শরীর ও স্বাস্থ্য

ক্যালসিয়ামের অভাবে ভুগছেন না তো ? ৬টি লক্ষণ দেখে ক্যালসিয়ামের অভাব আছে কি না জেনে নিন

3 Minute Read

হাড়ের গঠনে ক্যালসিয়াম নামক খনিজ উপাদানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি হার্ট এবং শরীরের অন্যান্য পেশীগুলোর কার্যকারিতা ঠিক রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটির অভাবে হাড়ক্ষয় বা অস্টিওপোরাসিস রোগ হতে পারে। আমাদের শরীরের শতকরা ৯০ ভাগ ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড়ে জমা থাকে। যদি ক্যালসিয়াম কমে যায় তবে দাঁত ও হাড় ব্যথা করতে পারে। এমনকি শিশুদের ক্ষেত্রে শারীরিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হচ্ছে কিনা সেটি নির্ণয় করা জরুরি।বেশকিছু মেডিক্যাল গ্রাউন্ড থেকে নেওয়া তথ্য অনুসারে ৬টি লক্ষণ থেকে বোঝা যায় শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে কিনা।

তাহলে চলুন দেখে নেই সেই ৬টি লক্ষণ যা দেখে বোঝা যাবে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে :-

১. পেশীতে নানা সমস্যা :-

অনেকসময় দেখা যায় শরীরের পেশী অংশে খিঁচুনি কিংবা ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি যাদের তারাই পেশি ব্যথা, ক্র্যাম্প এবং খিঁচুনি অনুভব করে থাকেন। নড়াচড়া করার সময় উরু ও বাহুতে ব্যথা ছাড়াও হাত, পা ও মুখের চারপাশে একরকম আড়ষ্টতা অনুভূত হতে পারে। এ রকম সমস্যা হলে ক্যালসিয়ামের অভাব বোঝা যায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ক্যালসিয়াম গ্রহন করার ব্যবস্থা করা দরকার।

২. ক্লান্তিবোধ :-

বিশেষ করে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ ও অলসতা আসতে পারে । একই কারণে অস্বস্তি বোধ কিংবা অনিদ্রাও দেখা দিতে পারে। সামান্য মাথাব্যথা, মাথা চক্করের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে মনোযোগের অভাব, ভুলে যাওয়া, বিভ্রান্তি প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩. অস্টিওপেনিয়া এবং অস্টিওপরোসিস :-

অস্টিওপেনিয়া এমন একটি অবস্থা যেখানে হাড়ের ঘনত্ব কম হয়, যার ফলে হাড় স্বাভাবিকের তুলনায় দুর্বল হয়। অস্টিওপেনিয়া 
অস্টিওপরোসিসের সম্ভবনা বৃদ্ধি করে এবং হাড় ভাঙ্গার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। সামান্য কোনো কারণে বা কারণ ছাড়াই হাড় ভেঙে গেলে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বুঝতে হবে ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে । এমতাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পদক্ষেপ নির্ধারণ করতে হবে ।

৪. ভঙ্গুর নখ :-

হাড় ক্যালসিয়াম ভালোভাবে সঞ্চয় করে। আর যখন শরীরে ক্যালসিয়ামের সামগ্রিক মাত্রা কম থাকে, তখন শরীর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম শুষে নেয়। এ কারণে যেমন হাড় ভঙ্গুর এবং আঘাত প্রবণ হয়ে ওঠে তেমনি নখও খুব সহজেই ভেঙে যায় । কাজেই নখের দৃঢ়তা কমে গেলে বা ক্ষণভঙ্গুর অবস্থা হলে বুঝে নিতে হবে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে।

৫. দাতেঁর সমস্যা :-

মানুষের শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে তা দাঁতের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। দাঁতের ক্ষয়, সহজ ভঙ্গুরতা, মাড়ি খিটখিটে এবং দাঁতের বন্ধন দুর্বল হয়ে যাবার ফলে দাঁত ব্যথা হতে পারে। ক্যালসিয়ামের অভাব বোঝার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ ।

৬. হতাশা ও বিষণ্ণতা :-

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ক্যালসিয়ামের অভাবের থেকে হতাশা বিষণ্ণতা, মেজাজ খারাপ হওয়ার মতো সমস্যাগুলি সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই কোন কারণ ছাড়াই হতাশা ও বিষণ্ণতা ক্যালসিয়ামের অভাব বোঝার জন্য একটি সিগনাল হতে পারে ।

জেনে রাখো : হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ কী ? উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের উপায়

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কী কী কারণে হতে পারে :-

অল্প বয়সে সাধারণত ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা যায় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ৪০ বছর বয়সের পর থেকে ক্যালসিয়াম ঘাটতির একাধিক উপসর্গ প্রকাশ পায়। প্রশ্ন হল কেন এই ঘাটতি ? মেডিক্যাল সাইন্স অনুসারে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কিছু সহজ তথ্য এখানে তুলে ধরা হল ।


১. খাবারে ক্যালসিয়ামের অভাব :-

কেউ যদি দীর্ঘ সময় ধরে ক্যালসিয়াম না গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে তাঁর শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এমন কি শিশু বয়সে সঠিক মাত্রায় ক্যালসিয়াম গ্রহণ না করলেও তা পরবর্তী সময়ে অভাবজনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

২. ওষুধের প্রভাব :-

বর্তমানে অনেক ওষুধ রয়েছে যেগুলি শরীরে ক্যালসিয়ামের পরিমান কমিয়ে দেয়। আবার দেখা যায় সেইসব ওষুধের সঙ্গে সঠিকমাত্রায় ক্যালসিয়ামের ক্ষতি পূরণের জন্য সাপ্লিমেন্টারি বা উপযুক্ত খাবার না গ্রহণ করার জন্য ক্যালসিয়ামের অভাব থেকেই যায় ।

৩. শারীরিক বিভিন্ন কারণ :-

ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার গ্রহণ না করলে শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা যেমন কমে যায়; তেমনি অনেকের শরীরে ক্যালসিয়াম সঞ্চিত বা সংরক্ষিত হতে পারে না। কখনো কখনো খাবার থেকে ক্যালসিয়াম আহরিত করতে না পারার কারণেও ক্যালসিয়ামের অভাব হতে থাকে।

৪. হরমোনাল সমস্যা :-

বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনের একাধিক তারতম্যের কারণে শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে। এজন্য নারীদের উচিত পুরুষদের থেকে তুলনামূলক বেশি মাত্রায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। এমনকি, মধ্যবয়সের পর থেকেই নারীদের ক্যালসিয়াম তুলনামূলক বেশি খাওয়া উচিত। বিশেষ করে নারীদের মেনোপোজ শুরু হওয়ার আগেই। কারণ মেনোপোজ হরমোনের ক্ষরণ কম হওয়ার কারণে মহিলাদের হাড় দ্রুত ক্ষয় হতে শুরু করে।

ক্যালসিয়ামের অভাবে কী কী ঝুঁকি থাকে :-

মানুষের শরীর নানা জটিল উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত । আবার প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে ওই জটিলতারও বৈচিত্র রয়েছে । তাই ক্যালসিয়ামের অভাবে নানান সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে । মোটামুটি ভাবে বলা যায় ক্লান্ত বোধ করা, বন্ধ্যাত্ব, মৃগীরোগ, নিদ্রাহীনতা, মাড়ির রোগ, স্কিনের শুষ্কতা, ছানি পড়া, বুকে ব্যাথা, হাত অবশ হওয়া, খিদে না পাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও হাড়ের নানা সমস্যার ঝুঁকি থাকে ।

ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করতে উপযুক্ত খাবার :-

শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন খাবার খাওয়া প্রয়োজন। দুধ, দই, পনির, কাঁচা বাদাম, সয়াবিন, আখরোট, সামুদ্রিক মাছ, কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, কালো ও সবুজ কচুশাক, শজনেপাতা, পুদিনাপাতা, সরিষাশাক, কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, চিংড়ি শুঁটকি, ডুমুর ইত্যাদি হলো উচ্চ ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার। শুকনো এপ্রিকট, খেজুর, বাদামেও বেশ ভালো পরিমাণেই ক্যালসিয়াম মেলে৷ এই খাবারগুলি নিয়ম করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকেরাখলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।তবে সতর্কতার বিষয় হল অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে উল্টো প্রতিক্রিয়া হতে পারে। তাই সর্বদা পুষ্টিকর কিন্তু পরিমিত খাবার গ্রহণ করা উচিত।

আশা করি বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি থেকে কিছুটা হলেও উপকার পাওয়া গেছে। লেখাটি কেমন লাগলো তা আমাদের কমেন্টে জানান। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের সাথে যুক্ত থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *