শরীর ও স্বাস্থ্য

কীভাবে বুঝবো আমাদের কিডনি সুস্থ আছে কিনা ?

3 Minute Read

আমাদের কিডনি বা বৃক্ক যখন স্বাভাবিক ক্রিয়া বন্ধ করে দেয় তখন আমরা তাকে কিডনির রোগ বলি । সেই কিডনির রোগ কখনো নিয়ন্ত্রণ-রেখা পেরিয়ে একেবারে কিডনি বিকলের দিকে চলে যায় । সাধারণ কিডনির রোগকে আমরা দুটি স্টেজে চিহ্নিত করতে পারি।

  • Acute kidney injury ( AKI)
  • Chronic Kidney disease (CKD)

1. Acute kidney injury ( AKI):-

এটি হল কিডনির প্রাথমিক ও সাধারণ পর্যায়ের কিডনির রোগ । অনেক সময় শরীর থেকে অত্যধিক রক্তক্ষরণের ফলে কিংবা ডায়াবেটিসের কারনে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে । আবার কারও হয়তো অক্লান্ত পরিশ্রম ও দৌড়ঝাঁপ করার ফলে এই প্রাথমিক পর্যায়ের অ্যাকুইট কিডনি ইনজুরি হয়ে থাকে । আবার কখনো কখনো খুব বেশি বেশি ব্যাথার ট্যাবলেট বা অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কিডনি খারাপ হতে পারে । প্রাথমিক পর্যায়ে যদি এর চিকিৎসা না করা হয় তাহলে তা ধীরে ধীরে কন্ট্রোলের বাইরে চলে যাবে ।

2. Chronic Kidney disease (CKD) :-

ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ হল এই রোগের অন্যতম কারণ । ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে প্রায় ৪০-৫০% এই কিডনির রোগে ভোগেন । এই পর্যায়ে কিডনির রোগ দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে । বংশগত কিংবা মায়ের গর্ভেই কিডনির গঠনগত অস্বাভাবিকতার ফলে এই রোগ হয়ে থাকে ।

জেনে রাখুন : প্রতিদিন কতটা জল পান করা উচিত

কিডনির রোগের লক্ষণগুলি হল :

১) প্রস্রাব কম ও ঘনঘন হওয়া :-

প্রস্রাব ঘনঘন এবং পরিমাণে কম হলে বুঝতে হবে যে কিডনির কোনোরকম সমস্যা হচ্ছে , তাই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত ।

২) প্রস্রাব করার সময় জ্বালা অনুভব করা :-

প্রস্রাব করার সময় জ্বালা অনুভব করলে বা প্রস্রাবের সাথে রক্ত এলে বুঝতে পারবে যে কিডনিতে কিছু একটা অসুবিধা হচ্ছে ।

৩) কম বয়সে উচ্চরক্তচাপ :-

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের উচ্চ রক্তচাপ , এই স্বল্প বয়সে অধিক রক্তচাপ কিন্তু কিডনির রোগকেই প্রাথমিকভাবে নির্দেশ করে ।

৪) ঘুম থেকে উঠে চোখমুখ ফুলে যাওয়া :-

এমনিতেই ঘুম থেকে উঠে দেখতে পাওয়া যায় সকলেরই অল্পস্বল্প চোখমুখ ফুলে যায় এটাই স্বাভাবিক কিন্তু যখন ঘুম থেকে উঠে দেখবে যে অস্বাভাবিক ভাবে চোখমুখ ফুলে যাচ্ছে তখন সেটা কিডনির রোগের লক্ষণ হতে পারে ।

৫) শরীরে রক্ত কমে যায় ও ফ্যাকাশে হয় :-

কিডনির রোগের ফলে দেহের রক্ত কমতে কমতে দেহে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় এবং শরীর রক্তাভাবে ফ্যাকাশে হয়ে যায় ।

৬) খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া :-

একদিকে ঘনঘন প্রস্রাব হচ্ছে আর অন্যদিকে ধীরে ধীরে খাওয়ার রুচি কমে যাচ্ছে বুঝতে হবে তোমার কিডনিতে কিছু একটা সমস্যা হতে পারে ।

৭) পিঠের পিছনে ব্যাথা :-

কিডনি ডিজিসের ফলে ব্যাক সাইডে অনেক সময় ব্যাথ্যা অনুভূত হয়ে থাকে ।

৮) সব সময় শীত শীত অনুভূতি :-

শরীর ঝিমঝিম করবে এবং সবসময় একটা স্যাঁতস্যাঁতে অনুভূতি ও শীত শীত লাগতে পারে কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে ।

কিডনি সুস্থ রাখতে আমাদের কী করণীয় :-

I) প্রতিদিন ৮ – ১০ গ্লাস জল পান করতে হবে ।

II) ডায়বেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ।

III) প্রচুর পরিমাণে শাক-সব্জি ও ফলমূল খাওয়া দরকার ।

Iv) নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে ।

V) অ্যালকোহল একেবারে পরিত্যাগ করতে হবে ।

VI) নিয়ম মাফিক অর্থাৎ রুটিন মাফিক জীবন যাপনে নিজেকে অভ্যস্ত করে তোলা প্রয়োজন ৷

VII) শর্করা অর্থাৎ মিষ্টি জাতীয় খাবার কমিয়ে দেওয়া বা পরিত্যাগ করা উচিত ৷

সুতরাং বন্ধুরা নিজের শরীরকে সুস্থ রাখার চাবিকাঠি আসলে আমাদের হাতে । আসলে শরীরের প্রতি যত্নের অবহেলার ফলেই , আমরা কঠিন সব অসুখের শিকার হই ৷ আমাদের শরীরের একটি গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি , একে স্বাভাবিক ও সচল রাখতে হলে , এই সব নিয়মগুলো মেনে চললেই ,আমাদের কিডনিকে আমরা ভালো রাখতে পারবো ৷ সুতরাং একদমই অবহেলা নয় , সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে হলে , সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী হতেই হবে ৷

আশা করি লেখাটি কাজে আসবে তোমাদের । আরো অনেক বিষয় নিয়ে লেখা পড়তে চাইলে এখুনি আমাদের ফেসবুক পেজে চলে এসো । ভালো থেকো , সুস্থ থেকো ।

This Article Is Written By

Nishith Kumar Sen
Writer

কবি – সম্পাদক “অন্বেষণ” পত্রিকা

আমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র । আমি সুন্দর সুশীল এক সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি । আমি লিখতে ভালোবাসি ও কবিতা- গল্প -প্রবন্ধ পড়তে ভালোবাসি।

Share
PreronaJibon