রিলেশনশিপ

Relationship এ আসার পর মানুষ মোটা হয়ে যায় কেন ?

4 Minute Read

University of Queensland in Australia তে একটি গবেষণায় প্রায় পনেরো হাজার মানুষের উপর দশ বছরকাল ধ’রে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে , এক এক জনের গড়ে ১৫ পাউন্ড করে ওজন বেড়ে গেছে । এটা দেখা গেছে যারা single তাদের নয়, যারা relationship এ রয়েছেন শুধু তাদের ক্ষেত্রেই । তাছাড়া একটি Unspoken rules of relationship অনুসারেও এ কথা আমরা শুনি এবং জানি , যে সম্পর্কে আবদ্ধ হবার পর ওজন বেড়ে যায় । সোজা বাংলাতেও লোকে বলে যে , বিয়ের পর মানুষ মোটা হয়ে যায় । কিন্তু এর কারণগুলো আন্দাজ করতে পারলেও হয়তো লিখিত বয়ানে সে ভাবে কোথাও একত্র দেখতে পাবো না ।

তাহলে এসো জানার চেষ্টা করি কী সেই কারণগুলি , যে কারণে সম্পর্কে আবদ্ধ হবার পর মানুষ মোটা হয়ে যায় বা ওজন বেড়ে যায় ।

১. সকলের কাছে নিজেকে বেশি আকর্ষণীয় করে তোলার চাহিদা কমে যায় :

নতুন সম্পর্কে আসা বা বিয়ের পর বর বা কনে উভয়কেই প্রথম প্রথম সকলের কেন্দ্রমনি হয়ে থাকতে হয় । তখন আর সকলের আকর্ষণের জন্য বাড়তি পরিশ্রম ক’রে ফিট থাকার ইচ্ছেটা থাকে না । নানা পোশাক আর সজ্জায় নিজের স্বাস্থ্য ঢাকা পড়ে যায় । শুধু বাইরের সজ্জায় নজর থাকায় –শরীরের ব্যায়াম বা কঠোর পরিশ্রম কিংবা অনুশীলনের প্রতি আগ্রহ কমে যায় (You don’t need to attract anyone )। বিশ্বাস হোক বা না হোক গবেষণায় উঠে এসেছে মানসিকতার এই তত্বটিই ।

২. নতুন কারো সামনে নিজেকে উপস্থাপনের ব্যাপার নেই :

এটা ঠিক যে বিয়ের পর নিজেকে নতুন কারো সামনে নিখুঁত দেখানোর জন্য ভাবতে হয় না । মানসিকভাবে আপনজনের কাছে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় মনে মনে একটা তত্ব কাজ করে তা হলো , নিজেকে আর নতুন করে উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই ।
একটু সোজা কথায় বলে যায় , ভালোবাসার মানুষটি তো ভালোবাসবেনই । তার কাছে তো সবই উজাড় করে দেওয়া হয়েছে । নিজেকে তাই এই Slim দেখানোর বাসনাটাই কমে যায় — যেমন চেষ্টাটা সম্পর্কে আসার প্রাকমুহূর্ত পর্যন্ত ছিল । আর অপরের কাছে শরীরীভাবে আকর্ষণীয় দেখাবার কোনো প্রশ্নই আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে নেই ।

৩. শরীরের প্রতি বাড়তি নজর দেওয়া বা শরীরচর্চায় অনিচ্ছা :

নব সম্পর্কে আবদ্ধ দুজনেরই সময়গুলো খুব মধুরভাবে অতিবাহিত হয় । ফলে কমতে থাকে দৌড় ঝাঁপ এই জাতীয় কাজের পরিসর আর শরীরচর্চা করার সময় এবং ইচ্ছাও ।
এক কথায় বলতে গেলে ভালো মুহূর্তগুলো উপভোগের আড়ালে কসরত করার বাসনা আর সময় সবই হারিয়ে যেতে থাকে ।

৪. প্রশংসা আসতে থাকায় খুশিতে ভরে ওঠা :

বাঙালি কালচারে কেন , প্রায় সমস্ত মানুষের মধ্যেই বিবাহ একটি বিশেষ আনুষ্ঠানিক মর্যাদায় ভূষিত । রিলেশনশিপে থাকা বলতে বাংলায় বুঝতে পারি বিবাহিত সম্পর্কে থাকা , যেখানে একসঙ্গে নারী-পুরুষ জীবনের সহযাত্রী হয় । এই অবস্থায় সদ্য বিবাহিত নারী-পুরুষ তাদের বিবাহের সাজসজ্জা আলোক উজ্জ্বল দিন গুলির মধ্যে থেকেই শুরু হয় চারদিক থেকে প্রশংসা আসা । ” তুই খুব সুন্দর লাগছিস এখন” —ইত্যাদি প্রশংসা শরীর ও মনকে খুশিতে ভরিয়ে দেয় । এই মানসিকতার ফলে শারীরিক কসরত করার ইচ্ছা কমে ” সুখী ” স্থিরতা দান করে । আর মাছে ভাতে বাঙালির দিবানিদ্রার সুখ নিয়ে থাকলে মোটা হয়ে যেতে আর কতক্ষণ । তবে একটা কথা ওজন বেড়ে যাওয়া ব্যাপারটা রোজ এত সূক্ষ্মভাবে ঘটে যে প্রতিদিনের দেখা কাছের মানুষের চোখে ধরাই পড়ে না প্রায় । দীর্ঘকাল পর দেখা হওয়া কারো কাছে যেটা সহজেই ধরা পড়ে ।

৫. খাবার নিমন্ত্রণ ও নেতিবাচক খাবারের প্রভাব :

নতুন বর , নতুন বউ , —- বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে নিমন্ত্রণ আসতে থাকে । আর নিমন্ত্রণ করে কেউ নিশ্চয় তোমার ডায়েট চার্ট মেনে খেতে দেবেন না । এই অতিরিক্ত ভোজনের পর্ব যে মানুষের ওজন বাড়িয়ে দেয় , একথা বোধ হয় ভেতো বাঙালিকে আর বুঝিয়ে বলতে হবে না । নেতিবাচক খাবারের প্রভাব বলতে বোঝানো হয়েছে , আদর আপ্যায়ন করে কিংবা অনুরোধ করে একটু বেশি খাইয়ে দেওয়া । মনে করে দেখো তো —” আরেকটু দেই ” , ” আরে খুব সামান্য দিচ্ছি খেয়ে নাও” —– এই সামান্য খাওয়াটাকেই নেতিবাচক খাওয়া বলা যায় । স্বাস্থ্যের বিচারে ইচ্ছার অতিরিক্ত অনুরোধের বা আদরের খাওয়াটা যে ক্ষতি করে থাকে , তাতেই একে নেতিবাচক খাওয়া বলা হয়ে থাকে । মনে রাখতে হবে নিমন্ত্রণ খাওয়ানোটা তোমার স্বাস্থ্যের ভালো হোক এটা তারা চাইবেন না —- যতটা চাইবেন নিজের অহংকারের তৃপ্তি “ভালো খাওয়ালাম ” বলতে পারা ।

৬. ছুটি উপভোগ করায় Routine – Break :

একথা তো ঠিকই সম্পর্কে আসার পর দু’জন একসঙ্গে থাকার প্রবণতা তৈরি হয় । আর তার থেকেই কমে যায় কাজের সময় টুকু । যাই হোক না কেন — ঘুরতে যাওয়া—- পরস্পরকে সময় দেওয়া —-ভালো ভালো সময় কাটানো ইত্যাদির ফলে বেড়ে যায় বিরতির পরিমাণ । একথা সত্য যে নিয়মিত কাজের মধ্যে নিয়ম করে বিরাম দরকার । কিন্তু সদ্য বিবাহিতদের ক্ষেত্রে ছুটির পরিমাণ ওই ” নিয়ম মেনে ” আর হয় না । এই অতিরিক্ত এবং পর পর ছুটির ফলে শরীরের নিয়মমাফিক চালচলন খাওয়া দাওয়া হয়ে ওঠে না । ওজন বেড়ে যাওয়ার এটাও একটা কারণ ।

৭. লোকে কী ভাববে , Don’t care মানসিকতা :

সম্পর্কে আবদ্ধ হবার পর যাবতীয় ফোকাস গড়ে উঠতে থাকে আপন মানুষটিকে কেন্দ্র করে । ধীরে ধীরে সুখ স্মৃতি নিয়ে নিজস্ব কাজে থিতু হতে থাকে সবাই । এই অবস্থা চলতে থাকায় লোকের বলা কথার প্রতি বাড়তি কোনো নজর থাকে না । ডোন্ট কেয়ার মানসিকতা তৈরি হয় । কিরে ” মোটা হয়ে যাচ্ছিস ” ধরনের কথা গুলির প্রতি আর নজর দেওয়ার ইচ্ছে থাকে না । ওজন বাড়তে থাকলে সাধারণত হঠাৎ করে দেখতে আসা মানুষরাই টের পান । সঙ্গে থাকা সঙ্গীর চোখে ততটা ধরা পড়ে না । লোকে কি বলবে বা ভাববে সেদিকে নজর থাকে না বলেও ওজন বাড়তেই থাকে ।

এরকম অনেক কারণই তো জানলাম । এবার যারা সদ্য সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছো বা হতে যাচ্ছো তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই । অনেকেরই তো শারীরিক ফিটনেসের জন্য একটু ওজন বাড়ানো ভালো । তবে এই ওজন বৃদ্ধিটা যেন শরীরের কাঠামো অনুসারে মানানসই হয়।

ভয় পেয়ো না —- কিছু টিপস দিয়ে দিচ্ছি যারা অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়াটা চাও না তারা এই কথাগুলো মনে রাখবে :

i) দিনের বেলায় বিশ্রাম নেবে , কিন্তু টানা অনেক্ষণ ঘুমোবে না ।


ii) নিজের বাড়িতেই খাবারের ক্ষেত্রে সংযত হতে চেষ্টা করো ।


iii ) আত্মীয়ের বাড়ি বা কোথাও নিমন্ত্রণ পেলে তাদের ভালোভাবে বুঝিয়ে আগেই জানিয়ে দাও যে , তোমার খাবারের কয়েকটি নিয়ম , যেমন খাবারে ফোরটি পার্সেন্ট স্যালাড আর টক দই থাকতে হবে । ফ্রুট অথবা ফ্রুট জুস এর কথাও আগেই জানিয়ে দাও ।


iv ) দুজনেই একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের চার্ট তৈরি করো যা দুজনেই মেনে চলবে ।


v) হানিমুনে গিয়ে ডাব , ফ্রুট জুস , মাছ প্রভৃতি খাবার বেশি করে খাবে , আর এড়িয়ে যাবে জাঙ্ক ফুড , ফাস্ট ফুড , চর্বি ও মাংস জাতীয় খাবার ।

vi ) এটাই সময় নতুন ফুড হ্যাবিট তৈরি করার । ভালবাসার বন্যায় ভেসে যাক পুরনো অভ্যাস । নতুন ভালো অভ্যাস ভালোবেসেই তৈরি করে ফেলো ।

বন্ধুরা আজকের লেখাটি কেমন লাগলো কমেন্ট করে জানাও । আর হ্যাঁ , বন্ধুদের শেয়ার করতে ভুলোনা । আমাদের ফেসবুক পেজে থেকো আবার দেখা হবে । খুব ভালো থেকো সুস্থ থেকো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *