শরীর ও স্বাস্থ্য

প্রতিদিন কতটা এবং কীভাবে জল পান করা উচিত ৷

4 Minute Read

আমরা সবাই জানি ,জলের আর এক নাম জীবন ৷ কেননা , অনেক কিছু ছাড়াই পৃথিবীতে বেঁচে থাকা সম্ভব ,কিন্তু জল ছাড়া অসম্ভব । সাধারণ খাদ্যের যে ছয়টি উপাদান (কার্বহাইড্রেট ,প্রোটিন ,ফ্যাট ,ভিটামিন ,মিনারেল) তারমধ্যে জলও কিন্তু একটি উপাদান হিসেবে স্বীকৃত ৷ সুতরাং আমরা এই জল কীভাবে পান করব , সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক৷

এই জল পান নিয়ে আমাদের অনেকের অনেক ভুল ধারণা আছে ৷ আমরা ভাবি হয়তো বেশি বেশি জল পান করলে , আমরা অনেক বেশি সুস্থ থাকব ,ভালো থাকব ৷ কিন্তু এটা সম্পূর্ণই ভূল ধারণা । বরং চলো ,আজ জলপান নিয়ে কিছু সংশয় ও ভুল ধারণার অবসান ঘটাবার চেষ্টা করি ৷

১.প্রতিদিন ঠিক কতটা জল পান করবে :

সরাসরি একটা বিষয় জেনে নেওয়া ভালো , প্রতিদিন (৮—১০) গ্লাস জল আমাদের পান করা উচিত । যার পরিমান হবে (২—২.৫০ লিটার) | সাধারনভাবে জল পানের ক্ষেত্রে চারটি জিনিস কিন্তু মাথায় রাখতে হবে ৷ অর্থাৎ একটি মানুষের জলপান নির্ভর করে চারটি বিষয়ের উপর৷

  • i) বয়স ।
  • ii) তার ওজন ৷
  • iii) সারাদিনের কাজকর্ম ৷
  • iv) রোগ-ব্যাধির পরিস্থিতি ৷

যেমন ধরো , একজন সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ওজন ৭০ কেজি , তিনি প্রতিদিন রোদে কাজ করেন , প্রচুর পরিমানে ঘাম ঝরে৷সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির রোজ , কমপক্ষে (২.৫০ থেকে ৩ লি:) জলের প্রয়োজন ৷ আর শারীরিক কোনো ব্যাধি ,যেমন কিডনির সমস্যা থাকলে , সেই ব্যক্তিকে ডাক্তারি পরামর্শে জলপান করা আবশ্যক । সেক্ষেত্রে জলপানের পরিমানের তারতম্য হবে ।

২.কীভাবে বুঝবে , তোমার জলপান সঠিকভাবে হচ্ছে :

তোমার শরীরে জলপান প্রয়োজনের তুলনায় কম হচ্ছে অথবা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হচ্ছে , এই বিষয়টি বোঝার একটি সহজ উপায় রয়েছে ৷ সাধারনত মনে রাখবে মানুষের ইউরিনের রঙ উজ্জ্বল হলুদ (light yellow) হয় ৷ শরীরে জলপানের পরিমান যদি কম হয় , তবে তোমার ইউরিনের রঙ গাঢ় হলুদ হয়ে যাবে(deep yellow) । তবে মনে রাখবে ,অনেক সময় কোনো মেডিসিন নেওয়ার কারণেও ,ইউরিনের রঙ গাঢ় হলুদ হয় ৷ আর যদি জল পানের আধিক্য বেশি মাত্রায় হয় , তবে ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ ও মূত্রের রঙ হবে সাধারন জলের মতো । এই সাধারণ বিষয়গুলোর মাধ্যমেই তুমি বুঝবে , তোমার জলপান ঠিকঠাক হচ্ছে কি না ।

৩. কোন কোন সময় জলপান করবে :

আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি না , কোন কোন সময় জল পান করা উচিত ৷ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে একটি দারুন তত্ত্ব রয়েছে । সেখানে বলা হয়েছে , ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার আগে ,দু-গ্লাস জল পান করা অনিবার্য । কেননা , সারারাত ধরে আমাদের মুখের ভেতর যে ‘এনজাইম’ গুলো জমে থাকে ,তা জল পানের মাধ্যমে আমাদের পেটে গেলে ,হজমের জন্য দারুন কার্যকারী ভূমিকা পালন করে ৷ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এই ‘এনজাইম’ গুলো সোনার চেয়েও মূল্যবান বলা হয়ে থাকে ।

এছাড়া খাবার খাওয়ার অন্তত আধঘন্টা আগে ও পরে ৷ এছাড়া সারাদিনে কিছুক্ষণ পর পর জল পানের মাধ্যমে , দেহের জলের চাহিদা মেটাতে হবে৷

how much water you should drink in a day

৪.কোন কোন সময় জল পান করবে না :

নির্দিষ্ট কতগুলো সময়ে তোমাকে জল পান থেকে একদমই বিরত থাকতে হবে৷

i) খাবার সময় : কড়াইয়ে রান্না বসানোর পর , যদি কেউ একটু পর পর রান্নায় জল ঢেলে দেয় ,স্বভাবতই সেই রান্না ঠিকঠাকভাবে সেদ্ধ হবে না ৷ ঠিক তেমনি ,খাওয়ার মাঝে যদি একটু একটু জল পান করতে থাকো , তবে পেটের মধ্যে সে খাবার পরিপাক হবার ক্ষেত্রে বাধাপ্রাপ্ত হয় ৷ ফলে গ্যাস ,অম্বল ,ও নানারকম পেটের সমস্যা হতে পারে ৷

ii) টয়লেট থেকে আসার পর : সকালে ঘুম থেকে উঠে টয়লেট থেকে আসার পরেই জল পান না করাই উচিত ।কেননা , সে সময় শরীরের অনেক পেশি একেবারে শিথিল থাকে ৷ ফলে জল পান করলে , সে জল শরীরের কোনো কাজে তেমন লাগে না ৷ ফলে কিছুটা সময় পরেই , ইউরিনের মাধ্যমে সে জল বাইরে বেরিয়ে যাবে ।

iii)রাতে ঘুমানোর আগে : রাতে ঘুমানোর আগে ,জল পান না করাই ভালো ৷কেননা , কিছুক্ষণ পর যখন তুমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হবে ,হয়তো হঠাৎই জল পান করার ফলে ,ঘুমের মধ্যে ইউরিনের চাপ হতে পারে ৷ ফলে ঘুম ভেঙে গিয়ে , ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে । তাই জল পান শোবার একঘন্টা আগে করাই ভালো ৷

৫. কীভাবে জলপান শরীরের পক্ষে উপকারী :

এবারে চলো দেখে নেওয়া যাক , কীভাবে তুমি জল পান করবে :


i) জল তুমি বোতলে খাও কিংবা গ্লাসে খাও ৷ মনে রাখবে , যখনই তুমি জল পান করবে ,অবশ্যই গ্লাসে বা বোতলে মুখ লাগিয়ে জল পান করবে ৷

ii) যখনই জল পান করবে অবশ্যই বসে জলপান করবে । কারণ , দাঁড়ানো অবস্থায় জল পান করলে অনেকগুলো সমস্যা হবার সম্ভাবনা । কিডনির সমস্যা , নার্ভের সমস্যা থেকে অর্থ্রারাইটিস পর্যন্ত হতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে । আমাদের দাঁড়ানো অবস্থায় জোলশোষক জালিকাগুলি সংকুচিত থাকে , ফলে জলের ক্ষতিকর উপদানগুলিও ভেতরে প্রবেশ করে ক্ষতি সাধন করে । আর দাঁড়িয়ে জলপান করলে জল জোর গতিতে পাকস্থলীতে ধাক্কা মারে এবং পাকস্থলীর পর্দাকে আঘাত করে , পরে যা অনেকগুলি সমস্যার কারণ হতে পারে ।

iii) পথ চলতে চলতে যদি বোতলে জল পানের অভ্যাস থাকে , তাহলে আজই বন্ধ করে দাও । পরিবর্তে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে বসে ,দুমিনিট সময় নিয়ে শান্তিতে জল পান করো ৷

iv) জল পানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মারাত্মক ও ক্ষতিকারক একটি অভ্যাস হল , অনেকক্ষণ পর জল পান করা ও মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে জল পান করা ৷ আমাদের শরীরে জল ধরে রাখার একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে ৷ তাই অধিক পরিমান জল পানে ,আমাদের শরীরের রক্তে জলের আধিক্য ঘটে ৷ ফলে রক্তের ইলেকট্রোলাইট সমুহ ,বিশেষত সোডিয়ামের ঘনত্ব কমে যায় । কোষের ভেতর জল ঢোকে এবং কোষ ফুলতে থাকে । একসাথে অধিক জলপানকে বিজ্ঞানের ভাষায় , ”ওয়াটার পয়জনিং” বলা হয় ।

৬. যুবক-যুবতীদের জন্য বিশেষ টিপস :

মনে রাখবে , এডাল্ট বয় থেকেই কিন্তু শরীরে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল । বিশেষত বংশগত (heridity) যে সমস্ত রোগ রয়েছে ।কেননা , এই সময় তারা যথেষ্ট বে-হিসেবি-বেপরোয়া-উদাসীন হয় ৷ রাস্তা ঘাটে বের হলেই বন্ধু বান্ধবদের সাথে বিভিন্ন খাবার খাওয়া । পাশাপাশি চা ,কফি , কোলড্রিঙ্ক জাতীয় পানীয় পান করে ৷ একটা কথা মনে রাখবে ,তুমি রোজ দু-লিটার জল পান করছ ,তারসাথে দিনের বিভিন্ন সময় চা , কফি, কোলড্রিঙ্কস পান করছ ৷ এই সবটা মিলে কিন্তু , তোমার সারাদিনের তরল পানের হিসেব ।

৭. কী ধরনের জল পান করবে :

বাইরে থেকে গরমে এসেই , ফ্রিজের ঠান্ডা জল অথবা শীতকালে গরম জল পান — এটাই আমরা করে থাকি ৷ কিন্তু সবসময় জল পান করতে হবে , শরীরের তাপমাত্রার চার ডিগ্রী কম তাপমাত্রার জল ৷ অর্থাৎ যাকে বলে “রুম টেম্পারেচার“৷

সুতরাং জল পানের ক্ষেত্রে এসব বিষয়গুলো নিয়ম করে মেনে চললে , অবশ্যই শরীর ও স্বাস্থ্যে সুদূর প্রসারী ভালো ফল তুমি পাবেই পাবে । মোটকথা তুমি ভালো থাকবে । আমাদের ফেসবুক পেজ এ এস কমেন্ট করে জানাও আরো কোন কোন বিষয় তোমরা জানতে চাও বা কী ধরণের লেখা চাও । সঙ্গে থেকো ।

This Article is Written By

Mithun Roy
Writer - Contributor

3 thoughts on “প্রতিদিন কতটা এবং কীভাবে জল পান করা উচিত ৷

  • একেবারেই সঠিক । প্রতিটা জিনিসি মাত্রার অতিরিক্ত হলে তা শরিরের জন্য ক্ষতি।। আপনার পোস্টটি আমার অনেক উপকার করল।।

    Reply
    • SHEKHAR RAY

      Your suggestions have me to boost my knowledge which I want to apply in my daily routine.
      Thanks.

      Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *