কাহলিল জিবরান এর বিখ্যাত উক্তি ও বাণীসমূহ । Khalil Gibran Quotes
কাহলিল জিবরান এর বিখ্যাত উক্তি ও বাণীসমূহ
জিবরান কাহলিল জিবরান, সংক্ষেপে কাহলিল জিবরান নামে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত তিনি। কাহলিল জিব্রান একজন লেবানিজ-আমেরিকান লেখক। বলা হয়ে থাকে ইতিহাসে যাদের কবিতার বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে জিব্রান তার মধ্যে তৃতীয়। তার আগে আছেন শেক্সপিয়ার ও লাওজি। তিনি ছিলেন একজন লেবানিজ কবি,চিত্রশিল্পী, লেখক, ভাস্কর, দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ এবং অঙ্কনশিল্পী। তিনি ১৮৮৩ সালের ৬ জানুয়ারি লেবাননের দক্ষিণে অবস্থিত পবিত্র উপত্যকা নামে পরিচিত ওয়াদি কাদিশার ছোট্ট এক গ্রাম বিশারিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবার নাম ও ছিল কাহলিল জিবরান, মা কামিলেহ রাহমি । সৎভাই পিটার ছাড়াও মারিয়ানা এবং সুলতানা নামে জিবরানের দুই ছোট বোন ছিল।
শৈশবে জিবরান তাদের সাথে খেলাধুলায় খুব একটা যোগ দিতেন না। কারণ তিনি ভালোবাসতেন চিত্রাঙ্কন। হাতের কাছে কাগজ কলম না পেলে বাড়ির বাইরে গিয়ে মাটিতে কিংবা শীতকালে তুষারের উপরেই ছবি এঁকে যেতেন তিনি। আর তার এই ছবি আঁকাকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন দিতেন তার মা। জিবরানের যখন ৫ বছর, তখন তার সাথে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির বিখ্যাত কিছু চিত্রকর্মের পরিচয় করিয়ে দেন তার মা। তিনি নতুনভাবে চিত্রকর্মের প্রেমে পড়েন। কিন্তু সেবছরই তার জীবন আকস্মিকভাবে বদলে যায়। তার বাবা কোনো দুর্নীতির দায়ে ধরা পড়েন (যদিও তা ছিল রাজনৈতিক ফাঁদ) এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত হন। তাদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। সংসারের খরচ যোগানোর দায়িত্ব বর্তায় কামিলেহর হাতে, অথচ বিশারি গ্রামে নারীদের জন্য বলার মতো কোনো কাজই ছিল না। ফলে বাধ্য হয়ে কামিলেহ তার সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। শুরু হয় জিবরানের জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়। এখানে তিনি শিল্পকলা নিয়ে পড়াশোনা করেন ও তাঁর সাহিত্য জীবন শুরু করেন। তিনি ইংরেজি ও আরবি দুই ভাষাতেই লিখতেন। আরব বিশ্বে জিবরানকে সাহিত্য ও রাজনৈতিক বিদ্রোহী হিসেবে দেখা হয়। আধুনিক আরবি সাহিত্যের রেনেসাঁয় তাঁর রোমান্টিক ধারা ধ্রুপদি ধারা থেকে আলাদা ভাবে জায়গা করে নিয়েছে, বিশেষত তার গদ্য কবিতা। লেবাননে তিনি এখনও সাহিত্যের বীর হিসেবে সম্মানিত হন। তাঁর লেখা ‘দ্য প্রফেট‘ সাহিত্য ইতিহাসের সাড়া জাগনো একটি বই। এই বই এ পর্যন্ত মোট চল্লিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯২৩ সালে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। জিব্রানের এ বই এখনো এক বিস্ময়ের নাম। তাঁর লেখা অন্যান্য গ্রন্থ গুলি হলো- ‘ম্যাডম্যান’, ‘স্যান্ড এণ্ড ফোম’,’ব্রোকেন উইংস’, ‘গার্ডেন অব প্রফেট’ ,’দ্যা ওয়াণ্ডার’ ইত্যাদি।
১৯৩১-এর ১০ এপ্রিল লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে নিউ ইয়র্কেই তার জীবনাবসান ঘটে। জিবরানের শেষ ইচ্ছানুযায়ী তার লাশ লেবাননের বিশাররি-এর নিভৃত পল্লীতে নিয়ে সমাহিত করা হয়। জিবরানের কথা মতো, তার এপিটাফে লেখা আছে, ‘A word I want to see written on my grave : I am alive like you, and I am standing beside you. Close your eyes and look around, you will see me in front of you.’
বিশ্বে এমন কিছু মানুষের পদার্পণ ঘটেছে , যাদের দেখানো দৃষ্টিতে পরবর্তী কালের মানুষ জীবন, জগৎ ও নিজেকে নতুন করে দেখতে শিখেছে । এমনি একজন ব্যক্তি হলেন কাহলিল জিব্রান । জীবনের নানা আঙ্গিকে দেখা তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ মূল্যবান উক্তিগুলি এখন আমরা দেখে নিই । তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত উক্তি ও বানীসমূহ হলো-
জীবন নিয়ে কাহলিল জিবরানের কয়েকটি উক্তি :
১.”জীবন যখন তার হৃদয়ের কথা বলার জন্য একজন গায়ক খুঁজে পায় না তখন সে উপস্থিত করে একজন দার্শনিক কে তার মনের কথা বলতে।”
২.’প্রেম ছাড়া জীবন ফুল বা ফল ছাড়া গাছের মতো।”
৩.”কষ্ট তোমার জীবনের সে আবরণটা ভেঙে দেবে, যা তোমার উপলব্ধিকে সীমাবদ্ধ করে রাখে।”- কাহলিল জিবরান
৪.”তুমি যদি তোমার অধিকারে থাক তাহলে অবশ্যই দাবী করার কিছু নেই ।”
৫.”গতকাল হলো আজকের স্মৃতি আর আজকের স্বপ্ন হলো আগামী”- কাহলিল জিবরান
৬.”সন্তুষ্টির সাথে একজনের জীবনের দিকে ফিরে তাকাতে সক্ষম হ’ল দু’বার বেঁচে থাকা।” – খলিল জিবরান
৭.”সাধ্যের চেয়ে বেশি দেয়ার নাম বদান্যতা। আর প্রয়োজনের চেয়ে কম নেয়ার নাম অহং”- কাহলিল জিবরান
৮.”তুমি যখন ধন-সম্পদ দান করো সেই দান এক ক্ষুদ্র দান, কিন্তু যখন আত্মদান করো সে দানই আসল দান”
৯.”একজন ব্যক্তির হৃদয় ও মন বোঝার জন্য সে ইতিমধ্যে কী অর্জন করেছে তার দিকে না তাকিয়ে বরং তিনি কী করতে চান তা লক্ষ্য করুন।” -কাহলিল জিবরান
প্রেম -ভালোবাসা ও সৌন্দর্য নিয়ে কাহলিল জিবরান- এর উক্তি :
৯.”ভালবাসা হচ্ছে আলোর একটি শব্দ , লেখা হয়েছে আলোর হাতে , আলো নির্মিত কাগজের উপর।”
১০.”আপনি যদি কাউকে ভালবাসেন তবে তাকে ছেড়ে দিন, যদি সে ফিরে আসে তবে সে সর্বদা আপনার ছিল। যদি তা না করে তবে সে কখনও আপনার ছিল না।”
১১.”সৌন্দর্য মুখে থাকে না , সৌন্দর্য হল হৃদয়ের আলো।”
১২.”ভালবাসা প্রতিদিন ভালবাসা নবায়ন করে না , যা পরিণত হয়েছে অভ্যাসে এবং এর উল্টোদিকেই রয়েছে দাসত্ব।”
১৩.”নিজেকে পরিপূর্ণ করা ছাড়া ভালোবাসার আর কোনো কামনা নেই।”
১৪. “যখন একজন পুরুষের হাত একজন নারীর হাত স্পর্শ করে তখন প্রকৃত অর্থে তারা দুজনেই স্পর্শ করে অনন্তের হৃদয় ।”
১৫.”সৌন্দর্য হল একটি আয়নায় স্থির দৃষ্টিতে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকা চিরসত্য।”
১৬.”যাকে তুমি ভালবাসো , তুমি তার একজন দাস । কারণ তুমি তাকে ভালবাসো এবং একজন দাস ভালবাসে তোমাকে কারণ সে ভালবাসে তোমাকে।”
১৭.” তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো কিন্তু ভালোবাসার বন্ধন করে তোল না বরং তোমাদের ভালোবাসা হোক দুটি হৃদয়ের বেলা ভূমির মাঝে এক উচ্চসিত সমুদ্র।”
বিবাহ ও সন্তান নিয়ে কাহলিল জিব্রান এর বিখ্যাত বাণী :
১৮ “তোমরা তোমাদের হৃদয় বিনিময় করো, কিন্তু একে ওপরের হাতে তা সঁপে দিও না।”
১৯.”তোমার সন্তানেরা তোমার সন্তান নয়। তারা জীবনের জন্য জীবনের আকুল প্রত্যাশার পুত্র- কন্যা। তারা তোমাদের মাধ্যমে আসে, কিন্তু তোমাদের ভেতরে জন্ম নেয় না।”
সঙ্গীত নিয়ে কাহলিল জিবরান- এর উক্তি :
২০.”সংগীত হল অপার্থিব এক ভাষা । যা সকল দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে প্রশান্তির দ্বারা জীবনে-রহস্যকে উন্মোচিত করে।”
কাজ নিয়ে কাহলিল জিবরানের বাণী :
২১.”তোমরা যখন ভালোবেসে কাজ করো তখন তোমরা নিজের সঙ্গে নিজেকে একের সঙ্গে অপরকে এবং সেইসঙ্গে বিধাতাকে এক মিলন ডোরে বেঁধে রাখো।”
২২.”কাজ দিয়ে জীবনকে ভালবাসতে পারাই জীবনের অন্তরতম রহস্যের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া।”
সুখ ও দুঃখ নিয়ে কাহলিল জিবরানের বিখ্যাত কয়েকটি উক্তি :
২৩. “দুঃখের আঘাতে তোমার অন্তরের ক্ষত যত গভীর হয় তত বেশি সুখ তুমি ধরে রাখতে পারো।”
২৪ “তুমি যখন আনন্দিত হও, তখন তোমার অন্তরের গভীরে তাকিয়ে দেখ – দেখবে যা তোমাকে দুঃখ দিয়েছিল তাই তোমাকে আনন্দ দিচ্ছে। তুমি যখন দু:খিত হও তখন তুমি আবার নিজের অন্তরের গভীরে তাকিয়ে দেখ এবং তুমি দেখবে যা তোমার আনন্দের উৎস ছিল তুমি আসলে তার কারণেই কাদঁছো।”
বন্ধুত্ব নিয়ে কাহলিল জিব্রানের উক্তি :
২৫.”বন্ধুত্ব সর্বদাই একপ্রকার মধুর দায়িত্ব, কখনোই সুযোগ নয়।”- কাহলিল জিবরান