পরীক্ষার খাতায় ভালো নম্বর তোলার ছয়টি টিপস
পরীক্ষা নিয়ে ভীতি আমাদের চিরকালের। এই ভীতির মূল কারণ -ই হলো ভালো নম্বর না পাওয়ার আশঙ্কা। এই নম্বর পাওয়ার ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। কিন্তু সবার আগে কয়েকটি প্রাথমিক বিষয় মনে রাখতে হবে। অনেকেরই আফশোষ থাকে এতো পড়াশুনা , প্রাইভেট টিউশন ,খরচপাতি করেও রেজাল্ট কেন ভালো হয় না। আবার অনেকের বক্তব্য এতো ভালো লিখেও কেন কম নম্বর আসছে। এসো জেনে নেই পরীক্ষার খাতায় ভালো নম্বর পেতে হলে পরীক্ষার খাতায় যে মূল বিষয়গুলোর ওপর নজর দিতে হবে –
১. স্বচ্ছতা :-
হাতের লেখা খুব ভালো হলেই ভালো নম্বর আসবে এমনটা কিন্তু নয়। তোমাকে সবার আগে মনে রাখতে হবে তুমি খুব ভালো লিখলেই তুমি খুব ভালো নম্বর পাবে এমন কথা নেই। সেক্ষেত্রে ভালো নম্বর পাবার জন্য যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হল স্বচ্ছতা। এই স্বচ্ছতা দুই প্রকার –
ক ) উত্তর লেখার বিষয়ের স্বচ্ছতা
খ ) খাতা সাজানোর স্বচ্ছতা
প্রথম ক্ষেত্রে বলতে হয় রচনাধর্মী উত্তরের ক্ষেত্ৰে খুব ভালো নোটস লিখলেই হবে না সঠিক প্রশ্নের জন্য সঠিক ও যথাযথ উত্তর হওয়া চাই। অপ্রাসঙ্গিক দীর্ঘ আলোচনা পরিহার করতে হবে। মূল প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর নির্ধারিত শব্দসংখ্যার মধ্যে সংক্ষিপ্ত অথচ তথ্যনির্ভর লেখাই হল বিষয়ের স্বচ্ছতা।
আর খাতার স্বচ্ছতা হল পরীক্ষকের সামনে তুলে ধরা বিষয়টি যেন সুন্দরভাবে উপস্থাপিত হয়। কাটাকুটি ,লেখার লাইনগুলি অসমান ,প্যারাগ্রাফ না রাখা – এইসব বিষয় পরিত্যাগ করতেই হবে। মনে রেখো স্বচ্ছতা মানে শুধু সুন্দর হাতের লেখা নয় – সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা।
২. সহজ ভাষা:-
অনেকেই ভাবে যে কঠিন কঠিন ভাষায় উত্তর লিখলেই বেশি নম্বর আসে। এটি ভুল ধারণা। তুমি যে শ্রেণিতে পড়ো তোমার বয়স দক্ষতা অনুসারেই লেখার ভাষা হবে সহজ ও সরল। সহজভাবে কোনো বিষয় বোঝানোই কঠিন কাজ। কঠিন শব্দের প্রয়োগ করতে গিয়ে বানানসহ অন্যান্য ভুলের সম্ভবনা থেকে যায়।
৩. উত্তর নির্বাচন :-
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা হল সঠিক প্রশ্নটি নির্বাচন করা। এক্ষেত্রে তোমরা অবশ্যই সে প্রশ্নটিই লিখবে যা আগে তোমার লেখা অভ্যাস করা আছে। তাহলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নির্ভুলভাবে লিখতে পারবে। আর সবচেয়ে বেশি তৈরী উত্তরগুলোই আগে লিখবে। uncommon বা বানিয়ে লেখার উত্তরগুলি শেষের দিকে রাখবে।
৪. মার্জিন ,উত্তরের সমাপ্তি ও loose sheet এর ব্যবহার :-
পরীক্ষার খাতাটি হাতে পেয়েই স্কেল দিয়ে চারদিকেই ১ ইঞ্চি পরিমান রেখে মার্জিন টেনে নেবে – সবগুলি পাতা জুড়ে। কমপক্ষে উপর ও বাঁ দিকে এই জায়গা রাখতেই হবে। মনে রেখো পরীক্ষক উপর দিক , বাম দিক ও ডান দিকের ফাঁকা অংশে নম্বর বসান। তাই নম্বর বসানোর জায়গা না থাকলে পরীক্ষক বিরক্ত হবেন।
দুটি উত্তরের মাঝে কম পক্ষে দেড় ইঞ্চি পরিমান গ্যাপ বা ফাঁকা রাখতে হবে। এবং একটি প্রশ্নের উত্তরের শেষে অবশ্যই কোনো সমাপ্তি চিহ্ন ব্যবহার করবে।
এরকম তোমার পছন্দমতো যে কোনো চিহ্ন তুমি ব্যবহার করতে পারো ; যাতে পরীক্ষক বুঝে যান তোমার উত্তরের শেষ এই চিহ্ন দিয়ে হয়েছে। এর ফলে উত্তর শেষের নম্বর তিনি বসিয়ে দেবেন।
Additional Loose sheets লাগলে তার উপরে একটি সিরিয়াল নম্বর বসাবে – যেমন Loose Sheet (1), (2) এই ভাবে। আর এই sheet এর শুরুতেই Roll No , Registration No বসিয়ে দেবে যথাযথভাবে ,যাতে সুতো ছিঁড়ে গেলেও তোমার Loose Sheet টি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। মার্জিন টানতে কখনোই ভুলো না।
৫. প্রশ্নের ক্রম বা নম্বর লেখা :-
অনেক ছাত্র -ছাত্রীর খাতায় দেখা যায় প্রশ্নটির ক্রমিক নম্বরটিই খাতায় তুলতে ভুলে গেছে। আবার অনেকেই বাংলা এবং ইংরেজি সংখ্যা মিশিয়ে ফেলে। যেমন – ৮ নং প্রশ্নের উত্তর লিখতে গিয়ে ইংরেজিতে ৪ লিখে বসে আছে। সেক্ষেত্রে পরীক্ষক এটাকে ৪( চার ) নং প্রশ্ন মনে করে উত্তরটি ভুল বলে চিহ্নিত করেন। এক্ষেত্রে তোমরা অবশ্য অবশ্যই মনে রাখবে প্রশ্নপত্রে প্রশ্নটির ক্রম বাংলা বা ইংরেজি যে সংখ্যায় আছে – হুবহু সেটাই লিখবে।
আরেকটি বিষয় অনেকেই খেয়াল করে না, প্রশ্নের ক্রম নম্বরটি কোথায় লিখবো মার্জিনের বাইরে না খাতার ভেতরের দিকে। ছবিটি দেখ –
কারণটি হল খাতা সেলাই করা বা সুতো দিয়ে বাঁধার সময় প্রশ্নের ক্রম নম্বরটি ঢাকা পড়ে যায় – পরীক্ষক আর দেখতে পান না। তাছাড়া মার্জিনের বাইরের দিকটি তোমার জন্য নয়, পরীক্ষকের নম্বর বসানোর জন্য নির্ধারিত। কাজেই সেই জায়গাটি ছেড়ে না দিলে পরীক্ষক অখুশি হবেন – তার প্রভাব নম্বরের ক্ষেত্রেই পড়বে।
৬. সময়ের প্রতি নজর :-
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টাইম ম্যানেজমেন্ট । আগে থেকেই বাড়িতে অভ্যাস করতে হবে – সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী উত্তরের জন্য বরাদ্দ সময়ের মধ্যেই লিখতে পারছো কি না । এখন সাধারণত: মোট নম্বরের ৪০%(চল্লিশ শতাংশ) MCQ,SAQ মিলিয়ে থাকে । এই উত্তরগুলির প্রতিটির জন্য এক মিনিট করে বরাদ্দ করতে পারো । আর রচনাধর্মী উত্তরের ক্ষেত্রে ১৫০ শব্দের হলে প্রতিটির জন্য গড়ে ১৫ মিনিট করে রাখতে পারো । এইভাবে একটা সময়ের হিসেব আগেই করে রাখতে হবে । পরীক্ষার হলে একটা উত্তর লিখতে খুব দেরি হলে সেটার পেছনে আর বেশি সময় দেবে না । অন্য উত্তর শুরু করে দেবে । সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারলে আর আগের টিপসগুলো মেনে চললে দেখবে ভালো নম্বর আসতে বাধ্য।
তাছাড়া পরীক্ষার পূর্বে খাতা বানিয়ে বাড়িতে নিজের মতো পরীক্ষা দাও। আর এই ছয়টি বিষয় খেয়াল করে দেখ প্রস্তুতি যথাযথ কিনা। সামনে পরীক্ষা আশা করি খুব ভালো নম্বর পাবে ও জীবনে সফল হবে। খুব ভালো থেকো।
আশা করি আমাদের দেওয়া এই তথ্যগুলি তোমাদের কাজে লাগবে, আর এই ধরনের লেখার আপডেট পেতে নিচের বেল আইকনে ক্লিক করে আমাদের ওয়েবসাইটের সমস্ত নোটিফিকেশন নিজের মোবাইলে পেয়ে যাও। আমাদের সাথে যুক্ত থাকতে আমাদের ফেসবুক পেজটি ফলো করো।
This Article Is Written By