“Through practice comes Yoga, through Yoga comes knowledge, through knowledge love, and through love bliss.“- Swami Vivekananda
২১শে জুন আন্তর্জাতিক যোগ দিবস। সারা বিশ্বেই মহা সমারহে পালিত হয় এই বিশেষ দিন। এই দিনটিকে যোগ দিবস বা বিশ্ব যোগ দিবস বলা হয়। ২০১৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘে ভাষণ দেওয়ার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২১ জুন তারিখটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস বলে ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন। সেই বছরই ১১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রসংঘ রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদ ২১ জুন তারিখটিকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস বলে ঘোষণা করেন। এছাড়া ২১ শে জুন এই দিনটি পালন করার একটি বিশেষ কারণ হ’ল এই তারিখটিতে উত্তর গোলার্ধের দীর্ঘতম দিন হিসেবেও পালন করা হয়। তাই এই বিশেষ দিনের তাৎপর্য রয়েছে। যোগাসনের উপকারিতা ।
আন্তজার্তিক যোগ দিবস থিম :- ২০২২-এর থিমটি হল “Yoga For Humanity”
যোগ শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে। যার অর্থ হল ‘যোগ করা’,”নিয়ন্ত্রণ করা”, “যুক্ত করা” বা “ঐক্যবদ্ধ করা”। “যোগ” শব্দটির আক্ষরিক অর্থ তাই “যুক্ত করা”। যোগ-ব্যায়াম হল দেহ এবং চেতনার মিলন।
প্রতিদিনের জীবনে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন বজায় রাখতে সাহায্য করে। শক্তিশালী শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের অন্যতম সহজ কৌশল হল যোগ। মন, শরীর এবং আত্মার সর্বোৎকৃষ্ট সাফল্যের পরিপূর্ণ উপায় হিসাবে ভারতের ঋষিমুনিরা হাজার হাজার বছর আগে এই যোগ উদ্ভাবন করেছেন। তার উল্লেখও পাওয়া যায় ঋক বেদের মতো প্রাচীন পৌরাণিক বইগুলিতে। ভারতে আজও এই প্রথা প্রচলিত আছে। যোগের সারকথা হলো কিছু শারীরিক ব্যায়াম(আসন), সাধারণ বিশ্রামের পদ্ধতি, সাত্ত্বিক আহার, যথার্থ শ্বাস-প্রশ্বাস প্রণালী এবং ইতিবাচক ভাবনার মাধ্যমে যেকোনো মানুষ তার সত্তাকে প্রকৃত উৎকর্ষ পৌঁছে নিয়ে যেতে পারে যেখানে তার মন এবং শরীর দীর্ঘস্থায়ী সুস্বাস্থ্যের জন্য একাকার হয়ে যায়।
” যে নিজের মনের ওপর বিজয় প্রাপ্ত করে তিনি পুরো পৃথিবী জয় করতে পারেন।”
যোগের লক্ষ্য হল আত্মপোলব্ধি যার মাধ্যমে সব ধরনের কষ্টভোগকে পরাস্ত করা যায়। যোগ হল অদম্য ইচ্ছার চাষ। যোগচর্চা আত্মনিয়ন্ত্রন, আত্মবিশ্বাস এবং স্বপ্রভুত্ব বাড়ায়। স্বাধীন বিচার ক্ষমতা বাড়ায়।
“শ্বাস যদি অস্থির হয় তবে মনও অস্থি থাকে, কিন্তু যখন শ্বাস-প্রশ্বাস শান্ত থাকে তখন মনও শান্ত থাকে।”- প্রাচীনযোগের নীতি
১. শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখে:-
মানুষের শক্তির উৎস দুটি। এই দৈহিক শক্তি, দুই মানসিক শক্তি। এই দৈহিক ও মানসিক শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে যোগাসন।
২. মানসিক চাপ কমায় :- নিয়মিত যোগাসন করলে মানসিক চাপ ও ক্লান্তি ভাব নিয়ন্ত্রণে আসে।
৩. রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে বজায় রাখে :- যোগাসনের সাহায্যে শরীরে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সঠিকভাবে প্রবেশ করে। তাই রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে বজায় রাখা যায়। এর ফলে সমস্ত অঙ্গগুলি ঠিক করে কাজ করে ও ত্বকে ঔজ্জ্বল্য আসে।
৪. দৈহিক শক্তি প্রদান :- যথার্থ শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ার ফলে পুরো শরীরে অক্সিজেন পৌঁছায় এবং আপনার শরীরের প্রতিটি কোষে জীবনী শক্তির দ্বারা সিঞ্চিত হয় এবং আপনার সর্বকর্মে প্রাণবন্ততা নিয়ে আসে।
৫. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে :- হাঁপানির টান বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে যোগাসন করার অভ্যাস করুন। এতে ফুসফুসের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে সঠিক ছন্দে আসে ও আরাম পাওয়া যায়।
৬. অতিরিক্ত চর্বি কমাতে :- পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে যোগাসন অত্যন্ত কার্যকরী পন্থা।
৭.হজমের সমস্যা :- গ্যাস হজমের সমস্যায় ভোগেন অনেকই । আর তার জন্যই প্রয়োজন যোগাসন । নিয়মিত যোগাসনের অভ্যাস (পবনমুক্তাসন) গ্যাস, অম্বল ,হজমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমিয়ে খিদে বাড়াতে সাহায্য করবে।
Read More : বাড়িতে অবসাদ মুক্ত থাকতে করণীয় ৮ টি বিষয়
৮.পিঠের ব্যাথা কমায় :- যোগাসন পিঠের ব্যথা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন ৩০মিনিট পিঠ সোজা করে পদ্মাসন করলে খুব শীঘ্রই পিঠের ব্যথার উপশম হয়।
৯. দ্রুত বার্ধক্য কমায় :- যোগাসনের মাধ্যমে শরীরে জমে থাকা টক্সিন বেড়িয়ে যায়, যার ফলে বার্ধক্য
শরীরে চাপ ফেলতে পারে না।
১০. একাগ্রতা বাড়ায় :- শরীর মন ও আত্মার একত্রকরণের মাধ্যমে যোগাসন কোনো একটি বিষয়ের প্রতি একাগ্রতা আনতে সহায়তা করে।
১১.মাসিকের ব্যাথা কমায় :- মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে, নারীদের ডিম্বাশয় ভালো থাকে। ফলে প্রজননক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও মেনোপজ হওয়ার পর এসব জটিলতা দেখা যায় সেগুলো থেকে মুক্তি দেয়।
১২. পজিটিভিটি দান করে :-
প্রতিদিন যোগ ব্যায়াম অনুশীলন করার ফলে স্নায়ুগুলি সজাগ হয় ও শক্তিপ্রদানকারী হরমোন উৎপন্ন হয়। এর নেতিবাচক মনোভাব, বিষণ্নতা দূর হয়ে জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিশক্তি তৈরি হয়।
যোগাসনের সময় ঢিলে ঢালা পোশাক পরা উচিত যাতে যোগাসন আরামদায়ক হয়। এরকম পোশাকে আপনি যোগ ব্যায়ামের যেকোনো ভঙ্গি করতে পারবেন সহজেই। বয়সসীমা নির্বিশেষে যেকোনো বয়সের নারী–পুরুষ যোগাসন করতে পারেন। তবে একা একা অনুশীলন না করে কোনো দক্ষ প্রশিক্ষকের সহায়তা নেওয়া ভালো। শরীরের ওপর অতিরিক্ত জোর দিয়ে অথবা শরীরে ব্যথা নিয়ে যোগাসন করা ঠিক নয়, প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নিয়ম মেনে গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম অনুশীলন খুবই উপকারী। তবে অনুশীলনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সময়ে ব্যায়াম করলে নিজের মন ভাল লাগবে, সে সময়ে করলেই সবচেয়ে ভাল কাজ হয়। সকালে ব্যায়াম করলে দিনটা ভাল ভাবে শুরু হয়। তবে সদগুরু জাগ্গি বাসুদেব বলেন,যোগ সকাল-সন্ধ্যায় অভ্যাস করার জন্য নয়। যোগ হল বিশেষ এক ভাবে বাঁচা। নিজেকে যোগ হয়ে উঠতে হয়। যদি সেটা সকাল-বিকেলের যোগ হয়, তবে বাকি সময়টা জটিলতায় জড়িয়ে থাকা – সেটা যোগ নয়, শুধুই যোগের অভ্যাস।
যোগাসনের উপকারিতা লেখাটি কেমন লাগলো তা আমাদের কমেন্টে জানাও। ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজটি ফল করো।