বিশেষ ফাইবার বা তন্তুজ উপাদান থাকে । দেখা গেছে একটি ড্রাগন ফলের মধ্যে প্রায় ৬ থেকে ৮ গ্রাম ফাইবার থাকে , যা অন্য ফলের ক্ষেত্রে অভাবনীয় । এই ফাইবারের মাধ্যমেই মানুষের অন্ত্রে অবস্থিত বর্জ্য বহিষ্কৃত হয়। তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যর প্রবণতা আছে তারা এই ফলের দ্বারা ভীষণভাবে উপকৃত হবে আশা করি।

৪। ক্যানসার কোষ ধ্বংস করা :-

ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা ফেনোলিক এসিড, ফ্ল্যাভনয়েড এবং বেটাসায়ানিন নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোশকে ধ্বংস করতে পারে। অতএব এই ফলের উপকারিতা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নেই ।

৫। হার্টকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখা :-

ড্রাগন ফলে থাকা ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৯ থাকে । একারণেই বলা হয় এই ফল খেলে হার্টের রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায় ।পুস্টিবিদদের মতে ড্রাগন ফল খেলে মানসিক ট্রেস বা বিষণ্ণতাও কমে যেতে পারে।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

৬। চুল পড়া বন্ধ করা :-

শরীরে আয়রনের অভাবে অনেকেরই চুল পড়া শুরু হয়। ড্রাগন ফলে থাকা স্ট্রং আয়রনের উপাদান এই চুল পড়া প্রতিরোধ করতে পারে বলে আধুনিক পুষ্টিবিদদের মন্তব্য।

৭। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি :-

ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা মলিকুলগুলির অধিকাংশই ত্বকের পক্ষে ভীষণ উপকারি। অনেক মানুষ এই ফলের পেস্ট বানিয়ে মুখে স্কিনে ব্যাবহার করে থাকেন। এতে ত্বকের ঔজ্জ্বল্য যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়াও রোধ করে। এই ফল খেলেও ওই একই উপকার পেতে পারো তোমরা।

আরও পড়ুন : শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে যেসব খাবার

৮। শরীরে ক্যালোরি বাড়ানো :-

উপরের তালিকায় নিশ্চয় দেখেছো এক একটি ড্রাগন ফলে খুব বেশি পরিমাণ ক্যালরি থাকে এবং এই ক্যালরি ফ্যাট ফ্রি । যে ক্যালরির অভাবে দুর্বলতা , ঘুম ঘুম ভাব, ও ক্লান্তি আসে। তাই এই ফল খেলে ক্লান্তি দূর করে এক ফুরফুরে ভাব নিয়ে আসতে পারো তোমার শরীরে।

৯। অন্ত্রে অপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করা :-

প্রতিটি ড্রাগন ফলে থাকে প্রোবায়োটিক্স নামক উপাদান , যা আমাদের অন্ত্রে বসবাসকারি ক্ষতিকর ব্যাক্টিরিয়া ধ্বংশ ক’রে পরিপাকে যেমন সাহায্য করে তেমনি, অনেকগুলি পেটের রগের হাত থেকেও রক্ষা করে ।

১০। রক্তে অক্সিজেন বেশি ধরে রাখা :-

রক্তের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল আয়রন । যা রক্তের লোহিত কণিকা গঠন করে। এই কণিকা রক্তে অক্সিজেন ধরে রাখে ও সরবরাহ করে । ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে ১.৯ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে। তাই আর দেরি না করে এই করোনা আক্রমণের পরিবেশে নিশ্চয় ড্রাগন ফল কিছুটা বাড়তি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দিতে পারে বলেই বিশ্বাস করা যায়।

আশা করি বন্ধুরা , ড্রাগন ফলের গুণাবলী পড়ে আজই ফলটি সংগ্রহ করতে চাইছো , কি তাইতো ! যাই হোক ভালো জিনিসের জন্য ভালো মূল্যও দিতে হয় । তাই এই ফলের বাজার মূল্য অন্য ফলগুলোর থেকে বেশিই হয়। তবে সুস্থ থাকতে এরকম উপকারি ফলের তুলনা হয় না । আজকের আর্টিকেলটি কেমন লাগলো আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলো না কিন্তু । ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে দিও । আর আমাদের সঙ্গে থাকতে ফেসবুক পেজ-এ চলে এসো । ভালো থেকো , সুস্থ থেকো । আবার হাজির হব পরের কোনো বিষয় নিয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *