শরীর ও স্বাস্থ্য

মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনের ক্ষতি থেকে বাঁচার 5 টি উপায়

4 Minute Read

স্মার্ট ফোনটি হাতে নিয়ে আগে *#07# ডায়াল করে দেখে নাও এর SAR value (Specific Absorbtion Rate ) কত আছে। 2.0 w/kg এর নিচে আছে কি না ।

একটু বিস্তারিত না বললে বিষয়টা বোঝা যাবে না। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর একথা নিশ্চয় অজানা নয় যে , মোবাইল ফোনের জন্য যে নেটওয়ার্ক তার একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা চৌম্বক ক্ষেত্র থাকে । আর ব্যবহারকারী অবশ্যই সেই ক্ষেত্রের আওতায় থাকলেই ফোন এর নেটওয়ার্ক কাজ করে থাকে। তার সঙ্গে থাকে ইন্টারনেট সংযোগ । যার থেকে একটি উন্নত তেজস্ক্রিয় চৌম্বকযুক্ত wave এর আওতায় থাকা রেডিয়েশন বা বিকিরণ মানুষের ক্ষতি করে থাকে ।

আমরা জ্ঞান পাপীর মতো সব জানি সব বুঝি তবু সুদৃশ্য স্মার্ট ফোনের ফাঁদে নিজেকে সঁপে দিয়ে বিষয়টিকে অবহেলা করি । কিন্তু সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললেই আমরা অদৃশ্য অথচ অনিবার্য এই ক্ষতিকর রেডিয়েশন থেকে নিজেকে , নিজের পরিবারকে এবং শিশুদের অনেকটাই রক্ষা করতে পারি ।

এবার আসি SAR value এর কথা । SAR ( Specific Abstention Rate) value হল মানব শরীরে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সহন ক্ষমতা । গবেষকরা জানান মানুষের শরীর প্রতি গ্রাম অংশে এই বিকিরণ ধারনের ক্ষমতা হল 2.0 w/kg । ভারতে USA তে এই মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে 1.6 w/kg । ইউরোপে যা 2.0 w/kg । বাংলাদেশে এখন এ বিষয়ে গবেষণা চলছে বলে নিশ্চয় করে বলা হয় নি । আপনার ফোন এ তাই এই SAR value চেক করার জন্য *#07# ডায়াল করে দেখে নাও । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা , আন্তর্জাতিক ক্যান্সার রিসার্চ সংস্থা সমূহের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বা রেডিয়েশন বিষয়ক গবেষণায় যে সমস্ত বিষয় উঠে এসেছে —- সেগুলি মোবাইল বিক্রয়কারী কোম্পানিগুলো তাদের স্বার্থেই খোলামেলা প্রচার করে না । কিন্তু প্রকৃত তথ্য থেকে যে বিষয়গুলো উঠে আসে তা হল — অতিরিক্ত মোবাইল ফোন , ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে যে ক্ষতির সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা রয়েছে , সেগুলি হল — মাথাব্যথা , উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেন টিউমার , ক্যান্সার , অনিদ্রা , বন্ধ্যাত্ব , গর্ভপাত , পুরুষদের স্পার্ম কমে যাওয়া , মোবাইল হারানোর ভীতি বা নোমোফোবিয়া , খিটখিটে মেজাজ , ধৈর্য কমে যাওয়া ইত্যাদি নানা সমস্যা।

ওই সমস্ত গবেষণার ফল এবং তাদের দ্বারা পরীক্ষিত ( মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের নিয়ে সমীক্ষা ) ফলাফল আজ চিন্তায় ফেলেছে । USA তে 20 কোটি , বাংলাদেশে 10 কোটি , ভারতে ( ICUB 2018 report ) 775.5 মিলিয়ন ( যার মধ্যে স্মার্ট ফোন 430 মিলিয়ন , 2019 য়ে দাঁড়াবে 813.2 মিলিয়ন) মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছেন ।

আরেকটি বিষয় প্রসঙ্গক্রমে চলে আসে তা হলো নোমোফোবিয়া বা no mobile phone fobia অর্থাৎ মোবাইল ফোন হারানোর ভয় । মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী সর্বদা সেটটি হারানোর আতঙ্কে থাকে । এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাটা নেহাত কম নয় । যুক্তরাজ্যে 53% , ভারতে 29% এর শিকার । বাংলাদেশে সেভাবে গবেষণা না হলেও সংখ্যাটা যে বাড়ছে একথা বলার অপেক্ষা রাখে না ।

তাহলে চলে আসি 5-টি বিষযে , যেগুলো মেনে চললে মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর রেডিয়েশন থেকে অনেকটা রেহাই পেতে পারি :

1 . শরীর থেকে দূরে রাখা : –

কানে ফোন নিয়ে কথা না বলে , head phone বা স্পিকার ব্যবহার করে কথা বললে রেডিয়েশন এর ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকটা এড়ানো যায়। ঘুমানোর সময় মুঠোফোনটি দয়া করে বালিশের নীচে না রেখে কয়েক ফিট দূরে রাখতে হবে । চেষ্টা করো কাজ হয়ে গেলে ফোনটি সুইচ অফ করে রাখতে ।

2 . সীমিত ব্যবহার : –

ফোন কানে নিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঘন্টাকে ঘন্টা কথা বলা আজ থেকে বন্ধ করো । পারলে কল ডিউরেশন সেট করে দু বা তিন মিনিট বেঁধে দাও , যাতে নির্দিষ্ট সময় পর একাই কলটি কেটে যাবে । সারাদিনে যতগুলো ফোন কল হয় সেগুলো থেকে বেছে নিয়ে যতগুলো সম্ভব ভয়েস কল বা টেক্সট মেসেজ করে কাজ সারো । প্রয়োজনের অতিরিক্ত ফোন কল দেওয়া বন্ধ করো ।

3 . আবদ্ধ এবং ধাতব ক্ষেত্রে ব্যবহার না করা :-

আবদ্ধ ঘরে , ছোট্ট ফ্লাট-এর রুম-এ কিংবা জানলা বন্ধ করে গাড়িতে বেশি কথা বলবে না। লিফট বা গাড়িতে ফোন চলাকালীন রেডিয়েশনের তীব্রতা প্রতিফলিত হয়ে শরীরে বেশি প্রতিক্রিয়া করে থাকে ।

4 . দুর্বল নেটওয়ার্ক আর Low battery তে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা : –

এটা সাধারণ ঘটনা — নেটওয়ার্ক নেই , খুব দুর্বল নেটওয়ার্ক , কথা কেটে কেটে যাচ্ছে ইত্যাদি । এমন অবস্থায় বা দুর্বল নেটওয়ার্ক এ মোবাইল ফোন এ কথা বলো না । Text massage কিংবা Voice massage এ কাজ সারো । মোবাইলে ব্যাটারি কম থাকলে উচ্চ মাত্রায় রেডিয়েশন নির্গত হয় । খুব জরুরি না হলে এই অবস্থায় ফোন ব্যবহার করো না ।

5 . শিশু , গর্ভবতী নারী ও রোগীদের থেকে দূরে রাখা :-

শিশুদের কোমল শরীরকে মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হলে তাদের থেকে দূরে রেখো । খুব সহজেই শিশুরা স্মার্ট ফোন হাতে পেয়ে সব ভুলে যায় , ওদের জ্বালাতন থেকে বাঁচতে বড়রা এটাই করে থাকে । কিন্তু মনে রেখো সাময়িক আনন্দ ভবিষ্যতের পক্ষে ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে । তাই যতটা সম্ভব শিশুদের কাছ থেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করো । গর্ভবতী নারীদের ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করা বা দীর্ঘক্ষণ ধরে ফোন এ কথা বলা ত্যাগ করতে অনুরোধ করো । আর গর্ভবতী নারী কিংবা যে কোনো রোগীর দুর্বল শরীরে তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব বেশি পড়ার সম্ভাবনা বলে , তাদের খুব সীমিত ও নির্ধারিত সময়ের বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত নয় ।

তাহলে কী করব ? এতসব ক্ষতির সম্ভাবনা জানার পরও কি সব ভুলে যাবো দুদিন পর ? মোবাইল ফোন ছাড়াও তো চলে না একটা ঘন্টাও । এই ধরণের ভাবনা যারা ভাবছ তাদের জন্য ব্যবসায়িক ভাবনায় তৈরি হয়েছে Anti-radiation chip । তবে মনে রেখো এখনো যতদিন না বিজ্ঞানসম্মত ভাবে এগুলির কার্যকারিতা প্রমাণিত হচ্ছে , এগুলোর উপর ভরসা না করাই শ্রেয় ।

খুব ভালো থেকো , সুস্থ থেকো বন্ধুরা । আর হ্যা , লেখাটি ভালো লাগলে আর জীবনে প্রয়োজনীয় বলে মনে হলে তোমার প্রিয়জনদের সঙ্গে share করতে ভুলো না । আমাদের ফেসবুক পেজ এ চলে এসো কথা হবে ।

This Article is Written By

Kishore Majumder
Editor & Writer

Kishore Majumder is the editor and writer of preronajibon. He is a teacher, poet and songwriter of bengali culture. He is also well-known as a youtuber and reciter of bengali poetry . He likes to inspire others to live a better life.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *