মোটিভেশন

চাণক্য নীতি মেনে চলে জীবনে সফল হও

3 Minute Read

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে চাণক্যের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা। তিনি একজন বড় পন্ডিত, কূটনীতিবিদ ,দার্শনিক এবং অর্থনীতিবিদ ছিলেন। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে এমন অনেক গ্রন্থ আছে যেগুলো আজ পর্যন্ত মানুষকে সমানভাবে প্রভাবিত করে আসছে । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ চাণক্য-নীতি ‘- যা চাণক্যের লেখা শ্রেষ্ট গ্রন্থ। শুধু কেতাবি গবেষণার বিষয় নয় । চাণক্য-নীতি সত্যি মানুষের জীবনে আজও সমানভাবে কার্যকর । এসো আজ নেওয়া যাক কিভাবে চানক্য নীতি মেনে চলে জীবনে সফল হওয়া যেতে পারে –

১. জ্ঞান :-

চাণক্য বলেছেন জ্ঞান হল মানুষের সেরা সম্পদ। একজন জ্ঞানী ব্যক্তির কদর সর্বত্র। জ্ঞানের জোরে মানুষ এই পৃথিবীর সব কিছু অর্জন করতে পারে। তাই নিজেকে জ্ঞানী করে তোলো। জ্ঞান সৌন্দর্য এবং যৌবনের থেকেও বেশি শক্তিশালী। তবে কখনও জ্ঞানের অহংকারে অন্ধ হওয়া ঠিক বিষয় নয়।

২. সৎ হও কিন্তু বোকা নয় :-

চানক্য নীতি অনুযায়ী পরিস্থিতি বিশেষে সততা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা অনেক সময় বেশি সৎ হতে গিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনি। তাই কিছুটা কৌশলী হতে হবে। সততা মহৎ গুন তাই সৎ থেকো কিন্তু বোকা নয়। কেউ যেন তোমার সততার সুযোগ নিয়ে তোমায় বোকা বানিয়ে চলে না যায়।

৩. নিজের গোপন বিষয় নিজের মধ্যে রাখো :-

চানক্য নীতি অনুযায়ী নিজের গোপন বিষয় অন্যের জনসমক্ষে উঠে এলে অন্যের কাছে উপহাসের পাত্র হতে হয়। সে যদি খুব কাছের মানুষও হয় তবুও তার সাথে আমাদের গোপনীয় বিষয় কখনো শেয়ার করতে নেই। কারণ কি ভরসা আছে যে , সে কথাটি শুধুমাত্র নিজের মধ্যে রাখবে যখন আমরাই সেটা নিজের মধ্যে রাখতে না পেরে তাকে বলছি। আর যখন সেই গোপনীয় বিষয় গুলি ছড়িয়ে পরে তখন তোমার সম্পর্কে অপরের কাছে নেগেটিভ ইমেজ তৈরী হয়। তাই নিজের গোপন বিষয় নিজের মধ্যে রাখা ভালো।

৪. যেকোনো কাজ শুরু করবার আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করো :-

ক. কেন আমি এই কাজটি করতে চলেছি ? খ. এই কাজের ফল কি হবে ? গ. আমি কি এই কাজে সফল হব ? এই তিনটি প্রশ্ন করলে সঠিকভাবে চিন্তা ভাবনা করে জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত গুলি নিতে পারবে।

৫. দুর্বলতা প্রকাশ করতে নেই :-

চানক্য বলেছেন যে সাপের বিষ নেই, সেই সাপের উচিত তার কাছে বিষ আছে সেটা দেখানো। দুর্বলকে পিষেই তো সবলের যাত্রা শুরু হয়। যদি অন্যেরা তোমার দুর্বলতার আভাস পায় তাহলে সে তোমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তোমায় ঠকাতে থাকবে, অন্যের সামনে তোমায় ছোটো করার চেষ্টা করবে। তাই নিজের দুর্বলতা কখনও অন্যের সামনে প্রকাশ করো না।

আরও পড়ুন : বন্ধু এবং বন্ধুত্ব নিয়ে বিখ্যাত কিছু উক্তি

৬. অপরের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত :-

চাণক্য নীতি অনুযায়ী আমাদের উচিত অপরের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া। কারণ আমাদের কাছে অত সময় নেই যে, আমরা প্রথমে ভুল করবো এবং পরে সেই ভুল থেকে শিক্ষা নেবো। নিজের ভুল থেকে অবশ্যই শিক্ষা নেবো কিন্তু যদি অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা নেই তবে যে ভুলটা হয়তো ভবিষ্যতে করতে যাবো সেটা থেকে আগাম সচেতন হওয়া যাবে। সময় যেমন বাঁচবে তেমনি দ্রুততার সাথে জীবনে সফল হতে পারবো।

৭. ভেবেচিন্তে কথা বল :-

চাণক্য নীতিতে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি ভেবেচিন্তে কথা বলেন তাকে কখনও অনুশোচনা করতে হয় না। এই ধরণের মানুষ জীবনে সফলতা অর্জন করে।

৮. মূর্খ ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব নয় :-

চাণক্য বলেছেন একজন মূর্খ ব্যক্তির সাথে আমাদের জীবনে কখনোই বন্ধুত্ব করতে নেই। কারণ তারা সেই সমস্ত দু’পায়ে ভর দিয়ে চলা পশু, যারা তাদের কথার দ্বারা আমাদের অপদস্ত করে আমাদের মনে আঘাত করে। অল্প জ্ঞান অথবা কোনো জ্ঞান না থাকার কারণে তারা কখনোই তোমার ভাবনা চিন্তাকে সম্মান করতে পারবে না। তোমার বলা ভালো কথাকেও তারা ভুল মনে করে তোমায় অপমান করবে। তাই কখনো তাদের উপদেশ দেওয়া উচিত নয় সেটা সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই হবে না । চাণক্য মনে করেন বন্ধুত্ব সর্বদা নিজের লেবেলের কারো সাথে করা উচিত যারা তোমার ভাবনা চিন্তাকে বুঝবে তোমায় উপরের দিকে নিয়ে যাবে।

৯. অর্থ সঞ্চয় করা :-

চাণক্যের মতে যেকোনো ব্যক্তির জীবনে বিপদ যখন তখন আসতে পারে। সেই কথা মাথায় রেখে প্রত্যেক মানুষেরই অর্থ সঞ্চয় করে রাখা উচিত। এটা কখনই ভাবা উচিত নয় যে, একজন ধনবান ব্যক্তির জীবনে বিপদ আসতে পারে না। যখন পর্যাপ্ত ধন শেষ হয়ে যায় তখন সঞ্চিত ধন – সম্পত্তির পরিমান দ্রুত গতিতে হ্রাস পেতে শুরু করে তাই ধন বা অর্থ সঞ্চয় করা প্রয়োজন

১০. শিক্ষার্থীদের নিয়ে চাণক্য যা বলেছেন :-

ক ) একজন শিক্ষার্থীর কখনই ক্রোধ প্রকাশ করা উচিত নয়। কারণ ক্রোধের বসে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

খ ) একজন শিক্ষার্থীর প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বিনোদনে লিপ্ত থাকা উচিত নয় ,কারণ অতিরিক্ত বিনোদনের প্রভাব ক্ষতিকর হতে পারে।
যতটা বিনোদন একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে প্রয়োজন ঠিক ততটাই বিনোদন করা উচিত।

গ ) একজন শিক্ষার্থীর কখনই মূর্খ ব্যক্তির সাথে বেশি কথা বলা উচিত নয় ,কারণ একজন মূর্খ ব্যক্তির জ্ঞান খুবই সামান্য থাকে একজন বিদ্বান ব্যক্তির তুলনায়।

একজন প্রকৃত বন্ধু হলো সেই যে আপনার কোনো প্রয়োজনে, আপনার কোনো দুর্ঘটনায়, দুর্ভিক্ষের সময়, যুদ্ধ লাগলে এবং শেষ সময় পাশে থাকবে।

চাণক্য

লেখাটি ভালো লেগে থাকলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। আর এইধরনের লেখার আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে যুক্ত থাকো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *