শরীর ও স্বাস্থ্য

মস্তিষ্ককে চনমনে রাখবে যে ৮টি খাবার

5 Minute Read

এই বিশ্বে মানুষই সকল প্রাণীর উপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে তার মস্তিষ্কর জন্য । সত্যি ভেবে দেখো তো আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক সারাদিন কত কাজ করে । দেখতে পাই না বটে , কিন্তু সমস্ত কাজই কিন্তু পরিচালিত হয় এই মস্তিষ্কর দ্বারা । আর এটা ভেবে দেখো তো আমরা এই মস্তিষ্কর জন্য কী কী যত্ন নিই ? ভেবে পাচ্ছ না তো ! বুঝিয়ে বলি । আমাদের শরীরের সমস্ত শক্তি উৎস হল খাবার । তাহলে দেখ আমরা যে সব খাবারে মস্তিষ্কর গঠন মজবুত হবে , যা যা খাবারে মস্তিষ্কর নানা উপাদানগুলো সতেজ রাখার বিভিন্ন উপাদান পাব — সেইসব খাবার কি প্রতিদিনের তালিকায় রাখি ?

এই বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী হল মানুষ। মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে নিজের অস্তিস্ত্ব বজায় রেখেছে মস্তিষ্কের জোরেই। সমুদ্র থেকে মহাকাশ , এভারেস্ট থেকে আমাজন সব স্থানেই মানুষের আধিপত্য একমাত্র মস্তিষ্কের জোরেই। মানুষ মানুষকে দাম দেয় এই মাথার জন্যই । আর মানুষের এই মাথা বা এর মূল উপাদান মস্তিষ্কের উর্বরতার উৎস হল আমাদের বিভিন্ন খাবারগুলি। তাই দেখা যায় যত মানুষ তার মাথার কাজও নানারকম। মানুষ প্রত্যেকেই এক একজন সৃজনশীল ব্যক্তি। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মত বিষয়গুলিও এই মস্তিষ্কের মধ্যেই ধরা দেয়।
আর মানুষ কিনা এই মস্তিষ্ককে তার উপযুক্ত যত্ন না করে অবহেলায় তার অমর্যদা করছে। তাই খুব জানা প্রয়োজন যেসব খাবার আমাদের এই মস্তিষ্ককে সতেজ বা সুস্থ রাখবে ।

বার্লিনের পুষ্টিবিজ্ঞানের গবেষক জানিয়েছেন , চকোলেট, স্ন্যাকস , মিষ্টিজাতীয় খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে ক্রমশঃ । যা মস্তিষ্কের পক্ষে মোটেও ভালো নয় । কারণ এইসব খাবারের গ্লুকোজ খুব দ্রুত রক্তে মিশে যায় আর মস্তিষ্ককে দ্রুত উত্তেজিত করে । সাময়িক ভাবে মনে হতে পারে ভালোই তো হচ্ছে । কিন্তু গ্লুকোজের কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেলেই আবার দ্রুত মস্তিস্ক নিস্তেজ হয়ে পড়ে । ফলে একটা হতাশা বা নিঃস্পৃহতা চলে আসে । যদি এই চনমনে ভাবটি দীর্ঘস্থায়ী করতে হয় তবে মিশ্রকার্বহাইড্রেড , ভিটামিন এ, বি, সি , ই ( A,B,C,E ) এবং কিছু খনিজসমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজন । বিশেষভাবে প্রয়োজন আন্টি অক্সিডেন্ট , ওমেগা থ্রি , ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার । তো বন্ধুরা এস জেনে নিই প্রতিদিনের সহজলভ্য কোন কোন খাবার খেলেই আমাদের মস্তিস্ককে তরতাজা ও সুস্থ থাকবে।

১. ডিম :

American Journal of Clinical Nutrition এ প্রকাশিত একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় অন্ততঃ একটি করে ডিম রাখলে শরীরে উপকারী উপাদানগুলোর মাত্রা বাড়তে থাকে আর ব্রেইন সেলগুলিকে শক্তিশালী করে তোলে । ডিমের ভেতরে থাকা কলিন, Docosahexonic acid শরীরে যোগ হলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। এছাড়াও ফ্যাটি এসিড , Vitamin A , B12 , selenium সহ বিভিন্ন প্রোটিন উপাদান দারুন মস্তিস্কর জন্য খুব কার্যকরী । বয়স 6+ হলেই সপ্তাহে 6টি করে ডিম খাওয়া যেতে পারে। ডিম এককথায় ……

* স্মৃতিশক্তি বাড়ায় * বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা বাড়ায় ।

২. মাছ :

মাছ বাঙালির কতটা প্রিয় — সে কথা বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন সহজলভ্য মাছ কিংবা বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছে থাকা ওমেগা থ্রি , ফ্যাটি এসিড , ফসফরাস সহ নানা খনিজ মস্তিষ্কের গঠগত উপাদান গঠন করে । নতুন সেল তৈরি করতে সাহায়তা করে। মাছ বেশি খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।

৩.দুধ :

“দুধ না খেলে হবে না ভালো ছেলে “— এই চেনা বিজ্ঞাপনের সূত্রেই বলা যায় সুষম খাদ্যের তালিকায় দুধ ১নম্বরে আছে। NDTV তে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে দুধ প্রাপ্ত বয়স্কদের মস্তিষ্কের কাজকে তরান্বিত করে। দুধে থাকা glutathione নামক আন্টি অক্সিডেন্ট মানুষের ট্রেস বা হতাশাকে প্রতিহত করে । এছাড়া দুধ স্মৃতিশক্তিও বাড়িয়ে দেয় । তাছাড়া নানা পুষ্টিগুণ সম্পন্ন দুধ ক্ষুধা দূর করে মাথাকে অযথা অন্যমনস্ক
হওয়ার থেকে রক্ষা করে।

৪.শাক (পুঁই, পালং, লাল শাক) :

পালং পুঁই শাকের মতো সহজলভ্য শাকগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমান আন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা আর স্মৃতিশক্তি দুটোই বৃদ্ধি করে। ভিটামিন ও বেশ কিছু মিনারেল পাওয়া যায় এইসব শাকে যেগুলি অন্যান্য কাজ তো করেই মানুষের মস্তিষ্কের গঠনগত কোষের কার্যক্ষমতাও বাড়াতে পারে। অনেকে মনে করেন পালং এবং পুঁই শাক মহিলাদের ক্ষেত্রে খুব ভালো কার্যকরী। ভিটামিন সি পড়াশুনা মনে রাখার মতো স্মৃতিধারকের কাজে উন্নতি ঘটায়, ভিটামিন ই ডোপামিন হরমোনের ক্ষেত্রে কাজ করে যা মস্তিষ্কে তথ্য প্রবাহে দ্রুততা আনে। লাল শাকে থাকা বিটা ক্যারোটিন স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায় ।

৫.স্যালাড (গাজর, টমেটো) :

গাজরে থাকে উচ্চমাত্রার লুটিওনিন , যা স্মৃতিক্ষয় রোধ করে। inflammation বা প্রদাহ তো কমায়ই উপরন্তু মস্তিষ্কের স্মৃতিধারক কোষকে সজীব করে রাখে। স্যালাড এর সঙ্গে যদি টমেটো রাখা যায় তাহলে খুব ভালো। টমেটোতে থাকা পটাসিয়াম রক্ত চলাচলকে স্বাভাবিক করে। ফলে স্ট্রোক এর সম্ভাবনা কমে। গ্লুটামিক এসিড মানুষকে সুস্থ স্বাভাবিক থাকতে সাহায্য করে। একটা বড় গুন হলো রান্না করলেও টমেটোর পুষ্টিগুণ কমে না ।

৬.লেবু:

ফল হলেও লেবুর আলাদা গুরুত্বের কথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। লেবুর রসে অনেকটা পটাসিয়াম থাকে , যা বিষণ্ণতা ও উৎকণ্ঠা দূর করে। আর শরীরকে ও মনকে চনমনে রাখতে এর তুলনা নেই। লেবুর ও অন্যান্য উপকারিতার কথা তো সকলেরই জানা। পড়াশুনায় ক্লান্ত হয়ে গেলে একটু ঠান্ডা ও স্নিগ্ধ বিশ্রাম দিতে হলে একটু লেবু জল খেয়ে নাও। এতে মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকবে সেইসঙ্গে পড়াও বেশি মনে থাকবে।

৭. ফল (স্ট্রবেরি , কালোজাম , কলা, কাঠবাদাম):

কলা একটি জনপ্রিয় ও সহজলভ্য ফল। কলায় থাকা প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে ।তাই মানুষের ব্রেইন সতেজ রাখতে কলার জুড়ি নেই । লেবুজাতীয় ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল গুলি আমাদের শরীরকে যেমন তরতাজা রাখে তেমনি সক্রিয় রাখে মস্তিস্ককেও। অবসাদ দূর করে মাথা ঠান্ডা রাখতে এইসব ফলগুলির জুড়ি নেই। স্ট্রবেরি ,কালোজাম সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। Alzheimer সমৃদ্ধ স্ট্রবেরি ব্রেন এর রোগ প্রতিরোধ করে ও কোষের ক্ষয় রোধ করে। কাঠবাদাম-এ থাকা ওমেগা থ্রি মস্তিষ্কের স্বাভাবিকতা বজায় রাখে আর স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমায়।

৮. গ্রীন টি :

চা খাওয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের মতভেদ রয়েছে কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে গ্রিন টি খেলে চায়ের যত উপকারিতা সেগুলো মানুষ পেয়ে থাকে । গ্রীন টি তে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , যা মানুষের শরীরকে এবং মস্তিষ্ককে তরতাজা রাখে এছাড়াও মস্তিষ্কের কোষের ক্ষয় থেকে রক্ষা করে গ্রীন টি। মস্তিষ্কের উদ্বেগ কমাতে গ্রীন টি-তে থাকা এল থিয়ামিন মুখ্য ভূমিকা পালন করে । এছাড়া গবেষণায় প্রমাণিত যারা নিয়মিত
গ্রীন টি পান করে তাদের মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা, যারা পান করে না তাদের তুলনায় বেশি থাকে । যদি খুব তাজা ও চনমনে রাখতে চাও মস্তিষ্ককে, তাহলে নিয়মিত দিনে এক দু বার গ্রীন টি খাওয়া অভ্যাস করো। ।

বন্ধুরা , কারো বিশেষ কোনো সমস্যা থাকলে কোনো খাবারে এলার্জি থাকলে অবশ্যই তোমার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নেবে। আর এইসব খাবারে মস্তিষ্ক ভালো রাখবে আমাদের বিশ্বাস। আরো অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে, এক্ষুনি নিশ্চয় করে সব বলা যাচ্ছে না , তাই যতটুকু বলা হলো মেনে চলো । আর খুঊঊঊব ভালো থেকো, খুশি থাকো ।

পোস্টটি কেমন লাগল তা অবশ্যই কমেন্টে আমাদের জানাও। ভালো লেগে থাকলে শেয়ার বাটন এ ক্লিক করে বন্ধুদের সাথে শেয়ার কর।


Vectors graphics designed by Freepik


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *