শরীর ও স্বাস্থ্য

পুষ্টিগুণে ভরপুর ৬টি বীজ খাওয়ার উপকারিতা । Benefits of Edible Seeds

3 Minute Read

শরীরকে ফিট ও সুস্থ রাখতে সঠিকমাত্রায় খাওয়াদাওয়া করাটা ভীষণ জরুরী। পুষ্টিবিদদের মতে খাবারের তালিকায় পুষ্টিগুণ বাড়াতে পারে নানা প্রকার বীজ। এমন অনেক বীজ রয়েছে, যা নানা ভাবে খাবারের সঙ্গে যোগ করা যায়। এগুলি আমরা সাধারণত উপেক্ষা করে থাকি। অথচ এতে খাবারের স্বাদ যেমন বাড়বে তেমনি পাওয়া যাবে শারীরিক উপকারিতাও। যেমন:- ফ্ল্যাক্স বা তিসি, শিয়া,পাম্মকিন বা কুমড়োর বীজ,সেসমি বা তিল,ফেনেল বা মৌরি,সানফ্লাওয়ার বা সূর্যমুখী বীজ। চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া পুষ্টিগুণে ভরপুর ৬টি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে।

ফ্ল্যাক্স সিডস :-

ফ্ল্যাক্স সিডস বা তিসি বীজ অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট, প্রোটিন, ফাইবার,ক্যালশিয়াম ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্ট ভাল রাখে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা ফ্ল্যাক্স সিডস গ্রহণ করতে পারেন। কারণ এতে উপস্থিত ফাইবার পাচন শক্তি ও মেটাবলিজমকে উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ফ্ল্যাক্স সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখ ও মস্তিষ্ককে সুস্থ ও তরতাজা রাখে এবং ট্রাইগ্লিসারাইডস কমাতে সাহায্য করে। শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিসি বীজের ভূমিকাও অনেক। ফ্ল্যাক্স সিড বা তিসি বীজ গুঁড়ো করেও খাওয়া যেতে পারে আবার ভেজে নিয়েও খাওয়া যেতে পারে। তিসির তৈরী তেল বাজারে পাওয়া যায় সেটা ভোজ্য তেল হিসাবেও খাওয়া যেতে পারে।

চিয়া সিড :-

পুষ্টিগুনে ভরপুর চিয়া সিডকে বলা হয় সুপার ফুড। এতে প্রচুর পরিমানে শর্করা, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, কোয়েরসেটিন (Quercetin) কেম্পফেরল (Kaempferol) ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড(Chlorogenic acid) এবং ক্যাফিক অ্যাসিড(Caffeic acid) নামক অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট আয়রন,পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফাইবার। যা স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। চিয়া সিড শক্তি এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে বিশেষ কার্যকর এই বীজ। চিয়া সিড হৃদরোগের আশঙ্কা কমায়, পাশাপাশি হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারী এই বীজ। কোনও ক্রনিক ইনফ্ল্যামেশন থাকলে, সেটিও কমাতে সাহায্য করে চিয়া বীজ। এটি টকদই এর ওপর ছড়িয়ে, বা স্যালাড এর ওপর ছড়িয়ে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া আপনি চাইলে এটি শরবত হিসেবেও খেতে পারেন।

পাম্মকিন বা কুমড়োর বীজ :-

এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, প্রোটিন, জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, কপার, ফসফরাসের মতো একাধিক উপাদান। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে পাম্পকিন সিড। পাম্মকিন বা কুমড়োর বীজ পুরুষের প্রোস্টেটের সমস্যা প্রতিরোধ করে প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। কুমড়োর বীজে রয়েছে সেরোটোনিন নামের রাসায়নিক উপাদান যা স্নায়ুতন্ত্রের চাপ কমিয়ে অনিদ্রার সমস্যা কাটাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও কুমড়োর বীজে আছে ট্রিপ্টোফ্যাননামের অ্যামাইনো অ্যাসিড যা দেহে সেরোটনিন নামক হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এক বাটি ফল কেটে তার মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে পারেন রোস্টেড পাম্পকিন সিড। ওটস কিংবা কর্নফ্লেক্সর সঙ্গেও ভালো লাগে এই বীজ।
এছাড়া শরবতের উপরে ছড়িয়ে খেতে পারেন পাম্পকিন সিড।

সেসমি বা তিল :-

সাদা তিলে থাকে ক্যালশিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট জাতীয় উপাদান। লিভারকে যে কোনও রকম ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম তিল। সাদা তিল পাঁচন ক্রিয়াকে মজবুত রাখে। এছাড়া দাঁত ও হাড়ের দেখভাল করতেও তিলের জুড়ি মেলা ভার। তিলের বীজ রোস্ট করে স্যালাডের সঙ্গে খেতে পারেন। এ ছাড়াও তিলের তেল একই রকম ভাবে স্বাস্থ্যরক্ষায় সহায়ক। কিন্তু সে ক্ষেত্রে তিল তেল কয়েক ফোঁটাই যথেষ্ট।

ফেনেল বা মৌরি :-

মৌরিতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, কপার, জ়িঙ্ক, সেলেনিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ়, পটাশিয়াম ,ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি এবং ভিটামিন-কে । মৌরি নিউরোলজিক্যাল ডিজ়িজ় বা স্নায়ুরোগ সারাতে, সংক্রমণ কমাতেও বিশেষ ভাবে সহায়ক। রক্ত পরিশোধনের পাশাপাশি, মৌরি রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে। এছাড়াও মৌরি হৃৎস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে রাখে, স্ট্রেস কমায় এবং রোগজনিত নানারকম শারীরিক অস্বস্তি দূর করতেও সাহায্য করে। মহিলাদের জন্য মৌরি খাওয়া বিশেষভাবে উপকারী। বন্ধ্যাত্বের মত জটিল সমস্যা দূর করারও চাবিকাঠি রয়েছে মৌরির হাতে। মৌরি পেট ঠান্ডা রাখে এবং নানারকম পেটের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও মৌরি বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

সানফ্লাওয়ার সিড বা সূর্যমুখী বীজ :-

সানফ্লাওয়ার সিড পরিচিত সূর্যমুখীর বীজ নামেও। সূর্যমুখী বীজে থাকে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বি ওয়ান এবং ই, ম্যাগনেশিয়াম, সেলেনিয়াম ও কপার। সূর্যমুখী ফুলের বীজে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ই আছে যা আমাদের ত্বককে সুস্থ রাখে এবং সেল ড্যামেজের হাত খেকে ত্বককে বাঁচায়। কিছু ধরনের ক্যানসার প্রতিরোধ করতেও সক্ষম এই বীজ। এ ছাড়াও হাড়ের ক্ষয় রোধ করতে, রক্তে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে সমতা আনতে সাহায্য করে। সূর্যমুখী বীজে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকায় সূর্যমুখী ফুলের বীজ কার্ডিওভ্যাসকুলার রোগ অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক প্রভৃতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সানফ্লাওয়ার সিড স্ন্যাক্স,স্যালাড হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।

বীজ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আমাদের লেখাটি কেমন লাগলো তা আমাদের কমেন্টে জানাও। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো। এই ধরনের লেখার নিয়মিত আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলের সাথে যুক্ত থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *